মানুষের সঙ্গে আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ

 সাইফুল ইসলাম দীপক

কিছুদিন আগে হঠাৎ একটি উপলব্ধি হলো এবং সেই উপলব্ধি নিয়ে এই লেখা। একদিন আচমকা মনের ভিতর থেকে যেন কে বলে উঠলো, ‘তুমি মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করো কেন? এ কথা শুনে চমকে উঠলাম! এ উপলব্ধিটা এমনই হঠাৎ আর স্পষ্ট যে বিষয়টা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। চিন্তা করলাম জীবনে বহুবার বিভিন্ন মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করেছি, কখনও তো এমন হয়নি। আবার নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা কেউ যদি আমার সাথে রূঢ় আচরণ করে, তা হলে তার প্রতি আমার রূঢ় আচরণ করা জায়েজ আছে। আবার ভিতর থেকে উত্তর আসল, সে ক্ষেত্রেও তুমি রূঢ় আচরণ করো না, মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলো না। এ কেমন কথা, যুগটাই তো এরকম, কেউ ঢিল মারলে বিনিময়ে পাটকেল মারো। আরো ভাবতে লাগলাম এবং হঠাৎ মনে হল, আমার গুরু, আমার মুর্শিদ, খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে তো কখনও দেখিনি কারো সাথে রূঢ় আচরণ করতে, কিংবা কারো মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে। কুতুববাগী কেবলাজান বলেনÑ ‘মানুষের কথায় আরেক মানুষের অন্তরে একটা দাগ পড়ে। ভালো কথায় একটা দাগ পড়ে, কটু কথায়ও দাগ পড়ে। সেই দাগ সহজে ওঠে না।’ আমি গুরুর সান্নিধ্যে আজ প্রায় দশ বছর। কিন্তু কই? বাবাজানকে এর মধ্যে কখনো দেখিনি কারো সাথে কটু ভাষায় কথা বা উচ্চ স্বরে কথা বলতে। তিনি বলেনÑ ‘বাবা, কামেলঅলি আল্লাহগণ অতি নরম স্বভাবের হন।’ এটাইবা কেমন কথা, যুগটাই যেখানে গরম স্বভাবের, গরম স্বভাবই হলো ব্যক্তিত্বের পরিচয়। যা-ই হোক, আমিও কিছুদিন চেষ্টা করলাম গুরুর শিক্ষা মতো নিচু স্বরে কথা বলব, কিন্তু খুব বেশিক্ষণ পারলাম না। আবারো চেষ্টা করলাম, কিন্তু তাও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। অবাক হয়ে ভাবি, দশ বছর ধরে আমার পীর খাজাবাবা কুতুববাগীকে দেখি, তিনি তো সব সময়ই নরম স্বভাবের! তাহলে তিনি কীভাবে পারেন। এর কারণ খুঁজে পেলাম, (এরপর পৃষ্ঠা ৩) (শেষ পৃষ্ঠার পর) নরম কোমল স্বভাব কামেলঅলি আল্লাহগণের সহজাত বৈশিষ্ট। আরোপিত নয়। যারা খাজাবাবা কুতুববাগীর সংসর্গে এসেছেন, তাঁরা তার এই ব্যবহার দেখেছেন। যেমন পড়েছি নবীজি (সঃ)এর জীবনীতে। নবীজি ছিলেন অত্যন্ত নরম স্বভাবের। তেমনি কামেল অলি-আল্লাহগণ নবীজির সত্য পথে মানুষদের আহবান করছেন, তাঁদের মধ্যেও নবীজির সেই চারিত্রিক গুণাবলী বিদ্যমান। আল্লাহতায়ালা নবীজিকে পাঠিয়েছেন আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর রাস্তা দেখাতে। তেমনি নবুয়ত শেষ হওয়ার পর যুগে যুগে কামেল মোকাম্মেল অলি-আল্লাহগণ সেই কাজই করে যাচ্ছেন। মানুষকে আল্লাহর রাস্তায় আনার জন্য রাসুল (সঃ) সেই বাণী মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এত কষ্ট স্বীকার করেও চেষ্টা চালাচ্ছেন। যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেই কথায় আসি। আরো ভাবতে লাগলাম, তাহলে সত্যিকার নরম স্বভাব হবে কীভাবে? ভাবতে ভাবতে খাজাবাবা কুতুববাগীর একটা কথা মনে হল, তিনি বলেনÑ ‘আমিও আমার মুর্শিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে আল্লাহর রাস্তায় আত্মাসমর্পণ করেছি।’ যারা আল্লাহর রাস্তায় পরিপূর্ণ আত্মাসমর্পণ করেছেন, তাঁরাই এমন নরম স্বভাবের হন। যারা আল্লাহতে পরিপূর্ণ বিলিন হয়েছেন, তাদের মধ্যে কোন অহঙ্কার থাকে না, কারণ তাঁদের কাছে পার্থিব জগত মিথ্যা, এমন অবস্থা যার হয় নাই, সে কীভাবে বুঝবেন? আল্লাহর রাস্তায় পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করার মানেই প্রকৃতভাবে ইসলামে প্রবেশ করা। রাসুলুল্লাহর সত্য ইসলামের দাওয়াতই খাজাবাবা কুতুববাগী দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ কত কথা বলে, কত কটুক্তি করে, কত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে দিকে তাঁর ভ্রƒক্ষেপ নাই। তিনি তার কাজ ও কর্তব্যে অবিচল। আর তা হবেই না-বা কেন। আল্লাহতায়ালাই একমাত্র সত্য, আর অলি-আল্লাহগণ সেই সত্যের মর্যাদা বহন করে সদা সর্বদা কাজে নিষ্ঠাবান থাকেন। যার ফলে তাঁরা কখনো চিন্তিত নন, আল্লাহ ছাড়া কোনো কিছুতেই ভীত নন। তাঁরা স্থীর অবিচল। আমরা মুখে মুখে আল্লাহ বলি বটে, কিন্তু কয়জন আল্লাহকে চিনতে চাই, জানতে চাই? আল্লাহর সত্বায় বিলিন হতে চাই কয়জন? মনকে বলি, সত্যি যদি তোমার আল্লাহর রাস্তায় আত্মসমর্পণের বাসনা থাকত, তাহলে এত অস্থিরতা কেন? এত কষ্ট কীসের? এত চিন্তা কীসের? ইদানিং মনের সাথে দন্দ্ব বাধাই! মনকে বলিÑ মন, আমি তোমার দাস হব না, মুর্শিদের কাছে ওয়াদা করেছি, আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করব, তোমার কাছে নয়। এ কাজে সব সময় যে সফল হই, তা নয়। আমি আশা রাখি পূর্ণ বিজয় এক সময় আসবেই ইনশআল্লাহ! খাজাবাবা বলেনÑ ‘তোমরা নিজের নফসের সাথে জিহাদ করো, এটাই আসল জিহাদ। জিহাদ-এ-আকবর।’ আত্মশুদ্ধির এই জিহাদে আমার মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী সত্যের আলোতে আমাকে পথ দেখাচ্ছেন। শুধু আমি একা না, আমার মত এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথ দেখাচ্ছেন। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া যে, আমার মত অধম, নালায়েক, মূর্খকে খাজাবাবা কুতুববাগীর মতো কামেলগুরু সান্নিধ্যে এনেছেন এবং রেখেছেন। এতটুকু অত্যুক্তি করছি না, আমার জীবন ধন্য। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ভালো রেজাল্টের ডিগ্রিও নিয়েছি, তবুও একজন কামেল অলি-আল্লাহর মাহাত্ম আমার মত সাধারণ শিক্ষিত মানুষের বোঝা সম্ভব না। এখন প্রতি মুহূর্তে মনে হয় মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী, এর মধ্যেই আমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় আত্মসমর্পণ ছাড়া মুক্তির কোনো পথ নাই।

(Visited 333 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *