কোরআন হাদিস মতে অবশ্যই কামেল পীর-মুর্শিদ ধরতেই হবে

(খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান থাইল্যান্ড সফরে অসংখ্যা বৌদ্ধধর্মসহ অনান্য ধর্মাবলম্বীদের নকশাবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া সত্য তরিকার বাইয়াত পড়ান)

 

শাহ সুফি আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ নকশ্‌বন্দি মোজাদ্দেদি

কামেল পীরের কাছে বাইয়াত, মুরিদ বা শিষ্যত্ব গ্রহণ করার বিষয়ে কোরআনের দলিল।

সূরা মায়িদাহ্, আয়াত-৩৫
“ইয়া আইয়্যুহাল লাযিনা আ-মানুত্তাকুল্লা-হা ওয়াবতাগু ইলাইহিল ওয়াসীলাতা ওয়া জ্বা-হিদু ফী সাবীলিহী  লা’আল্লাকুম তুফ্‌লিহুন।”
অর্থ- হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় কর, তাকে পাবার পথে উছিলা ও মধ্যস্থতা অন্বেষণ বা তালাশ কর। অর্থাৎ উছিলা হলো জামানার কামেল পীর-মুর্শিদগণ এবং আল্লাহর পথে কঠর রিয়াজত ও সাধনা কর এবং জিহাদে আকবর কর। তাহলে আমি তোমাদের সাহায্য করবো, তোমরা সফল কাম হবে।

সূরা ফাতাহ্,  ১০ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,
“ইন্নাল্লাযীনা ইউবা-ই’উনাকা ইন্নামা- ইউবা-ই’উনাল্লা-হা; ইয়াদুল্লা-হি ফাওক্বা আইদীহিম্।”
অর্থ- হে নবী, যারা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করল তারা মূলত আমার হাতেই বাইয়াত গ্রহণ করল, আমার হাত তাঁদের হাতের ওপর রয়েছে। এই আয়াতের দ্বারা প্রমাণ হলো যে,  সাহাবীগণ, আসহাবে সুফ্ফাগণ যুগে যুগে বাইয়াত পড়িয়েছেন। তাই এখন পর্যন্ত পীর-মাশায়েকগণ বাইয়াত পড়াচ্ছেন এবং অনাগতকাল ধরে পড়াতে থাকবেন।

রাসুল (স.)-এর পরে আমিরুল মু’মিনিন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত সালমান ফারসী (রা.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত কাসেম বিন মোহাম্মদ বিন আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর সুলতানুল আরেফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত আবুল হাসান খেরকানী (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত আবু আলী ফারমুদী তুসী (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত খাজা  ইয়াকুব ইউসুফ হামদানী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর খাজায়ে খাজেগান হযরত আবদুল খালেক আজদেদানী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত শাহ খাজা মাওলানা আরিফ রেওগিরী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত খাজা মাহমুদ আনজির (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত খাজা শাহ আজীজানে আলী আররামায়তানী (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত খাজা  মাওলানা মোহাম্মদ বাবা ছাম্মাছী (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত শাহ আমীর সৈয়দ কালাল (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর শামসুল আরেফীন হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নক্শবন্দি বোখারী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত আলাউদ্দিন আত্তার (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত মাওলানা ইয়াকুব চরখী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত খাজা ওবায়দুল্লাহ আহরার (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত শাহসুফি জাহেদ ওয়ালী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত শাহ দরবেশ মোহাম্মদ (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি খাজেগী এমকাঙ্গী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত খাজা মুহাম্মদ বাকীবিল্লাহ (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর ইমামে রাব্বানী, কাইউমে জামানী, গাউছে ছামদানী হযরত শায়েখ আহম্মদ শেরহিন্দী মোজাদ্দেদ আল ফেছানী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত শেখ সৈয়দ আদম বিন নূরী (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত সৈয়দ আব্দুল্লাহ আকবারাবাদী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত মাওলানা শেখ আবদুর রহীম মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত মাওলানা শাহ অলীউল্লাহ মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত মাওলানা শাহ সৈয়দ আহমদ বেরলভী (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত শাহসুফি নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত মাওলানা শাহসুফি ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রাসুলে নোমা (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ ওয়াজেদ আলী শাহ মেহেদীবাগী (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজা মুহাম্মদ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী নক্শবন্দি মোজদ্দেদি (কু. ছি. আ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর মোজাদ্দেদে জামান শাহান শাহে তরিকত হযরত মাওলানা আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী নক্্শবন্দি মোজাদ্দেদি (রহ.) বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর শাহান শাহে তরিকত মোফাছছিরে কোরআন শাহ সুফি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন আহমদ খান মাতুয়াইলী (রহ.) নক্শবন্দি মোজদ্দেদি (কু. ছি. আ.) ক্বেবলাজান হুজুর বাইয়াত পড়িয়েছেন। এরপর তারই ধারাবাহিকতায় আমার দরদী মুর্শিদের কাছ থেকে খেলাফতপ্রাপ্ত হয়ে আমি খাকছার জাকির বাইয়াত পড়াচ্ছি এবং ধারাবাহিকভাবে এই বাইয়াতের ধারা কামেল পীর-মুর্শিদের মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।

