মহানবী (সাঃ)-এর নূরেই জগৎ সৃষ্টি

শাহসুফি হযরত জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি

“রাওয়া আব্দুর রাজ্জাক্ব বিসানাদিহি আন জাবির-ইবনে আব্দুল্লাহি রাদিআল্লাহুতা’লা আনহু ক্বলা ক্বুলতু ইয়া রাসুলাল্লাহি বিআব আন্তা ওয়া উম্মি আখ্বিরনি আন আউয়্যালি শাইয়িন খালাক্বাহুল্লাহুতা’লা ক্ববলাল আশিয়ায়ী ক্বালা ইয়াজাবিরু ইন্নাল্লাহাতা’লা খালাক্বা ক্বাবলাল আশিয়ারী নূরা নাবীয়্যিকা মিন নূরিহি ফাযায়ালা জালিকান নূরু ইয়াদুরু বিল্কবুদরাদী হাইসু শায়াল্লাহুতা’লা ওয়ালাম ইয়াকুন ফি জালিকাল ওক্বাতি লাওহু ওলা ক্বালামুন ওয়ালা জান্নাতুউ ওয়ালা নারুন ওয়ালা মালাকুন ওয়ালা সামাউন ওয়ালা আরদ্বুন ওয়ালা শামসুন ওয়ালা ক্বামারুন ওয়ালা জিন্নিউন ওয়ালা ইনসিউন ফালাম্মা আরাদালাহুতা’লা আন ইয়াখলুক্বাল খালকা কাস্সামা জালিকাল নূরা আরবাআতা আজযাইন ফাখালাক্বা মিনাল জুযিইল আউয়্যালিল ক্বালামা ওয়া মিনাস সানিয়িল লাওহা ওয়া মিনাস সালিসিল আরশা সুম্মা ক্বাস্সামাল জুযাআর রাবিয়া আরবায়াতা আজযাইন ফাখালাক্বা মিনাল জুযইল আউয়্যালি হামালাতাল আরশী ওয়া মিনাস সানিয়িল কুরসিয়্যা ওয়া মিনাস সালিসি বাক্বিয়াল মালাইকাতি ছুম্মা কাস্সামাল জুযয়ার রাবিয়া আরবাআতা আজযাইন ফাখালাক্বা মিনাল আউয়্যালিস সামাওয়াতি ওয়া মিনাস সানিয়িল আরদিনা ওয়া মিনাস সালিসিল জান্নাতা ওয়ান্নারা সুম্মা ক্বাস্সামাল ক্বিসমার রাবিয়া আরবায়াতা আজযাইন ফাখালাক্বা মিনাল আউয়্যালি নূরা আবসারিল মু’মিনীনা ওয়া মিনাস সানিয়ি নূ’রা কুলুবিহিম ওহিয়াল মারিফাতু বিল্লাহিতা’লা ওয়া মিনাস সালিসি নূরা উনসিহিম ওয়া-হুয়াত তাওহীদু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহি” (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। (রওয়াহু মাওয়াহেব)

অর্থ : হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহুতা’লা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস: রাসুল (সাঃ)-ইরশাদ করেন যে, যখন আল্লাহ ছাড়া কিছুই ছিল না, তখন আল্লাহ’তায়ালা তাঁর নিজ নূর থেকে তাঁর হাবিব (সাঃ)-এর নূর পৃথক করেন। তারপর মহানবী (সাঃ)-এর এ নূর চার ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ দিয়ে ‘কলম, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে ‘লাওহে মাহফুজ’ এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে আরশ সৃষ্টি করেন। অবশিষ্ট এক ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ দিয়ে ‘আরশ বহনকারী ফেরেশতা, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে ‘কুরসি এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে অন্যান্য ফেরেশতা সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় চার ভাগের অবশিষ্ট এক ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ দিয়ে ‘আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে জমিন (পৃথিবী) এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে বেহেশত-দোজখ সৃষ্টি করেন। অবশিষ্ট একভাগ আবার চারভাগে বিভক্ত করেন। এর প্রথম ভাগ দিয়ে ‘মুমিনদের নয়নের (দৃষ্টিশক্তি) নূর’, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে আল্লাহর মারিফাত ‘ক্বালবের নূর’ এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে কালেমা তাওহীদ সৃষ্টি করেন এবং অবশিষ্ট একভাগ দিয়ে অন্যান্য জগত সৃষ্টি করেন। (হাদিসে মাওয়াহেব)

উল্লেখিত হাদিস শরীফ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, সৃষ্টি জগতের মূল উপাদান হল নবী করীম (সাঃ)-এর নূর। অতএব, নবী করীম (সাঃ)-কোথায় উপস্থিত নেই? সব সময় সব স্থানে তিনি উপস্থিত-হাজির-নাজির। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, “ইন্না-আরসালনা-কা শা-হিদাওঁ ওয়া মুবশ্বিরাওঁ ওয়া নাজিরা” (সূরা ফাতাহ, ৪৮: ৮)।
অর্থ- (হে হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে হাজির-নাজির বা প্রত্যক্ষকারী সাক্ষী, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী নবী-রাসুল হিসাবে প্রেরণ করেছি (সূরা ফাতাহ্- ৪৮: ৮)।

শাহিদ অর্থ হাজির-নাজির এবং প্রত্যক্ষকারী সাক্ষী। সাক্ষীকে শাহিদ এজন্য বলা হয় যে, তিনি ঘটনাস্থলে হাজির-নাজির অর্থাৎ উপস্থিত ছিলেন। রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (মাহবুব) শাহিদ এজন্য বলা হয়েছে যে, তিনি মুমিনের হৃদয়ে হাযির-নাযির বা উপস্থিত থাকেন (৩৩:৬)। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাহাবুবিয়াত মানুষ ও যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আল্লাহতা’লার মাহাবুব এবং আল্লাহতা’লা সমগ্র জগতের মাহাবুব। শুষ্ক কাঠ, পাথর, পশু-পাখি ইত্যাদি হুজুর (সাঃ) এর বিচ্ছেদে কান্না করে। স্রষ্টার দরবারে তিনি সৃষ্টির সাক্ষী, সবার ফয়সালা হবে তাঁর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে। সৃষ্টির সামনে স্রষ্টার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আল্লাহতা’লা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুসংবাদ ও ভীতি প্রদর্শনকে সাক্ষ্য সহকারে উল্লেখ করেছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যক্ষকারী সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী। তিনি মিরাজ শরীফে জান্নাত, দোজখ, ফিরিশতাদের এবং আল্লাহতা’লাকে স্ব-চোখে দেখেছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের সাক্ষীস্বরূপ প্রেরণ করেছেন, তিনি আমাদের কৃতকর্মের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আমরা কোথায় কি করি, কি ইবাদত করি, কাকে ঠকাই, কার ওপর অন্যায় করি, কার ওপর জুলম করি, দৈনন্দিন কাজকর্ম সবকিছুরই তিনি প্রত্যক্ষকারী সাক্ষী। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষী ছাড়া আল্লাহতা’লার কাছে কোনো ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। দুনিয়াতে কোন বিচারকের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় কোনো সাক্ষী যদি বলে, লিয়াকত-সৈকতের টাকা চুরি করেছে, তা সে শুনেছে, তবে সাধারণতই প্রশ্ন আসে, কার কাছ থেকে শুনেছে? সেক্ষেত্রে যে শুনে সাক্ষ্য প্রদান করে, সে গৌণ হয়ে যায়, মুখ্য থাকেন যার কাছ থেকে শুনে সাক্ষ্য প্রদান করা হয়েছে। শোনা সাক্ষীর ওপর বিচারক কোন ফয়সালা দিতে পারেন না। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সমস্ত ভালো-মন্দ কাজ ও ইবাদতের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। রাসুলে করীম (সাঃ)-সাক্ষীই যদি না হবেন, তবে তিনি শেষ বিচারের দিনে সাক্ষী এবং শাফাওয়াত (সুপারিশ) করবেন কীভাবে? সাক্ষীদাতাকে অবশ্যই ঘটনার সময় উপস্থিত থাকতে হবে নইলে সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হয় না। অতএব, নিঃসন্দেহে নবী করীম (সাঃ)-উম্মতের সমস্ত ইবাদতের সাক্ষী। সালাতে (নামাজে) তাশাহুদ পাঠ করা ওয়াজিব। সালাতে তাশাহুদে নবী করীম (সাঃ) কে হাজির-নাজির বা উপস্থিত জেনেই সালাম দিতে হবে, নইলে সালাতই হবে না। শেষ বিচারের দিনে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষীর উপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের বেহেশত-দোজখের ফয়সালা দিবেন (ফতওয়ায়ে শামী)

(Visited 1,863 times, 5 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *