ভাগ্য আমার এতোই ভাল অমাবস্যায় দেখলাম চান্দের আলো

রেবেকা সুলতানা রোজী

পরমকরুণাময় আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে আজ আমার হৃদয়ের শুষ্ক প্রাণহীন উত্তপ্ত মরুতে উৎপত্তি হল জমজমের মত পবিত্র প্রেমের ফোয়ারা। যার উৎপত্তি  হৃদয়ের অনন্ত গহীনে, যার বিস্তার সীমাহীন, আদি হতে অন্ত। মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে দয়া করে কামেল মুর্শিদের সন্ধান দিয়েছেন। আমার পীরকেবলাজানের দোয়ার কাঙালিনী আমি। আমার মত একজন হীন-দূর্বল, ভাঙ্গাচূড়া হৃদয়ের মানুষকে আমার প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ এত দয়া করেছেন যে, আজ আমার জীবনের সমস্ত অন্ধকার ও জরাজীর্ণতা দূর হয়ে হৃদয়ের আকাশ আলোকিত। ভাগ্য আমাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছে। আমার ভাগ্যের আকাশের পূর্ণশশী তুমি দয়াল বাবা, তুমি সূফীকুলের চাঁদ। ভাগ্য আমার এতোই ভালো অমাবস্যায় দেখলাম আমি চান্দের আলো। ঘুট-ঘুটে অন্ধকার রাতে অমাবস্যায় পূর্ণ চাঁদের দেখা ক’জনার মিলে? এ যে আমার পরমভাগ্য। অমাবস্যায় চাঁদের দেখা পেয়েছি। আমি যখন বাবাজানের কথা বলি, বাবাজানকে স্মরণ করি, তখন আমার এমন হালত (অবস্থা) হয় যে, আমি অঝোরে কাঁদতে থাকি। হৃদয়ে এমন এক অজানা পরমশ্রদ্ধা-ভক্তির তুফান উঠে, যা সামলানোর ক্ষমতা আমার নেই। এই যে এখন আমি বাবার কথা লিখছি, আমার দু’চোখ এখন সাগরে পরিণত হয়েছে। এই ভক্তি-শ্রদ্ধার কথা কাগজে কলমে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। একেই বলে আল্লাহকে পাওয়ার সূক্ষ্ম প্রেম। এ আবেগের কথা প্রকাশ করতে অনেক কষ্ট হয়। কারণ প্রচ- ফয়েজ এসে কাল্বে জিকির শুরু হয়। তাই কিছুক্ষণ লেখা থেকে বিরত থেকে নিজেকে শান্ত করে জিকির করে আবার বসে গেলাম। আমি বাবাজানকে কিভাবে পেলাম? কোথায় পেলাম? এখন কোথায় আছি? কি হালতে আছি? তার কিছু প্রকাশ করতে চাই। আমি মানুষ হিসেবে খুবই সাধারণ, খুবই নগন্য, তবে আমার জীবন অনেক দুঃখ-কষ্ট, অপমান, অবহেলার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। আজ আমি আমার দয়াল মুর্শিদ কুতুববাগী কেবলাজানের দরবার শরীফে উপস্থিত হতে পেরেছি। আজ থেকে প্রায় বার কি তের বছর আগের কথা, আমি বাবাজানকে স্বপ্নে দেখি। তবে এর আগে বাস্তবে কোনদিন বাবাজানকে দেখিনি। স্বপ্নে দেখেছিলাম, আমি মারা গিয়েছি, মারা যাবার পর আমি একটি জান্নাতে প্রবেশ করি, সেখানে আরও অনেক লোকজন ছিলো, তাদের কারো মুখে হাসি ছিলো না, তাই আমার মনটা খুব খারাপ হলো, এমন সময় দেখি সাদা-শুভ্র নূরাণী পোশাক পরা আমার দয়াল নবীজি আমাকে ডাকছেন, আমি নবীজির দিকে তাকাতেই দয়াল নবীজি তাহার পবিত্র হাত মোবারক আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি চলে এসো, তুমি এই জান্নাতের জন্য না, এ কথা বলতেই আমিও আমার হাত দয়াল নবীজির দিকে বাড়িয়ে দিলাম। দয়াল নবীজি আমার হাত ধরে এমন এক জান্নাতের ভিতর প্রবেশ করলেন, যার বর্ণনা আমি লিখে প্রকাশ করতে পারবো না। বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখি সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন এমন এক জ্যোর্তিময় মানুষ যার