কিছু জাহেরী ও বাতেনী শিক্ষা-দীক্ষা

মাস্টার নবির উদ্দিন চিশতী

আরবী শব্দ ‘আরাফ’ থেকে মারেফাত। এর প্রকৃত অর্থ জ্ঞান বা অজনা বিষয়কে জানা। জ্ঞানের পরিধি দুইটি, (১) জাহেরী জ্ঞান (২) বাতেনী জ্ঞান। এ দুইপ্রকার জ্ঞান দ্বারা বর্তমান ও ভবিষ্যত সকল কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। একে সম্যক জ্ঞান বলে। আর একটি জ্ঞান-শক্তি বা ধি- শক্তি। যা ধারণা বা কল্পনা আয়ত্তে এনে কর্মে পরিণত করে। জ্ঞান বিচারে ইহলোকে কেউ নিকৃষ্টতম আবার কেউ শ্রেষ্ঠতম মহা মানবের দরোজা লাভ করেছেন। স্রষ্টা যখন শয়তান ও নফসের কর্মের দোষ বুঝতে পেরে সত্য পথের সন্ধ্যানে নির্দেশিত পথের দিকে তাকান, ঐ সময় পরম করুণাময়ের ক্ষমা ও দয়ার সাগরে জোয়ার উঠে। এবং ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া বা অলি-আউলিয়া, গাউছ কুতুব, আবেদ ও আবদালগণের মহাব্বত ও দর্শন মিলে।

ইমাম আবু হানিফা (রঃ) বর্ণনা করেন, শরিয়তে ও তরিকতে অন্তরের পবিত্রতা নিয়ে হক্কানী আলেমের সঙ্গে উঠা বসা করলে, পরহেজগার- পরহেজগারীকে ভালোবাসলে, কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, হালাল রুজী খাওয়া এসব মহান আল্লাহতায়ালার কাছে পছন্দনীয় কাজ। পাপ থেকে বিরত থাকা দুই কুলের বড় ইবাদত। তাই দ্বীনের জ্ঞান হাসিল করা, দ্বীন থেকে প্রজ্ঞা অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য জরুরী কাজ। হক্কানী অলির হাতে বায়াত গ্রহণ করে সমস্ত প্রকার আত্মমর্যাদা পীরের মহব্বতে রাখা। সমস্তপ্রকার পাপ, অন্যায় অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে তওবা করে আল্লাহতায়ালার আশ্রয় গ্রহণ করা।

ইমাম গাজ্জালী (রঃ) বলেন, ‘পবিত্রতাকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা, (১) বাহিরের অপবিত্রতা ও আবর্জনা হতে পবিত্র রাখা। (২) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পাপ ও অপরাধ থেকে মুক্ত রাখা। (৩) খারাপ ও ঘৃণ্য চরিত্র থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখা। (৪) স্রষ্টা ছাড়া সব কিছু থেকে মন ও হৃদয়কে পবিত্র করা। গুরুজনের শিক্ষাধীনে অনুশীলনের অভ্যাস গড়ে তোলা। গ্রন্থ কখনো শিক্ষাগুরু হতে পারে না। মানুষই মানুষের প্রকৃত শিক্ষাগুরু হতে পারে। এ কথা সঠিক যে, কোরআনে পুর্ণ মারফত আছে তালাশ করুন। মারেফতের নূর বা জ্ঞান কখনোই বই-কিতাবে থাকে না বরং একজন মুর্শিদের ইশারায় বাস্তবায়ন হয়। তাই রাসুলুল্লাহ (সঃ) নির্দেশ দিয়েছেন, হে মানব জাতি আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, এ দুটি বস্তুকে আকড়ে ধরে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, (১) আল্লাহতায়ালার কিতাব কোরআন কারীমুল্লাহ ও (২) আমার সন্তান ও পরিবারপরিজন।’ এরপর খোলাফায়ে রাশেদিনদের সুন্নত অবলম্বন করা অবশ্যই কর্তব্য।

জিকির, অজিফা, মোরাকাবা, মোশাহাদা, নির্জনতা অবলম্বন, হুক্কুল্লা এবাদ, ধৈর্য ও সহনশীলতা গ্রহণীয়। মোমেন-মোমেনা ও মুত্তাকিনের কলবে আল্লাহতায়ালার আরশমুয়াল্লা, (হাদিস) কলব আল্লাহ তায়ালার আরশেই এক ক্ষুদ্রতম অংশ। অর্থাৎ কুলুবুল মু’মিনিনা আরশুল্লাহ।’ মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক অর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন ও আলমে লাহুতের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞাত মুর্শিদ-কামেলের দীক্ষালাভ করে মারেফতের জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। শুধু জাহেরী জ্ঞান দ্বারা হাকিকতে পৌঁছা সম্ভব নয়। স্রস্টা বলেন, ‘আমি জীন ও ইনসানকে আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ অন্তরের পরিচ্ছন্নতা ও হৃদয়ের দর্পণ থেকে প্রবৃত্তির তাড়নায় মালিন্য ও কদর্য্যতা দুর করার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচিতি অর্জন করা যায়। হাদিসে কুদসীতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি গুপ্ত ধন-ভান্ডার ছিলাম। যখন আমি পরিচিত হওয়ার অভিপ্রায় করলাম তখন মাখলুক সৃষ্টি করলাম।’ সুতরাং এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, আল্লাহতায়ালা তাঁর পরিচয় ও মারেফত সম্পর্কে মানুষকে অবগত করানোর জন্যই সৃষ্টি করেছেন।

(Visited 5,172 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *