পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে কুতুববাগী বাবার মত মহা সাধককে অনুসরণ দরকার

সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি কুতুববাগ দরবার শরীফের ঐতিহাসিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা সফল করার পর আশেক-জাকের কর্মীভাইদের ছুটির অনুষ্ঠানে ৩ ফেব্রুয়ারি দরবার শরীফের পীর কেবলাজানের মহব্বতের মুরিদ, সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কর্মী ভাইদের উদ্দেশ্যে তাঁর উপস্থিত বক্তৃতায় বলেন-

আমি বিশ্বাস করি আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। জরুরী কাজে দূরে থাকার কারণে আমি ওরছ শরীফ ও বিশ্বজাকের ইজতেমার আখেরী মোনাজাতে আসতে পারি নাই, সে জন্য আমার দুঃখও কম নয়। বাবাহুজুরের কাছে বারবার আসি, বাবা সুন্দর মনের মানুষ। আমি বহু দেশ-বিদেশে গিয়েছি কুতুববাগী বাবার মতো এতো সুন্দর মানুষ পৃথিবীতে আর দেখি নাই। অনেক পীরের কাছে গিয়েছি এত সুন্দর কথা আর কারো কাছে শুনি নাই। আমি বলব বাংলাদেশে এত শিক্ষিত-জ্ঞানী পীর-অলি আর নাই। তাঁর প্রতিটি ভক্তিমিশ্রিত কথা হৃদয়ে-অন্তরে ভিতরে প্রবেশ করে, মানুষকে পাগল করে দেয়, মানুষকে উন্মাদ করে দেয়। মানুষ সব কিছু ভুলে যায়, আত্মীয়-স্বজন পরিবার সব ভুলে যায়, দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায়। দেখেছি এই মাঠে। ওরস শরীফ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমার কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হচ্ছিল, আমি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম, লক্ষ্য করে দেখলাম অসংখ্য পীর ভাইয়েরা মাঠে কাজ করতে ছিল। এই সময় বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি, আল্লাহ বৃষ্টি দিওনা তুমি এই সমাবেশকে নষ্ট কর না, আল্লাহ আমাদের কথা রেখেছেন বৃষ্টি হয়নি। সুন্দরভাবে সমাবেশ ও আখেরী মোনাজাত সম্পন্ন হয়েছে।

একটা কথা না বললেই নয়, বাবা হুজুর তো সূফীবাদের কথা বলেছেন, আপনারা এই সূফীবাদের বাণী মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিবেন, মানুষকে সৎ পথে আনার চেষ্টা করবেন। আপনারা সবাই দেখছেন বর্তমান সমাজের অবস্থাটা কি! আমরা কি আল্লাহর পথে চলেছি? আমরা কি আল্লাহর রশি শক্ত করে ধরেছি? এ সমাজকে যদি সঠিক পথে, সৎ পথে আনতে হয়, সমাজে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে এই একটিমাত্র মানুষের প্রয়োজন, কুতুববাগী বাবার মত আধ্যাত্মিক মহা সাধকের প্রয়োজন, বাবা হুজুরের মত একজন খাঁটি মানুষের প্রয়োজন।

আমি চট্টগ্রামে-এ জমিয়তুল-ফালাহ জাতীয় মসজিদ করেছিলাম, জমিটা আর্মির জন্য দিয়েছিলাম। কি মুসলমান আমরা আল্লাহর ঘরে নামাজ পড়তে যাই, দোয়া চাইতে যাই। কিন্তু সে সব স্থানে কি ঘটনা ঘটে? জুতা চুরি হয়! আমার দুঃখ পায়, আল্লাহ তুমি কেন বিপথে নিচ্ছ, সঠিক পথ কেন দেখাও না! কেন সৎ পথে তোমার রাস্তায় আমাদের কোরবানি হতে দাও না! আবার সেই দিন কবে আসবে জানি না, ফিরে আসবে, আসতে বাধ্য। আসবেই আসবেই। এই সব সূফীবাদের মানুষ, এই রঙের মানুষ বাবাহুজুরের মিষ্টি কথায় আবার আমরা একদিন না একদিন সুখ ও শান্তির পথে ফিরে যাব।

অনেক কষ্ট মনে, অনেক ব্যথা-বেদনা মনে, সারাবিশ্বে ইসলাম আজ অস্থীর, বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে মানুষ, কত মানুষের জীবন যাচ্ছে অকালে। শিশু-বাচ্চা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে! কে সৃষ্টি করেছে এ বিপদ আমাদের জন্য? কে সৃষ্টি করেছে এই রিফিউজিদের? ছোট্ট নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে যাচ্ছে নিজের দেশ ছেড়ে কারা? কারা এ সব সৃষ্টি করেছে? যারা মিথ্যে প্রচার করছে আমরা জঙ্গিবাদ! তাদের বলে দিতে চাই আমরা জঙ্গিবাদ নই, আমরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আমরা জঙ্গি বিশ্বাস করি না। যা কিছু ঘটে তা এক আল্লাহ ছাড়া কেউ করতে পারে না। আর প্রচার করা হচ্ছে জঙ্গিবাদ! দাড়ি দেখলেই জঙ্গিবাদ, টুপি মাথায় দেখলেই জঙ্গিবাদ, কোথায় যাচ্ছি আমরা? ইসলামকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি আমরা? আমরা তো ইসলামের মিত্র হইনি, ইসলামরে শত্রু হয়েছি! দেখছি, পশ্চিমা দেশ সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলি ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা আজ আমাদের দুর্নাম গায় আমরা জঙ্গি, আমরা নাকি জঙ্গি! হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করে আল্লাহর আসক্ত হব। আমরা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনবো। শান্তি আসবে আমাদের সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বেশি দিন আর অপেক্ষা করতে হবে না, যদি বাবা হুজুরের মত মানুষ থাকে আমার বিশ্বাস তিনিই পারবেন সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। আমি বাবাহুজুরের কথায় মুগ্ধ হই, নিজেকে হারিয়ে ফেলি, কি সুন্দর কথা বলেন, কি সুন্দর চেহারা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতে হয়। আমি খুব বেশি আসতে পারি না, বাবাহুজুর আমাকে খুব ভালোবাসেন। খুব ভালোবাসেন। তিনি বলেছেন, বাবা আসবেন ওরছ শরীফে আশেক-জাকের কর্মীরা দীর্ঘ দেড় মাস কাজ করেছে, তাদের বিদায়ের দিন আপনি থাকবেন। আমি এসেছি আপনাদের বিদায় জানাতে, একটু আগে এক ভাই বলছিলেন, কোন বিদায় নাই, বার বার আসতে হবে। বার বার আসতে হবে। বাবা হুজুরের কাছে দরবারে আসতে হবে, কদমবুছি করতে হবে। নসিহত নিতে হবে, তাঁর কাছে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা যত দিন বাঁচি মানুষ হয়ে বাঁচতে হবে।

প্রতিদিন কত মানুষ মরছে। প্রতিদিন কত মানুষ রোগে ধুঁকছে তার হিসাব জানি না আমরা, কত মায়ের বুক খালি হচ্ছে হিসাব জানি না আমরা, কত ভাই ভাইকে হারাচ্ছে হিসাব জানি না আমরা, এই কি আল্লাহর রাস্তা? এই কি আল্লাহর পথ? বিশ্বাস করতে হবে একজনকে আর আমাদের মালিক একজন। তিনিই রাখেন, তিনিই মারেন, তিনিই ভাসান, সব একজনই করেন। আল্লাহকে বলি, হে আল্লাহ শক্তি দাও, যেন আমার পীর কেবলাজানের পাশে থাকতে পারি, মানব সেবা করতে পরি, জনগণের সেবা করতে পারি। আল্লাহর কাছে আমরা চাইবো, চোখের পানি ফেলে চাইবো, শেষরাতে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাইবো, কী চাইবো? আল্লাহ তোমার পথে যেন থাকতে পারি। এটাই চাইবো আর কিচ্ছু আমাদের দরকার নেই, ওইটাই একমাত্র শান্তির পথ, ওইটাই একমাত্র মুক্তির পথ, ওইটাই সূফীবাদের পথ। আমি বাবাহুজুরকে সালাম জানাই, মানুষটাকে আল্লাহ অনেক হায়াৎ দেন। কিছুক্ষণ আগে দশ তলায় দায়রা শরীফে বসে আমাকে ভালোবেসে বললেন, বাবা, আপনার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আরো নেক হায়াৎ চাই।’

আমরা সাধারণ মানুষ অনেক গুনাহগার, আমরা আল্লাহর কাছে সহজে পৌঁছাতে পারি না, আমাদের কথা আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে চাই, আল্লাহ আমাদের দিবেন, নিশ্চয়ই দিবেন এই মানুষটির উছিলায়। আসুন আমরা সবাই মিলে বাবার হায়াৎ কামনা করি তাঁকে অনেক দিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুন। আমিন। বাবা হুজুরের মাধ্যমে সূফীবাদের আলো ছড়িয়ে পড়–ক পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। হে আল্লাহ, বাবা যেন সূফীবাদের একজন মহা সাধক হয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। আবার দেখা হবে যদি বেঁচে থাকি, আমার বয়স তো অনেক হয়ে গেছে। আমার বয়সী একজন মানুষ চলাফেরাই করতে পারে না, আমি পারছি। বাবা আমাকে বলেছেন, আল্লাহর রহমত আছে আপনার ওপর, আপনি যে আজকে পর্যন্ত এখানে আসতে পারলেন, আপনি তো দীর্ঘ নয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, আপনার গাড়িতে পতাকা আছে, এ জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া করে শেষ করা যাবে না। কত সম্মান আল্লাহ আপনাকে দান করছেন, এ জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।’ আমি বাবার কাছে দোয়া চাইছি, আমি যেন ইসলামের খেদমত করতে পারি।

বক্তা : দরবার শরীফের উপদেষ্টা, সাবেক রাষ্ট্রপতি, চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।

বত্তৃতা থেকে অনুলিখন : সেহাঙ্গল বিপ্লব

(Visited 392 times, 1 visits today)
Share