সূরা নিছা, রুকু-৮, আয়াত-৫৯
“ইয়া আইয়্যুা-হাল্লাযিনা আমানু আত্বি’উল্লা-হা ওয়া আত্বি’র্উ রাসুলা ওয়া-ঊলিল্ আম্রি মিন্কুম্।”
অর্থ- হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করো, তবে তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসুলের অনুগত হও এবং রাসুলের ইত্তেবা, পায়রুবি কর। তোমাদের কওম ও জামানায় যাঁরা সাহেবে হুকুম ও কামেল পীর-মুর্শিদ তাঁদের অনুগত হয়ে যাও এবং তাদের পায়রুবি কর।

রাসুল  (স.) ফরমান- ‘আস্ শাহিকু ফি কাওমিহি কান্ নাবিয়্যি ফি উম্মাতিহি।’
অর্থ- তোমাদের কওমে (জামানায়) যাঁরা কামেল মুর্শিদ পাবে, তাঁদেরকে রাসুলতুল্য ভলোবাসবে, যেরকম আমার সাহাবাগণ আমাকে ভালোবেসেছেন তদ্রুপ তোমরাও তোমাদের কামেল মুর্শিদকে ভালোবাসবে।

জামে উল উছুল সূরা মোহাম্মাদের তাফসিরে আছে- হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহ.), যিনি তৎকালীন জগৎবিখ্যাত তাফসির কারক (বিশারদ) ও তাফসিরে কবীরের লেখক। তিনি হযরত ইমাম ছাঞ্জালী বা নাজিমুদ্দীন কোবরা (রহ.)-এর কাছে মুরিদ হওয়ার জন্য যান। ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীর ভিতরে এলেমের কিছুটা ফখর (অহঙ্কার) থাকার কারণে তিনি বলেছেন, আমার কাছে মুরিদ হলে তোমার ইলেম ভুলে যেতে হবে। অর্থাৎ মূর্খের মতো থাকতে হবে। এই কারণে তিনি তার কাছে মুরিদ হলেন না।  মৃত্যুর সময় ইবলিস নানা প্রকার ছওয়াল করবে এই চিন্তা করে ‘আল্লাহ এক’ সম্পর্কে ৩৬০ খানা দলিল মুখস্ত করে রেখেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর (অন্তিমকালে) সময় ইবলিস এসে আল্লাহ তায়া’লার একত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন ও তর্ক-বির্তক আরম্ভ করলে, তিনি ৩৬০ খানা দলিল দ্বারা আল্লাহ তায়া’লার একত্ব সম্পর্কে প্রমাণ করলেন। ইবলিস যুক্তি-তর্ক দিয়ে তাঁর সব দলিল বাতিল (ঈধহপবষ) করে পরে জিজ্ঞাসা করল, হে ফখরুদ্দীন রাজী! তুমি আল্লাহ তায়া’লার একত্ব সম্পর্কে আর কত দলিল দিতে পারবে? তখন হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী হতবুদ্ধি হয়ে বলেছিলেন, আমি আর দলিল জানি না। যখন তিনি হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিলেন তখন হযরত ছাঞ্জালী বা নাজিমুদ্দীন কোবরা (রহ.) রুহানিতে জানতে  পেরে তাঁর প্রতি দয়া হয়েছিল। তাই তিনি বলেছিলেন, হে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী!  তুমি বল আমার আল্লাহ বিনা দলিলে এক। তখন ইবলিস বলেছিল, হে ফখরুদ্দীন রাজী তোমার পিছনে যদি কামেল পীর না থাকত তবে আমি দেখতাম, তুমি কেমন করে ইমান নিয়ে কবরে যাও।
এই ঘটনা থেকে প্রমাণ হলো, ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীর মতো জগৎ বিখ্যাত এক আলেম এবং ইমাম হওয়া সত্ত্বেও  মৃত্যুকালে কামেল পীরের সাহায্য ছাড়া ইমান নিয়ে কবরে যাওয়া সম্ভবপর ছিল না। তবে কেমন করে বর্তমান জামানার মৌলভী, হাফেজ, ক্বারী, পন্ডিত, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক ও সুশীলসমাজসহ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, কামেল পীর ছাড়া ইমান নিয়ে কবরে যাওয়ার আশা করেন? সম্মানিত পাঠকগণ, এই বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন।

                                                                  বেলায়েতের প্রমাণ

 সূরা কাহাফ, আয়াত- ৬০ থেকে ৮০
উচ্চারণ- ‘ওয়া ইয্ ক্ব-লা মূসা লিফাতা-হু লা আব্রাহু হ্াত্তা আব্লুগা মাজ্বমাআ’ল্ বাহ্রাইনি আও আমদ্বিয়া হুক্বুবা। ফালাম্মা বালাগা মাজ্বমাআ’ বাইনিহিমা নাসিয়া হুতাহুমা ফাত্তাখাযা সাবীলাহূ ফিল্ বাহ্রি সারাবা। ফালাম্মা জ্বা-ওয়াযা ক্বলা লিফাতা-হু আ-তিনা গদা-আনা, লাকাদ্ লাক্বীনা-মিন্ সাফারিনা হা-যা নাছবা। ক্বলা আরআইতা ইয্ আওয়াইনা- ইলাছ্ ছ্াখ্রাতি ফাইন্নী নাসীতুল্ হ্তুা, ওয়ামা আনসা নীহু ইল্লাশ্ শাইত’নু আন্ আয্কুরাহূ, ওয়াত্তাখাযা সাবীলাহূ ফিল্ বাহ্রি, আজ্বাবা। ক্ব-লা যা-লিকা মা-কুন্না নাব্গি, র্ফাতাদ্দা আ’লা- আ-ছা-রিহিমা- ক্বাছছা। ফাওয়াজ্বাদা আবদাম্ মিন্ ই্বা দিনা- আতাইনা-হু রহ্মাতাম্ মিন্ ই্নদিনা ওয়া-আ’ল্লাম্না-হু মিল্লাদুন্না-ইল্মা। ক্ব-লা লাহূ মূসা হাল্ আত্তাবিউ’কা আলা আন্ তুআ’ল্লিমানি মিম্মা উ’ল্লিম্তা রুশ্দা। ক্ব-লা ইন্নাকা লান্ তাস্তাত্বীআ’ মাই’য়া ছব্রা। ওয়াকাইফা তাছ্বিরু আ’লা-মা-লাম্ তুহ্ত্বি বিহী খুব্রা। ক্ব-লা সাতাজ্বিদুনী ইন্শা আল্লাহু ছ-বিরাওঁ ওয়ালা-আ’ছীলাকা আমরা। ক্ব-লা ফাইনিত্তাবা’তানী ফালা তাস্আল্নী আ’ন শাইয়িন্ হাত্তা উহ্দিছা লাকা মিন্হু যিক্রা। ফানত্বলাক্বা, হাত্তা-ইযা রাকিবা ফিস্সাফীনাতি খারাক্বাহা; ক্ব-লা আখরাক্বতাহা লিতুগরিক্বা আহ্লাহা, লাক্বাদ্ জ্বি’তা শাইআন্ ইম্রা। ক্ব-লা আলাম্ আকুল ইন্নাকা লান্ তাস্তাত্বীআ’ মাই’ইয়া ছব্রা। ক্ব-লা লা তুআ-খিয্নী বিমা নাসীতু ওয়ালা র্তুহিক্বনী মিন আমরী উ’সরা। ফানত্বলাক্বা, হ্াত্তা-ইযা লাক্বিয়া গুলা-মান্ ফাক্বতালাহূ, ক্ব-লা আক্বাতাল্তা নাফ্সান যাকিয়্যাতাম বিগইরি নাফসিন; লাক্বাদ জ্বি’তা শাইয়ান নুক্রা। ক্ব-লা আলাম্ আকুল্ লাকা ইন্নাকা লান্ তাস্তাত্বীআ’ মাই’ইয়া ছব্রা। ক্ব-লা ইন সাআলতুকা আ’ন্ শাইয়িম্ বা’দাহা-ফালা- তুছ্-হ্বিনী, ক্বাদ বালাগ্তা মিল্লাদুন্নী উ’য্রা। ফান্ত্বলাক্বা, হাত্তা- ইযা-আতাইয়া- আহ্লা ক্বারইয়াতি নিস্তাত্বআ’মা- আহ্লাহা ফাআ-বাও আইঁ ইউদ্বয়্যিফূহুমা- ফাওয়াজ্বাদা- ফীহা জ্বিদা-রাই ইউরীদু আইঁ ইয়ানক্বাদ্দা ফাআক্বা-মাহ;ূ ক্ব-লা লাও শি’তা লাত্তাখায্তা আ’লাইহি আজ্বরা। ক্ব-লা হা-যা ফিরা-কু বাইনী ওয়াবাইনিকা, সাউনাব্বিউকা বিতা’উয়ীলি মা-লাম্ তাস্তাত্বি’ আলাইহি ছব্রা। আম্মাস্ সাফীনাতু ফাকা-নাত্ লিমাসা-কীনা ইয়া’মালূনা ফিল বাহ্রি ফাআরাত্তু আন্ আ’ঈবাহা ওয়াকা-না ওয়ারা-আহুম মালিকুই ইয়া’খুযু কুল্লা সাফীনাতিন্ গাছ্বা। ওয়া আম্মাল্ গুলা-মু ফাকা-না আবাওয়া-হু মু’মিনাইনি ফাখাশীনা-আইইউরহিক্বাহুামা ত্বুগইয়া নাত্তঁ ওয়া কুফ্রা। ফা আরাদ্না- আইঁইউব্দিলাহুমা-রব্বুহুমা- খইরাম্ মিনহু যাকা-তাওঁ ওয়া আক্বরাবা রুহ্মা। ওয়া আম্মাল্ জ্বিদা-রুফাকা-না লিগুলা-মাইনি ইয়াতীমাইনি ফিল মাদীনাতি ওয়া কা-না তাহ্তাহূ কানযুল্লাহুমা ওয়া কা-না আবূহুমা ছ-লিহ্ান, ফাআরা-দা রব্বুকা আইঁইয়াব্লুগা-আশুদ্দাহুমা- ওয়া ইয়াস্তাখ্রিজ্বা- কান্যাহুমা, রহ্মাতাম্ র্মি রব্বিকা, ওয়ামা ফাআ’ল্তুহূ আ’ন আম্রী; যা-লিকা তা’উয়ীলু মা-লাম তাছ্ত্বি’ আলাইহি ছব্রা।

