আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
পর্দা করার বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান জরুরী। একদা হযরত মুসা (আঃ) বসিয়া আরাম করিতেছিলেন, এমতাবস্থায় অভিশপ্ত ইবলিশ রঙ বে-রঙের টুপি পরিধান করিয়া তাঁহার সম্মুখে আগমন করিল। যখন নিকটে আসিল, তখন তাহা খুলিয়া রাখিল। তারপর হযরত মুসা (আঃ)-এর খিদমতে উপনীত হইয়া সালাম নিবেদন করিতে লাগিল। মুসা (আঃ) বলিলেন, ওয়া আলাইকাস সালাম- তুমি কে? সে বলিল, ‘আমি শয়তান।’ তখন মুসা (আঃ) বলিলেন, তোমার উপর যেন শান্তি বর্ষিত না হয়। কেন আগমন করিয়াছ? সে বলিল, এই জন্য যে, আল্লাহ্র নিকট আপনার খুব বড় মরতবা রহিয়াছে।’ তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার মাথার উপরে এই বস্তুটি কি? সে বলিল, আমি ইহার সাহায্যে মানুষের হৃদয় হরণ করিয়া থাকি।’ তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘সেই কাজটি কি যাহা করিলে তুমি মানুষের উপর বিজয়ী হইয়া যাও? সে বলিল নিজের কাজকে খুব বেশি পছন্দ করা, নিজর আমল খুব বেশি বলিয়া মনে করা এবং নিজের গুনাহসমূহ ভুলিয়া যাওয়া।’ আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে সতর্ক করিতেছি।
(এক) যে স্ত্রীলোক আপনার জন্য হালাল নহে, তাহার সহিত একাকী বসিবেন না। কেননা, যখনই কোন পুরুষ, স্ত্রীলোকের সহিত একাকী বসেন, তখন আমি স্বয়ং নিজের বন্ধু বান্ধবগণকে নিয়ে ধোকায় ফেলার জন্য সঙ্গী হইয়া যাই। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাহাকে কুকর্ম করাইয়া ছাড়ি।
(দুই) আপনি কোনোদিন আল্লাহতায়ালার সহিত এমন কোন অঙ্গিকার করিবেন না, যাহা পূর্ণ করিতে সক্ষম নন।
(তিন) যখন কোন সদকা বা মান্নত ইচ্ছা পোষণ করিবেন, সঙ্গে সঙ্গে তাহা আদায় করিয়া ফেলিবেন। কেননা যখনই কোন লোক সদকা বা মান্নত দানের ইচ্ছা পোষণ করেন, তখন আমি এবং আমার সঙ্গীরা তাহার বন্ধু হইয়া যাই। এমনকি আমরা তাকে সদকা বা মান্নত আদায় করতে দেই না । অতঃপর শয়তান এই বলিয়া চলিয়া গেল, ‘আফসোস! আমি যেসব কথা দ্বারা আদম সন্তানগণকে ধোঁকা প্রদান করিয়া থাকি, মুসা (আঃ) তাহা অবগত বা জানিয়া গেলেন।
পর্দা-পুশিদার ব্যাপারে সূরা আল-নূর, ৩১ নং আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন,’ অকুল্লি মু’মিনা-তি ইয়াগদ্বুদ্বনা মিন্ আবস্বা-রিহিন্না ওয়া ইয়াহফাযনা ফুরূজ্বাহুন্না ওয়ালা ইউবদীনা যীনাতাহুন্না ইল্লা মা যাহারা মিনহা ওয়াল ইয়াদরিবনা বিখুমুরিহিন্না ‘আলা জুয়ূবিহিন্না, ওয়ালা ইউবদীনা যীনাতাহুন্না ইল্লা লিবুঊলাতিহিন্না আও আ-বা-ইহিন্না আও বুঊলাতিহিন্না আও আবনা-ইহিন্না আও আবনা-ই বুঊলাতিহিন্না আও ইখওয়ানিহিন্না আও বানী ইখওয়ানিহিন্না আও বানী আখাওয়াতিহিন্না আও নিসা-ইহিন্না আও মা মালাকাত আইমানুহুন্না আবিত্তা-বিঈনা গাইরি উলিল ইরবাতি মিনার রিজালি আবিত তিফলিল্লাযীনা লাম য়াযহারূ ‘আলা আওরা-তিন নিসা-ই, ওয়ালা- য়াদরিবনা বিআরজুলিহিন্না লিয়ু‘লামা মা ইউখফীনা মিন যীনাতিহিন্না, ওয়া তূবূ ইলাল্লাহি জামী‘আন আইয়ুহাল মুমিনূনা লা‘আল্লাকুম তুফলিহূনা।’
