আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশ্বন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
বেয়াদব (Impertinent) আল্লাহ্র রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। বেয়াদবি, হটকারিতা পরিহার করা প্রসঙ্গে, পবিত্র কোরআনে সুরা ফোরকান-এর ৬৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওয়া ইবাদুর রাহ্মানিল-লাযীনা ইয়ামশুনা আলাল আরদ্বি হাওনা’। অর্থ : তারাই আল্লাহ্তায়া‘লার বিশিষ্ট বান্দা, যারা ভূ-পৃষ্ঠে নম্রতা ও বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে। আদব-আজিজ-এনকেছারী-বিনয়-নম্র ও ভদ্রতার ব্যাপারে সূরা লোকমানে আল্লাহ্তায়া’লা আরোও বলেন, ‘ওয়ালা তুস্বা’য়্যির খাদ্দাকা লিন্নাসি ওয়ালা তাম্শি ফিল আরদ্বি মারাহান্; ইন্নাল্লাহা লা-ইউহিব্বু কুল্লা মূখতালিন ফাখুর। ওয়াকস্বিদ ফী মাশইকা ওয়াগদুদ্ব মিন্-স্বাওতিকা’।
অর্থ : হযরত লোকমান (আ:) তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে নসিহত করে বলেন, বৎস মানুষের দিক হইতে মুখ ফিরিয়ে নিও না এবং দম্ভভরে ভূ-পৃষ্ঠে চলিও না, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়া’লা কোন অহংকারী দাম্ভিক বা বেয়াদবকে পছন্দ করেন না। আর নিজ চলনে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, নিজের কণ্ঠস্বর নিচু কর। সূরা লোকমান আয়াত ১৮ ও ১৯।
আল্লাহ্তায়ালা ওয়াদা করেছেন, যে ব্যক্তি আদব নম্রতা-ভদ্রতা অবলম্বন করিবে তাকে আল্লাহতায়া’লা উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। এছাড়া বিনয়-ভদ্রতা হচ্ছে ঐক্যের মূলমন্ত্র। যে দুই ব্যক্তির মধ্যে বিনয় ও নম্রতা থাকবে, তাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হতে পারে না। আনফাসে ঈমান নম্রতার মধ্যে আকর্ষণ বৈশিষ্ট বিদ্যমান থাকে। নম্র ও ভদ্রলোকের প্রতি মানুষের মহব্বত সৃষ্টি হয়।
সূরা হুজ্রাত ১ ও ২ নং আয়াতে আদবের ব্যাপারে আল্লাহতায়া’লা বলেন, ( ইয়া আইয়্যুহাল লাযীনা আমানু লা-তুকাদ্দিমু বাইনা ইয়াদায়িল্লাহি ওয়া রাসুলিহি ওয়াত্তা কুল্লাহা ইন্নাল্লাহা সামীউন্ আলীম। ইয়া আইয়্যুহাল লাযীনা আমানু লা- তারফাউ আস্বওয়া তাকুম্ ফাওকা ছাওতিন নাবিয়্যি ওয়ালা তুযাহারু লাহু বিলক্বাওলি কাজ্বাহরি বা’দ্বিকুম লিবা’দ্বিন আন তাহ্বাত্বা ‘আমালুকুম ওয়াআনতুম লা-তাশ্‘উরূন।)
অর্থ: আল্লাহতায়লা বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! রাসুলের সামনে অগ্রগামী হইও না, আল্লাহকে ভয় কর, তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপরে নিজেদের কণ্ঠ উঁচু করিও না। কেননা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করা বা বড় করা চরম বে-আদবি। বে-আদবকে কখনও আল্লাহ পছন্দ করেন না’।
আদবের সাথে চলা, হাদিস থেকে দলিল দেয়া হলো : নবী করিম (সঃ) বলেছেন, মান্ লা আদাবা লাহু ফালা ঈমানা লাহু ওয়া লা তাওহীদা ওয়াশ শরীয়তা লাহু । অর্থ: যার আদব নেই, তার ঈমান ও তাওহীদ নেই। যার আদব নেই, তার শরিয়তও নেই। (আল হাদিস) যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করে, আল্লাহতায়ালা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। আদবের ব্যাপারে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রহ.) তাঁর রচিত গ্রন্থ মসনবি শরীফে উল্লেখ করেন যে, ‘আয় খোদা জুইয়াম তাওফীকে আদব, বে আদব মাহরুম গাশত আয ফজলে রব। অর্থ: হে খোদা তুমি দয়া করে, আমাকে আদব ভিক্ষা দাও। কেননা বে-আদব আল্লাহর রহমত হইতে বঞ্চিত থাকে। জালাল উদ্দিন রুমী আরো বলেন, বে-আদব বা তা খোদরা দাশতে বদ বালকে আতেশ দারহামা আফাক যাক। অর্থ: বে-আদব শুধু নিজেকেই ক্ষতি করে না বরং সে পৃথিবীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।