ক্বেবলাজানের খেদমতে মালয়েশিয়া সফরসঙ্গী

মাওলানা মুফতি গোলাম আম্বিয়া

লাখ লাখ জাকের-আশেকানের মাথার তাজ, চোখের মণি আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ খাজাবাবা শাহসুফি সৈয়দ হযরত জাকির শাহ নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদী ক্বেবলাজানের খেদমতে সফরসঙ্গী হয়ে, মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করলো বাবাজানসহ আমরা নামলাম সামান্য হেঁটে যাওয়ার পর লক্ষ করলাম, অপরিচিত এক ব্যক্তি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সালাম দিয়ে ক্বেবলাজানের হাতে চুম্বন করলেন। ইংরেজি ভাষায় কিছু কথা বললেন। আবার দেশে ফিরে আসার দিনেও ঠিক একই দৃশ্য দেখতে পেলাম। আগের স্থানেই দাঁড়িয়ে আছেন এবং বাবাজানকে দেখে এগিয়ে এলেন সালাম বিনিময় করে তাঁর ভাষায় বোঝালেন, আপনাকে আল্লাহপাক বিশ্বের কুতুবদের সর্দার করেছেন। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ৩-এর পাতায় দেখুনশেষ পৃষ্ঠার পরদীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সাক্ষাৎ পেয়ে আমার জীবন ধন্য করলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, আমরা কবে মালয়েশিয়া আসবো কিংবা কবে ফিরে যাব, তা কীভাবে জানলেন তিনি? আমার ক্ষুদ্র মনের ভিতর এই একটি প্রশ্ন বারবার উঁকি দিতে থাকে। পরে বাবাজানের কাছে জানতে পারলাম, উনি হলেন মালয়েশিয়ায় কুতুবের দায়িত্বে আছেন।যা-ই হোক এরপর গন্তব্যে পৌঁছে বাবাজান বিভিন্ন স্থানে ইসলামিক সম্মেলন করেন। মুসলমান, খ্রিস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাবাজানের মহামূল্যবান নসিহত-বাণী শুনলেন এবং মাহফিল শেষে রাসুলপাক (সাঃ)-এর এই সত্য তরিকার দীক্ষায় বাইয়াত  গ্রহণ করলেন। দেশে ফিরে আসার দুই-একদিন আগে মাহফিল ছিল মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে। বাবাজানের আশেক-মুরিদ আমাদের জাকের ভাই জনাব শামসুদ্দীন বিন এস পীর মোহামেদ সাহেবের বাড়িতে। সেখানেও বহু মানুষ বাবাজানের নসিহতবাণী শুনে আল্লাহ ও রাসুলপাকের (সাঃ) এর সত্য তরিকায় শামিল হলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ক্যান্সারের রোগী। তাঁর পায়ে ক্যান্সার হওয়ায় লাঠি ভর করে সঙ্গে দুজন সাহায্যকারী নিয়ে কোনো রকমে আল্লাহর অলি খাজাবাবা কুতুববাগীর কাছে এসে উপস্থিত হয়েছেন একটু দোয়ার আশায়। ক্বেবলাজান তাঁকে দোয়া করে বললেন, মালিক আপনাকে ইনশা’আল্লাহ সুস্থ করবেন। অতঃপর খাজাবাবা কুতুববাগীর হাতে তিনি বাইয়াত গ্রহণ করলেন। মাহফিল শেষে শামসুদ্দীন বিন এস পীর মোহামেদ ভাই বাবাজানকে বললেন, বাবাহুজুর এখান থেকে দুই’শ কিলোমিটার দূরে মালাক্কা দ্বীপ, সেখানে আল্লাহপাকের একজন খাস অলির মাজার শরীফ আছে। ক্বেবলাজান বললেন, বাবা তবে চলুন, আমরা সেখানে যাব, আপনি ব্যবস্থা করেন। তখন রাত প্রায় ৯টা, আরেক সফরসঙ্গী আমাদের জাকের ভাই নারায়ণগঞ্জের আল জয়নাল গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন এবং বাবাজানের ব্যক্তিগত খাদেম মোঃ ইসমাইল হোসেন বাবুসহ আরও কয়েকজন মিলে রওনা হলাম মালাক্কা দ্বীপে। মালাক্কা পৌঁছলে শামসুদ্দীন বিন এস পীর মোহামেদ ভাই বাবাজানকে বললেন, বাবা কিছু খাবেন? বাবাজান বললেন, রুটি-চা পাওয়া যায় কি না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও দেখা গেল সেগুলো পাওয়া গেল না। আশপাশের দোকানপাট প্রায় বন্ধ। আমরা সমুদ্রপাড়ে গেলাম। কিন্তু কোনো স্পিডবোট চালকরা এত রাতে দ্বীপে যেতে কেউ সাহস  পাচ্ছিল না। দূর থেকে একজন চালক নিজে থেকেই এগিয়ে এসে বললেন, চলুন আমি যাব। স্পিডবোটে পাড়ি দিয়ে আধাঘণ্টার বেশি সময়   লাগল দ্বীপে যেতে। সমুদ্রে প্রচ- ঢেউ ভয়ঙ্করভাবে দুলছে আবার ভেঙে  পড়ছে। শোঁ-শোঁ বাতাস আমরা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। বাবাজান বুঝতে পেরে বললেন, চলো আল্লাহপাক আমাদের সাহায্য করবেন। এবার যেন পুরো উদ্যমে সাহস ফিরে পেলাম। আমাদের আর কিসের ভয়। সহিসালামতে মালাক্কা দ্বীপে পৌঁছে গেলাম। বাবাজানের সঙ্গে হজরত সৈয়দ ইসমাইল অলিউল্লাহ্ বলখী (রহ.)-এর মাজার শরীফ জিয়ারত করলাম। তিনি ছিলেন হজরত বড়পীর গাউসুল আজম মহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) সাহেবের পঞ্চম বংশধর।জিয়ারত শেষে বাবাজান বললেন, সবাই মোরাকাবায় বসেন। আমরা বসলাম কিছুক্ষণ পর দক্ষিণা বাতাসে অতি সুন্দর সুগন্ধি ভেসে এলো, যা আমরা সবাই অনুভব করতে পারলাম। সেখানে একটি ছোট মসজিদ আছে। ক্বেবলাজান আমাদের নিয়ে ওই মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। বাবাজান বললেন, অলি-আল্লাহর মাজার শরীফ থেকে খালি মুখে যাওয়া ঠিক নয়। অনেক রাত হয়ে গেছে। এখানে তো অন্য খাবার নেই, তাই মসজিদের ভিতর এক কোনায় পানির ঘটি আছে। ওই ঘটি থেকে সবাই একটু করে পানি তবারক হিসেবে পান করেন। আমরা পানি পান করে সমুদ্রের দিকে রওনা হলাম। স্পিডবোটে উঠব, এমন সময় দেখি আরেকটি বোট এসে পাড়ে ভিড়ল। চারিদিকে অন্ধকার, বুঝতে পারছিলাম না এত রাতে এই নির্জন দ্বীপে কে বা কারা এলো। হঠাৎ শুনতে পেলাম কে  যেন চিৎকার করে বলছে বাবা  আমি কিছু খাবার নিয়ে এসেছি। কাছে এলে দেখি সেই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী, যিনি আজই বাবাজানের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। তিনিসহ আরও ৫-৭ জন জাকের ভাই বোট থেকে নেমে এলেন। তখন স্থানীয় সময়  ভোররাত ৪টা। দেখলাম তাঁদের হাতে গরম পরোটা, হালুয়া এবং চা। তিনি কাছে এসে বাবাজানকে অনুরোধ করে বললেন, বাবা অনেক কষ্ট করে এই পরোটা-হালুয়া নিয়ে এসেছি, খেতে হবে। এখানে বলা দরকার যে, আল্লাহপাক তাঁর বন্ধুর কথাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সেগুলো হাজির করেছেন। কারণ আল্লাহর অলি পবিত্র  জবানে কোনো কিছু বলেন, কখনও কখনও আল্লাহপাক তা কবুল করেন। বাবাজান বললেন, আগে মাজার শরীফ জিয়ারত করে আসেন। তিনি লাঠি ভর করে এক পা সামনে বাড়ালেন। বাবাজান বললেন, লাঠি ছেড়ে দেন। লাঠি ছাড়াই যান, জিয়ারত করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন। আমাদের অবাক করে ভদ্রলোক সত্যি সত্যি লাঠি ফেলে দৌড় দিলেন। অথচ যে মানুষ লাঠি ছাড়া এক পা চলতে পারেন না, এরপরও দুজন লাগে তাঁকে ধরে রাখতে। সেই মানুষ কী করে বাবাজানের কথায় লাঠি ছেড়ে ঢালু থেকে উঁচুতে দৌড় গিয়ে মাজার শরীফ জিয়ারত করে দ্রুতই ফিরে এলেন? এখানে উল্লেখ করার বিষয় হলোÑ আমরা যে মালাক্কা দ্বীপে এসেছি তিনি জানতেন না। হয়তো কারো কাছে শুনেছেন, আমরা মালাক্কা দ্বীপে এসেছি। কিন্তু পরোটা-হালুয়া, চায়ের কথা তিনি কী করে জানলেন, বাবাজান মালাক্কা দ্বীপে যাওয়ার পথে চা, পরোটা খেতে চেয়েছিলেন? এই ঘটনা থেকেও প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহর অলি-বন্ধু মন থেকে কিছু কামনা করলে আল্লাহপাক কখনও কখনও তা কবুল করেন। অত:পর বাবাজান বললেন, এখানে একটা বিছানার ব্যবস্থা করেন। ব্যবস্থা করা হলো  বাবাজানসহ বসে আমরা তৃপ্তি সহকারে খেলাম। বাবাজান বললেন, বাবারা চলেন আমরা এখন কুয়ালালামপুরের দিকে রওনা হই। প্রিয় জাকের ভাই-বোনেরা, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আউলিয়া-আম্বিয়ায়ে মুজেজায়ে হক্কুন, কেরামাতুন আউলিয়ায়ে হক্কুন। অর্থাৎÑ নবীদের মোজেজা যেমন সত্য, তেমনি আউলিয়াগণের কেরামতও সত্য। বাবাজানের খেদমতে থেকে এরকম অগণিত কেরামতি আমরা দেখছি, যা ক্রমান্বয়ে কিছু কিছু বর্ণনা করে যাব ইনশা’আল্লাহ।

(Visited 316 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *