মানুষের জীবনে একজন আধ্যাত্মিক শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা

সাইফুল ইসলাম দীপক

শিরোনাম দেখে অবাক হচ্ছেন যে, এটা আবার কেমন কথা। এটাতো সবাই জানে। কথা ঠিক, সবাই জানে কিন্তু মানে কয়জন। আসুন বিষয়টার গভীরে ঢুকে কিছুটা আলোচনা করা যাক। আমরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিষয় নিয়ে পড়েছি, সেই বিষয়ের ওপর অনেক বইপত্র বাজারে পাওয়া যায়। তাহলে ওই সব বই কিনে পড়ে নিলেই হয়ে যেত। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না। কোনো শিক্ষকেরও প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষক ছাড়া আমাদের কোনো বিষয়ে শিক্ষা লাভ করা সম্ভব না। ভাবছেন এটাতো অতি সাধারণ কথা। এর জন্য এত ভূমিকার কি আছে! এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হল, আজকাল কিছু মানুষ আছেন যারা বলেন, কোরআন-হাদিসে সব আছে। কোরআন-হাদিসের বাংলা অনুবাদ পড়লেই তো হয়ে যায়। ইসলামকে জানা ও বোঝার জন্য শিক্ষকের কাছে যাওয়ার দরকার আছে কি? আমি অত্যন্ত মূর্খ্য মানুষ। কিন্তু শুনেছি যে, কোরআন শরীফের অনেক বড় বড় তাফসির আছে। অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ের উপরে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাহলে কথা হল বিষয়টা যদি এতই সহজ হবে কি দরকার ছিল এত বড় বড় তাফসির লেখার এবং তা নিয়ে গবেষণা করার? এরপরেও কেউ যদি ভাবেন, আমি সরাসরি বই পড়লেই সব জেনে যাব, তাহলে আপনাকে আর বলার কিছু নাই। তবে একজন শিক্ষক ছাড়া শুধু সরাসরি শেখার কোনো বিধান নাই পৃথিবীতে। যারা ভাবছেন ঠিক কথা, শিক্ষকের প্রয়োজন আছে, তাহলে আসেন কথা আরেকটু আগাই। আসুন খুঁজি এই শিক্ষক কারা বা তাদের পাবো কোথায়? তাঁরা কী কী শিক্ষা দিয়ে থাকেন? সাধারণ চিন্তায় মনে হতে পারে, যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বড় বড়

ডিগ্রিধারী, তারাই বড় শিক্ষক এবং জ্ঞানী। হতে পারে আবার নাও হতে পারে। হতে পারে যদি তাঁর মধ্যে ‘এল্‌মে লাদুন্না’ বা আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ আধ্যাত্মিক জ্ঞান থাকে। তা যদি না থাকে, তাহলে তিনি সেই শিক্ষক হতে পারেন না। ‘এল্‌মে লাদুন্না’ এমন এক বিশেষ জ্ঞান, যা আমাদের পার্থিব জগতের সকল জ্ঞানের অনেক ঊর্ধের বিষয়। এই অমূল্য জ্ঞানপ্রাপ্ত হন যাঁরা, তাদের শিক্ষা হল মানুষ হওয়ার শিক্ষা। এসব জ্ঞানী মানুষের মধ্যে এমন মানবীয় গুণাবলী থাকে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। তা না থাকলে তিনি কেমন করে আদর্শ শিক্ষক হবেন। এরকম একজন জ্ঞানী মানুষের সঙ্গলাভ করলে, শিষ্যত্ব গ্রহণ করলে আমরাও সেই বিশেষ আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সন্ধান পাবো। এমনই একজন বিশেষ আধ্যাত্মিক জ্ঞানী মানুষ খাজাবাবা কুতুববাগী। যাঁর পবিত্র সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয় আমার, আজ থেকে প্রায় নয় বছর আগে। ছোটবেলা থেকেই মনে মনে একজন আদর্শ মানুষ খুঁজতাম। যাঁকে নির্দিধায় অনুসরণ করা যায়। চারিদিকে তাকালে দেখি বেশীর ভাগ মানুষের মধ্যেই ভেজাল। একজন সরল মানুষ, আদর্শ মানুষ পাওয়া অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার। তেমনি একজন মানুষ আমার গুরু, আমার আদর্শ শিক্ষক খাজাবাবা কুতুববাগী।

আসলে কি জানেন, কিছু মানুষ আছে যারা স্কুল কলেজে যায় নাই। যাদের স্বাক্ষর জ্ঞান নাই, সাধারণভাবে আমরা যাদের অশিক্ষিত বা মূর্খ্য বলি। কিন্তু তারা মূর্খ্য নয়, তারা বকলম। লিখতে পড়তে পারে না। এইসব মানুষ সহজে বিশ্বাস করে নেয়। তার ফলে তারা পায়ও অনেক কিছু। কোন সাধক বলেন, ‘বহু তর্কে দিন বয়ে যায়, বিশ্বাসে ধন নিকটে পায়’। আমার মত যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া, তারা সহজে কিছুই বিশ্বাস করতে চায় না। আমাদের যুক্তিবাদী মনে শুধুু সন্দেহ। আমিও এই নয় বছরে কিছু কিছু বিষয় উপলব্ধি করেছি। তারই আলোকে কিছু বলতে চেষ্টা করবো। এই মহামানবের গুণাবলী নিয়ে লেখা আমার মত মহা মূর্খ্যের জন্য চরম ধৃষ্টতা। তার পরেও কিছু না লিখে পারছি না। কেউ কেউ বলেন, খাজাবাবা কুতুববাগীর সুন্দর চেহারা মোবারক দেখেই আসলে মানুষ মুগ্ধ। কথা ঠিক, কিন্তু তারা যেটা জানেন না, তা হল এই সৌন্দর্য তাঁর জ্ঞানের জ্যোতি। তাঁর সান্নিধ্যে না আসলে আপনি বুঝতে পারবেন না। একজন মানুষ শুধু তার দৈহিক সৌন্দর্য দিয়ে মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে না। প্রথমত খাজাবাবার যে বৈশিষ্ট্য আমাকে মুগ্ধ করে, তা হল তাঁর আদব। শুধু প্রতিটি মানুষকেই না, সকল সৃষ্টির প্রতি রয়েছে তাঁর অকৃতিম শ্রদ্ধাবোধ। আজকের দুনিয়ায় যেখানে বেয়াদবিই হল স্মার্টনেস, সেখানে এ রকম বিনয় সত্যিই বিরল। এটাও যাচাই করে দেখার অনুরোধ রইল।

দ্বিতীয় আরেকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট হল, তাঁর পরিমিত বোধ ও নিচু স্বরে কথা বলা। আমরা কারণে অকারণে কত কথা বলি। বেশি কথা বলে নিজেকে জাহির করাই যেন আধুনিকতা! আমি কখনও দেখিনি আমার মহান শিক্ষক অপ্রয়োজনে কোনো কথা বলেন। অনেক কথাই আমার মূর্খ্যতার কারণে বুঝতে পারি না। কিন্তু তাঁর কথামত ঘটনা ঘটার পরে বুঝতে পারি তাঁর কথা কতবড় সত্য। খাজাবাবা কুতুববাগীর চরিত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, তাঁর কোমলতা। তিনি কোনো মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেন না। তাঁর এই কোমল ব্যবহার কঠিনতম মানুষের মনও নরম করে দেয়।

আমার মহান শিক্ষকের আরেকটা বৈশিষ্ট্য আমাকে অবাক করে, তা হল মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। আমি দেখেছি একদিকে দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রি, এমপি, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও বড় বড় ডিগ্রিধারী জ্ঞানী-গুণীজনেরা তাঁর কাছে আসেন। আবার অন্যদিকে সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমজুরও আসেন, এদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু তিনি সমান আন্তরিকতায় সবার সাথে মিশেন। সাধারণত যারা সমাজের উঁচুতলার মানুষ তাঁরা নিচুতলার মানুষদের সাথে মিশতে পারেন না। শুধু তাই না আমি দেখেছি, একজন অতি দরিদ্র মানুষও খাজাবাবার প্রিয়মুরিদ, তার সকল বিষয় খাজাবাবার জানা। একজন বাবা যেমন পরম মমতায় সন্তানের দিকে তাকান, তেমনি মমতার দৃষ্টি ফুটে ওঠে খাজাবাবা কুতুববাগীর পবিত্র  চোখে, যখন তিনি ওই অতি দরিদ্র মুরিদ সন্তানের দিকে তাকান।খাজাবাবা বলেন, ‘বাবা, আমার কাছে জাগতিক গরিব-ধনি বলে কিছু নেই,  সবাই আমার সন্তান’।

এতক্ষণ আমি আমার অতি সীমিত অনুভূতি দিয়ে খাজাবাবা কুতুববাগীর অসীম আধ্যাত্ম কর্ম-সাধনা ও অপরিসীম ব্যক্তিত্বের সত্য ভান্ডার থেকে, ভাবনার কানভাসে সামান্য কিছু একটা আঁকার চেষ্টা করলাম। ভুল ত্রুটি খাজাবাবা মাফ করবেন, এ আশা এ গরিবের মনে। আসলে যারা খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্যে এসেছেন, তারা সবাই জানেন খাজাবাবার গুণাবলীর কথা। আমি গুনাহ্গারের চেয়ে অনেক ভালো জানেন। আমার এই লেখা বিশেষ করে তাদের জন্য যারা এখনো কুতুববাগ দরবার শরীফে আসেনি। তাদের বলি ভাই, সময় অত্যন্ত দ্রুত চলে যাচ্ছে, হেলায় হেলায় দিন ফুরিয়ে গেলে আফসোস হবে। আসলে আমাদের বাহ্যিক অবয়ব মানুষের মত কিন্তু সত্যিকার অর্থে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো কি আমি মানুষ? আর তা যদি বলতে না পারি, তাহলে একজন  আদর্শ গুরু, সর্বোপরি আদর্শ মানুষের সঙ্গ লাভ করে মানুষ হওয়ার চেষ্টা তো করতে পারি। আমি অধম সেই মানুষ হওয়ার সাধনায় আছি।

(Visited 501 times, 1 visits today)
Share