পোশাক, আখলাক সব দয়াল নবীজির সাদৃশ্য। জান্নাতি নূরে তিনি ঝলমল করছেন, সেই পবিত্র মানুষটি যেন হাজার বছর ধরে কারো অপেক্ষায় আছেন। দয়াল নবীজি আমাকে তাঁর কাছে দিয়ে বললেন, এই জান্নাতের জন্যই তুমি। অতএব তুমি এখানেই থাকবে। এই ছিল আমার এক যুগ আগে দেখা স্বপ্ন। আজ এক যুগ পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার স্বপ্ন সত্যি করেছেন। আমি সেই জান্নাতের নূরাণী মানুষটির দেখা পেয়েছি। আমার স¦ামী যখন আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কবি নাসির আহমেদের সঙ্গে ঢাকার ফার্মগেটস্থ কুতুববাগ দরবার শরীফের পীর-কেবলাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন, তখন দরবার শরীফ থেকে প্রকাশিত মুখপত্র মাসিক ‘আত্মার আলো’ পত্রিকা ও বাবাজানের পবিত্র একখানা ছবি মোবারক  এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন, এই নাও, দেখ তোমার জন্য কি এনেছি! আমি ছবিখানা হাতে নিয়ে চোখ রাখতেই বিদ্যুতের ন্যায় চমকে উঠলাম। মনে-মনে ভাবতে থাকি এই পবিত্র মুখখানা আমার অনেক দিনের চেনা, অনেক আপন, তাঁকে যেন কোথায় দেখেছি! ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়লো একযুগ আগে দেখা সেই স্বপ্নের কথা। তখনই আমার ভিতরে এক রকমের হাল-যজবা শুরু হয়। এরপর আমার স্বামীকে বলি আমাকে দরবারে নিয়ে যাও। আমার স্বামী এ কথা বাবাজানকে বললে, আমাকে দরবার শরীফে নিয়ে আসার অনুমতি দিলেন। সে দিন ছিলো শুক্রবার, যে দিন আমি আমার প্রাণপ্রিয় দয়াল মুর্শিদ কেবলার সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হই। আজ বাবাজানের দোয়া ও দয়ায় আমার জীবন-নদীর গতি ও ধারা বদলে গেছে। আমি এখন আর নিজেকে একা অসহায় বা দূর্বল মনে করি না। শত্রুর শত্রুতা, দুশমনের দুশমনি অত্যাচারীর অত্যাচার এবং অন্যায়কারীর চোখ রাঙানোকে ভয় করি না। কারণ যার কামেল পীর-মুর্শিদ আছে তার সব আছে। জীবনের একটা সময় গেছে যখন আমার সব থেকেও কিছুই ছিল না। বড় অসহায় ছিলাম, আমার হৃদয়ের অর্তনাদে মনে হত আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠবে। আর তাই আল্লাহ আমাকে এত বড় দয়া করে দয়াল মুর্শিদের সাক্ষাৎ নসিব করেছেন। আর প্রাণহীন জীবন যুদ্ধের কথা দয়াল মুর্শিদ সবই জানেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেই ক্ষমতা আমার মুর্শিদ কেবলাকে দিয়েছেন। আর তাই মুরিদের মুখে কোন কিছু বলতে হয় না। আমার মুর্শিদ এমন পরশমনি, যার সান্নিধ্যে যেয়ে আমার মত লক্ষ লক্ষ মুরিদ আছেন, যাদের জীবন হয়েছে ধন্য ও পূণ্য। বে-নামাজি হয়েছে নামাজি আর যারা কোনরকম নামাজ পড়ত, যাদের নামাজে দুনিয়াবি চিন্তা চলে আসত, তারা এখন হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। যারা বেপর্দায় ছিল তারা এখন পর্দা করে এবং শালিনতার সাথে চলাফেরা করেন। শুধু তাই নয়, এমন অনেক মুরিদ আছেন যারা জিকির, মোরাকাবা-মোশাহাদা করে আমার দরদী মুর্শিদের দেয়া শিক্ষা ও আদেশ-উপদেশ সঠিকভাবে মেনে তরিকার উচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন। আমরা যারা তরিকা গ্রহণ করেছি সকলেরই উচিত বাবাজানের দেয়া আমল-অজিফা, তরিকার নিয়ম-কানুন মেনে চলা। আমাদের পীর- কেবলাজান যা পছন্দ করেন তা গ্রহণ করা, আর যা অপছন্দ করেন তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এমন অনেক মুরিদ আছেন যারা তরিকা গ্রহণ করেছেন ঠিকই, কিন্তু তারা তরিকার কোন নিয়মতো মানেনই না বরং পীরের আদেশ অমান্য করে এমন কিছু অসৎ কর্ম করেন, যার ফলে কামেল মুর্শিদের সুনাম ক্ষুণœ হয় সাধারণ মানুষের কাছে। তাই মহান আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা করি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে পীরকেবলাজানের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করুন। আমার পীরকেবলাজান যখন রাত্রির তৃতীয় প্রহরে জেগে  রহমতের মোরাকাবায় বসে আল্লাহর তিন নাম ধরে ডাকেন, তখন বাবাজানের সুমধুর কণ্ঠস্বর শুনলেই আহা! প্রাণ ভরে ওঠে এক অনাবিল প্রশান্তিতে। আর অন্য সময় বাবাজান যখন মা বলে ডাক দেন, তখন পরানটা এতোই ব্যাকুল হয়ে যায়, এতো শান্তি লাগে যে জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাই। যেমন সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় ঠা-া পানি পান করলে যে শান্তি পাওয়া যায়, ঠিক তেমনই বাবাজানের পবিত্র মুখে ‘মা’ ডাক শুনলে ব্যাকুল হৃদয় শান্তি পায়। জীবনের কোন দিন কেউ তো আমাকে এত মায়াভরা কণ্ঠে ডাকেনি। আমার দয়াল মুর্শিদের পবিত্র মুখে যখন মা ডাক শুনি তখন খাতুনে জান্নাত হযরত মা ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)-এর সাথে আল্লাহর নিগুঢ় প্রেম, সে প্রেমের জন্য মা ফাতেমাকে সবাই ‘মা’ বলছি। তখন সেই প্রেমের কথাও আমার হৃদয়ে জেগে উঠে। এ সবই আল্লাহর নিগূঢ় প্রেম-রহস্য। একজন সূফী-সাধকের একমাত্র কামনা আল্লাহকে চেনা-জানা। আত্মশুদ্ধি ও আত্ম সাধনার মাধ্যমে প্রেমময় আল্লাহর প্রেমোপলদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহতে সমাহিত হয়ে, আল্লাহর রঙে রঙিন বা বিলিন (ফানাফিল্লাহ) হয়ে যাওয়া। এই বিলিন হয়ে যাওয়া থেকে রাসুল (সঃ)-এর সুন্নত অনুযায়ী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা হলো হাকিকত (বাকাবিল্লাহ)। আর এ পর্যায়ের সাধকগণ হন আল্লাহর সূফী। আমার দয়াল মুর্শিদ হলো সূফীকুলের চাঁদ (সুফিয়ায়ে কামরুছ), ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানব। আর তাই আমার দরদী মুর্শিদের দরবারে কেউ খালি হাতে গেলে, ভরা হাত নিয়ে ফিরে আসেন। প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মুরিদের মরাদিল জিন্দা হয়ে দয়াল মুর্শিদের দিকে মুতাওয়াজ্জু আর আমার মুর্শিদের পবিত্রদিল আল্লাহপাকের দিকে মুতাওয়াজ্জু। ধীরে ধীরে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র করে সহজ সরল পথ বা ‘ছির-ত্বোয়াল্ মুস্তাক্বিম’ এর পথে চলতে হবে। আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা জানাইÑ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুছনি ইবাদাতিকা’। অর্থাৎ, হে আল্লাহ তোমার জিকির করতে, শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং উত্তমভাবে এবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন। আমিন।

(Visited 489 times, 1 visits today)
Share