(শাহসুফি আলহাজ্ব মাওলানা হযরত জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলি) ক্বেবলাজান দৈনিক পত্রিকা পড়ছেন আলোকচিত্র : আত্মার আলো)
মোঃ মোতালেব
প্রভাতে ঘন কুয়াশায় সূর্যকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে আর তা দেখে যদি কেউ মন্তব্য করে, আজ বুঝি সারাদিনে সূর্যের আলো দেখা যাবে না। তবে তার এই মন্তব্য যেমন যথাযথ নাও হতে পারে। ঠিক তেমনি একজন সাধারণ মানুষকে দেখে বলা যাবে না এর দ্বারা জীবনে কিছুই হবে না। একজন সাধারণ মানুষও জামানার কামেল মোকাম্মেল অলি-আল্লাহর সংস্পর্শে এসে গোলামী করে তার গোটা জীবনকে পাল্টে ফেলতে পারেন। কত রাজা-বাদশাহ, আমির-ওমরাহ, জ্ঞানী-গুণী, ধনী-মানী ও আলেম-ওলামা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই ধন্য হয়েছে কোনো না কোনো কামেল-মোকাম্মেল অলি-আল্লাহর কদমে গোলামী করে। বলকের বাদশাহ্ ইব্রাহীম বিন আদহাম, দিল্লীর আমির খসরু আর জগত বিখ্যাত আলেম মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ)-এর মতো সকলেই একই সুরে সুর মিলিয়ে বলেছেনÑ আমাদের জীবন ধন্য হয়েছে শুধু আপন আপন মুর্শিদের কদমে গোলামী করে। তাঁদের মতো আমারও বলতে ইচ্ছে করছেÑ আমি নগণ্য গোলামের মানব কূলে জন্ম নেয়া সার্থক হয়েছে শুধু জামানার মহান হাদী শাহসুফি খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের পবিত্র কদমে গোলামী করার সুযোগ পেয়ে।কালের বির্বতনের সাথে সাথে আল্লাহ পাক এই পৃথিবীতে যুগে যুগে অসংখ্য মহামানব পাঠিয়েছেন মানুষকে হেদায়েতের জন। তাঁরা সকলেই বিপথগামী মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখিয়েছেন, দিয়েছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঠিক পথের সন্ধান। ঠিক তেমনি, এই মহামছিবতের সময় আর্বিভাব হয়েছে আমাদের মহান মুর্শিদ, জামানার শ্রেষ্ঠ হাদী শাহসুফি দয়াল খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের। যাঁর সংস্পর্শে এসে গোলামী করে পাল্টে গেছে আমার মতো লাখ লাখ মানুষের জীবন। এখন রাত প্রায় দেড়টা বাজে এপাশ ওপাশ করছি কোনো অবস্থাতেই ঘুম আসছে না। বারবার শুধু মনে পড়ছে আমার প্রাণপ্রিয় দরদী মুর্শিদের কথা। চোখের সামনে ভেসে উঠছে বাবাজানের সুন্দর জ্যোতির্ময় নূরানী চেহারা মোবারকখানি। মনে পড়ছে জীবনের প্রথম দিকের কথা, মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো আমি কেমন করে বাবাজানের কদমে এলাম এই বিষয়ে কিছু লিখি। এই মুহূর্তে তা আবার মনে হতেই উঠে বসে পড়লাম লিখতে। পরক্ষণেই মনে হলো, আমি গোলাম আমার জবান আর জীবন সম্পূর্ণই বাবাজানের কদমে। আমি কী লিখব? কেমন করে লিখব বাবাজানের গুণগান? আমার আদব, মোহাব্বত, জ্ঞান, বিবেক-বুদ্ধি কিছুই নেই। তারপরও বাবাজানকে স্মরণ করে লিখতে বসে পড়লাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি যখন এস.এস.সি পরীক্ষার্থী ঠিক ঐ বছর প্রিটেস্ট এবং টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করি। স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক শ্রী অজীত কুমার শাহা আমাকে বের করে দিতে চেয়েছেন। সে বছর এস.এস.