অর্থ : হে নবী (সঃ) আপনি ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিচের দিকে রাখে এবং লজ্জাস্থান বা গুপ্তস্থান হেফাজতে রাখে। সাধারণত কারো কাছে রূপ প্রকাশ না করে, আর মাথায় বড় ভারী ওড়না দেয় এবং তাদের বক্ষদেশ ভালভাবে ঢাকিয়া রাখে। তারা নিজেদের চেহারার সাজসজ্জা ঐসব লোকদের ছাড়া অন্য কাউকে দেখাইবে না, যারা তাদের স্বামী, অথবা তাদের পিতা, অথবা তাদের শ্বশুর, অথবা স্বামীর পুত্র, অথবা তাদের ভাই, অথবা তাদের ভাইপো, অথবা তাদের বোনপো, অথবা আপন নারীগণ, অথবা অধিনস্থ দাসী, অথবা কামনাহীন পুরুষ, অথবা এমন বালক যারা নারীদের আবরনীয় বিষয়ে অনভিজ্ঞ তাদের ছাড়া আর কারো কাছে নিজেদের বেশ ভুষা বা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।
হযরত সোলায়মান ইবনে ইয়াসার (রঃ) খুব সুন্দর সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। একদিন এক মহিলা তাহার নিকট আগমন করিল এবং তাহার সহিত দৈহিক মিলনের অভিলাষ প্রকাশ করিতে লাগিল। তিনি বিরত থাকিলেন এবং মহিলাকে সেখানে ফেলিয়া পালাইয়া গেলেন। সোলাইমান বলেন, আমি স্বপ্নে হযরত ইউসূফ (আঃ)-কে দেখিলাম। আমি তাহাকে বলিতেছিলাম, ‘আপনি কি হযরত ইউসুফ (আঃ)? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি সেই ইউসূফ, যে প্রলোভনের শিকার হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছিয়া গিয়াছিলাম, আর তুমি সেই সোলায়মান, যে মোটেই প্রলোভিত হও না।
সহিহ মুসলিম শরীফের হাদিসে হুজুরে আকরাম (সা.) ফরমান, ‘ওয়া ক্বালা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সিনফানি মিন আহলিন নারি, লাম আরাহুমা ক্বাউমুম মা‘আহুম সিয়াসাতুন কা আযনাবিল বাকারি, ইয়াদরিবূনা বিহান নাস, ওয়া নিসাউন কা-সিয়াতুন ‘আরিয়াতুম মুমিলাতুম মা-ইলাতুন রুউসুহুন্না কা সানিমাতিল বুখতিল মা-ইলাতি, লা ইয়াদখুলনাল জান্নাতা ওয়ালা ইয়াযিদনা রীহাহা।’ (রাওয়াহু মুসলিম)
রাসুল (সঃ) বলেন, দুই শ্রেণির মানুষ জাহান্নামী হইবে, আমি তাহাদিগকে দেখি নাই। এক শ্রেণির জাহান্নামী উহাদের হাতে গরুর লেজের মতো লাঠি থাকিবে, তাহারা উহা দ্বারা মানবগণকে প্রহার করিবে অর্থাৎ অত্যাচারী। আর এক শ্রেণির জাহান্নামী ঐ সকল নারী যাহারা কাপড় পরিধান করা সত্ত্বেও (অর্ধ পরিধান বা পাতলা বস্ত্রের কারণে) উলঙ্গিনী প্রায়, পর-পুরুষকে নিজেদের দিকে আকৃষ্টকারিণী এবং নিজেরাও অপর পুরুষের দিকে আসক্তি-প্রবণা। তাহাদের মাথাগুলি খোরাসানী উষ্ট্রের মত কেশময় ইহারা বেহেশতে প্রবেশ করিতে পারিবে না এবং বেহেশতের সু-ঘ্রাণও পাবে না’ (মুসলিম শরীফ)। পর্দাহীনতার মতো অসৎ আচরণের কারণে নারীর অন্তর থেকে ক্রমে ক্রমে লজ্জা-শরম চলিয়া যায়। বেপর্দা নারীর কারণে পুরুষদের জন্য ফেৎনা ও অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ওই সকল নারী পর-পুরুষের সাথে ঘেষাঘেষি করে চলাফেরা করতে লজ্জাবোধ করে না। আর এ ধরনের লজ্জাহীন ঘেষাঘেষি ও মেলামেশাই হচ্ছে ফেৎনা ফাসাদ অনাচার জেনা ও ব্যাভীচারের সবচেয়ে বড় কারণ। যে মুসলমান কোন নারীর রূপ ও সৌন্দর্য দেখে চক্ষু বন্ধ করে নেয়, মহান আল্লাহতায়ালা তার জন্য এমন ইবাদতের পথ দেখিয়ে দেন, যার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করে’ (আহমদ)। বেগানা কোনও পুরুষের কিংবা বেগানা কোনও পুরুষদের সাথে কোনও নর-নারীর একান্তে থাকা উচিৎ নয়। হাদিসে বলা হয়েছে, সেই সন্তানের কসম, যার কব্জায় আমার প্রাণ, যখনই কোন পুরুষ বেগানা কোন নারীর সাথে একান্তে থাকে, তখনই শয়তান তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এবং স্বীয় জালের ফাঁদ বিস্তার করতে শুরু করে।
বর্তমান যুগের আধুনিক পোশাক এর বর্ণনা :
হাদিসে আছে, নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত পুরুষদের গুপ্ত অঙ্গ। কিন্তু আজকালকার ফ্যাশন শুধু পুরুষদেরকে নয়, মহিলাদেরকেও অর্ধ উলঙ্গ করে দিয়েছে। পুরুষরা ইংরেজি লেংটির নাম ’ন্যাকার’ রেখে পরিধান করতে শুরু করেছে। তারা অর্ধেক উরু পর্যন্ত খোলা রেখে মা, বোন ও কন্যাদের সামনে চলাফেরা করতে পরওয়া করে না এমনকি লজ্জাও বোধ করে না। এতে আল্লাহ্পাকের অসন্তুষ্টি এবং মহাপাপ রয়েছে। আজকাল অনেক মহিলা এমন পোশাক অবলম্বন করেছে, যাতে তাদের গোপনীয় অঙ্গ যেমন ঘাড়, বাহু, বক্ষদেশ ইত্যাদি খোলাই থেকে যায়। আর যেসব অঙ্গ আবৃত করা হয়, তাতেও এমন আঁটসাট পোশাক পরা হয় যে, দেহের অবয়ব চোখে পড়ে যায়। এটাও খোলা রাখারই অনুরূপ। ওলামায়ে কেরাম বলেন, মুসলামনদের ওপর সর্বপ্রথম যে ফরজটি আরোপিত হয়, তা হচ্ছে গুপ্তঅঙ্গ বা লজ্জাস্থান আবৃত করে রাখা। এটা কেবল নামাজেই নয়, বরং সাধারণ অবস্থায়ও, এমনকি নির্জনে থাকার সময়ও জরুরী।
লজ্জা-শরম : লজ্জাশরম ঈমানের অন্যতম অঙ্গ’ (বুখারী, মুসলিম)। লজ্জা এবং ঈমানের প্রতিদান জান্নাত’ (তিরমিযী)।
যার মধ্যে লজ্জা-শরম থাকবে, তার মধ্যে এক বিশেষ প্রকারের সৌন্দর্য দৃষ্টিগোচর হবে। প্রত্যেক ধর্মের একটি বৈশিষ্ট্য বা চরিত্র আছে। আমাদের ধর্মের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লজ্জা-শরম’ (মালেক)। আল্লাহতায়ালা যখন কোন বান্দাকে ধ্বংস করতে চান, তখন তার কাছ থেকে লজ্জা ছিনিয়ে নেন। যখন তার মধ্যে লজ্জা থাকে না, তখন সে মানুষের দৃষ্টিতে লাঞ্ছিত ও হেয় হয়ে যায়। এরূপ হলে তার কাছ থেকে আমানত তথা বিশ্বস্ততা গুণটিও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। যখন তার মধ্যে আমানত থাকে না, তখন সে খেয়ানতের পর খেয়ানত করতে শুরু করে। ফলে তার ওপর থেকে রহমত তুলে নেওয়া হয়। অত:পর সে ধিকৃত হয়ে দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিতে শুরু করে। এরপর সে ইসলামের সাথে সম্পর্কচ্যুত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যায়’ (ইবনে মাজা)।
