সেহাঙ্গল বিপ্লব আল মোজাদ্দেদি
গত ২১, ২২ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানাধীন কানিহারী ইউনিয়নের আহাম্মদবাড়িতে অবস্থিত কুতুববাগ দরবার শরীফের দ্বিতীয় শাখায় অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হলো, আমাদের দরদী দাদাপীর আলেমে হক্কানী, আলেমে রাব্বানী মোফাসসিরে কোরআন পীরে বে-নজীর, পীরে বে-মেছাল মহিউল কলব, মহিউস সুন্নাহ শাহসূফী আলহাজ মাওলানা হযরত কুতুবুদ্দীন আহমদ খান (রঃ) মাতুয়াইলীর পবিত্র ওফাত উপলক্ষে, তিন দিনব্যাপী ফাতেহা শরীফ ও জাকের ইজতেমা পালিত হলো।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় বছরই সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আবহাওয়া থাকে বৃষ্টিস্নাত। এ বছরও এর পরিবর্তন দেখা যায়নি। প্রায়দিনই থেমে থেমে প্রবল বৃষ্টি ঝরেছিলো। এরই মধ্যে ফাতেহা শরীফের সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। দরবারের সামনেই বিশাল ময়দান। ময়দারের পশ্চিম পাশে সাজানো হয়েছে বিশাল মঞ্চ। টাঙানো হয়েছে ওয়াজ-বয়ানের সামিয়ানা। ময়দানের পূর্বদিকে মহিলাদের জন্য চারপাশ টিনে ঘেরা শক্ত বেড়া উপরে সামিয়ানা দিয়ে বসা ও তাবারক খাবার প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণ পাশে বিশাল পাকভান্ডার এবং উত্তর পাশে পুরুষদের জন্য তাবারক খাবার মাঠ সব মিলিয়ে পুরো আয়োজনই শেষ। কিন্তু ওই যে বলছিলাম বৃষ্টির কথা, ফাতেহা শরীফের সকল আয়োজন শেষ হলেও বার বার বৃষ্টি এসে প্যান্ডেলের ভিতরে বৃষ্টির পানি আটকে যাচ্ছে। শত শত জাকেরকর্মী ভাইয়েরা সেই পানি নিষ্কাষণের কাজ করছেন। একদিকে বালি দিয়ে পানি সরানো হয় আবার কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে যায়। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতির কথা আবহাওয়া অফিস থেকে আগেই পূর্বাভাস প্রচারিত হয়েছিল যে, আগামী সাতদিন সাগরে নিম্নচাপ প্রবাহিত হবে। যাতে মাঝারী ও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আর হলোও তাই। আবহাওয়ার এমন অবস্থা দেখে কিছু কিছু জন সাধারণের মধ্যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল যে, এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কুতুববাগী হুজুর কীভাবে মাহফিল করবেন? তাদের মুখে এমন কথা শুনে ঈমানদার ও আল্লাহওয়ালা জাকের ভাইজানেরা বলেছেন, এটা মহান আল্লাহর মজলিস আল্লাহতায়ালাই দয়া করবেন। আপন আপন মুর্শিদের সঙ্গে বসে আল্লাহকে ডাকার জন্য সারাদেশ থেকে হাজার হাজার আশেকান-জাকেরান ও ভক্ত ভাই-বোনেরা দলে দলে কাফেলাবদ্ধ হয়ে আসতেছেন। সেখানে আল্লাহতায়ালা তাঁর আশেকদের কষ্ট দিবেন না।
এভাবে চলতে থাকে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার আসরের নামাজ পর্যন্ত! পীর কেবলাজান হুজুর ঘুরে ঘুরে সবকিছু তদারকি করছেন আর কর্মী ভাইদের হুকুম করলেন, এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই খেদমত চালিয়ে যেতে। মহান আল্লাহতায়ালাই আশেকান-জাকেরানদের বসা ও থাকার সুব্যবস্থা করে দিবেন। এবং আরো বললেন, বৃষ্টি তো আল্লাহর রহমত।’ এমন সময় দরবার শরীফে আসর নামাজের আজান প্রচারিত হলো, পীর কেবলাজান জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় দেখা গেলো মুশলধারায় বৃষ্টি নামলো। পীর কেবলাজান তওবা কবুলিয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে ফয়েজ দ্বারা সাহায্য চাইলেন। আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় অলিবন্ধুর চাওয়া পুরণ করলেন এবং একটু পরেই বৃষ্টি থেমে গেলো। পীর কেবলাজান হুকুম করলেন পানির মধ্যে বালু বিছিয়ে দিতে। জাকেরকর্মী ভাইয়েরা প্রায় ৩০-৩৫ ট্রাক বালু বিছিয়ে দিলেন। পীর কেবলাজান হুজুর এবার হুকুম করলেন, বালুর উপরে বিছানা করে আপনাদের জাকের ভাই-বোনদের জন্য বিছানা বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা করে দিন। সন্ধ্যা থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে কাফেলা আসতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে গেলো। আকাশ ফর্সা হয়ে উঠলো। এবার সবার মাঝেই স্বস্তি ফিরে আসতে লাগলো।
আসর নামাজ থেকেই তিন দিনব্যাপী মাহফিলের কর্মসূচি শুরু হলো। দাদাপীর মাতুয়াইলী (রঃ) এর ওফাত উপলক্ষ্যে ঈমানী-আমলের এই ফাতেহা শরীফ ও জাকের ইজতেমায় কোরআন-হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের দ্বারা একের পর এক মূল্যবান বয়ানে অংশ নিলেন দেশবরেণ্য বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমগণ। বৃহস্পতিবার আসর থেকে শুরু হয়ে সারা-রাতব্যাপী ওয়াজ, জিকির-আসকারসহ রহমত পালন করা হয়, ফজরের নামাজের পর তরিকার অজিফা আমল শেষে সকাল এগারোটা পর্যন্ত বিরতি দেওয়া হয়। এরপর এগারোটা থেকে আবারো শুরু হয় দিত্বীয় দিনের প্রথম কর্মসুচি। পবিত্র জুমার আজানের পর ফাতেহা শরীফ ও জাকের ইজতেমার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। জুমার নামাজের বিশাল জামাতে অংশ নেন হাজার হাজার আশেকান-জাকেরান ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ। এভাবেই চলতে থাকে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই মানুষের ঢল নামতে শুরু করে, চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। ওদিকে পাকভান্ডারে চলছে বিরতিহীন তাবারক রান্নার কাজ, একদিকে রান্না অন্যদিকে তাবারক বিতরণ। গ্রামের মধ্যে এত বিশাল আয়োজন তবু কোথাও সামান্যমত শোরগোল দেখা যায়নি। কারণ এ যে অলিআল্লাহদের খাস মজলিস, তাই ফয়েজ, রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ ছিলো।
কুতুববাগী পীর কেবলাজানের দরবারে মোজাদ্দেদিয়া লঙ্গরখানায় বরাবরের মত এবারও ছিলো কেরামতির এক অভূতপূর্ব নিদর্শন। যে নিদর্শন নিজ চোখে না দেখলে সাধারণের বিশ্বাস করতে কষ্টই হবে। তিনদিন যাবত লাখ লাখ মানুষ আসছে- যাচ্ছে সবাই তাবারক খাচ্ছে। কিন্তু খাবারে কমতি হওয়া তো দূরের কথা, আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে অনুষ্ঠান শেষে অনেক খাবার অবশিষ্টও রয়ে গেছে। পীর কেবলাজানের হুকুমে আমি অধম বিপ্লব অন্যান্য জাকের ভাইদের সঙ্গে নিয়ে সেই তাবারক স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে বণ্টন করে দিই। আল্লাহতায়ালা যে কত বড় মেহেরবান তা আমাদের দয়াল দরদী দাদাপীরের নামে এ ফাতেহা শরীফ ছিলো তারই ক্ষুদ্র এক নিদর্শন।