নকশবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকায় যারা বাইয়াত বা মুরিদ হইতেছেন তারা এবং তাদের বাবা-মা কী কী উপকার পাইতেছেন

যারা এই তরিকায় বাইয়াত হইতেছেন না, তারা নিজেরাও ঠকিতেছেন এবং তাদের বাবা-মাকেও ঠকাইতেছেন

 

আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী

ফাতেহা শরিফের গুরুত্ব ও উপকারিতা : আমার শিক্ষা হলো, ফজর নামাজ বাদ পাক-কালাম ফাতেহা শরিফ আদায় করা। পাক-কালাম ফাতেহা শরিফের প্রথমেই আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহসহ সাতবার ইসতেগফার পড়তে হয়। যেহেতু ইসতেগফার পড়ার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে সূরা নূর-এর ৩১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে মহান আল্লাহর নিকট তওবা করো। তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।’
সূরা হুদ ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট গুনাহ মাফ চাও। অতঃপর তার নিকট তওবা করো।’
সূরা তাহরিম-এর ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট খালেসভাবে তওবা করো।’
তওবার ব্যাপারে হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘আন আবী হোরায়রাতা (রাঃ) কালা সামি‘তু রাসুলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা য়াকুলু ওয়াল্লাহি ইন্নী আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু আলাইহি ফী লা য়াওমি আসারা মিন সাব‘ঈনা মাররাতান।’ রাওয়াহুল বোখারি।
অর্থ : হজরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, আমি প্রতিদিন সত্তুর বারেরও বেশি তওবা করি। সহিহ বোখারি শরিফ।
হাদিস : আনিল আগারিবনা য়াসারিন মুজানিয়্যি (রাঃ), কালা কালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা, ইয়া আয়্যুহান্নাসু তুবূ আলাল্লাহি ওয়াসতাগফিরুহু ফাইন্নী আতূবু ফিল য়াওমি মিআতা মাররাতিন। রাওয়াহু মুসলিম।
অর্থ : হজরত আগারিবনি য়াসার মুজানি (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো। এবং গুনাহ মাফ চাও। আমি প্রতিদিন একশত বার তওবা করি। সহিহ মুসলিম শরিফ।
এরপর সূরা ফাতেহা তিনবার পড়তে দিই। সূরা ফাতেহাকে উম্মুল কোরআন বলা হয় এবং নিসফুল কোরআনও বলা হয়। একবার সহিহ-শুদ্ধভাবে বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতেহা পড়লে অর্ধেক কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। দুই বার পড়লে একটি কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। সেখানে পড়তে দিই তিনবার। যেহেতু দুইবার পড়ার মধ্যে যদিও ভুল হয়ে যায় অথবা সহিহ-শুদ্ধ না হয়, সেই জন্য সংশোধনের নিয়তে আরেকবার বেশি দিয়েছি মোট তিনবার।
সূরা ফাতেহার ফজিলত : আন আবী সায়ীদিন রাফী ইবনিল মুয়াল্লা কালা কালা লি রাসুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা, আলা উ‘আল্লিমুকা আ‘যামু সূরাতিন ফিল কোরআনি কাবলা আন তাখরুজা মিনাল মাসজিদি ফাআখাযা বিয়াদী ফালাম্মা আরাদনা আন তাখরুজা কুলতু য়া রাসুলাল্লাহি, ইন্নাকা কুলতা লিউ‘আল্লিমান্নাকা আ‘যামা সূরাতিন ফিল কোরআনি। কালা আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন হিয়াস সাব‘উল মাছানি ওয়াল কোরআনিল আযীমুল্লাযী উতীতুহূ।’ (রাওয়াহুল বোখারি)
অর্থ : হজরত আবু সায়ীদ রাফী ইবনুল মুয়াল্লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) আমাকে বলেছেন, ‘আমি কি তোমাকে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বে পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ সূরাটি শিক্ষা দিব না? অতঃপর নবীজি (সঃ) আমার হাত ধরলেন এবং যখন আমরা মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলাম, আমি নবিজী (সঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে বলেছিলেন, তোমাকে কি কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাসম্পন্ন সূরাটি শিক্ষা দিব না? নবীজি (সঃ) জবাবে এরশাদ করলেন, তা হচ্ছে, সূরা ফাতেহা অর্র্থাৎ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। এতে সাতটি আয়াত রয়েছে, যা নামাজে বারবার পড়া হয়ে থাকে। আর এটি হচ্ছে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কোরআন। যা আমাকে দান করা হয়েছে। (সহিহ বোখারি)
