আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
আবদুল ইবন ইউসুফ (রা.) আম্মাজান আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত- হারিস ইবন হিমাশ (রা.), রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনার নিকট অহি কীভাবে আসে? রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, কখনো তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট আসে। আর এটাই আমার নিকট সবচাইতে কষ্টদায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই ফেরেশতা যা বলেন, আমি তা মুখস্থ করে নেই। আবার কখনো ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্ত করে ফেলি।
আম্মাজান আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রতি সর্বপ্রথম যে অহি আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরুপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন, তা একেবারে ভোরের আলোর মতো প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে প্রিয় হয়ে পড়ে নির্জনতা এবং তিনি ‘হেরা গুহায়’ নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া এইভাবে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তারপর মা খাদিজাতুল কোবরা (রা.)-এর কাছে ফিরে এসে আবার অনুরুপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনইভাবে হেরাগুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে অহি এলো। তাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বললেন, পড়–ন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনÑ পড়–ন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়–ন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেনÑ পড়–ন। আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়–ন, আপনার রব মহা মহিমান্বিত।
ইক্বরা’ বিসমি রাব্বিকাল লাযী খালাক্বাল ইনসা-না মিন ‘আলাক্ব।’ (সূরা আলাক্ব, আয়াত-১ ও ২)
তারপর এ আয়াত নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) ফিরে এলেন। তিনি তখন তীব্র কম্পন অনুভব করছিলেন। তিনি আম্মাজান খাদিজাতুল কোবরা (রা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। তখন তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হল। অবশেষে তাঁর কম্পন দূর হল। তিনি আম্মাজান খাদিজাতুল কোবরা (রা.)-এর কাছে সব ঘটনা খুলে বললেন, তিনি বললেন, আমার যেন কেমন লাগছে। খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বললেনÑ আপনি চিন্তিত হবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেছেন। অসহায়-দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেছেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেছেন, মেহমানদেরকে মেহমানদারী করেছেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেছেন।
এরপর তাঁকে নিয়ে মা খাদিজাতুল কোবরা (রা.) তাঁর চাচাতো বড় ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফিল ইবন আবদুল আসাদ ইবন আবদুল উযযার কাছে নিয়ে গেলেন। যিনি জাহিলি যুগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহর তওফিক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইন্জিল কিতাব থেকে অনুবাদ করতে পারতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। মা খাদিজাতুল কোবরা (রা.) তাঁকে বললেনÑ হে চাচাতো বড় ভাই আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ওয়ারাকা রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী দেখ? তখন রাসুলুল্লাহ যা দেখলেন, সবই তাঁর কাছে খুলে বললেন। তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেনÑ তিনি সেই দূত যাঁকে আল্লাহ মুসা (আ.)-এর কাছে পাঠিয়েছেন। আফসোস, আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস, আফসোস আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কওম তোমাকে বের করে দেবে। তিনি বললেনÑ হ্যাঁ অতীতে যিনিই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছিল, তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব। এর কিছুদিন পরই ওয়ারাকা (রা.) ইন্তেকাল করেন। আর অহি স্থগিত থাকে।
‘ওয়ালা তাকুলূ লিমাই ইয়ুক্বতালূ ফী সাবীলিল্লাহি আম্ওয়া ত বাল্ আহ্ইয়া উওঁ-ওয়ালা কিল্লা তাশ্উরুন।’ (সূরা : বাক্বারা, আয়াত- ১৫৪)
অর্থ : যারা আল্লাহর মহব্বতে জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, তাদেরকে মৃত মনে কর না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বোঝ না।
‘ওয়ালা তাহ্সা বান্নালা লাযীনা কুতিলূ ফী সাবীলিল্লাহি আমওয়া তানবাল আহ্ইয়া উন ইন্দা রাব্বীহিম ইর্উযাকুন।’ (সূরা : আল-ইমরান, আয়াত-১৬৯)
অর্থ : যারা আল্লাহর মহব্বতে জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তাদেরকে মৃত মনে কর না বরং তারা জীবিত, স্বীয় রবের নৈকট্যপ্রাপ্ত, স্বীয় রবের পক্ষ থেকে রিযিকপ্রাপ্ত।
‘ক্বুল্-লা আস্আলুকুম আলাইহি আজ্বরান ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল কোরবা।’ (সূরা : শূরা, আয়াত-২৩)
অর্থ : হে আমার মাহবুব আপনি বলে দিন রিসালাত পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে তোমাদের কাছে কিছুই চাই না। তোমরা শুধু আমার আহলে বাইতকে ভালোবাস।’নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আমার আহলে বাইতের উদাহরণ হযরত নূহ্ (আ.)-এর কিস্তির মত, যারা এই কিস্তিতে উঠেছিল, তারাই নাযাত পেয়েছিল। (তিরমিজি, মুসলীম শরীফ)
‘ক্বুল ইন্কুন্তুম তুহিব্বুনাল্লা-হা ফাত্তাবি উ-নী ইউুহবিব্ কুমুলুল্লাহ্ ওয়া ইয়াগফির লাকুম যুনুবাকুম, ওয়াল্লাহু গাফুরুর রাহীম।’ (সূরা : আল-ইমরান, আয়াত-৩১)
অর্থ : হে প্রিয় হাবীব (সঃ) বলুন, তোমরা আল্লাহকে পেতে চাইলে আমাকে ভালোবাস, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং ক্ষমা করবেন তোমাদের গুনাহ্। আল্লাহ ক্ষমাকারী ও অতি দয়ালু।
“ওয়ামা আরসালনা মির রাসুলিন ইল্লা লিয়্যূত্বা-আ বি-ইযনিল্লাহি ওয়া লাও আন্নাহুম ইযজালামু আন-ফুসাহুম জাউকা ফাসতাগফারুল্লাহা- ওয়াসতাগ¦ফারা লা-হুমুর রাসুলু লাওয়াজাদুল্লাহা তাও-ওয়াবার রাহীমা’ (সূরা : নিসা, আয়াত-৬৪)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ, প্রিয় হাবীব রাসুল (সঃ) কে প্রেরণ করেছি এই জন্য যে, তোমরা তাঁর অনুসরণ ও আনুগত্য করবে। প্রিয় হাবীব (সঃ), তারা যদি তাদের অপরাধকৃত কর্মের জন্য আপনার কাছে এসে আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় এবং আপনি যদি তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তাহলে আমি ক্ষমা করে দিই। আল্লাহ অতি দয়ালু ও ক্ষমাশীল।
“ওয়া-লাক্বাদ কাতাবনা-ফিয্যাবূরি মীম বা’ দিয্যিকরি আন্নাল আরদ্বা-ইয়ারিসূহা-ইবা-দিয়াস-ছলীহুন।’
(সূরা : আমবিয়া, আয়াত-১০৫)
অর্থ : প্রিয় হাবীব (সঃ) নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, আপনার মহব্বতে আমার মাহবুব আমার বন্ধু অলি-আউলিয়াদের পৃথিবীর স্বত্তাধিকারী করে, তা আমার লওহে মাহফুজে লিখে রেখেছি।