                                         কোরআনে হযরত মুসা (আ.) এবং খিযির (আ.)-এর  ঘটনা

সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফে আছে, হযরত উবাই ইবনে কা’বের রেওয়াতে ঘটনার বিবরণে প্রকাশ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, একদিন হযরত মুসা (আ.) বনী ইসরাইলের এক সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, সব মানুষের মধ্যে অধিক জ্ঞানী কে? হযরত মুসা (আ.)-এর জানামতে তাঁর চাইতে অধিক জ্ঞানী আর কেউ ছিলেন না। তাই বললেন, আমিই সবার চাইতে অধিক জ্ঞানী। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর নৈকট্যশীল বান্দাদেরকে বিশেষভাবে গড়ে তোলেন। তাই এ জবাব তিনি পছন্দ করলেন না। এখানে বিষয়টি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়াই ছিল ‘আদব’। অর্থাৎ- একথা বলে দেয়া উচিত ছিল যে, আল্লাহ তায়া’লাই ভালো জানেন, কে অধিক জ্ঞানী। এ জবাবের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসা (আ.)-কে তিরস্কার করে অহী নাযিল হল- দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে অবস্থানকারী আমার এক বান্দা আপনার চাইতে অধিক জ্ঞানী। এ কথা শুনে মুসা (আ.) প্রার্থনা জানালেন, তিনি অধিক জ্ঞানী হলে তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান লাভের জন্য আমার সফর করা উচিত। তাই বললেন, ইয়া আল্লাহ! আমাকে তাঁর ঠিকানা বলে দিন। আল্লাহ বললেন, থলের মধ্যে একটি ভাজা মাছ নিয়ে নিন এবং দুই সমুদ্রের মিলনস্থলের দিকে সফরের উদ্দেশে যাত্রা করুন। যেখানে পৌঁছার পর থলের ভাজা মাছটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে, সেখানেই আমার এই বান্দার সাক্ষাৎ পাবেন। মুসা (আ.) আল্লাহর নির্দেশ মতো থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে রওনা হয়ে গেলেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর খাদেম ইউশা ইবনে নুনও ছিলেন। পথিমধ্যে একটি প্রস্তর খ-ের ওপর মাথা রেখে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়লেন। এখানে হঠাৎ মাছটি নড়াচড়া করতে লাগল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। মাছটি জীবিত হয়ে সমুদ্রে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি মু’জেযা প্রকাশ পেল যে, মাছটি সমুদ্রের যে পথ দিয়ে চলে গেল, আল্লাহ তায়া’লা সে পথে পানির স্রোত বন্ধ করে দিলেন, ফলে সেখানে পানির মধ্যে একটি সুড়ঙ্গের মতো হয়ে গেল। ইউশা ইবনে নুন এই আশ্চর্যজনক ঘটনা নিরীক্ষণ করছিলেন। মুসা (আ.) নিদ্রায় ছিলেন। যখন জাগ্রত হলেন, তখন ইউশা ইবনে নুন মাছের এই আশ্চর্যজনক ঘটনা তাঁর কাছে বলতে ভুলে গেলেন এবং সেখান থেকে সামনে রওয়ানা হয়ে গেলেন। পূর্ণ একদিন-একরাত সফর করার পর সকালবেলায় মুসা (আ.) খাদেমকে বললেন, আমাদের নাশতা আনো। এই সফরে যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নাশতা চাওয়ার পর ইউশা ইবনে নুনের ভাজা মাছের ঘটনা মনে পড়ল। সে ভুলে যাওয়ার ওযর পেশ করে বললেন, শয়তান আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। অতঃপর বললেন, মৃত মাছটি জীবিত হয়ে আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে চলে গেল। তখন মুসা (আ.) বললেন, সে ঘটনাটিই তো আমাদের লক্ষ্য ছিল। অর্থাৎ- মাছের জীবিত হয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার স্থানটি ছিল গন্তব্যস্থল। সে মতে তৎক্ষণাৎ তাঁরা ফিরে চললেন এবং স্থানটি পাওয়ার জন্য পূর্বের পথ ধরেই চললেন। প্রস্তর খ-ের কাছে পৌঁছে দেখলেন, এক ব্যক্তি আপাদমস্তক চাদরে আবৃত হয়ে শুয়ে আছেন। মুসা (আ.) সেই অবস্থানেই তাঁকে সালাম করলে খিযির (আ.) বললেন, এই জনমানবহীন প্রান্তরে সালাম কোথা থেকে এল? মুসা (আ.) বললেন, আমি মুসা। হযরত খিযির প্রশ্ন করলেন, বনী ইসরাঈলের মুসা? তিনি জওয়াব দিলেন, হ্যাঁ আমিই বনী ইসরাঈলের মুসা। আমি আপনার কাছ থেকে এ বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে এসেছি, যা আল্লাহ তায়া’লা  আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত খিযির বললেন, আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না। হে মুসা! আমাকে আল্লাহ তায়ালা এমন এক জ্ঞান দান করেছেন যা আপনার কাছে নেই। পক্ষান্তরে আপনাকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন, যা আমি জানি না। মুসা (আ.) বললেন, ইনশা আল্লাহ! আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। আমি