সুফিবাদের প্রশংসায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

মুফাসসিরে কোরআন মুফতি মাওলানা হাসানুল কাদির আল মোজাদ্দেদি

১৮ মার্চ ২০১৬ বৃহস্পতিবার ভারতের নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ‘বিশ্ব সুফি ফোরাম’ একটি আন্তর্জাতিক সূফী সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ দিন তিনি তাঁর দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সূফীবাদ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আমাদের পীরে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, একুশ শতকের আধ্যাত্মিক মহাসাধক শাহসূফী আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী বাবাজানেরই অমিয় বাণীর অনুকরণ। বিশ্ববাসীর শান্তি ও কল্যাণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেন খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের কণ্ঠেই কণ্ঠ মিলিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তাবাহক হিসেবে ইসলাম ধর্মের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা যখন আল্লাহর ৯৯টি নামের কথা ভাবি, তখন আমরা দেখবো, এর মধ্যে কোনোটির সাথেই সহিংসতার সম্পৃক্ততা নেই। আল্লাহর প্রথম দুটি নামের অর্থই হলো দয়াশীল ও ক্ষমাশীল। আল্লাহ হলেন রহমান ও রহিম। যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস ছড়ায় তারা ধর্মবিরোধী।’

সূফীবাদকে বৈচিত্র ও বহুত্ববাদী সমাজের মেলবন্ধন হিসেবে উল্লেখ করে মোদি বলেন, এটাই ভারতের স্বতন্ত্র ইসলামি ঐতিহ্য গঠনে সহায়তা করেছে। তাঁর মতে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অর্থ কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। মোদি বলেন, সূফীবাদই ভারতে ইসলামের মুখ হয়ে উঠেছিল। এমনকি পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অত্যন্ত গভীরেও আছে এ সূফীবাদ। সূফীবাদই ভারতের বহুত্ববাদ এবং সরলতাকে উন্মোচিত করেছে। সূফীবাদের মর্মই হলো, নিজের দেশকে ভালোবাসা এবং জাতির জন্য গর্ববোধ করা। যার জন্যই ভারতের মুসলিমকে আলাদাভাবে চেনা যায়। প্রখ্যাত সূফী কবি আমির খসরুর উদ্ধৃতি টেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে যে দর্শনের অবদান সবচেয়ে মহান, তা হলো সূফীবাদ। সন্ত্রাসবাদের হিংস্র শক্তির বদলে সীমান্ত অতিক্রম করে সূফীবাদের আধ্যাত্মিক ভালোবাসা, চেতনা বিরাজ করলে এই অঞ্চল পৃথিবীর স্বর্গে পরিণত হতো।’ (সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৮ মার্চ ২০১৬)

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সূফীবাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। আসলে সত্যকে কেউ কোনোদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারবে না। সত্য একদিন না একদিন তার স্বমহিমায় প্রকাশ হবেই। ‘সূফীবাদই শান্তির পথ’- এই বাণী কুতুববাগী কেবলাজান আজ থেকে ৩৮ বছর আগে থেকেই নিরলসভাবে প্রচার করে আসছেন। আমরা যখন ছোট, অনেকের যখন জন্মই হয়নি, ঠিক তারও আগে থেকে কুতুববাগী বাবাজান সূফীবাদের কথা প্রচার করে আসছেন। এই সেই সূফীবাদ যার যাত্রা শুরু হয়েছিল রাসুলে কারিম হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে, আসহাবে সুফ্ফার মাধ্যমে। সূফীবাদ মূলত কোরআন ও হাদিসের নির্যাস। একজন সূফী মানেই তিনি প্রকৃত মুমিন মুসলমান। একজন সূফী মানেই তিনি আল্লাহর খাস বান্দা তথা অলি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৮ মার্চ সূফীবাদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে বিশ্ববাসীর সামনে বক্তব্য দিলেন। মোদির এ সত্য ও সাহসী উচ্চারণ তাঁকে আরো মহান করে তুলবে, এতে সন্দেহ নেই। তাঁর এ ভাষণে আমাদের পীর কেবলাজান খাজাবাবা কুতুববাগী অত্যন্ত খুশি হয়ে আনন্দচিত্তে আমাকে বললেন, মাওলানা কাদির সাহেব, মোদি সাহেব যে ভাষণ দিয়েছেন, তা অতুলনীয়। তাঁকে আমি দোয়া ও আশীর্বাদ করি। বাবা! নিশ্চয়ই তিনি কোনো খাঁটি মানুষ বা গুরুর সঙ্গ বা সুহবতে আছেন। নইলে সাধারণ কোনো নেতা বা রাষ্ট্রনায়কের কণ্ঠে এ ধরনের বক্তব্য আসবে না। আমি বাবা এতদিন ধরে সূফীবাদের বাণী প্রচার করে আসছি। মানুষ নানা কথা বলছে। এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথায় আশা করি মানুষের মনে সূফীবাদের পক্ষে দাগ কাটবে। আমরা আশা করবো, নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তব্যের অনুসরণে বিশ্বে সূফীবাদের প্রচার ও প্রসার কল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।

এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ কুতুববাগ দরবার শরীফের পীর কেবলাজানের মহব্বতের মুরিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পীর কেবলাজানের সুহবতে এসে, মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা শেষে কর্মী ভাইদের বিদায় অনুষ্ঠানে এক উপস্থিত বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে কুতুববাগী বাবার মতো মহা সূফীসাধককে অনুসরণ দরকার।’ সূফীবাদের মহান প্রচারক, বাবাজান কেবলার প্রশংসা করতে গিয়ে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাবা হুজুরের কাছে বারবার আসি। বাবা সুন্দর মনের মানুষ। আমি বহু দেশ-বিদেশে গিয়েছি। কুতুববাগী বাবার মতো এতো সুন্দর মনের মানুষ পৃথিবীতে আর দেখি নাই। অনেক পীরের কাছে গিয়েছি, এতো সুন্দর কথা আমি আর কারো কাছে শুনি নাই। আমি বলবো, বাংলাদেশে এত শিক্ষিত-জ্ঞানী পীর-অলি আর নাই। তাঁর প্রতিটি ভক্তিমিশ্রিত কথা হৃদয়ে-অন্তরের ভিতরে প্রবেশ করে, মানুষকে আল্লাহ ও রাসুলপ্রেমে পাগল করে দেয়। মানুষ সবকিছু ভুলে যায়, দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘বাবা হুজুর সূফীবাদের কথা প্রচার করেন। আপনারা এই সূফীবাদের বাণী মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিবেন। আপনারা সবাই দেখছেন, বর্তমান সমাজের অবস্থাটা কী? আমরা কি আল্লাহর পথে চলেছি? আমরা কি আল্লাহর রশি শক্ত করে ধরেছি? এ সমাজকে যদি সঠিক পথে, সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে এই একটিমাত্র মানুষের প্রয়োজন। কুতুববাগী বাবার মতো আধ্যাত্মিক মহাসাধকের প্রয়োজন।’

ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সূফীবাদের প্রশংসা করলেন। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সূফীবাদের গুণগান গাইলেন। খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে অনুসরণের কথা বললেন। এরপরও কি আমরা সূফীবাদের মহান প্রচারক খাজাবাবা কুতুববাগীকে চিনবো না? তাঁর ডাকে সাড়া দেব না? আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্য গ্রহণের তৌফিক দান করুন। আমিন।

(Visited 417 times, 1 visits today)
Share