নাসির আহমেদ আল মোজাদ্দেদি
তরিকায় কেন আসবেন আপনি? কী হবে নকশবন্দিয়া- মোজাদ্দেদিয়া তরিকায় শামিল হয়ে? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগতে পারে। যখন কেউ দাওয়াত দেন যে ভাই আসেন, কুতুববাগ দরবার শরীফে যাই। সেখানে একুশ শতকের আধ্যাত্মিক মহাসাধক শাহসূফী আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি-মোজাদ্দেদি কুতুববাগী কেবলাজান শুদ্ধ মানুষ হওয়ার পথ দেখিয়ে থাকেন। মানবজীবন সহজ আর সুন্দর করার দীক্ষা দিয়ে থাকেন। যারা তরিকাপন্থী নন, তাদের কাছে এমন আহবান জানালে হয়ত মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বলবেন, কী হবে তরিকা নিয়ে? এখানেই আসে প্রয়োজনীয়তার প্রশ্ন। আসলে মানুষমাত্রই তার প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে। সব কাজেই আসলে মানুষ তার লাভ- লোকসানের কথা ভাবে। এটা দোষের কিছু নয়। অকারণে কেন আপনি কিছু করবেন? এখানেই তরিকায় আসার প্রয়োজন আছে কি নেই- সেই সত্য যাচাই করে দেখা যেতে পারে। আমাদের দু’টি জীবন। একটি ইহকালের বা পৃথিবীর জীবন, আর একটি পরকাল বা মৃত্যুর পরের অনন্ত জীবন। যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ এবং তার রাসুলদের ওপর, আসমানী কিতাবসমূহের ওপর, তারা অবশ্যই জীবনের এই দু’টি বাস্তবতাই বিশ^াস করেন। আর যারা পরকালে বিশ^াস করেন না, সেই নাস্তিকদের কথা তো আলাদা। বিশ^াসীরা জানেন, মাটির ওপরকার এই জাগতিক জীবন খুব অল্প সময়ের। বড়জোর এক শতাব্দীকালের। কিন্তু মৃত্যু পরবর্তী জীবন অনন্তকাল। যেহেতু নফস-এর মৃত্যু হয়, আত্মা অমর। দেহের বিনাশ ঘটে, আত্মা চিরঞ্জীব, মৃত্যুহীন। সেই অনন্তকালের পরলোক- জীবনের কথা ভেবে মানুষকে সৎ কাজ করতে হয়। আত্মাকে পাকপবিত্র করে মৃত্যুর আগেই শুদ্ধ মানুষ হয়ে যেতে হয়। ঈমানের সঙ্গে যেতে হলে আত্মশুদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সেই শুদ্ধ মানুষ বা আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হতে হলে শুদ্ধ-কামেল গুরুর কাছ থেকে দীক্ষা নিতে হয়। খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের কাছে যারা বায়েত গ্রহণ করে তরিকাপন্থী হয়েছেন, তাদের সবাই যে যার মতো চেষ্ট করেন নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে। এই দরবারে শুদ্ধ মানুষ হওয়ার পাঠশালা রয়েছে। খাজাবাবা কুতুববাগী শিক্ষক, জাকের-মুরিদরা শিক্ষার্থী। এখান থেকেই জানা যায় সৎ মানুষ হওয়া, আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে সত্যিকারে খাঁটি ঈমানদার হয়ে জিকির করতে করতে জীবন শেষে মৃত্যুর দরজা দিয়ে অনন্তকালের পথে হাসিমুখে চলে যাবার চেষ্টা, সেই চেষ্টাই তরিকতের সাধনা। যারা তরিকা গ্রহণ করেছেন, তাদের জীবনযাপনে পরিবর্তন অনিবার্য হয়েছে। তারা বদলে গেছেন। কু-স্বভাব, কু-খেয়াল, কু-ধ্যান ছেড়ে দিয়ে শুদ্ধ মানুষ হবার চেষ্টায় অনেকে সফলও হয়েছেন। তরিকায় আসার আগে যিনি বা যারা বেনামাজি ছিলেন, আসার পর নামাজি হয়েছেন। বেরোজাদার ছিলেন, তরিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার পর রোজাদার হয়েছেন। অহঙ্কারি ছিলেন, তরিকায় এসে বিনয়ী হয়েছেন, নম্র হয়েছেন। আগে নিজে একাই ভোগে মত্ত থাকতেন, এখন ভোগ ভাল লাগে না, অন্যের জন্য ত্যাগ করতেই ভালো লাগে। আগে যাঁরা নামাজ পড়তেন, তাদেরও অনেকেরই নামাজের মধ্যে দুনিয়ার- ঘর সংসারের, অফিস আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নানা কথায় কাজে মন ছোটাছুটি করতো। কিন্তু তরিকায় আসার পরে খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের দীক্ষা নিয়ে নামাজে হুজুরি দিল হবার শক্তি অর্জন করেছেন। এখন আর নামাজ পড়ার সময় মন এদিক-সেদিক যায় না। গভীর ধ্যানে আল্লাহর কুদরতি কদমে সেজদা দিতে পারছেন। সত্যিকার নামাজি হবার সুযোগ তো তরিকার শিক্ষা নিয়েই সম্ভব হলো। কুতুববাগ দরবারে এসে দরদী মুর্শিদ কেবলার সান্নিধ্যে যাদের জীবনধারা বদলে গেছে, শুধু তারাই বুঝবেন তরিকায় আসার প্রয়োজন কতখানি। তরিকায় এসেই জানা গেল যে, নিজের পিছনে লাগুন, অন্যের পেছনে লাগবেন না। অন্যের দোষ তালাশ করার আগে নিজের দোষ তালাশ করুন। বাবারা, ভুখা মানুষ পেলে খাবার দিন। বস্ত্রহীন পেলে বস্ত্র দিন। বাবা-মা জীবিত থাকলে মনপ্রাণ দিয়ে তাদের খেদমত করুন। ছোটদের ¯েœহ করুন, বড়দের শ্রদ্ধা করুন। যাদের বাবা-মা চিরতরে চলে গেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, তসবি তেলাওয়াত করে তাদের রুহের ওপর বকশিয়া দিন। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। মায়ের পায়ে চুমু খেলে যেন বেহেশতের চৌকাঠেই চুমু খেলেন, এমন মহাবাণীর সুশিক্ষা দিয়ে থাকেন তরিকার ইমাম খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান। খাজাবাবার কাছে যারা বায়েত গ্রহণ করে নকশবন্দিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সামিয়ানার নিচে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা মহৎ জীবনের পথে যাত্রা করার সুযোগ পেয়েছেন। নিজেকে বিন¤্র মানুষে পরিণত করতে পেরেছেন। নিজেকে চেনার জ্ঞান পেয়েছেন। খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান যেসব নসিহত বাণী পেশ করেন, তা কোরআন-হাদিসের আলোকেই করেন। সুরা আসর এর শেষাংশে আমরা জানতে পাই, ‘বিশ্বাসী ও সৎ কর্মশীলরা পরস্পরকে সত্যের পথে উৎসাহিত করে। আর (প্রতিকুলতার মুখে) ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান প্রায়ই বলেন, ‘বাবারা, ধৈর্যধারণ করেন, আল্লাহ সবরকারীর সঙ্গে থাকেন। যারা গীবত করে তারা মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার চেয়েও জঘন্য অপরাধ করে। সাবধান! কখনো গীবত করবেন না। গীবত মায়ের সঙ্গে জেনার চেয়েও জঘন্য কাজ। খাজাবাবার এই সতর্কতার সত্যতা পাই সুরা হুমাজাহ’ এর ভিতরেও। যেখানে বলা হয়েছে, ‘দুর্ভোগ এমন ব্যক্তির জন্যে- যে সামনাসামনি দুর্ব্যবহার করে এবং পেছনে নিন্দা করে।’ খাজাবাবা সবসময় তরিকাপন্থীদের এই শিক্ষা দেন, ‘কখনো কারো মনে আঘাত দেয়া যাবে না।’ তরিকায় আসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এরপরও কি আর ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে? মনে হয়, না। আসলে শুদ্ধ মানুষ, খাঁটি মানুষ, পুণ্যবান পরোপকারী, দয়ালু, ধৈর্যশীল, মহৎ মানুষ হবার সবচেয়ে বড় তীর্থকেন্দ্র হলো কুতুববাগ দরবার শরীফ। আর তরিকাই হচ্ছেচ্ছ ¥শুদ্ধির জন্য কামেল মুর্শিদের কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করার আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
লেখক : বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক