মোঃ শাখাওয়াত হোসেন
আমার পীর-মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের সান্নিধ্যে যে কেউ এলে, প্রথমেই বাবাজান যে কাজটি করেন, তা হচ্ছে পবিত্র শাহাদাৎ আঙুল দ্বারা তার কাল্বকে চিহ্নিত করে আল্লাহ আল্লাহ জিকিরের সবক বাতান। এর ফলে মুরিদের কাল্বে আল্লাহ আল্লাহ জিকির জারি হয়ে কাল্ব পবিত্র হয়।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘ইল্লা-মান আতাল্লা-হাবিকালবিং ছালীম’। (সূরা : শুআরা, আয়াত : ৮৯) অর্থ : সেদিন (কিয়ামতের দিন) উপকৃত হবে কেবল সে, যে আল্লাহর নিকট আসিবে বিশুদ্ধ কাল্ব (অন্তকরণ) লইয়া’। কাল্ব বিশুদ্ধ তখনই হয়, যখন কামেল পীর-মুর্শিদ কাল্বে তাওয়াজ্জ্বহ্ প্রয়োগ করেন। তখন নিয়মিত চর্চা ও ধ্যান-মোরাকাবা-মোশাহেদার মাধ্যমে, কাল্বের মুখে আল্লাহ আল্লাহ জিকির জারি হয়। শান্তি শুধু আল্লাহর জিকিরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে, অন্য কিছুতে নয়। যেমন আল্লাহ এরশাদ করেনÑ ‘আলা-বিযি ক্রিল্লা-হি তাত’মাইন্নুল্ কু’লূব’। অর্থ : সাবধান! আল্লাহর জিকির দ্বারাই কাল্ব শান্তিলাভ করে। (সূরা রাআদ, আয়াত : ২৮)। রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘আমাদের শরীরে এক টুকরো গোশত রয়েছে, যার এই গোশতের টুকরা পবিত্র, তার সমস্ত শরীর পবিত্র। যার এই গোশতের টুকরা অপবিত্র, তার শরীর অপবিত্র। আর এই গোশতের টুকরাই হচ্ছে ‘লতিফায়ে কাল্ব’। সুতরাং কাল্ব পবিত্র না হলে, শরীর পবিত্র হয় না। আর শরীর পবিত্র না হলে, কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। যেমন নামজের বাহির ও ভিতরে ১৩ টি ফরজ, এর মধ্যে বাহিরে ৭টি ও ভিতরে ৬টি। বাহিরের ৭টি হলোÑ ১, শরীর পবিত্র। ২, পোশাক পবিত্র। ৩, নামাজের জায়গা পবিত্র। ৪, ছতর ঢাকা। ৫, কেবলামুখি হওয়া। ৬, ওয়াক্ত মত নামাজ আদায় করা। ৭, নামাজের নিয়ত করা। এখানেও দেখা যাচ্ছে, নামাজ আদায়ের প্রথম শর্ত হলো শরীর পবিত্র করা। আর শরীর পবিত্র করতে হলে অজু, গোসলসহ কাল্বকেও পবিত্র করা জরুরি। আল্লাহতায়ালা পবিত্রতা অর্জনকারিদের ভালোবাসেন, যেমন তিনি বলেছেনÑ ‘ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুত্তাওয়া বীনা ওয়াইউহিব্বুল মুতাতাহহিরীন’। অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারি ও পবিত্রতা অর্জনকারিদের ভালোবাসেন’। আমার পীর-মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান সাধারণ মানুষের কালবের ছালিমের জন্য, কালবে আল্লাহর জিকির জারি করাচ্ছেন। তেমনই প্রতি ফজর ও মাগরিবের নামাজ শেষে তরিকতের অজিফায় ৭ বার করে তওবা করাচ্ছেন।
আল্লাহতায়ালা সূরা আলায়’ ঘোষণা করেছেন, ‘কাদ আফলাহা মাং তাঝাকা ওয়া যাকারাছমা রাব্বিহী ফাসাল্লা’। অর্থ : নিশ্চয়ই সেই ব্যাক্তিই সফলকাম যে তার আত্মার পবিত্রতা হাসিল করতে পেরেছে। আর সেই ব্যাক্তিই প্রভুর নাম সর্বদা স্মরণ করছে। বাস্তবে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত নামাজ সম্পন্ন করেছে। আল্লাহপাক সূরা সামস্ েসূর্য, চন্দ্র, দিবস, রজনী, আকাশ, পৃথিবী ও মানুষের শপথ করে বলেছেন- “কাদ আফলাহা মাং ঝাক্কা-হা”(সূরা সামস,আয়াত : ৯) অর্থ : সে-ই সফলকাম হইবে, যে নিজেকে পবিত্র করিবে। ওয়া কাদ খা-বা মাং দাছ্ছা-হা-(সূরা সামস,আয়াত : ১০) অর্থ : সেই ব্যর্থ হইবে, যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করিবে। তাইতো আমার কেবলাজান সকলকে পবিত্রতা অর্জনের শিক্ষা দিচ্ছেন।
কাল্বি শিক্ষার সাথে সাথে বাবাজান সকল মুরিদ-সন্তানকে যে শিক্ষা দিচ্ছেন, আদব, বুদ্ধি, মহব্বত, সাহস, বিশ্বাস ও ভক্তি। কেবলাজানের দেয়া এ শিক্ষাগুলো গবেষণা করলে দেখা যায়, আদব না থাকলে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশিসহ যেমন, কেউ তাকে পছন্দ করে না, তেমনই আল্লাহতায়ালাও তাকে পছন্দ করেন না। এ সম্পর্কে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি (রহ.) জগৎ বিখ্যাত কিতাব ‘মসনবি শরীফে লিখেছেনÑ ‘বেয়াদব মাহরুমে গাশ্তে ফজলে রব’। অর্থ : বেয়াদব, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। সুতরাং কেবলাজানের এই শিক্ষালয়ে আদব শিক্ষা করলে, তার উপর মহান আল্লাহর রহমত যেমন বর্ষিত হয়, মা-বাবাসহ সকলেই তাকে পছন্দ করে।
বুদ্ধি’ কেবলাজানের শিক্ষা হচ্ছে সৎবুদ্ধি। সৎবুদ্ধি দ্বারা মানুষ অনেক উপরে উঠতে পারে এবং তার মাধ্যমে সমাজের উপকার হয়, রাষ্ট্রের উন্নতি সাধিত হয়। আর অসৎ বুদ্ধি দ্বারা সমাজ তথা রাষ্ট্রের চরম ক্ষতি সাধিত হয়। সৎ মানুষ সমাজের সম্পদ আর অসৎ লোক সমাজের বোঝা। সুতরাং আত্মিক, সামাজিক ও পারিপার্শিক উন্নয়নসহ সকল দুর্নীতি উৎখাতের জন্য হলেও কেবলাজানের শিক্ষা সবারই গ্রহণ করা উচিৎ। বিশ্বাস ভক্তি ও মহব্বতের সঙ্গে ইবাদত করা এবং সৎ-সাহস থাকা উচিৎ।
আমার পীর কেবলাজানের আর একটি শিক্ষা হচ্ছে, রাসুলের প্রেম অন্তরে উদয় করা। এ জন্যই তিনি তাঁর মুরিদ সন্তানদেরকে প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ৫০০ বার দুরূদ শরিফ পড়ে ঘুমাতে বলেন। হযরত আবি হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুল (সঃ) বলেছেনÑ ‘সেই পবিত্র সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না, আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় হই (সহিহ্ বোখারি, পৃষ্ঠা : ১৯)। সুতরাং মুমিন হতে হলে রাসুলের প্রেম অন্তরে উদয় করা জরুরি। আর রাসুলের প্রেম অন্তরে উদয় হবে যদি, মহব্বতের সাথে রাসুল (সঃ)-এর শানে বেশি বেশি দুরূদ পড়া হয়। আমাদের মুর্শিদ কেবলা আরো অনেক শিক্ষা আছে, যেমন মা-বাবার সেবা করা, মানবসেবা করা, সমবয়সিদের সাথে ভাই-বন্ধুসুলভ ব্যবহার করা, ছোটদের স্নেহ ও বড়দের শ্রদ্ধা করা। এই স্বল্প পরিসরে তাঁর শিক্ষা দানের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। তাই নিজের পরিশুদ্ধতা ও একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নিজে এই শিক্ষাগুলো গ্রহণ করি এবং শিক্ষাগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছি দেশ থেকে দেশান্তরে। কারণ, আল্লাহর অলি-বন্ধুদের শিক্ষা কোন দেশ বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাঁদের শিক্ষা সমগ্র মানবজাতির জন্য।
লেখক : খাদেম, কুতুববাগ দরবার শরীফ
এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক