মানুষের কোনো মৃত্যু নেই

মোঃ শাখাওয়াত হোসেন

আমার মহান মুর্শিদের কণ্ঠে যেদিন শুনেছিলাম পবিত্র কোরআনের বাণী, ‘কুল্লু নাফছিন জাইকাতুল মাউত’ অর্থাৎ, প্রতিটি নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। তখন এর অর্থ বা মানে বুঝিনি। মানুষতো আল্লাহর আদেশে এই পৃথিবী থেকে চলে যায়, মানুষের মুত্যু হয় না। যদি মুত্যৃ না-ই হয় তাহলে আমরা তাদের দেখতে পাই না কেন? প্রায় দুবছর আগে আমার জন্মদাতা পিতার ইন্তেকাল হয়। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি আমাকে বার বার বলেছিলেন আমার পীর মাওলানা হযরত কুতুববাগী ক্বেবলাজানের কথা খুব মনে পড়ছে তাঁকে দেখতে ইচ্ছে করছে। এই কথা বলে তাঁকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেছি। আমার চোখেও পানির বাঁধ মানেনি। মৃত্যুর সময় আমি আমার জন্মদাতা পিতার পাশে বসা ছিলাম এবং লক্ষ্য করে দেখলাম যে, তিনি পরম তৃপ্তি নিয়ে আল্লাহ নামের জিকির করতে করতে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। তখন আমার পিতার নফসের মৃত্যু হয়েছিল। আসলেই তাই পিতার মৃত্যুর অনেক দিন পর আমি গুনাহগার নিজ মুর্শিদের উছিলা নিয়ে স্বপ্নযোগে আমার পিতাকে দেখার আকুতি জানালাম। আল্লাহ আমার আকুতি কবুল করেছেন। একদিন সকালে আমার ঘুম ভেঙে গেল কিন্তু আমি বিছানায় শুয়েছিলাম তখন হঠাৎ দেখি সশরীরে আমার পিতা আমার কাছে হাজির হলেন এবং আমি তাঁকে প্রশ্ন করলামÑ আব্বা আপনি কবর থেকে এখানে এলেন কীভাবে? ওখানে কি আপনার কষ্ট হচ্ছে? উত্তরে তিনি হেসে বললেন, না। কোনো কষ্ট হচ্ছে না।’ আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে আমি আমার দরদী মুর্শিদের কাছে খুলে বললাম। আমার কথা শুনে বাবাজান শুধু মুচকি হাসলেন। বাবাজানের হাসিমুখ দেখে আমার বুঝতে আর বাকি রইল না। আসলে কামেল পীরের খেলা বোঝা সত্যি কঠিন। আমি আমার নিজের পিতাকে সশরীরে হাজির দেখে, বাবাজানের কাছে শোনা কোরআন শরীফের সেই অমীয় বাণীর (সকল নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।) প্রতি ইমান আরও মজবুতভাবে স্থাপিত হলো। কামেল পীরের সাহচার্যে এলে কোরআনের অমীয় বাণীর প্রতি ইমান স্থাপিত হয়। তাইতো সুরা তওবার নং ১১৯ আয়াতে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, অ-কুনূ-মা আছ সোয়াদেক্বীন।’ অর্থৎÑ তোমরা সাদিকের (সত্যবাদী) সঙ্গী হও। সকল তাফসীরে ‘হাক্কানী সোয়াদিক্বীন’ দ্বারা পীর-মাশায়েখগণকে উদ্দেশ করা হয়েছে। তাই পীর বা অলি-আল্লাহগণের সান্নিধ্য লাভ করার কথা আল্লাহ তায়ালা কোরআন পাকেই বলেছেনÑ যাঁদের সঙ্গলাভ করলে কোরআনের অর্থ পরিষ্কার  হয় এবং খুব সহজেই বোঝা যায়। সত্য কথা সহজে বুঝতে পারলে মানুষের ইমানও শক্ত হয় এবং ইমানের সঙ্গে নফসের মৃত্যু হয়। যার প্রতিফলন আমি আমার পিতার ইন্তেকালের সময় দেখেছি। আমার পিতার ইন্তেকালের দুদিন পূর্বেই বাবাজান আমার পিতাকে সবসময় জিকিরের হালে থাকতে বলেছিলেন এবং আমার পিতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন আল্লাহ নামের জিকিরের সঙ্গে করে। যে দৃশ্য আমি তাঁর কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের আদিপিতা হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে অদ্যাবধি যত মানুষ পৃথিবীর বুকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন, তাদের সকলেরই নফসের মৃত্যু হয়েছে এবং হবে; কিন্তু আমাদের এই দুনিয়ার প্রতি আসক্তি এতই প্রবল যে, মৃত্যুকথা, পরলোকের কথা, পাপ-পুণ্যের কথা, হাসরের কথা, মিজানের কথা, পুলসিরাতের কথা ভুলে বসে আছি। আমরা আসলে চিন্তাই করছি না আল্লাহ আমাদেরকে কেনো এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমাদের কর্তব্য কী? পৃথিবীতে বসে আমাদের কী করা উচিত। কোন কর্ম নিয়ে আমরা আল্লাহর দরবারে হাজির হব? এই সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে, তথা পৃথিবীর বুকে কোন কোন কর্ম সম্পাদন করে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে তা কেবল একজন কামেল মুর্শিদ বা ওস্তাদ, আল্লাহর মেহেরবানীতে জানতে পারেন এবং সেই শিক্ষাই তাঁর ভক্ত, মুরিদ, আশেক, জাকেরদেরকে দিয়ে থাকেন। যেমন  আমার দরদী মুর্শিদ আমাদের মানবসেবার শিক্ষা দিচ্ছেন। তিনি প্রচার করছেন মানবসেবাই পরম ধর্ম। আমরা যদি বাবাজানের এই অমীয় বাণীকে নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, যদি সঠিকভাবে মানুষের সেবা করতে পারি তাহলে আল্লাহর দরবারে আমরা বলতে পারবÑ ইয়া আল্লাহ! আমরা তোমার সৃষ্টি মানুষকে সেবা করেছি, যেই মানুষের ভিতর তুমি আছ। মুর্শিদের  হুকুম আমরা আমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। তুমি আমাদের ক্ষমা কর। আল্লাহ নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।

(Visited 356 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *