সম্পাদকীয় কলাম – জানুয়ারী, ২০১৬

কুতুববাগ দরবার শরীফের বার্ষিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমার এই আনন্দঘন মুহূর্তে আমাদের সকল জাকের ভাই-বোনসহ সবাইকে জানাই স্বশ্রদ্ধ সালাম ও আন্তরিক মোবারকবাদ। সেই সাথে জানাই এ মহতী উৎসবে কাফেলাবদ্ধ হয়ে যোগ দেবার উদাত্ত আহ্বান। বছর ঘুরে আবারও আমাদের ভাগ্যের দুয়ারে মহাপবিত্র আলোর উদ্ভাস নিয়ে এসেছে ওরছ শরীফ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা। আমরা যারা তরিকতপন্থি, তাদের সবারই জানা যে, আউলিয়া কেরামগণের ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে ছওয়াব রেছানীর অনুষ্ঠানকে সূফীসাধকগণ ‘ওরছ‘ নামে অভিহিত করেছেন। ওরছ হচ্ছে সূফীগণের এছতেলাহ্ বা খাস ভাষা। আহলে লোগাতগণ, সূফীসাধকগণ এই এছতেলাহকে মাজাজি অর্থে প্রণিধান করেছেন। উর্দু-ফার্সি অভিধান ‘ফিরোজুল্লোগাত’ ওরছ শব্দের হাকিকী ও মাজাজি অর্থের বর্ণনায় বলা হয়েছে, (১) কোনো বুযুর্গ অথবা পীর-মুর্শিদদের ইন্তেকাল সালানার তারিখ উপলক্ষে ফাতেহাখানির অনুষ্ঠান, (২) বিবাহের দাওয়াত, ওলীমার খানা। ‘ফার্সি আরবি এলিমেন্টস ইন বেঙ্গলি’ নামের কিতাবে (শেখ গোলাম মাকসুদ সম্পাতিদ) ওরছ শব্দের অর্থের বর্ণানায় লেখা হয়েছে ‘এনিভার্সারি ইন বেঙ্গলি মেমোরী অব এ সেইন্ট’। অর্থাৎ, কোন সূফীসাধকের ইন্তেকাল বার্ষিকীর স্মরণে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত (ড. এনামুল হক সম্পাদিত) ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘ওরছ’ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে ‘অলি-দরবেশদের বেছালাতে তাঁদের সমাধিস্থলে পবিত্র অনুষ্ঠান বিশেষ। এসব বিবরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, মহাপবিত্র ওরছ সাধারণ কোনও ধর্মীয় অন্ষ্ঠুান নয়, এ হচ্ছে অনন্য এক মহামিলনের তীর্থ, যেখানে অলিআল্লাহগণ রুহানীভাবে উপস্থিতি থাকেন এবং ভাগ্যবান ধর্মপ্রাণ মানবপ্রেমী ভক্ত, আশেক-জাকেরানদের সমাবেশ ঘটে।

আল্লাহতায়ালার প্রিয় বন্ধু মহান আউলিয়া কেরামগণের বেছালত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই ওরছ শরীফের তাৎপর্য অপরিসীম। সম্পাদকীয় নিবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখার অবকাশ নেই। এ বিষয়ে কুতুববাগ দরবার শরীফের পীর-মুর্শিদ আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় খাজাবাবা আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী কেবলাজান বিস্তারীতভাবে একাধিক নিবন্ধে মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমার তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। সে সব লেখা যারা পড়েছেন, তারা সম্যক উপলব্ধি করতে পারবেন কী গভীর তাৎপর্য অলি-আউলিয়া কেরামগণের আত্মার এই মহামিলনের। আমাদের দরদী দাদাপীর উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মোফাসসিরে কোরআন শাহসূফী আলহাজ মাওলানা হযরত কুতুবুদ্দীন আহম্মদ খান মাতুয়াইলী (রহ.)-এর পবিত্র ওফাত উপলক্ষে, প্রতি বছরের মতো এবারও কুতুববাগ দরাবর শরীফের দু’দিনব্যাপী বার্ষিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা আমাদের অসংখ্য জিকিরকারী ভাই-বোনদের এই মহামিলন বেঁচে থাকলে আবার আগামী বছর অর্থাৎ, ২০১৭ সালের মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমায় যোগদানের সৌভাগ্য হতে পারে। যেমন, গত বছর বিশ্বজাকের ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন, অথচ এবার যোগ দিতে পারবেন না, এমন জাকের-ভাইবোন অনেক রয়েছেন। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মরহুম ছারছীনা পীরসাহেবের নাতী আমাদের পীরভাই নূরে আলম দেওয়ান সাহেব। তিনি কয়েক মাস আগে ইন্তেকাল করেছেন। অথচ গত বছর তিনি ছিলেন আমাদের সাথে এবার নেই। বোনদের মধ্যেও অনেককে আমরা হারিয়েছি বিগত এক বছরে। মহান আল্লাহর দরবারে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আর আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, আসন্ন মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমায় যোগ দিতে যেন কোনরকম কার্পণ্য না করি। জানে-মালে খেদমত দিয়ে যেন নিজেদের ভাগ্যের ঘরে দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্যের বাত্বি জ্বালাতে পারি। যার অন্তরে যে নেক মকসুদ বা আশা আছে, তা পূরণের জন্য এই মহামিলনের আখেরী মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে আমরা হাত তুলতে পারি।

আল্লাহতায়ালা তাঁর অলি-বন্ধু আমাদের মুর্শিদ কেবলাজানের উছিলায় আরোও অধিক রহমত ও নিয়ামত দান করবেন। আর একটি কথা, মোনাজাত শেষে ধৈর্য্য নিয়ে এক লোকমা তাবারক খাবেন, মহাপবিত্র ওরছের এই তাবারকের উছিলায় যেন, বড় বড় কঠিন রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারি সেই নিয়ত করবেন। মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি সকলেই যেন, রসুল (সঃ) ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এই সত্য তরিকতের বাণী ও আদর্শের ছায়াতলে শামিল হয়ে, শেষ নি:শ্বাসের কালে দরদী মুর্শিদের উছিলায় অন্তরে ‘কল্বে’ আল্লাহর জিকির নিয়ে যেতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।

(Visited 170 times, 1 visits today)
Share