কুতুববাগী কেবলাজানের শিক্ষায় ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি মিলে

মোঃ শাখাওয়াত হোসেন

পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ্পাক ঘোষণা করেছেন, ‘কুল্লু নাফছিন জাইকাতুল মাউত’ অর্থাৎ প্রতিটি নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। নফসের মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষ চলে যায় অন্য এক জগতে, সাথে নিয়ে যায় পৃথিবীতে অবস্থান সময়ের নেক ও বদ আমলসমূহ। পৃথিবীতে বসে নফসের কু-প্রভাবে অনেকে ক্ষণিকের পৃথিবীর প্রতি এতই আসক্ত হয় যে, মৃত্যু ও পরকালের কথা ভুলে যায়। ফলে মানুষের দ্বারা নেক আমল, ভালো কাজ বা মানব সেবা করা হয়ে উঠে না। আল্লাহ্ অলি-বন্ধুগণ কঠোর রিয়াজত ও সাধনার দ্বারা আত্মার এই কু-প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে নেক আমল, মানুষের সেবা করা ও ভালো কাজের উপদেশ দিয়ে শুদ্ধ করে তোলেন। তাঁরা মানুষকে এমন কিছু আমল শিক্ষা দিয়ে থাকেন যেগুলো পৃথিবীর বুকে থাকা অবস্থায় সওয়াব হয় এবং মৃত্যুর পরেও তার রুহে সওয়াব পৌঁছে থাকে। রাসুলেপাক (সঃ) বলেছেনÑ ‘যখন কোন আদম সন্তান ইন্তেকাল করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি মাধ্যম থেকে সে সওয়াব পেতে থাকে। (এক) সদকায়ে জারিয়া, (দুই) সু-সন্তান, যে মাইয়াতের জন্য দোয়া করে এবং (তিন) জ্ঞান, যে জ্ঞানের দ্বারা সমাজ তথা মানুষ উপকৃত হয়’ (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-৩০৮৪)। আমার পীর-মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের কিছু শিক্ষা নিম্নে আলোচনা করছি, যার দ্বারা শুধু পৃথিবীতে বসে নয়, পরকালেও দোয়ার বরকতে নেকি পাওয়া যায়। সু-সন্তান বলতে লেখাপড়ায় ভালো বা অনেক ডিগ্রীধারী তা শুধু নয়, যার ঈমান-আমল, আখলাক-চরিত্র ঠিক আছে, যে শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতের বিধানসমূহ সাধ্যমত মেনে চলার চেষ্টা করে তাকেই বোঝায়। পৃথিবীর সকল সন্তান নেককার হয় না। সকল সন্তান মাতা-পিতার জন্য দোয়া করে না। তবে যদি কোন মাতা-পিতা তাঁর সন্তানদের তরিকতের সুশিক্ষায় রেখে যেতে পারেন, তবে নিশ্চিত করে বলা যায় যে, তারা কবরেও প্রতিনিয়ত দোয়ার মাধ্যমে সওয়াবের ভাগিদার হবে, এর চেয়ে মহা নিয়ামত আর কী হতে পারে? আমাদের দরদী মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের আদর্শ এবং শিক্ষা-দীক্ষাই এমন যে, তাঁর একজন ছাত্র বা শিষ্য-মুরিদ সন্তান প্রতিদিন নামাজ শেষে তরিকতের নির্দিষ্ট অজিফা-আমল করে তার মাতা-পিতার জন্য এবং মাইয়াতের রুহানী আত্মার প্রতি দোয়া করে। যে দোয়া আপন আপন পীরের উছিলায় ওই সকল মৃত ব্যক্তিদের আমলনামায় পৌঁছে যায় এবং তারা কবরে শান্তি লাভ করে।

মানুষকে সুক্ষ্ম জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া এবং আল্লাহ্র প্রাপ্তি পথের সন্ধান প্রদান করেন, এমন মানুষের কাছে জ্ঞান (ইলম) শিক্ষা নেওয়া উচিৎ, যা সকলের জন্য কল্যাণকর। যে জ্ঞান মানব জাতিকে হেদায়েতের পথে নিয়ে আসে। মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়। যেমন-কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত। আমার পীর কেবলাজনের শিক্ষা প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর, তরিকতের অজিফা-আমলের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় মাসায়ালা, কোরআন ও হাদিস মতে পরিশুদ্ধ আত্মা তৈরির কাজে সর্বদা লেগে থাকা। আল্লাহ্পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘কাদ আফলাহা মান তাজাক্কা।’ অর্থ: নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তিই সফলকাম, যে তার আত্মার পবিত্রতা হাসিল করতে পেরেছে’ (সূরা আলা, আয়াত ১৪)। ইতিমধ্যেই যারা কেবলাজানের কাছে উপরোক্ত শিক্ষাগুলো গ্রহণ করছেন তাঁরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন, আর যারা এ শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণে মানুষকে আহ্বান করছেন তাঁরাও লাভবান হচ্ছেন।

কেউ যদি একজন মানুষকে আহ্বান করে উক্ত শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণে সাহায্য করে, তবে তার আমলনামায় ইন্তেকালের পরেও অনেক নেকি পেতে থাকবেন। পবিত্র হাদিসে আছে, ‘যে মানুষকে হেদায়তের দিকে আহ্বান করবে, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সওয়াব তাঁর আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাঁদের সওয়াব থেকে কারো কোন কমতি হবে না’ (সহিহ মুসলিম)। আমার দরদী মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের হাতে বাইয়াত পড়ে নকশবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর কেউ ইন্তেকাল করে, ইন্তেকালের পরেও তাঁর আমলনামায় সওয়াব পৌঁছিতে থাকে। কারণ, এ তরিকার এমনই এক সাধনা-আমল বা কর্ম পদ্ধতি, যার উছিলায় শুধু মাতা-পিতাই নয়, তরিকতের ভাই-বোনেরাও ইন্তেকালের পরে রোজ হাশরের ময়দানে ওঠা পর্যন্ত সওয়াব পেতে থাকবেন।

রাসুল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামের কোন উত্তম সুন্নত (কর্ম পদ্ধতি বা পন্থা) আবিষ্কার করে, সে জন্য সে তাঁর প্রতিদান পাবে এবং মৃত্যুর পর যারা, সে অনুযায়ি আমল করে সে জন্যও সওয়াব পাবে। তাঁদের সওয়াব কমিয়ে দেওয়া হবে না’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনে-মাজাহ)। রাসুল (সঃ) সাহাবীদেরকে মৃত লোকদের জন্য দোয়া করতে শিখিয়েছেন। মহানবী (সঃ) যখন কোন মৃত ব্যক্তির দাফন শেষ করতেন তখন পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য দোয়া করো এবং তিনি যেন সঠিক উত্তর দিতে পারেন সেই প্রার্থনা কর। কারণ সে এখন প্রশ্নের সম্মুক্ষিণ হচ্ছে’ (আবু দাউদ-২৮০৪)। আল্লাহ্পাক পবিত্র কোরআনে বলেনÑ ‘ওয়াল্লাযীনা জ্বা-মিউম বা’দিহিম ইয়াকূলূনা রাব্বানাগ-ফিরলানা-ওয়া লিইখওয়া, নিনাল্লাযীনা ছাবাকূনা বিল ঈমান’ (সূরা হাশর, আয়াত ১০)। অর্থাৎ, আর যারা তাঁদের পরে (মুহাজির ও আনসারদের পর) আগমন করেছে তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা আমাদের ক্ষমা করে দাও। আর আমাদের যে সব ভাইয়েরা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছেন তাদেরকেও।’ এখন এই উম্মতের পরের লোকেরা পূর্বের মুমিনদের জন্য দোয়া এ জন্যই করেন যে, তারা এ দোয়া দ্বারা উপকৃত হন।’ এখন আমার বক্তব্য হল যদি এই দোয়া দ্বারা ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপকার না হত, তাহলে আল্লাহ্পাক এ দোয়ার কথা প্রসংশা হিসেবে আলোচনা করতেন না।

হাদিস শরীফে আছে, মানুষের যখন অন্তিমকাল উপস্থিত হয় এবং রুহ বের হবার সময় ঘনিয়ে আসে, তখন চারজন ফেরেশতা তার কাছে উপস্থিত হয়। প্রথম ফেরেশতা সালাম দিয়ে বলবে, ‘হে অমুক’ আমি তোমার খাদ্য সংস্থানের কাজে নিযুক্ত ছিলাম। কিন্তু পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অন্বেষণ করেও তোমার জন্য একদানা খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলাম না। সুতরাং হয়তো তোমার ইন্তেকাল ঘনিয়ে এসেছে, এখনই ইন্তেকা লের সুধা পান করতে হবে, পৃথিবীতে তুমি আর বেশি ক্ষণ থাকবে না। ২য়, ৩য় ও ৪র্থ ফেরেশতা একইভাবে বলবে, আমি পানীয় সরবরাহর কাজে নিযুক্ত ছিলাম, পদযুগলের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছিলাম, শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার কাজে নিযুক্ত ছিলাম, কিন্তু এখন আমরা বিদায় নিচ্ছি। অতঃপর কেরামান ও কাতেবীন ফেরেশতাদ্বয় এক টুকরো কালোলিপি বের করে দিয়ে বলবেন, ‘হে আল্লাহ্র বান্দা! এই দিকে লক্ষ্য কর। সেদিকে লক্ষ্য করামাত্র তার সর্বাঙ্গে ঘর্মস্রোত প্রবাহিত হবে এবং কেউ যেন ওই লিপি পড়তে না পারে এজন্য সে ডানে বায়ে বারবার দেখতে থাকবে। অতঃপর তাঁরা প্রস্থান করবেন। তখনই মালাকুল মউত তার ডানপাশে রহমতের ফেরেশতা নিয়ে আগমন করবেন। পাপীদের আত্মাকে আজাবের ফেরেশতারা জোরে টানাটানি করবেন ও মমিন ব্যক্তিদের আত্মাকে রহমতের ফেরেশতারা অতি শান্তির সাথে বের করে আনবেন। কণ্ঠ পর্যন্ত আত্মা পৌঁছলে স্বয়ং যমদূত তা কবজ করবেন এবং এরই মাধ্যমে একজন মানুষের জীবনের অবসান ঘটবে। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সে চলে যাবে অনন্তকালের জগতে। সেখানে আল্লাহ্র অলি-বন্ধুগণ ছাড়া পৃথিবীর কোন রাজা-বাদশা, মন্ত্রি, এম পি, কিংবা ক্ষমতাধর কোনো ব্যক্তির কোনো বাহাদুরিই চলবে না। সুতরাং আসুন আমরা কবর দেশে যাওয়ার আগে খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্যে এসে তরিকতের শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করে পূণ্যের কাজ করি। আর পরকালের জন্য শান্তিময় পথের সুশৃংখল দিক রচনা করি।

(Visited 323 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *