খাজাবাবা কুতুববাগীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

(খাজাবাবা কুতুববাগীর ১৩ বছরের ছবি)

সূর্য রশ্মিতে রাতের ঘন আঁধার মুছে গিয়ে যেমন বিশ্ব চরাচর আলোকিত করে ফুটে ওঠে স্নিগ্ধ ভোর, ঠিক তেমনি সকল আলোর উৎস সৃষ্টিকুলের মূল নূরে মোহাম্মদী (সাঃ) উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন। তাঁর শুভাগমনে দূরীভূত হয় সৃষ্টি জগতের যত কুসংস্কার, অনাচার, অন্যায়, অত্যাচার, অন্ধকার। পাপের সাগরে নিমজ্জিত মানুষকে হেদায়েতের পথে তুলে নেওয়ার জন্য কাল পরিক্রমায় আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-অলি-আউলিয়াদের জগতে পাঠিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টির আদি থেকে শুরু করে ভবলীলা সাঙ্গ হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এ কথা মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন শরীফে ঘোষণা করেছেন।

একবিংশ শতাব্দীর এই ক্রান্তিলগ্নে পাপসংকুল পৃথিবীতে সৃষ্টির কুল কায়েনাতের মূল উৎস দো’জাহানের নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সিরাজাম মুনিরার ধারক ও বাহক হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন অসংখ্য ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া বা বেলায়েতে মাশায়েখগণ। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বিশ্বের পাপী-তাপী গুনাহগার মানুষের আত্মার উন্নতি ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে পরশ পাথরের মতো মূল্যবান করে তোলার জন্য এবং নাজাত শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে শুভাগমন করেন আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ, আরেফে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, যুগের শ্রেষ্ঠতম সাধক, হেদায়েতের হাদী, নকশ্বন্দীয়া ও মোজাদ্দেদীয়া তরিকার বর্তমানে একমাত্র খেলাফতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শক খাজাবাবা শাহসুফি কুতুববাগী (মা.জি.আ.) ক্বেবলাজান হুজুর নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শুভকরদী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক ও সঙ্গতিসম্পন্ন মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জনাব মুন্সী খলিলুর রহমান এবং তাঁর মা জনাবা মোসাম্মৎ হালিমা খাতুন। তাঁরা দুজনই ছিলেন অত্যন্ত ধর্মভিরু আল্লাহপ্রেমী, অতিশয় পরহেজগার মানুষ। খাজাবাবা কুতুববাগী শিশু বয়সেই মাতৃহারা হন। যেদিন ঠিক ফজরের আযানের কিছুক্ষণ আগে ক্বেবলাজানের মায়ের ইন্তেকাল হয়, সেদিন সকালে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ঘাড়মোড়া গ্রামের সোলেমান গরুর রাখালের কাজ করতো সে ক্বেবলাজানদের গৃহপালিত ১৮টি গরু ধলেশ্বরী নদীর ওপারের চরে ঘাস খাওয়ার জন্য খুঁটা গেড়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে আসে। বাদ আসর জানাজার জন্য ক্বেবলাজানের মায়ের লাশ যখন মাঠে আনা হয়, তখন দেখা গেল দড়ি ছিড়ে, নদী সাঁতরে সবগুলো গরু লাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। জানাজা শেষে দেখা গেল প্রতিটি গরুর চোখ থেকে পানি ঝরছে। ক্বেবলাজানের মায়ের জানাজা পড়ান জৈনপুরী মাওলানা জনাব আব্দুল খালেক সিদ্দিকী সাহেব। সেদিন তিনি ওই গ্রামে অবস্থান করছিলেন। তিনি এই অভাবনীয় দৃশ্য দেখে বললেন, এমন ঘটনা কোনো দিন দেখিনি। এই মরহুমা তিনি নিশ্চয়ই আল্লাহর খুব প্রিয় এবং অতিশয় পরহেজগার ছিলেন।’

খাজাবাবা কুতুববাগীর মায়ের ইন্তেকালের পর তাঁর এক নিকটতম চাচী-আম্মা অপরিসীম স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে ক্বেবলাজানকে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন। ক্বেবলাজানের বয়স যখন ৮/৯ বছর, তখন চাঁদপুর জেলার দরবেশগঞ্জের সুযোগ্য আলেম মাওলানা মোঃ আব্দুল আউয়াল সাহেবের নিকট প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব আন্তরিকতার সঙ্গে ভবিষ্যতের এই মহান তাপসকে আরবী ও বাংলা ভাষা শিক্ষা দিতে থাকেন। খাজাবাবা কুতুববাগীর বয়স যখন ১২-১৩ বছর তখন একদিন শুভকরদী গ্রামের দক্ষিণে একদিকে ব্রক্ষ্মপুত্র অন্য দিকে শীতলক্ষ্যা এবং অপর দিকে মেঘনাÑ এই নদীর ত্রিমোহনার চরে সমবয়সীদের সঙ্গে যান। তখন দুপুর ১২টা। ঐ সময় খাজাবাবা কুতুববাগী একা শীতলক্ষ্যা নদীর দিকে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকেন, এমন সময় হঠাৎ দেখেন নদীর পাড়ে একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। ঐ বৃদ্ধ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য ইশারা করলেন। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান বৃদ্ধের কাছে গেলে বৃদ্ধ বললেন, বাবা আমাকে এই নদীটি পার করে দাও। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান তাকিয়ে দেখলেন অদূরেই একটি নৌকা বাঁধা, বৃদ্ধকে সেই নৌকায় পার করে দেওয়ার সময় নৌকা যখন নদীর মাঝ নদীতে, তখন বৃদ্ধ তাঁর পরিচয় দিয়ে বললেন, বাবা আমার নাম খিজির (আলাইহিস্ সাল্লাম)। তুমি ধ্যান করলেই আমাকে পাবে। এই বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তখন থেকেই খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান আধ্যাত্মিক সাধনার পথে চলে যান। এই সময়ে তিনি ৩ বছর কবর মোরাকাবায় (ধ্যান-মগ্ন) থাকেন এবং কবরে অবস্থান করেন। তারপর থেকে এই মহাসাধক আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অলি-আউলিয়া-পীর-ফকির-দরবেশের সান্নিধ্যে যেতে থাকেন। ১৩ থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত বাংলা ভারতের অসংখ্য মাজার শরীফ জিয়ারত করেন এবং বহু অলি-আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেক অলি-আল্লাহই খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে তাঁদের এত্তেহাদী তাওয়াজ্জুহ শক্তি দান করেন। এই সময়ে একদিন খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান মহান আল্লাহ ও রাসুলের (সাঃ) এশ্কে দেওয়ানা হয়ে মজ্জুব অবস্থায় সিলেটে হযরত শাহ সুন্দার (রঃ)-এর মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশে রওয়ানা হন। তাঁর মাজার শরীফ টিলার উপরে অবস্থিত, সেখানে যাওয়ার পথে একটি ঝর্ণা অতিক্রম করতে হয়; কিন্তু তাতে প্রবল স্রোত থাকার কারণে ঝর্ণাটি পার হওয়া মুশকিল ছিল ওই সময়। তখন খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান কীকরে পার হবেন সেই কথা ভেবে একটু চিন্তায় পড়ে যান। আশপাশে চোখের দৃষ্টি-সীমার মধ্যে কোথাও কোনো মানুষও দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে হঠাৎ এক বৃদ্ধ এসে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা আপনি কোথায় যাবেন? খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান বললেন, আমি হযরত শাহ্ সুন্দার (রঃ)-এর মাজার শরীফ জিয়ারত করতে যাব। তখন ওই বৃদ্ধ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে কোলে তুলে নিলেন এবং চোখের পলকে ঝর্ণাটি পার করে দিয়ে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান একটু ভয় পেয়ে দৌড়ে টিলার উপরে মাজারে উঠ গেলেন এবং মাজার শরীফ জিয়ারত করে চলে আসেন।

এর কিছুদিন পর কামেল পীর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে এক পর্যায়ে ফরিদপুরে চন্দ্রপুরী (রঃ)-এর মাজার শরীফ জিয়ারতের জন্য সেখানে যান এবং মাজার শরীফ জিয়ারত করেন। জিয়ারতের সময় চন্দ্রপুরী (রঃ)-এর রুহানী নির্দেশ পেয়ে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের এক নিকট আত্মীয় জনাব শওকত কাজী ও বন্দর থানার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি, কলগাছিয়া ইউনিয়নের হাজরাদি চানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মাওলানা নূরুল ইসলাম মাস্টার সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে, ঢাকার ডেমরা থানার অন্তর্গত মাতুয়াইল নিবাসী জগৎবিখ্যাত আলেম, পীরে কামেল, পীরে বে-মেছাল, পীরে বে-নজির, মুর্শিদে মোকাম্মেল, হাদিয়ে জামান, হেদায়েতের নূর, কুতুবে রাব্বানী, আলেমে হক্কানী, আলেমে রাব্বানী মোফাস্সিরে কোরআন, শাহসুফি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন আহমদ খান মাতুয়াইলী (রঃ) নক্শবন্দী মোজাদ্দেদীর কাছে দরবারে মোজাদ্দেদীয়ায় উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পর শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর দরবার শরীফে আসনগ্রহণ করেন এবং মুরিদানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের পরিচয় জানার পর তাঁর সঙ্গে আসা জনাব শওকত কাজী ও আলহাজ্ব মাওলানা নূরুল ইসলাম মাস্টার সাহেবকে লক্ষ্য করে বললেন, এই ছেলের মধ্যে বেলায়েতের ছাপ আছে! ছেলেটি মাদারজাত অলি।’ তখন সকাল দশটা। এই সময় থেকে রাত দশটা পর্যন্ত শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের সঙ্গে শরিয়ত ও মারেফাতের বিভিন্ন বিষয়ের উপর নিগুঢ়ভাবে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। এর ফলে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের মনে এমন এক ভাবের উদয় হল যে, ইনিই বুঝি আমার মনের মানুষ, যাঁর তালাশে এতটা বছর তৃষিত হৃদয় নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরেছি।’ কিন্তু মনের কথা আর মনে থাকলো না, কী এক অপার লীলায়! মন থেকে ক্বেবলাজানের পবিত্র জবানে তা বলেও ফেললেন, বাবা আপনিই আমার একমাত্র প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ।’

এরপর খাজাবাবা কুতুবাগী ক্বেবলাজান শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের কাছে ইলমে মারেফাতের তিনটি তত্ত্ব জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, বাবা আপনি এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর জেনে যাবেন। জেনে যাওয়ার পর এসে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। তখন শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের অনুমতি পেয়ে সঙ্গীদের নিয়ে খাজাবাবা কুতুবাবাগী ক্বেবলাজান বাড়ি ফিরে আসেন; কিন্তু তাঁর মনের ভিতরে খুঁজতে থাকেন ইলমে মারেফাতের তিনটি প্রশ্নের উত্তর এবং খুঁজতে খুঁজতে কিছুদিনের মধ্যে তা পেয়ে গেলেন! এরপর অত্যন্ত খুশি মনে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান এবং তাঁর বাল্যজীবনের সঙ্গী আলহাজ্ব নূরুল ইসলাম মাস্টার সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে মাতুয়াইল দরবারে মোজাদ্দেদীয়ায় উপস্থিত হন। মাস্টার সাহেব ছিলেন খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের দীর্ঘদিনের সাধনার জগতে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে একনিষ্ঠ সঙ্গী। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের কাছে তরিকা গ্রহণ করেন খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরও খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে সাদরে গ্রহণ করেন। তরিকা গ্রহণ করার পর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান জান-মাল দিয়ে আপন মুর্শিদের খেদমতে সম্পূর্ণরূপে আত্মনিয়োগ করেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরও ক্বেবলাজানকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে ইলমে শরীয়ত, তরিকত, হাক্বিকত ও মারেফাতের শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর ক্বেবলাজানকে অত্যন্ত স্নেহ এবং মায়া করতেন। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানও নিজ মুর্শিদের কদমে খেদমত করে অত্যাধিক আনন্দ লাভ করতেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের খেদমতে থাকার সময় খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে অনেক দুঃখ-কষ্ট, ত্যাগ-তীতিক্ষাসহ কঠিন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

তরিকা গ্রহণ করার পাঁচ বছর পর শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর একদিন খাজাবাবা কুতুববাগীকে তাঁর পৈতৃক বাড়ি শুভকরদী গ্রামে খানকা শরীফ প্রতিষ্ঠার হুকুম করেন। খাজাবাবা কুতুববাগী আপন পীরের নির্দেশ মতো খানকা নির্মাণ করলেন এবং প্রাণপ্রিয় মুর্শিদকে দাওয়াত করলেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর খাজাবাবা কুতুবাবাগীর এই দাওয়াত অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করলেন এবং খানকা শরীফ উদ্বোধন করে তিনি তরিকায়ে নকশ্বন্দীয়া মোজাদ্দেদীয়া প্রচার করতে আদেশ দিলেন। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান তখন থেকে নিজ মৃর্শিদের নামে মানুষদেরকে ক্বলব বাতলানো (ক্বলবের শিক্ষা) শুরু করেন। একদিন শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে আদেশ করলেন, বাবা এখন তোমাকে সাদী মোবারক করতে হবে।

শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর চন্দ্রপাড়া পাক দরবার শরীফের খলিফা হাকিম মাওলানা আব্দুল গফুর সাহেবকে নির্দেশ দিলেন যে, আপনি ১৩ দিনের মধ্যে জাকির শাহ্কে বিবাহ করানোর ব্যবস্থা করেন। এই নির্দেশ পেয়ে হাকিম মাওলানা আব্দুল গফুর সাহেব খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানেরই ভক্ত কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত মিঠামইন থানার ঘাঘরা গ্রামের জনাব মোঃ শাহেদ আলী সাহেবের প্রথম কন্যার সঙ্গে শুভবিবাহের প্রস্তাব করেন। জনাব মোঃ শাহেদ আলী সাহেব এই প্রস্তাব পেয়ে অত্যন্ত খুশি মনে তা গ্রহণ করেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের অনুমতিক্রমে পরের শুক্রবার বিবাহের দিন ধার্য হয়। মাতুয়াইল পাক দরবার শরীফের জামে মসজিদে বাদজুমা অসংখ্য আশেকান ও জাকেরানের উপস্থিতিতে মহাধুমধাম করে মহান আল্লাহর এই অলি-বন্ধু যুগশ্রেষ্ঠ হাদী খাজাবাবা কতুববাগী ক্বেবলাজানের শুভ বিবাহের কাজ সুসম্পন্ন করেন এবং তাঁকে খেলাফতের গুরুদায়িত্বভার অর্পণ করেন।

বিবাহের কিছুদিন পর শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর, খাজাবাবা কতুববাগী ক্বেবলাজানকে কলাগাছিয়া ছেড়ে বন্দর এলাকায় দরবার শরীফ স্থাপনের হুকুম করেন। মুর্শিদের আদেশ মতো বন্দর থানার স্বল্পেরচক এলাকায় নিজ মুর্শিদের নামানুসারে দরবারের নামকরণ করেন, কুতুববাগ দরবার শরীফ। আর এখান থেকেই খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান তাঁর নিজের নামে তরিকা প্রচার শুরু করেন। দিনে দিনে তাঁর সুনাম এলাকার গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ক্বেবলাজানের দরবার হয়ে ওঠে ভক্ত আশেক-জাকেরদের বালাখানা! ইতোমধ্যে খাজাবাবা কতুববাগী ক্বেবলাজানের ঘর আলোকিত করে আসেন প্রথম পুত্রসন্তান। তাঁর নাম রাখা হয় খাজা গোলাম রব্বানী; কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা বেশিদিন তাঁকে দুনিয়াতে রাখলেন না। শৈশবেই তিনি ইন্তেকাল করেন। নারায়ণগঞ্জ বন্দর দরবার শরীফে তাঁর মাজার শরীফ অবস্থিত। সেখানে খাজাবাবা কতুববাগীর জন্মতাদা পিতা মুন্সি খলিলুর রহমানের মাজারও রয়েছে।

প্রথম পুত্রের ইন্তেকালের পর, ঘর আলোকিত করে আসেন এক কন্যাসন্তান সৈয়দা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন তাসনিম। এরপর দ্বিতীয় পুত্র খাজা গোলাম রহমান তিনিও দুনিয়াতে বেশিদিন বেঁচে রইলেন না, আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে শিশু বয়সেই চলে গেলেন পরপারে। বাবাজানের প্রথম খানকা শরীফ কলাগাছিয়াতে তাঁর মাজার অবস্থিত। এভাবেই শুরু হয় খাজাবাবা কুতুববাগী (মাঃ জিঃ আঃ) ক্বেবলাজানের নকশ্বন্দীয়া-মোজাদ্দেদীয়া তরিকা প্রচারের বিরামহীন কর্মধারা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সুমননীত এই তাপসের আধ্যাত্মিক গুণের আলোয় মানুষের অন্ধকার ক্বলবকে আলোকিত করে যেমন তা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোত্র নির্বিশেষে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের নূরানী স্পর্শ, আর তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য পাওয়ার বুকভরা আশা নিয়ে ছুটে আসছেন কুতুববাগ দরবার শরীফে। ক্বেবলাজানের স্বভাবসূলভ মাধুর্য্য দিয়ে সবাইকে তিনি পরম মমতায় আপন করে নিচ্ছেন প্রত্যহ। এ এক আশ্চর্য ক্ষমতা! শুধু ব্যবহার দিয়েই যে মানুষের মন জয় করা সম্ভব। এখনো খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে যারা দেখেননি বা তাঁর সান্নিধ্যে আসেননি তাদের কাছে সত্যি আশ্চর্যই মনে হবে। আর যারা ক্বেবলাজানের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে রাসুল (সাঃ)-এর সত্য তরিকায় শামিল হচ্ছেন, তাদের আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরি লাভ করে, নিজ নিজ ক্বলবে আল্লাহপাকের ইস্মে জাতের জিকির জারি করছেন। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ইমানের সঙ্গে কবরে যাওয়ার মহানিয়ামত লাভের জন্য পবিত্র কোরআনের আলোকে সঠিক পথ দেখাচ্ছেন খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান ।

(Visited 5,265 times, 2 visits today)
Share