কদমবুছি ও হাতবুছির পক্ষে অসংখ্য দলিল

বিরোধীদের দাঁতভাঙা জবাব

 

আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী

বর্তমান জামানায় কিছু কিছু আলেম ও উম্মি মানুষ হাতবুছি ও কদমবুছিকে জঘন্য অপরাধ ও খারাপ মনে করেন। এমনকি তারা হারাম, নাজায়েজ, শেরেক ও বেদআত বলে প্রচার করছে। তাই আমি সে দিকে লক্ষ্য করে সেই সমস্ত লোকের ভুল-ভ্রান্তি ও ধারণা শোধরানোর জন্য, নিচে নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি হতে হাতবুছি ও কদমবুছি যে জায়েজ ও মুসতাহাব, সে বিষয়ে দলিল পেশ করছি। মানুষ যেন সত্যটাকে জেনে সঠিক রাস্তায় চলতে পারে ও ফয়সালা পেতে পারে।

দলিল নম্বর ০১ : দেখুন ইবনে মাজাহ শরিফ হাদিস গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ড, ৩৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘আন সাফওয়ান ইবনে আসাল ইছনাইনে মাজিল য়াহূদা কাব্বালূ আইদিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া রিজলাহু।’
অর্থ : হজরত সাফওয়ান ইবনে আসাল হতে বর্ণিত, দু’জন ইহুদি নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত ও পা মোবারক চুম্বন করলেন।

দলিল নম্বর ০২ : সহিহ বোখারি শরিফের টীকা আইনি-এর চতুর্থ খন্ডের ৬০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে- ‘নেক ও সৎ লোকের হাতবুছি ও কদমবুছি করাকে খুব পছন্দনীয় বলে মত প্রকাশ করেছেন।

দলিল নম্বর ০৩ : এই মর্মে ইমাম বোখারি (রহ.) রচিত ‘আদাবুল মুফরাদ’ ও তিরমিজি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তুহফাতুল আহওয়াজি’র সপ্তম খন্ডে ৫২৮ পৃষ্ঠা এবং ফাতহুল বারি ১১তম খন্ডে ৫৭ নম্বর দলিল, হজরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে ভিন্ন রেওয়ায়েতে হজরত আবু হোরাইরা (রাঃ) প্রায় একই আঙ্গিকে বর্ণনা করেছেন, ‘ফাকাব্বালনা য়াদাহু, কালা কাব্বালা আবু লুবাবাতা ও কাব ইবনু মালিক ও সাহিবাহু য়াদান্নাব্বিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা।’অর্থ : অতঃপর আমরা নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত মোবারক চুম্বন করলাম।

দলিল নম্বর ০৪ : এই মর্মে মোল্লা আলী কারি (রহ.) মিশকাত শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহে মিরকাত-এর ৯ম খন্ড ৭৫ পৃষ্ঠায় এবং শরহে মুসলিম ইমাম নববি (রহ.)-এর অভিমত বর্ণনা করে উল্লেখ করেন, যা ফাতহুল বারী ১১তম খন্ডে ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে।

দলিল নম্বর ০৫ : আবু দাউদ শরিফ এবং মিশকাত শরিফের ৪০২ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওঠা-বসা, চলাফেরা, দিক-নির্দেশনা হুবহু হজরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মধ্যে বিদ্যমান দেখেছি।’

দলিল নম্বর ০৬ : আবু দাউদ শরিফে আরো বর্ণিত আছে যে, ‘কানাত ইযা দাখালাত আলাইহি কামা ইলাইহা, ফাআখাযা য়াদাহা ফাকাব্বালাহা ওয়া আজলাসাহা ফী মাজলিসিহি ওয়া কানা ইযা দাখালা আলাইহা কামাত লাহু ফাআখাযাত য়াদাহু ফাকাব্বালাহু ওয়া আজলাসাহু ফী মাজলিসিহা।’
অর্থ : হজরত ফাতেমা (রাঃ) যখন রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করতেন, তখন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে তাঁর হাত ধরে চুমু খেতেন (এটাকে তাজিমে হুব্বি বলা হয়) এবং নিজের আসনে বসাতেন। আবার নবীজি যখন ফাতেমার ঘরে যেতেন, তখন ফাতেমা (রাঃ) নবীজিকে দেখে দাঁড়িয়ে তাঁর হাত ধরে নিজ স্থানে বসাতেন ও চুমু খেতেন।’

দলিল নম্বর ০৭ : হাদিসে আছে, ‘মান কাব্বালা রিজলা উম্মিহী ফাকাআন্নামা কাব্বালা উতবাতাল জান্নাতি।’
অর্থ : যে ব্যক্তি তার মায়ের পায়ে চুমু দিল, সে যেন বেহেশতের চৌকাঠে চুম্বন করলো।

দলিল নম্বর ০৮ : আরো হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘ইন্নাল জান্নাতা তাহতা আকদামিল উম্মুহাতিকুম’
অর্থ : নিশ্চয়ই মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।

দলিল নম্বর ০৯ : হজরত ওয়াজে ইবনে জার, তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘লাম্মা কাদিমনাল মাদীনাতা ফাজা‘আলনা তাতাবাদারা মির রাওয়াহিলিনা, ফানুকাব্বিলা য়াদা রাসুলিল্লাহি ওয়া রিজলাহু।’ অর্থ : আমরা যখন মদীনা শরিফে আগমন করলাম, তখন নিজ বাহন বা সওয়ার হতে তাড়াতাড়ি করে অবতরণ করলাম এবং রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত ও পা মোবারক চুম্বন করলাম।

দলিল নম্বর ১০ : নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘ফাতহুল বারী’ ১১তম খন্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, ‘ইন্না উমারা (রাঃ) কামা আলান্নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ফাকাব্বালা য়াদাহু।’অর্থ : হজরত উমর ফারুক (রাঃ) হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানার্থে দাঁড়াতেন এবং তাঁর হাত মোবারক চুম্বন করতেন।

দলিল নম্বর ১১ : ইমদাদুল ফাতাওয়া’ ৫ম খন্ড ৩৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘সহিহ জাওয়াজ তাকবিলে কদম ফী নাফসিহী হায়।’
অর্থ : বিশুদ্ধ মত হলো, কদমবুছি বৈধ।

দলিল নম্বর ১২ : ফতোয়ায়ে রশিদীয়া, আকাবিরে উলামায়ে দেওবন্দ মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রচিত ৪৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘তাজীম দানদার কো খাড়া হোনা দুরুস্ত হে, আওর পাও চুমনা ইসি শখস কা দুরুস্ত হে, হাদিস সে ছাবেত হে।’
অর্থ : বুজুর্গ আলেম পীর কামেল মোর্শেদের সম্মানার্থে দাঁড়ানো ও কদমবুছি করা বৈধ, তা হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত।’

দলিল নম্বর ১৩ : মাওলানা আশরাফ আলী থানুভি সাহেব রচিত কিতাব ‘তাকাশুফ’ এর ৪২৪ পৃষ্ঠায় তিনি বলেন, বুজুর্গানে দীনের হাত ও পা চুম্বন করা জায়েজ।

দলিল নম্বর ১৪ : বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনুল মাকারি (রহ.) বলেন, হজরত মুফিদুল আনসারি (রাঃ) হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কদম চুম্বন করেছিলেন। ফিকহুস সুনান আল আসর ১৪১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

দলিল নম্বর ১৫ : মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকার মুফতি আমীমুল এহসান সাহেব কর্তৃক লিখিত ‘আল আদাবুল মুফরেদ’ কিতাবের ৩৪১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, হজরত শোয়ায়েব (রাঃ) বলেন যে, হজরত আলী (রাঃ) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে হাতবুছি ও কদমবুছি করেছিলেন।

দলিল নম্বর ১৬ : লাতায়েফুল মালাম’ প্রথম খন্ড ১৫১ পৃষ্ঠায় আল্লামা সায়ের আলী বলেন, আল্লাহর নেয়ামতসমূহের মধ্যে একটি নেয়ামত আছে, যা আল্লাহতায়ালা আমাকে দান করেছেন। তা হলো এই যে, আমি প্রত্যেক আলেম দরবেশকে তাজিম করি এবং নম্রতার সাথে তাঁদের হাত ও পা চুম্বন করি।

উপরোল্লেখিত দলিলগুলি ঐ সমস্ত লোকদের জন্য যথেষ্ট মনে করি, যারা হাতবুছি ও কদমবুছিকে নাজায়েজ হারাম ও শেরেক এবং বেদআত বলে মনে করে, ঐ সমস্ত লোক আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে দূরে আছে। তাদের জন্য দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হলো, যা খন্ডন করার মতো শক্তি আল্লাহর সৃষ্টিজগতের মধ্যে কোনো আলেম রাখেন না।

(Visited 1,137 times, 1 visits today)
Share