এরপর সূরা ইখলাস দশবার পড়ার হুকুম দিই, সূরা ইখলাস’ অর্থাৎ কুলহুয়াল্লাহ, বিসমিল্লাহসহ তিনবার পড়লে একটি কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। সহিহ-শুদ্ধ ও তরতিবের সাথে নয়বার পড়লে তিনটি কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। এখানে
আমি একবার বেশি দিয়েছি। যেহেতু পড়ার মধ্যে অনেক সময় ভুল হয়, মাখরাজ উচ্চারণ ঠিকমতো হয় না, যার কারণে সংশোধনের জন্য কাফফারাস্বরূপ একবার বেশি দিয়ে দশবার পুরো করেছি। কারণ দশবার সূরা ইখলাস পড়লে তিনটি কোরআন খতম যেন ঠিক থাকে।
সূরা ইখলাসের ফজিলত : ওয়া আন আবী হোরায়রাতা (রাঃ) আন্না রাসুলাল্লাহি (সঃ) কালা ফী কুলহু আল্লাহু আহাদ ইন্নাহা তাদিল ছুলুছাল কোরআনি। (মুসলিম শরিফ)
অর্থ : হজরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত ‘মহানবী (সঃ) সূরা ইখলাস সম্পর্কে এরশাদ করেছেন, সূরা ইখলাস পবিত্র কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (মুসলিম শরিফ)
এরপর এগার বার দুরুদ শরিফ পড়তে দিই।
দরূদ শরিফ ছাড়া দোয়া কবুল হয় না, আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ শরিফ পড়ে, আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেন, এবং দশটি উঁচু দরজা দান করেন।
হাদিস শরিফে আরো উল্লেখ আছে, কেয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার অতি নিকটে স্থান পাবে, যে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরূদ শরিফ পড়ে থাকে।
হাদিস শরিফে আরো আছে, আল্লাহতায়ালার জমিনে কতক ভ্রমণকারী ফেরেশতা আছে, যারা আমার উম্মতের দরূদ-সালাম আমার নিকট পৌঁছে থাকে।
উপরোক্ত সাতবার ইসতেগফার, তিনবার সূরা ফাতেহা, দশবার সূরা ইখলাস, এগারবার উসিলাতের দরূদ শরিফ এগুলোর একসাথে নাম দিয়েছি ‘পাক-কালাম ফাতেহা শরিফ’। পাক-কালাম ফাতেহা শরিফ পাঠ করার মাধ্যমে চার জিলদ কোরআন খতমের সওয়াব, প্রথমেই দয়াল নবীজির রওজা মোবারকে হাদিয়া হিসেবে পাঠিয়ে দিই। এরপর সওয়াব নজর আহলে বাইত পাক-পাঞ্জাতনের রুহের ওপর সওয়াব পাঠাই। এরপর কাদরিয়া-চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া-মোজাদ্দেদিয়া চারও তরিকার ইমামগণ ও অলি-আবদাল, গাউস-কুতুব, নুজাবা-নুকাবা, আখাইয়ার, সবার পাক-আত্মায় সওয়াব রেসানি করি। তারপর নিজেদের পিতা-মাতা, যারা কবর বাড়িতে শুয়ে আছেন, তাদের আত্মার ওপরে পাক-কালাম ফাতেহা শরিফের চার জিলদ কোরআন খতমের সওয়াব বখশিশ করা হয়। সকালে চার খতম, সন্ধ্যায় চার খতম মোট আট খতমের সওয়াব তরিকার জাকের ভাই, জাকের বোন, পীর ভাই, পীর বোন যারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে, তাদের আত্মার ওপরে সওয়াব রেসানি করি।
এখানে বিশেষ একটি কথা হলো, আমাদের মা-বাবা যাদের ইন্তেকাল হয়েছে, তাদের আত্মার বা রুহের ওপরে সকাল-সন্ধ্যায় ফাতেহা শরিফের ৪+৪ = মোট ৮ জিলদ কোরআন খতমের সওয়াব বখশিশ হিসেবে পাঠানোর কারণে, আল্লাহতায়ালা দয়া করে তাদের যাবতীয় গুনাহ এবং কবর আজাব মাফ করে দিতে পারেন।
বাইয়াতের উপকারিতার ব্যাপারে কোরআনুল কারিমে সূরা ফাতাহর ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘লাকাদ রাদিয়াল্লাহু আনিল মু‘মিনীনা ইয য়ুবা‘ইয়ূনাকা তাহতাশ শাজারাতি ফা‘আলিমা মা ফি কুলুবিহিম ফাআনযালাস সাকীনাতা ‘আলাইহিম ওয়া আছাবাহুম ফাতহান কারীবা।’
অর্থ : বিশ্বাসীরা যখন বৃক্ষতলে দয়াল নবীজির নিকট শপথ গ্রহণ করলো, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। তাদের অন্তরে যা ছিল, তা তিনি জ্ঞাত ছিলেন। তাদের তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদের দান করলেন আসন্ন বিজয়।
তাই, এ আয়াত অনুযায়ী বোঝা গেল, তরিকায়ে নকশবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়ায় বাইয়াত বা মুরিদ হওয়ার কারণে, তারা নিজেরাও উপকার পাইতেছে এবং তাদের মাতা-পিতা চার চার আট জিলদ কোরআন খতমের সওয়াবের ভাগিদার হইতেছে। যে সমস্ত লোক, নকশবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকায় শামিল হতে পারতেছেন না, তারা নিজেরাও ঠকিতেছে এবং তাদের পিতা-মাতাকেও এই মহান নেয়ামত থেকে ঠকাইতেছে। অতএব সময় অপচয় না করে অবিলম্বে সকলেরই উচিত দয়াল নবীর সত্য তরিকায় শামিল হয়ে নিজের আত্মা পরিশুদ্ধ করে, নিজের ফায়দা লাভ করুন এবং মাতা-পিতাকে উপকৃত করুন।

(Visited 7,358 times, 1 visits today)
Share