বিভ্রান্তিতে আছেন যারা…

নাসির আহমেদ আল মোজাদ্দেদি

কর্ম ব্যস্ততার কারণে সামাজিক যোগাযোগ তেমন একটা হয়ে ওঠে না আজকাল। এক সময় সাহিত্য আড্ডা, মিটিং সমাবেশ কত জায়গায় গেছি। এমন কি ঢাকা থেকে অনেক দূরের গন্তব্যে যেতেও দ্বিধা হত না। বলা যায় পুরনো বন্ধু-বান্ধব অনেকের সাথে বছরের পর বছরও যোগাযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশে ফেসবুক-টুইটার-ভাইভার এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গতি সঞ্চার করছে। ব্যক্তিগতভাবে যাদের সঙ্গে বহুদিন যোগাযোগ নেই, তাদের অনেকের সাথে যোগাযোগ ঘটে যায় ফেসবুকের মাধ্যমে। ফেসবুক একাউন্ট খোলার পর প্রথম দিকে নিয়মিত বসলেও গত কয়েক মাস ব্যস্ততার কারণে বসাই হয়নি। হঠাৎ সেদিন গভীর রাতে কৌতুহল বশত ফেসবুক ওপেন করে দেখি অনেকেই আমাকে স্মরণ করেছেন। কেউ আবার বার্তা পাঠিয়েছেন, কেউ বন্ধু হওয়ার জন্য ফ্রে- রিকোয়েস্ট, কেউ পুরনো দিনের স্মৃতি জাগানির কোন ধুসর ছবি ট্যাগ করেছেন। এসব দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হলো, আমিতো আমার পীর ও মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের একখানা ছবি মোবারক আপলোড করতে পারি। যেই ভাবা সেই কাজ। গভীর নিমগ্ন মুর্শিদকেবলার সৌম্যকান্ত চেহারার ছবিখানা আপলোড করার পর বেশ দ্রুত সাড়া মিললো। যারা সূফী-সাধক, পীর-ফকির-দরবেশ, অলি-আল্লাদের ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল, তারা অত্যন্ত প্রসন্ন চিত্তে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। যারা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, তারা খুশি হবেন না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন, নিন্দা সূচক মন্তব্যে অশালীন ভাষায় একজন সূফী সাধককে গালাগাল করবেন! যতই বিস্ময়ের হোক ঘটনা তেমনি ঘটেছে। কেউ কেউ নেতিবাচক দৃষ্টির কারণে আমার মতো একজন কলামলেখক সাংবাদিক ও কবির কোন সূফী সাধকের প্রতি অনুরাগ দেখে বিস্ময়ে ‘থ’ হয়ে যাওয়ার কারণে, এক বাক্যের মন্তব্যও দেখেছি। মনে মনে হতাশ হয়েছি। বিশেষ করে যাদের শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে বিচরণ, তাদের অনেকেরই ধারণা নাস্তিকতায় আধুনিকতা। অনেকের কাছে এটা ফ্যাশনও। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, সেই ফ্যাশনে অনেকে আক্রান্ত। একজন লেখক কবি অথবা সাংবাদিক, সৃষ্টিশীল মানুষ সূক্ষ চিন্তাহীন হতে পারেন না। অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাতো আধুনিকতারই অন্যতম শর্ত। নিজের ফ্যাশন অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টায়, আধুনিক রুচির পরিচয় বহন করে না। আমিতো মনে করি মানুষ যা ধারণ করে সেটাই তার ধর্ম। একজন নাস্তিক যদি স্রষ্টায় অবিশ্বাসকে তার শান্তির পথ বলে মনে করেন, তাতো করতেই পারেন। আমি আস্তিক হয়ে আমার বিশ্বাস কেন তার ওপর চাপিয়ে দিতে চাইবো? তার নাস্তিক্যকেও আমি নিন্দা প্রশংসা কিছুই করবো না। কারণ, আমি ‘লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালইয়া দ্বীন’ আয়াতের মমার্থে বিশ্বাস করি, তোমার দ্বীন তোমার, আমার দ্বীন আমার। অর্থাৎ যার যার ধর্ম তার তার। কিন্তু যারা নিজের বিশ্বাসকে চুড়ান্ত সত্য বলে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চান, তারা কেমন আধুনিক? আস্তিক-নাস্তিক, আলো-অন্ধকার, সত্য-মিথ্যা, দিন-রাত্রি, জল-স্থল অসংখ্য বৈপরিত্যে এই পৃৃথিবী সজ্জিত। পৃথিবীতে অনেক লেখক দার্শনিক ছিলেন এবং এখনো আছেন সৃষ্টির অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। তারা সৃষ্টি শব্দটি ব্যবহার করতেও নারাজ! বলেনÑপ্রকৃতি! এ মহাবিশ্বের যাবতীয় রহস্যময়তা বা অলৌকিক ঘটনাপ্রবাহ তারা, তাদের মত ব্যাখ্যা করতে চান। আবার আমাদের জাতীয় কবি নজরুল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, মহাকবি আল্লামা ইকবাল, মীর্জা গালিব, ওমর খৈয়াম, মাওলানা রুমী কিংবা পারস্যের সূফী কবি শেখ সাদিসহ বহু কবি-সাহিত্যিক স্রষ্টার অস্তিত্বে গভীরভাবে বিশ্বাস করেছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো নোবেল পুরস্কারই পেলেন, মহান স্রষ্টার প্রতি তাঁর আকুতি জড়ানো আধ্যাত্মিক চেতনার কবিতামালা ‘গীতাঞ্জলি’র জন্য। তিনি লিখেছেনÑ ‘আমার মাথা নত করে দাও হে প্রভু/তোমার চরণ ধুলার তলে’। এই যে নিজের অহংবোধ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে, এক স্রষ্টার সান্নিধ্যের কথাই বলেছেন। এমনিভাবে রবীন্দ্রনাথের অজস্র কবিতামালা কিংবা পঙ্তিমালা এমন বিশ্বাস জড়ানো। ফকির লালন সাঁইয়ের অধ্যাত্ব দর্শনে সমান্তরাল প্রবাহিত রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বর চিন্তা। এত যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল, তিনিও কী অবলীলায় উচ্চারণ করেনÑ ‘তৌহিদেরই মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম, আমার মোহাম্মদের নাম’। কিংবা খোদারই প্রেমে শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে হায়, বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে হায়’। এ রকম অসংখ্য গান কিংবা কবিতার মধ্যেই সূফীবাদের সন্ধান পাই। বাংলা সাহিত্যের স্মরণীয় দুই কবির সাফল্যের বা আত্মপ্রতিষ্ঠার গৌরবময় ইতিহাস এখানে জড়িয়ে আছে। যারা আমার মুর্শিদ কোবলার ছবি মোবারক আমার ফেসবুক ওয়ালে দেখে নেতিবাচক দৃষ্টির কারণে অবাক হয়েছেন, তাদের অনেকেই কোনদিন আমার মুর্শিদ কেবলাকে সরাসরি দেখেননি বা দেখার সুযোগ হয়নি। অথচ কীভাবে তারা নির্মম মন্তব্য করলেন? নিন্দা করলেন। এমন শব্দ ব্যবহার করলেন, যা উচ্চারণ করতেও আমার দ্বিধা। কারণ, শব্দগুলি শালিনতার বাইরে। আমি মুর্শিদ কেবলাকে পরদিন রাতেই এই ঘটনাটি জানাই যে, বাবা, এরকম অশালিন ভাষায় অনেকেই নিন্দ করেছে আপনার, আবার অনেকে খুশি আপনার ছবি দেখে। আমি বললাম, বাবা, যারা নিন্দা করেছে। এদেরকে জবাব দেবো? বাবা বললেনÑ না বাবা, কোন প্রয়োজন নেই। কারণ, আপনারা তো জানেন, আমি একটা কথা সব সময় বলি, নিজের পিছনে নিজে লাগো, অন্যের দোষ তালাশ কর না। নিজের দোষের তো অন্ত নাই, অন্যের দোষ খুঁজবে কখন। এই দর্শনে যদি বিশ্বাস করেন, তাহলে কে কী বললো বা কি করলো, তা চিন্তা না করে, আপনি আপনার জগতে নিমগ্ন থাকেন। দেখবেন তাতে আপনি পরিশুদ্ধ হবেন’। আমার মুর্শিদের এই কথা শুনে, তখন আফসোস হলো, হায় আল্লাহ তারা কার সম্পর্কে মন্তব্য করলো! তারা যদি জানতো, তবে এমন মন্তব্য করতে পারতো না।

