গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি ঠিক তখনই…

মো. ছায়েদুল হক শরীফ (শ্রীমঙ্গল, সিলেট)

প্রকৃতির অপার নিয়মে ভোর হয়, পাখি ডাকে, ঘুম ভাঙে, সূর্য ওঠে, দিনের পরিধি বাড়ে, কর্মজীবি মানুষের বাড়ে ব্যস্ততা; আবার সকাল, দুপুর, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। পাখিরা নীড়ে ফিরে যায়, ঘরমুখো মানুষের ব্যস্ততা বাড়ে, ব্যস্ত পথ-ঘাট। কেউ বাড়ি ফেরে, কেউ ফেরে না। প্রিয়তম স্ত্রী, প্রাণপ্রিয় সন্তান কাউকে কিছু না বলে পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। এদিকে সময় যত গড়ায় ততই গভীর হয় রাতের নির্জনতা, পরিবারে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ে, এভাবে এক সময় ভোর হয়… পৃথিবী আবারও কর্মমুখর হয়ে ওঠে। যান্ত্রিক এ জীবনের পিছনে তাকানোর সময় কারো নেই। দেখা যায় পর দিন বা কিছু দিন পর পত্রিকায় ছাপা হয় দু:সংবাদ, কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার-পরিজন। প্রতিনিয়তই ঘটছে এমন ঘটনা। এইতো জীবন। কিন্তু এই জীবনের কী দাম? যে জীবনের নিশ্চয়তা নেই? এই হৃদয়ের কী দাম? যে হৃদয়ে প্রেম নেই। ওই মানুষের কী মূল্য? যে মানুষের অন্তরে আল্লাহ ও রসুলের জন্য, মুর্শিদ প্রেমের দহন নেই। অনিশ্চিত এ জীবন কিসের নেশায় দিন রাত ছুটাছুটি করে? ক্ষণিকের খেলাঘরে আমরা মুসাফির, চলে যেতে হবে সবাইকে। কিন্তু যাবার আগে আল্লাহর কাছে আমরা যে ওয়াদাবদ্ধ রয়েছি, তা পালন করেই যেতে হবে, নয় তো মুক্তি নেই।

সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে অন্তত: আমাদের উচিত, প্রেমময় সত্তা আল্লাহকে একটু সময় সরণ করা। খেয়াল করা উচিৎ কোথায় ছিলাম, কোথায় এসেছি, আবার কোথায় যাব। আমাদের পরিণাম কী হবে ইত্যাদি। তবেই জাগতিক হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও ধর্ম-কর্মে আগ্রহ বাড়বে এবং পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। বাবা-মা তার অতি আদরের সন্তানকে, স্ত্রী তার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে কখনো হারাতে চায় না, যে অদৃশ্য শক্তি এ নির্মম কা- ঘটায় এবং মৃত্যুর কাছে প্রতিটি সৃষ্টিকে হার মানায়, তিনিই আবার অতি দয়ালু। যা বিশাল রহস্যময়। আর এ রহস্যের দ্বার উন্মোচনকারী হচ্ছেন একমাত্র কামেল মোকাম্মেল পীর মুর্শিদ তথা আউলিয়াগণ।

আমার মৃত্যু হবে ঠিকই, কিন্তু পরপারের সম্বল কিছুই নেই। এ কথা যখন মনে হয়, তখন মন হাহাকার করে বলে ওঠে, হায়-আল্লাহ ক্ষমা করো। এক মুহূর্তের জন্য হলেও থেমে যায় সমস্ত কোলাহল। অজানা শঙ্কায় ঘিরে ধরে, আর কী যেন এক শূন্যতা মুচড়ে ওঠে বুকের ভিতর। এরকমই একদিন মনে হলো, যদি দোজাহানের নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)-এর দর্শন নসিব হতো, তবে মৃত্যু সুখের হতো এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেত। সন্ধ্যায় যথারীতি মাগরিবের নামাজ আদায় করে, আমার প্রাণপ্রিয় দরদী মুর্শিদ কেবলাজানের সুমহান শিক্ষা ও তরিকার নিয়মানুযায়ী পাককালাম ফাতেহা শরীফ পাঠ ও তরিকার বিশেষ মোনাজাত শেষে মোরাকাবায় বসে চক্ষু বন্ধ করি। এমন অবস্থায় বিষণœ মনে নিরবে দয়াল নবীর কাছে কাকুতি-মিনতি পেশ করি, সালাতো সালাম গো আমার, দরূদ সালাম গো আমার, প্রিয় নবী মোস্তফা… আমারে নিবায়নি মদিনায় দয়াল নবীগো…’। অত:পর এশার আজান হল। নামাজ-কালাম, তরিকার অজিফা আমল ও খাবার শেষে শুয়ে পড়ি। রাতে চারিদিকে নিস্তব্ধতা, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি, ঠিক তখনই স্বপ্নে অদৃশ্য এক মধুর কণ্ঠে স্পষ্ট শুনতে পাই, কে যেন আমাকে বলছেন, ‘মুর্শিদের মাধ্যমে তালাশ কর। তৎক্ষণাত ঘুম ভেঙ্গে যায়, ভাবতে থাকি এ কী শুনলাম! কেন শুনলাম? আমার দরদি মুর্শিদ কেবলাজানকে স্মরণ করি। সন্ধ্যা রাতের ভাবনা মনে পড়তেই বুঝতে পারলাম স্বপ্নযোগে এ নির্দেশবাণী রাসুল (সঃ)-এরই ইঙ্গিত। এতে বুঝতে পারলাম, নি:সন্দেহে প্রতিটি মানুষের জীবনে রাসুল (সঃ) ও আল্লাহর সন্তুষ্টি, তথা নৈকট্যলাভের জন্য কামেল মোকাম্মেল মুর্শিদের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই রয়েছে। কেননা এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘অ-কূনু মা‘আছ সাদেকীন’। অর্থাৎ, তোমরা সত্যবাদির সঙ্গী হও’ এবং ‘ইয়া আইয়্যু হাল্লাজিনা আমানুত্তাকুল্লাহা অবতাগু ইলাইহিল উসিলা’। অর্থাৎ, আমাকে পাওয়ার জন্য তোমরা উসিলা ধর। সাদেকিন বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, তা সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে হবে। মাসিক ‘আত্মার আলো’ নিয়মিত পড়লে, নিশ্চয়ই আপনারা কুতুববাগী কেবলাজানের গবেষণার সুফল মহামূল্যবান রচনার মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবেন। অতি সুন্দর ও সরলভাবে প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করে থাকেন, যা পাঠ করলে সহজেই বুঝতে পারবেন।

পুরনো একটা প্রবাদ আছে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। এ কথা সবাই জানি, কিন্তু বাস্তবে তা মানি ক’জন। তাই আমরা নামাজ-কালাম যা কিছু আমল করি না কেন, কিন্তু স্বভাবের পরিবর্তন হয় না। ফলে অন্যায়-অপকর্ম, অশান্তি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, এর মূল কারণ আত্মশুদ্ধি, দেলজিন্দা ও ইবাদতে হুজুরির অভাব। এ অভাবগুলো দূর করে জীবনের পূর্ণতা অর্জন প্রতিটি মানুষের জন্য ফরজ। আর এ পূর্ণতা অর্জনের একমাত্র পথপ্রদর্শক হলেন বেলায়েতে-মাশায়েখ, কামেল মোকাম্মেল পীর-মুর্শিদগণ। এখন বেলায়েতের যুগ, এ যুগের মোজাদ্দেদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান এমনই একজন আধ্যাত্মিক পীর বা শিক্ষাগুরু, যাঁর পবিত্র শাহাদাৎ আঙুলের পরশে মানুষের মরাদিল জিন্দা হয়, আত্মশুদ্ধি এবং ইবাদতে হুজুরী হয়। জাকের ভাই-বোনদের জন্য মুর্শিদ কেবলাজানের প্রথম শিক্ষাই আদব। এরপর বুদ্ধি, মহব্বত, সৎসাহস, বিশ্বাস এবং ভক্তি। তরিকার এ ছয়টি মৌলিক গুণাবলী  শিক্ষাদানের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা ও ইবাদতে হুজুরি অর্জনের শিক্ষা দেন। এ শিক্ষার মধ্য দিয়েই একজন মানুষ, প্রকৃত মুমিন হিসেবে পূর্ণতা অর্জন করে। আর তখনই সে জান্নাতের ঠিকানার খোঁজ পায়। জীবনভর নামাজ পড়ে, রোজা রেখে জান্নাত পাবে না, যদি উক্ত গুণাবলী অর্জিত না হয়। আর তা অর্জন করতে হলে কামেল মুর্শিদের ছোহবতে অবশ্যই আসতে হবে। নয় তো পরিণাম হবে কোরআনে ঘোষিত, ‘আমেলাতান, নাসেবাতান তাসলা নারান হামিয়া’। অর্থাৎ, আমল করেছো, পরিশ্রম করেছো, পরিণামে দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে।

(Visited 299 times, 1 visits today)
Share