পোশাকের উদ্দেশ্য : হে আদম সন্তান, আমি তোমাদের জন্যে পোশাক সৃষ্টি করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান বা গুপ্তস্থান ও দেহ আবৃত করে রাখে এবং এটা সৌন্দর্যেরও উপকরণ। তবে তাকওয়ার পোশাক এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
পোশাকের প্রকারভেদ :
(১) ফরজ : পোশাকের সেই পরিমাণ ফরজ, যা ‘সতর’ অর্থাৎ লজ্জাস্থান বা গুপ্ত অঙ্গকে আবৃত করে রাখা। পোশাক তুলা, কাতান অথবা পশমের হওয়া উত্তম।
(২) সুন্নত : পোশাক পায়ের গোছার অর্ধাংশ পর্যন্ত দীর্ঘ এবং আস্তিন হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত লম্বা এবং ঝুলের দিক থেকে অর্ধহাত পর্যন্ত চওড়া হওয়া সুন্নত।
(৩) মাঝারি : না উৎকৃষ্ট, না সুন্দর পোশাক হওয়া।
(৪) রিয়া বা অহঙ্কার হয় পোশাক : যে পোশাক পরলে মানুষ পরিধানকারীর প্রতি অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করে, তাই রিয়ার বা অহঙ্কারের পোশাক।
(৫) মোস্তাহাব : যে পোশাক সাজসজ্জা আল্লাহ্র নিয়ামত প্রকাশের উদ্দেশ্যে পরিধান করা হয়, তা মোস্তাহাব।
(৬) মুবাহ্ : যে পোশাক শুধুমাত্র সাজসজ্জা করার জন্যই পরিধান করা হয়।
(৭) মাকরুহ : গর্ব ও অহঙ্কারের পোশাক যা শরীরের কিছু অংশ অনাবৃত রাখে, তা পরিধান মাকরুহ।
(৮) হারাম : কুসুম ও জাফরান দিয়ে রঞ্জিত বস্ত্র এবং লাল রঙের বস্ত্র পুরুষের জন্য হারাম। খাঁটি রেশমী বস্ত্রও পুরুষের জন্য হারাম। কিন্তু চার আঙ্গুল পরিমিত বস্ত্রের বুটা ও ডিজাইন ইত্যাদি হারাম নয়। পায়জামার ফিতা বা দড়ি চার আঙ্গুল পরিমাণ হলেও তা জায়েজ নয়। পোশাকে নকশা হারাম না হয়েও জায়েজ নয়। রেশমী টুপী হারাম, যদি তা পাগড়ীর নিচেও গোপন থাকে। রেশমী কাপড়ের বালিশ, চাদর, বিছানা ইত্যাদি হারাম’ (দুররে মোখতার)। পুরুষদের জন্য পায়জামা ও লুঙ্গি পায়ের গিটের বা টাকনুর নিচে পরিধান করা হারাম এবং নামাজে এরূপ পোশাক পরিধান করা মাকরুহ্’ (এমদাদুল ফতোয়া)।
মানুষ আল্লাহতায়ালার ইবাদত বন্দেগী প্রার্থনা জিকির-আসকার মোরাকারা-মোশাহেদা থেকে উদাসীন বা গাফেল থাকে কী কারণ? কারণ, তামাম দুনিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখা যাইতেছে নারী-পুরুষরা যেভাবে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় চলাফেরা বা ঘোরাফেরা করিতেছে, তাতে মা-বোনেরা পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত মোতাবেক লেবাস পোশাক পরিধান করিতেছেন না। তারা যে পাতলা বা শর্ট কাপড় পরিধান করে, যার কারণে গুপ্তস্থান বা লজ্জাস্থান প্রকাশ পায় এবং পুরুষের বেলায়ও দেখা যায় যে, তারা যে সমস্ত কাপড় যেমন ইন করে প্যান্ট-শার্ট পরা (মনে রাখতে হবে যে, ইন করে প্যান্ট-শার্ট এমনভাবে পরা যাবে না, যাতে শালীনতা ক্ষুণ্ণ হবার মতো দৃশ্য চোখে পড়তে পারে) হাফ শার্ট, হাফ গেঞ্জি, হাফ প্যান্ট পরিধান করে, তা দ্বারা গুপ্তস্থান বা লজ্জাস্থান অনেক সময় প্রকাশ পায়। তা দেখে নারীরা পুরুষের প্রতি আসক্ত হতে পারে, যা দ্বারা ঈমান আখলাক চরিত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই আপনাদিগকে বিনয়ের সাথে বলিতে চাই, মা-বোনেরা, এমন শালীনতার সাথে চাকরী-নকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করিবেন, যেন পুরুষ জাতি আপনাদের দেখিয়া কু-দৃষ্টিতে না তাকায় এবং এমন ঢিলাঢালা জামা কাপড়, বোরকা, ও মাথায় ওড়না পরিধান করিবেন যেন, পুরুষ জাতি আপনাদের দেখে অসৎ উদ্দেশ্যে আকৃষ্ট না হয়। পুরুষলোকদের প্রতি বিনয়ের সাথে বলিতে চাই, আপনারা এমন পোশাক পরিধান করুন, যাতে আপানাদের গুপ্তস্থান বা লজ্জাস্থান প্রকাশ না পায়, বা অনুভব না হয়। নারী জাতি যেন আপনাদের ওপর অসৎ উদ্দেশ্যে আকৃষ্ট না হয় পোশাক পরিধানে সে বিষয়ে খোয়াল রাখবেন। যেহেতু আপনাদের দেখে আপনাদের ছেলে-মেয়ে ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনও শিখে, কাজেই আপনারা এমনভাবে চলবেন না যাতে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আপনারা দয়া করে শুধরে যান। আপনারা অশালীন পোশাক পরিবেন না, ঢিলেঢালা মার্জিতভাবে লজ্জাস্থান থেকে একটু নিচু পর্যন্ত পোশাক পরিধান করুন। তা হলেই সমাজে লজ্জা, শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়া আসিবে। আপনাদের স্মরণ করাতে চাই, মানুষ মরণশীল। দুনিয়া ছেড়ে কবর বাড়িতে একদিন যেতে হবে। কাল হাশরের দিন মহান আল্লাহতায়ালার কাঠগড়ায় বা আদালতে দাঁড়াইতে হবে, প্রত্যেক অঙ্গ-প্রতঙ্গের হিসাব দিতে হবে।
তাই সূরা ইয়াসীনের ৬৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্ ইয়াওমা নাখ্তিমু ‘আলা, আফ্ওয়া-হিহিম অ-তুকাল্লিমুনা, আইদীহিম্ অতাশ্হাদু আরজুলুহুম্ বিমা-কা-নূ ইয়াক্সিবূন্।’ অর্থ: আজ আমি তোমাদের মুখ বন্ধ করে দেব, তোমাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে। তোমাদের পা এদের কৃত কর্মের সাক্ষ্য দেবে।’
তাই আপনারা ঈমানের সাথে শরিয়তের হুকুম, আহকাম মানিয়া পরিশুদ্ধ দিল নিয়া ঈমানদার হওয়ার চেষ্টা বা রাস্তা খোঁজেন।
আমি সকল প্রকার মিডিয়ার সম্মানিত ভাই-বোনদের অনুরোধ করে বলতে চাই, আপনাদের ইচ্ছা ও মেহেরবানীতে দেশ ও মানব জাতির কল্যাণ হতে পারে। আপনারা যদি অশ্লীল ছবি, ভিডিওচিত্র, পেপার-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেটে প্রচার করেন, তা হলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এ সমস্ত ছবি, ভিডিওচিত্র দেখিয়া আমাদের ছেলে মেয়েরা খারাপ ও অশ্লীল কাজে ধাবিত হয়, সামনের দিকে এর পরিণাম ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। কাজেই আপনারা এসমস্ত মানুষের ঈমান আখলাক বাঁচাতে সচেতন হোন। সৎভাবে সুস্থ ব্যবসা-বাণিজ্য করেন।মহান আল্লাহতায়ালা আপনাদেরকে রহমত, বরকতে পরিপূর্ণ করে দিবেন। হাদিস শরীফে আছে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম ফরমান, ‘সৎ ব্যবসায়ীরা হাশরের দিন আমার সাথে থাকবে।’