কুতুববাগ দরবার শরীফে বহু ডক্টরেট ডিগ্রিধারী, শিক্ষাবিদ, পন্ডিত, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পদস্থ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক-সম্পাদক, অভিনয় শিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, মুর্শিদকেবলার বাণী শুনতে আসেন। তাঁর শিক্ষা কী? তিনি বলেনÑ বাবারা, ‘মানবসেবাই পরম ধর্ম’। মানুষের সেবা করবেন। মানুষের সেবা করলে আল্লাহকেই সেবা করা হয়। মানুষের মনে আঘাত দিলে, আল্লাহর মনেই আঘাত দেয়া হয়। কারো মনে আঘাত দিবেন না। শিশু ও নারীদের স্নেহ এবং শ্রদ্ধা করবেন, নারীদেরকে মা বলে মনে করবেন। তাহলে কোন ধরণের কু-চিন্তা মাথায় আসবে না। ভুখা-অনাহারী পেলে খাবার দিবেন। বস্ত্রহীন পেলে বস্ত্র দিবেন এবং নিরন্তর নিজের ভিতরে আত্ম আবিস্কারের চেষ্টা করবেন। ডুব দিবেন। কারণ আপনার মধ্যেই রয়েছে এক মহা সমুদ্র, সেই সমুদ্র হচ্ছে অন্তর জগত। সেই জগতে নিজেকে খুঁজবেন। আমার মনে পড়ে গেল বিখ্যাত সেই উক্তি সক্রেটিস বলেছিলেনÑ কহড়ি ঃযু ংবষভ নিজেকে জানো। কিংবা পবিত্র কোরআনের বাণী ‘মান্ আরাফা নাফসা হু, ফাকাদ্ আরাফা রাব্বাহু’। যে তার নফসকে চেনে, সে তার রবকে চেনে। পৃথিবীর যত জ্ঞানী মানুষ তারা নিজেকে জানার চেষ্টা করেছেন, নিজের ভিতরে নিজেকে আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন। কারণ, মানুষ এমন এক প্রাণি, যার মধ্যে স্রষ্টার সমস্ত শক্তি নিহিত। সেই শক্তিকে জাগিয়ে তুলবার সাধনার কথা বলা হয় সূফীবাদের শিক্ষায়।

ক’দিন আগে আমি কোয়ান্টাম মেথড এর কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলাম, সেখানেও গিয়ে দেখি, তারা ধ্যান বা মেডিটেশনের কথা বলেন। সেখানেও তারা বললেন, মানুষের চেয়ে শক্তিশালী আর কিছু নেই। কারণ, আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণি। বুদ্ধিতে জ্ঞানে চিন্তায় শ্রেষ্ঠ যে প্রাণি, সেই শ্রেষ্ঠত্বকে জাগিয়ে তুলতে পারে না বলেই, মানুষের যতপ্রকার রোগ-শোক, দারিদ্র, বিপদ-আপদ। যে জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন নিজেকে, সে-ই মহা শক্তিধর মানুষ। পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞানী মানুষই শক্তিশালী। যে কারণে বলা হয়, Knowledge is power, Power is God. অর্থাৎ, জ্ঞানই শক্তি এবং শক্তিই আল্লাহ। এই জ্ঞান বা আত্ম-আবিস্কারের কথাই সূফীবাদ বলে। সূফীবাদের এ মহৎ শিক্ষা আমরা খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান হুজুরের কাছে পেয়েছি। এ দরবার শরীফে এসে দেখেছি, অহংকারী মানুষের অহংকার দূর হয়ে যেতে। আমি তো দেখেছি, এখানে মুরিদ ভাইদের মধ্যে নম্রতা-ভদ্রতা, স্নিগ্ধতা। আরো দেখেছি, মানবপ্রেম, এক মানুষের ভিতরে অন্য মানুষের জন্য যে দরদ বা ভালোবাসা, তা প্রকাশ পায় জাকের-মুরিদ ভাইদের ব্যবহারে। এই যে মানবপ্রেম তা বিশ্বখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় পাওয়া যায়। কারণ, পৃথিবীর মহৎ সাহিত্যিকরা অনেকেই ছিলেন সূফীবাদ বা সূফী দর্শনে বিশ্বাসী। এমন কি এ উপ-মহাদেশে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন প্রেমময় সূফী-সাধক পীর-ফকিররাই। তাঁরা সব ধর্মের মানুষকেই ভালোবোসেন। তাঁরা মানবতাবাদী তাঁরা প্রেমময়। আমি ভেবে পাই না যারা সৃজনের সাথে সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে যুক্ত, তারা কেমন করে একপেশে চিন্তা করেন? অন্যের মুখে ঝাল খাব কেন? আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে যদি কারো কোন খারাপির সঙ্গে যোগাযোগ হয়, তবেই তাকে খারাপ বলতে পারি। কিন্তু আমি যাঁর কাছে আসলাম না, দূর থেকে দেখলাম, যাঁর ছবি দেখে মানুষের মুখে কুৎসা রটনা শুনে, নিন্দায় সোচ্চার হলাম। গীবত করলাম। ভেবে অবাক হয়ে যাই যে, আমাদের সমাজে এখনো কত গভীর অন্ধকারে। মানুষের প্রতি মানুষের যে সম্মান, শ্রদ্ধা-ভক্তি এবং নিজেকে জানার যে মহান সাধনা, সেটা প্রকৃতির অনিবার্য সত্য। একজন প্রগতিশীল মানুষ অন্য একজন মানুষকে চিন্তার ভিন্নতা থাকলেও নিন্দা করতে পারেন না। অন্য মানুষের চিন্তাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারেন না। উপেক্ষাও করতে পারেন না। তার সাথে আমি একমত নাও হতে পারি, কিন্তু আমি তার চিন্তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করব না, এটাই হচ্ছে আধুনিকতা। কুতুববাগ দরবারে প্রতি বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ‘গুরুরাত্রি’তে মেডিটেশন বা মোরাকাবা হয়, কোরআন-হাদিসের আলোকে শরিয়ত, তরিকত হাকিকত ও মারেফত নিয়ে যে আলোচনা হয়, সে আলোচনার মধ্য দিয়ে মুর্শিদের ভক্ত-মুরিদানরা আত্মার খোরাক পান। শুদ্ধ মানুষ হওয়ার সঠিক পথে অগ্রসর হন। যখন আলোচনা সমাপ্তির পর বিশেষ মোনাজাত করেন, তখন তো তিনি শুধু তাঁর মুরিদানদের জন্য দোয়া করেন না। সমগ্র বিশ্ব মানবের জন্য দোয়া করেন। সে কারণে আমি দেখি যখন আমাদের দরবারের বার্ষিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা হয়, তখন সেই কোথায় মালয়েশিয়া, থাইল্যা-, সিঙ্গাপুর, শ্রিলংকা, সুইজারল্যা-, ইন্ডিয়াসহ নানান দেশ থেকে ভক্ত-আশেকানরা আসেন। ধর্মের, তারা সবাই মুসলমান না। যেমন গত বছর ওরছ শরীফের কয়েকদিন পর ফ্রান্সের কয়েকজন ভদ্র লোক দেখেছি। এরপর কিছুদিন আগে সুইজারল্যা- থেকে এসেছিলেন দুই ভদ্রলোক, তারা এসে খাজাবাবাকে দেখেই বললেন, He is saint, He is great. মুর্শিদ কেবলার যে, একজন জ্ঞানতাপস অনেক বড় অলি, এ সত্য তারা উপলদ্ধি করে তাদের ভাষায় তা প্রকাশ করেছেন।

আমার মুর্শিদ কেবলার ছবি মোবারক দেখে যারা বিরূপ মন্তব্য করেছেন, তাদের জন্য সুসংবাদ যে, ফেসবুকের ঘটনাটি বাবাজানের কাছে বললে তিনি আরো বলেন, তারা বোঝেনি বাবা, তাদের অন্তর চক্ষু খোলেনি। আমি তাদের জন্য দোয়া করি যেন, তারা নিজেকে চিনতে পারে এবং তারা যেন সত্যের সন্ধান পায়। তখনই আমার মনে পড়ে গেল হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর কথা। যারা তাঁকে কষ্ট দিত, তাদেরকে তিনি মাফ করে দিতেন এবং সেই যে বুড়ি, রাসুল (সঃ)-এর চলার পথে কাঁটা দিতেন, তাকে কয়েকদিন পথে কাঁটা দিতে না দেখে, রাসুল (সঃ) সেই বুড়ির খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন, বুড়ি অসুস্থ। তখন তাকে সেবা করে সারিয়ে তুললেন। এই যে মানবতার ঔদার্য, এ ঔদার্যের মধ্যে জ্ঞানের গভীর সত্য নিহিত রয়েছে। ধ্যান-সাধনা করে এমন একটি স্তরে মানুষ পৌঁছান যে, আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টি একাকার হয়ে যান। যেটাকে বলে ফানাফিল্লা’র স্তর, যে স্তরে পৌঁছে মুনসুর হাল্লাজ এর মত মহান জ্ঞানতাপস, আধ্যাত্মিক সাধক ‘হু আল্ হক’ না বলে বলেছিলেন, ‘আন্ আল্ হক’-‘আন্ আল্ হক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, আমি খোদা! কারণ তিনি নিজের সত্তার সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন, আল্লাহময় হয়ে উঠেছিল তাঁর সত্তা। কিন্তু তাঁকে বুঝতে না পেরে, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর তাঁর শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ, শুধু ‘আন্ আল্ হক’-‘আন্ আল্ হক’ বলে জিকির করছিল। তিনি নিজেও বিভ্রান্ত হরেয়ছিলেন। যা-ই হোক, আমি যে কথাটি বলতে চাই, কুতুববাগ দরবার শরীফে এসে বহু লোকের জীবনধারা পাল্টে গেছে। যারা কখনই নামাজ পড়েননি, তারা নামাজ পড়ছেন। অসত্য বলতে দ্বিধা করতেন না, তারা আজ সত্যের পথে গেছেন। যারা মানবপ্রেম বুঝতেন না, তারা মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা, দয়া-মায়া অবারিত করে দিয়েছেন। এই যে আদর্শ শিক্ষা, এ শিক্ষা একটি পরিপূর্ণ জীবন গঠনে সহায়ক বলে মনে করি এবং আমাদের অনুরোধ থাকবে, আপনারা যারা কুতুববাগ দরবার শরীফে আসেননি বা মুর্শিদ কেবলা সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে তেমন কিছু জানেন না। তারা আসুন, দেখুন এখানে কী হয়? এখানে এলেই যে মুরিদ হতে হবে তা নয়। যে এসেছে, সে জেনেছে। যে চিনেছে, সে কিনেছে। এই যে প্রবাদতুল্য বাণী বা বাক্য এর মধ্যে নিজেকে আবিস্কারের বা নিজেকে জানার পথ নিহিত বলে আমরা মনে করি। নর-নারীর জন্য যে শিক্ষা ফরজ সে শিক্ষা শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়, আধ্যাত্মিক শিক্ষাও প্রয়োজন। অন্তর চক্ষু যার খোলেনি, সে যত বই-পুস্তকই পড়–ন না কেন, অন্তর দৃষ্টি না খুললে কিছুই উপলব্ধি হবে না। উপলব্ধি করতে হলে, জ্ঞানের চক্ষু বা বাতেনী চক্ষু খোলা চাই। যা-ই হোক আর এ লেখা প্রলম্বিত করতে চাই না, শুধু এটুকু বলবো, আমরা যেন নিজেকে জানার সাধনা করি, মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করি। অন্যের নিন্দা না করি। নিজের ভুলত্রুটি শুধরানোর চেষ্টা করি, তাহলেই সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে পারবো। পরমকরুনাময় আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

(Visited 469 times, 1 visits today)
Share