সি পরীক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমার বড় ভাইকে নিয়ে স্যারকে অনেক অনুরোধ করি; কিন্তু কোনো অবস্থাতেই রাজি করাতেই পারছিলাম না। অবশেষে কি জানি কী মনে করে আমাকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দিলেন এবং বললেন, দেখিস স্কুলের সম্মানটুকু যেন নষ্ট না হয়। পরীক্ষার অনুমতি পেয়ে বাসায় এলাম। অনুমতি পেয়েও মনটা খারাপ। কারণ সারাবছর লেখাপড়া করে প্রিটেস্ট এবং টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেছি। আর এখন হাতে সময় আছে মাত্র দুই মাস, কেমন করে কী করব কোনো কিছুই ঠিক মতো ভেবে পাচ্ছি না। আমার দ্বারা কী হবে? কেমন করে কাটবে আমার জীবন! লেখাপড়া ভাল লাগে না, ভবিষ্যতে কী করব আমি। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে, মনে হয় এই পৃথিবীতে আমার মতো এত অসহায় আর কেউ নেই। নানান কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। অচেতন ঘুমের মধ্যে দেখি কী অপূর্ব এক সুদর্শন জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ আমার রুমের মধ্যে এসেছেন। যাঁর পবিত্র চেহারা মোবারকের দিকে তাকানো যাচ্ছে না নূরের জ্যোতির কারণে। যে নূরের জ্যোতি বের হচ্ছে তাতে মনে হয়, গোটা অন্ধকার পৃথিবীটা আলোকিত হয়ে যাচ্ছে। হাতছানি দিয়ে আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য ডাকছেন। আমি যখনই তাঁকে ধরার জন্য কাছে গেলাম ঠিক তখনই তিনি সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। আমিও তাঁর পিছনে পিছনে হাঁটতে শুরু করলাম। জ্যোতির্ময় সেই মহাপুরুষ এত দ্রুত হাঁটছিলেন যে, কোনো অবস্থাতেই তাঁকে ধরতে পারছিলাম না। খোলা আকাশের নিচে বিশাল খালি জায়গার সবুজ রঙের ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটছেন, আমিও তাঁর পিছনে পিছনে। হঠাৎ দেখি বিরাট উঁচু পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে তিনি আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য ডাকছেন; কিন্তু আমি সেখানে কী করে যাব, চারদিকে ছোট-বড় অনেক গর্ত, তাছাড়া কালো রঙের অনেক বড় বড় কুকুর দাঁড়িয়ে আছে। কুকুরগুলো কোনো অবস্থাতেই আমাকে সেখানে যেতে দিতে যাচ্ছে না। সকল বাধা উপেক্ষা করে আমাকে সেখানে পৌঁছাতে হবে। কারণ জ্যোতির্ময় সেই মহাপুরুষ সেখানে অবস্থান করছেন। অনেক কষ্ট করে আমি পাহাড়ের উঁচু জায়গায় পৌঁছালাম। আশ্চার্য, যখনই আমি সেখানে পৌঁছালাম ঠিক তখনই তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে অন্য দিকে চলে গেলেন। আমি নীরবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ করে আমার ঘুম ভেঙে গেল। মনে মনে ভাবলাম, কে এই মহাপুরুষ? কেন আমাকে ঘর থেকে বের করে আনলেন? কেনই বা আমাকে পাহাড়ের উপরে রেখে তিনি অন্যত্র চলে গেলেন? পরের দিন আমাদের মহল্লার আব্দুর রশিদ সাহেবের বাসায় তাঁর পীর সাহেবের শুভ আগমন উপলক্ষে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। অনেক লোকজন সেখানে উপস্থিত আবার অনেকে পীর বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চলে যাচ্ছিলেন। মনে মনে ভাবছিলাম আমিও গিয়ে পীর বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসি; কিন্তু লজ্জা পাচ্ছিলাম কেমন করে সেখানে যাই। আমার আব্বা মরহুম সাহাবুদ্দিন প্রধান সাহেব আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন পীর বাবার কাছে। আব্বার ইচ্ছে ছিল যেহেতু প্রিটেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেছি সে জন্য পীর বাবার কাছে দোয়া চাইবেন, যেন আমি ভালোমতো লেখাপড়া করতে পারি। আব্বার পিছনে পিছনে গেলাম পীর বাবার দোয়া নেওয়ার উদ্দেশ্যে। যখনই আমি পীর বাবাকে দেখলাম হতবাক হয়ে পীর বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম, এই তো সেই জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ, যাঁকে গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখেছি আমি। যিনি আমাকে পাহাড়ের উঁচু জায়গায় রেখে হাসতে হাসতে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। এখনও তাঁর মুখে সেই মিষ্টি হাসি দেখতে পাচ্ছি। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কী বাবা মনটা খারাপ? লেখাপড়া ভালো লাগে না? ভালোমতো লেখাপড়া করতে হবে। ভয় নাই, যান আমি আপনার সঙ্গে আছি। এখনই আপনি দোকান থেকে এক টাকা পঁচিশ পয়সার তালমিছরি কিনে নিয়ে আসেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে দোকান থেকে তালমিছরি কিনে এনে বাবাজানের হাতে দিই । বাবাজান হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে আমার হাতে দিয়ে বললেন, বাবা আপনি যখন পরীক্ষা দিতে যাবেন তখন একটু মিছরি আপনার মুখে রাখবেন এবং আমাকে স্মরণ করবেন, মালিক আপনাকে সাহায্য করবেন।পূর্বের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী এস.এস.সি পরীক্ষা শুরু হলো। বাবাজানের নির্দেশ অনুযায়ী পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু মিছরি আমি মুখে রাখতাম। যখনই আমি মুখে মিছরি রাখতাম ঠিক তখনই দেখতাম বাবাজান আমার সামনে বসে আছেন। বাবাজানের সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রশ্নপত্রের উত্তরগুলো আমি লিখতাম। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আমার পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় প্রতিদিন পরীক্ষার হলে বাবাজানকে আমি উপস্থিত পেতাম; কিন্তু যেদিন থেকে পরীক্ষা শেষ সেদিন থেকে আর আগের মতো পাই না। যথা সময়ে পরীক্ষার ফল বের হলো। ফল পেয়ে আমি খুবই অবাক। যেই আমি প্রিটেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেছি, যাকে স্কুল থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। সেই আমি দুটি বিষয়ের ওপর লেটারসহ ৭৪৭ মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগে পাস করেছি। তখনই আমার মনে হলো আমার এই সফলতা তো আমার চেষ্টায় হয়নি। বরং এটা সম্ভব হয়েছে শুধুই বাবাজানের দয়ায়। কারণ বাবাজান আমাকে আগেই বলেছিলেন, যান আপনার কোনো ভয় নেই, আমি আছি আপনার সঙ্গে। আমার পূর্ণ বিশ্বাস এসে পড়ল জামানার মহান হাদী শাহসুফি দয়াল বাবাজানের ওপরে। একজন কামেল মোকাম্মেল অলি-আল্লাহ ইচ্ছা করলে যে অসম্ভব কে সম্ভব করতে পারেন, তার জলন্ত প্রমাণ আমার এই এস.এস.সি পরীক্ষার ফল। ১৯৯২ সালের ২৪ এপ্রিল রোজ শুক্রবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুল হক সাহেবের বাসায় এই মহাসাধক বাবাজান ক্বেবলা ও কাবার কদমে মরাধম পর্যন্ত গোলামী করার বাসনা করে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে বাইয়াত গ্রহণ করলাম। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাবাজানের কদমে গোলামীতে আছি এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেন বাবাজানের হুকুম মেনে পূর্ণ ইমান নিয়ে গোলামী করে মরতে পারি। বাবাজানের কদমে সেই দয়া ভিক্ষা চাই। যাঁর পবিত্র নূরানী চেহারা মোবারকের দিকে তাকালে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কথা মনে থাকে না। দুনিয়ার সবকিছুই নিজের কাছে তুচ্ছ বলে মনে হয়। সেই মহান সাধক শাহসুফি খাজাবাবা কুতুববাগীর রাঙা চরণে আমি মিছকিনকে যেন দয়া-মায়া করে গোলাম হিসেবে কবুল করেন, এটাই কাঙালের আর্জি। আমিন।