কোনো কাজে আপনার বিরোধিতা করব না। হযরত খিযির (আ.) বললেন, যদি আপনি আমার সঙ্গে থাকতেই চান, তবে কোনো বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না। যে পর্যন্ত না আমি নিজে তার স্বরূপ বলে দিই। একথা বলার পর উভয়ে সমুদ্রের পাড় ধরে চলতে লাগলেন। ঘটনাক্রমে একটি নৌকা এসে গেল। তাঁরা নৌকায় আরোহণের ব্যাপারে কথাবার্তা বললেন। মাঝিরা হযরত খিযিরকে (আ.) চিনে ফেলল এবং কোনো রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই তাদেরকে নৌকায় তুলে নিল। নৌকায় চড়েই খিযির কুড়ালের সাহায্যে নৌকার একটি তক্তা তুলে ফেললেন। এতে হযরত মুসা (আ,) স্থির থাকতে পারলেন না । বললেন, তারা কোনো প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়াই আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিয়েছে। আপনি কি এর প্রতিদানে তাদের নৌকা ভেঙে দিলেন, যাতে সবাই ডুবে যায়? এতে আপনি অতি মন্দ কাজ করলেন। খিযির (আ.) বললেন, আমি পূর্বেই বলেছিলাম আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না। তখন মুসা (আ.) ওযর পেশ করে বললেন, আমি আমার ওয়াদার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমার প্রতি রুষ্ট হবেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) এ ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, হযরত মুসা (আ.)-এর প্রথম আপত্তি ভুলক্রমে দ্বিতীয় আপত্তি শর্ত হিসেবে এবং তৃতীয় আপত্তি ইচ্ছাক্রমে হয়েছিল (ইতিমধ্যে) একটি পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসল এবং সমুদ্র থেকে এক চঞ্চু পানি তুলে নিল। হযরত খিযির মুসা (আ.)-কে বললেন, আমার জ্ঞান এবং আপনার জ্ঞান উভয় মিলে আল্লাহ তায়া’লার জ্ঞানের মোকাবিলায় এমন তুলানাও হয় না, যেমনটি এ পাখির চঞ্চুর পানির সঙ্গে রয়েছে সমুদ্রের পানি। অতঃপর তাঁরা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের কূল ধরে হাঁটতে লাগলেন। হঠাৎ হযরত খিযির একটি বালককে অন্য বালকদের সঙ্গে খেলা করতে দেখলেন। হযরত খিযির (আ.) স্বহস্তে বালকটির মস্তক তার দেহ থেকে বিছিন্ন করে দিলেন। বালকটি মরে গেল। মুসা (আ.) বললেন, আপনি নিষ্পাপ প্রাণকে বিনা অপরাধে হত্যা করেছেন। এ যে গোনাহর কাজ করলেন। হযরত খিযির (আ.) বললেন, আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। মুসা (আ.) দেখলেন এ বিষয়টি পূর্ব অপেক্ষা গুরুতর। তাই বললেন, এরপর যদি প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে পৃথক করে দেবেন। আমার ওযর-আপত্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অতঃপর আবার চলতে লাগলেন। এক গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় এক বাড়িতে  গেলেন এবং তাদের কাছে পানি চাইলেন; কিন্তু ওরা সোজা না করে দিল। ওই বাড়িতেই হযরত খিযির (আ.) একটি ভাঙা দেয়াল দেখতে পেলেন এবং অন্য জায়গা থেকে পানি এনে তিনি নিজ হাতে প্রাচীরটি মেরামত করে দিলেন। মুসা (আ.) অবাক হয়ে বললেন, আমরা তাদের কাছে পানি চাইলে তারা দিতে না করল অথচ আপনি তাদের এত বড় কাজ করে দিলেন। ইচ্ছা করলে তাদের কাছে থেকে পারিশ্রমিক আদায় করতে পারতেন। হযরত খিযির (আ.) বললেন,এখন শর্ত পূরণ হয়েছে। এটাই আমার ও আপনার মধ্যে বিচ্ছেদের সময়। এরপর খিযির (আ.) উপরোক্ত তিনটি ঘটনার স্বরূপ মুসা (আ.)-এর কাছে বর্ণনা করে বললেন। অর্থাৎ, এ হচ্ছে সেসব ঘটনার স্বরূপ, যেগুলো দেখে আপনি ধৈর্য ধরতে পারেননি। রাসুলুল্লাহ (স.) সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, মুসা (আ.) যদি আরও কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকতে পারতেন, তবে আরও কিছু জানতে পারতেন।

সূরা কাহাফে, খিযির (আ.) ও মুসা (আ.)-এর ঘটনায় বুঝা গেল এত বড় একজন জলিল কদর নবী, যাঁর সঙ্গে আল্লাহ তায়া’লার কথা হতো, যার মাঝখানে কোনো বাহক জিব্রাইল বা ফেরেশতা ছিল না। মুসা (আ.)-এর মতো এত বড় দলিল-জলিল-কদর নবী হওয়ার পরেও একজন আল্লাহর বান্দা বা কামেল অলির কাছে তাকে যেতে হয়েছিল ইলমে মারেফতের জ্ঞান হাসিল করার জন্য।

কাজেই হে সম্মানিত পাঠকগণ! আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, এই ইলমে লাদুন্না বেলায়েত ও মারেফতের জ্ঞান যেসব কামেল পীর-মাশায়েকের কাছে বা অন্তরে আছে, তাদের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কি না।

(Visited 4,518 times, 1 visits today)
Share