সালাত বা নামাজ ব্যতীত কোনো মানুষই জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে বাঁচতে পারবে না

আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী

আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, কেন মানুষ নামাজের প্রতি উদাসীন বা অনীহা করে, তাই ফাহেশা অশ্লীলতা বেহায়াপনা বেপর্দা খারাপ কাজ হতে বাঁচতে হলে প্রথমেই আমি নামাজের কথা বলবো। কেননা, নামাজ অশ্লীলতা ও ফাহেশা কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখে। পাপ ও গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে নামাজের মতো বড় আমল কোরআন শরিফে অন্য কোনো আমল আর নাই। তাই প্রমাণস্বরূপ কোরআনের সুরা আনকাবুত ৪৫ নম্বর আয়াত তুলে ধরলাম।

অন্যায়-গুনাহ ও অশ্লীলতা হতে বাঁচার জন্য আল্লাহতায়ালা সুরা আনকাবুতের ৪৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘উতলু মা উহিয়া ইলাইকা মিনাল কিতাবি ওয়া আকিমিস সালাতা, ইন্নাস সালাতা তানহা আনিল ফাহশা-ই ওয়াল মুনকারি, ওয়ালা যিকরুল্লাহি আকবারু। ওয়াল্লাহু য়া‘লামু মা তাসনাউন।’
অর্থ: আপনার প্রতি যে কিতাব নাজিল হয়েছে আপনি তা পাঠ করুন এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয়ই সালাত বা নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখে বা ফিরাইয়া রাখে। আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন।

বেনামাজিদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কঠোর হুঁশিয়ারি সংকেত দিয়েছেন। কোরআন শরিফে সুরা মুদ্দাসসিরে ৪০ থেকে ৪৫ নম্বর আয়াত দেখুন। আল্লাহ বলেন, ‘য়াতাসাআলূনা আনিল মুজরিমীনা, মা সালাকাকুম ফী সাকার, কালূ লাম নাকু মিনাল মুসাল্লীন। ওয়া লাম নাকু নুতইমুল মিসকীন। ওয়া কুন্না নাখুজু মাআল খা-ইদীন।’
অর্থ: তারা জিজ্ঞাসা করবে পাপীদের অবস্থা সম্পর্কে। তোমাদেরকে জাহান্নামে কী কারণে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আর আমরা মিসকিনদেরকে খাদ্য দান করতাম এবং আমরা অন্যায় সমালোচনাকারীদের সাথে থাকতাম।

জাহান্নামের শাস্তি যে কত ভয়ংকর, তা আমি সুরা ইবরাহিমের ১৬ ও ১৭ নম্বর আয়াত তুলে ধরলাম। আল্লাহ বলেন,
‘মিও ওয়ারাইহী জাহান্নামু ওয়া য়ুসকা মিম মা-ইন সাদীদ, য়াতাজাররাউহু ওয়ালা য়াকাদু য়ুসীগুহু ওয়া য়াতীহুল মাউতু মিন কুল্লি মাকানিও ওয়া হুয়া মায়্যিতিন, ওয়া মিও ওয়ারাইহী আযাবুন গালীজ।’
অর্থ: তার সম্মুখে জাহান্নাম রয়েছে। সেখানে গলিত পূঁজ পান করানো হবে। যা অতি কষ্টে ঢোক গিলে গিলে পান করবে। কিন্তু তা গিলতে পারবে না। সব দিক থেকে তার কাছে মৃত্যুর যন্ত্রণা আসবে। কিন্তু সে মরবে না। আর তার সম্মুখে থাকবে আরো কঠোর আজাব।

বর্ণিত আছে, একাধারে ৫০০ বছর আজাব ভোগ করার পর জাহান্নামিরা ফরিয়াদ করে বিফল হয়ে পরবর্তী ৫০০ বছর ধৈর্যসহকারে আজাব ভোগ করবে। কিন্তু তাতেও বিন্দুমাত্র আজাবের লাঘবতা না দেখে বলবে হায়! আমাদের আর রেহাই নাই। তরতিবের সাথে নামাজ পড়ার কথা আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাঈলের ১১০ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেন, ‘ওয়ালা তাজহার বিসালাতিকা ওয়ালা তুখাফিত বিহা ওয়াবতাগি বাইনা যালিকা সাবীলা।’ অর্থ: আর নামাজ আপনি উচ্চস্বরে পড়বেন না এবং অতিশয় ক্ষীণ স্বরেও পড়বেন না। এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন করুন।

অমনোযোগী ও উদাসীন হয়ে নামাজ পড়লে কোনো ফল হবে না। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
‘ওয়া ইযা কামূ ইলাস সালাতি কামূ কুসালা। য়ুরাউনান নাসা ওয়ালা য়াযকুরূনাল্লাহা ইল্লা কালীলা। মুযাবযাবীনা বাইনা যালিকা লা ইলা হা উলা-ই ওয়ালা ইলা হা-উলাই ওয়া মাই য়ুদলিলিল্লাহু ফালান তাজিদা লাহু সাবীলা।’
অর্থ: যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন অমনোযোগিতার সাথে কেবল লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা খুব সামান্যই স্মরণ করে। যারা উভয়ের মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে, তারা এদিকেও নয়, ওদিকেও নয়। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি তার জন্য কোনো রাস্তা পাবেন না। (সুরা নিসা, আয়াত ১৪২)

কোরআন শরিফে নামাজ হেফাজতকারীদের জন্য উত্তম পুরস্কার রয়েছে। সুরা মাআরিজে উল্লেখ আছে, ‘ওয়াল্লাযীনা হুম আলা সালাওয়াতিহিম য়ুহাফিযূন।’
অর্থ: যারা তাদের নিজেদের নামাজ হেফাজত করে। অর্থাৎ যথাযথ আদায় করে, তারাই জান্নাতে অতিসম্মানের সাথে বাস করবে।
হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল (সঃ)-কে বলতে শুনেছেন। তোমরা বল তো, যদি তোমাদের বাড়ির দরজায় একটি নদী থাকে আর সে তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাতে কি তার শরীরের কোনো রোগ-ময়লা থাকবে? জবাবে সবাই বললো, না। রাসূল (সঃ) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ব্যাপারটাও তদ্রুপ। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।

হাদিসে আরো উল্লেখ আছে, হযরত যুহরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি দামেশকে আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, নবী করিম (সঃ)-এর সময় যা যা দেখেছি তার মধ্যে এ নামাজই আজ পর্যন্ত অবশিষ্ট আছে।

হাদিস শরিফে আছে, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়তে দাঁড়ায়, সে তখন তার প্রতিপালকের সাথে আলাপ করে। সুতরাং তখন ডান দিকে থুতু নিক্ষেপ করবে না। বরং প্রয়োজনে বাম পায়ের নিচে থুতু ফেলবে।

ইন্নাল্লাহা ক্বালা মান আদা লী ওয়ালিয়্যান আযানতুহূ বিল হারবি, ওয়ামা তাকাররাবা ইলাইয়া আবদী বিশাই ইন আহাব্বু ইলাইয়া মিম্মা ইকতারাযতু আলাইহি, ওয়ামা য়াযানু আবদী সামআহু আল্লাজী য়াসমাউ বিহী ওয়া বাসারাহুল্লাজী য়ুবসিরু বিহী ওয়া য়াদাহুল্লাতী য়াবতিশু বিহা ওয়া রিজলাহুল্লাতী য়ামশী বিহা। হাদিসে কুদসি। (বোখারি ও মিশকাত)
অর্থঃ আমার বান্দা ফরজ আদায়ের মধ্য দিয়ে আমার নৈকট্য লাভ করে। ফরজ আদায়ের পর নফল ইবাদতের মাধ্যমে তারা আমার ভালোবাসা লাভ করে। আমি যখন কাউকে ভালোবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। যখন সে আমার কাছে কিছু চায়, আমি তাকে তা দিই।

The Five Prayers are among the best acts of worship that the Muslim performs. Prayer is a unique training and developmental program which. if well and devotedly performed can achieve for a Muslim many valuable spiritual, physical and ethical gains. The importance of the prayer in Islam cannot be understand. It is the first pillar of Islam that the prophet. may the mercy and blessing of God be upon him mentioned after mentioning the testimony of faith by which one becomes a Muslims. It was made obligatory upon all the prophets and for all people. God has declared it’s obligatory status under majestic circumstance. once a man asked the prophet Mohammad (sm.) about the most virtuous deed. The prophet (sm.) stated that the most virtuous deed is the prayer. The man asked again and again and for the first three times The Prayer.

তাই আমি চিন্তা করে দেখলাম যে, মানুষ নামাজ ও আল্লাহর স্মরণ হতে গাফেল বা উদাসীন থাকে কেন। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাদের কোনো ভয় নাই বা বিশ্বাস নাই। মৃত্যুর পর কাল হাশরের দিন আল্লাহ তায়ালার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং পাপ-পুণ্যের বিচার হবে। এ বিশ্বাসের কমজুরি থাকার কারণে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে চায় না। এ সমস্ত আত্মার কালবের রোগ দূর করতে হলে এ মানুষদের একজন আল্লাহওয়ালা বা কামেল মোর্শেদের সান্নিধ্যে যেয়ে এবং তাদের কাছে দীক্ষা ও শিক্ষা গ্রহণ করে, বা কোরআন হাদিস মতে বাইয়াত গ্রহণ করে আত্মশুদ্ধি দিলজিন্দা ও নামাজে হুজুরি শিক্ষা গ্রহণ করা অতীব জরুরি। নচেৎ এ সমস্ত মানুষের মৃত্যুকালে নবীজির কালিমা ও আল্লাহর জিকিরের সাথে দম বাহির হবার ভয় আছে।

কাজেই আপনাদেরকে বিশেষভাবে অবগতির জন্য বলছি যে, এ অমূল্য সময় স্বপ্নের মতো চলে যাইতেছে আপনারা হুঁশ হন। মাতালের মতো আর কতদিন এভাবে থাকবেন? একটু চিন্তা করে দেখুন, আপনার বাবা কোথায় গেল? মা কোথায় গেল? ভাই বোন কোথায় গেল? ছেলেমেয়ে কোথায় গেল? তাই আপনি কি ভাবতেছেন যে, চিরদিন আপনি বেঁচে থাকবেন? নবী রাসূল অলি আল্লাহ গাউস কুতুব সকলেরই নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছে। কাজেই আপনিও তা গ্রহণ করবেন। তাই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সুরা আলে ইমরানের ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেন,
‘কুল্লু নাফসিন যাইকাতুল মাউত।’ অর্থাৎ প্রতিটি নফসকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সুরা নিসার ৭৮ নম্বর আয়াতে আরো বলেন,
‘আইনা মা তাকূনু য়ুদরিককুমুল মাউতু ওয়ালাও কুনতুম ফী বুরূজিম মুশাইয়াদাহ।’
অর্থঃ তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভিতরেও অবস্থান করো, তবুও।
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ অর্থঃ যেখান থেকে আসিয়াছ সেখানেই চলিয়া যাইতে হবে।

(Visited 2,175 times, 1 visits today)
Share