গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের নছিহত বাণী

নাহমাদুহু ওয়ানু সাল্লিয়ালা রাসুলিহিল কারিম। আম্মাবাদ। আমার দয়াল পীর দস্তগীর রওশান জামিল কেবলায়ে দোজাহান, আফজালে জামানি তরিকায়ে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, আলেমে হাক্কানী, আলেমে রাব্বানী, মোফাসসিরে কোরআন আলহাজ মাওলানা খাজাবাবা মাতুয়াইলী কেবলা ও কাবার খাস দোয়া তাওয়াজ্জুহ আপনাদের-আমাদের সবার অন্তর-আত্মায় এসে পড়তেছে। প্রত্যেকের বাবা-মা, তরিকতের ভাই-বোন, পীরভাই-বোন সকলের জন্য আজ দোয়া করবেন। তাদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন, সবাইকে আল্লাহ সুখে-শান্তিতে রাখুন ও নেক-হায়াত দান করুন। আর যারা কবরবাড়িতে চলে গেছেন, তাদেরকে কবর আজাব থেকে মুক্ত করে শান্তির কবরে রাখুন। অনেক জ্ঞানী-গুণী সাংবাদিক এখানে এসেছেন, সঙ্গে মায়েরাও কষ্ট করে এসেছেন (নারী সাংবাদিক) আপনারা মনে কিছু নিবেন না, আপনারা মনে কষ্ট নিলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আমি বলি; মা হলো মক্কা শরীফ, মা হলো মদিনা শরীফ, মা হলো মামলত, মায়ের পায়ে চুম্বন করলে বেহেশতের চৌকাঠে চুম্বন করা হয়। মায়ের ঋণ কখনো শোধ করা যাবে না, একবার রাসুল (সঃ) এর কাছে তাঁর দুধ মা হযরত হালিমা আসলেন রাসুলেরদরবারে, তাঁকে দেখেই মাথার পাগরী মোবারক খুলে বিছিয়ে মাকে বসতে দিলেন। তিনি এত সম্মান করতেন মাকে। আমরাও মায়েদের সম্মান করি। তো বাবারা, আমাদের দাওয়াতে মহব্বতের সঙ্গে আপনারা এসেছেন, আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। একজন বললো, যে অলৌকিকভাবে তিনি আসলেন। পবিত্রকোরআনে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘ওলাকিন্নাল্লাহি মাইন্না শাহ’। অর্থাৎ, আমি যাকে ইচ্ছা করি তাকে আমার আপন পথ দেখিয়ে থাকি। তো, আশাকরি আল্লাহআজ আপনাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। সাংবাদিকতা করেন বহু পরিশ্রম করতে হয়, রাস্তা-ঘাটে থাকতে হয় আমরা দেখি। কত মারামারি-কাটাকাটি,জ্বালাও-পোড়াও এর মধ্যেও জীবন বাজি রেখে আপনারা সেখানে হাজির হন। কেন? মানবকল্যাণের জন্যে। এটা অনেক বড় কাজ। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন তো আমি চাই আল্লাহ আপনাদের নেক হায়াৎ বৃদ্ধি করুক, সুস্থ রাখুক। বড় বড় রোগ ব্যাধি আল্লাহ শেফা করে দিন। আপনাদের দ্বারা ভালো কাজ করার অনেক রাস্তা আছে। এখানে এসে অনেক সুন্দর কথা বললেন,আপনাদের অনেকের মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। কবি বলছেন, ‘লুকানো মানিক তুলবি যদি, ডুব দে প্রেমসাগরের জলে। তারাও বুঝি খোঁজ পেয়েছে, তাই তো এত ডুব দিতেছে। ডুববি যদি তাদের সঙ্গে তুলবি মানিক পরবি গলে।’ আসলে যারা ডুবারু তারাই জানে সেই গভীরের খোঁজ। তো সেই আল্লাহর প্রেমে ডুবারু হতে হবে। আল্লাহর প্রেমের আসক্ত হতে হবে। নামাজী হতে হবে। আমার পঁয়ত্রিশ (৩৫) বছরের সাধনায় দেখলাম, নামাজই একমাত্র শান্তি, সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত, ইবাদতে আকবর। সকল ধর্মের ইবাদত আছে কিন্তু নামাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থনা। আল্লাহর রাসুলের উছিলায় সারা দুনিয়াটা মসজিদ হয়ে গেছে। আপনারা যে যেখানেই কাজ করেন কাছে মসজিদ না থাকলেও নামাজ আদায় করে নিবেন, আল্লাহ কবুল করবেন। তবে মসজিদে গেলে সওয়াব বেশি হয়। শরিয়তের ছোট-বড় হুকুমকে মান্য করলেই ইলমে মারেফত আপনাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘লি-কুল্লি জা-য়ালনা মিনকুম সিরয়াতাও ওয়ামিন-হাজা’। আল্লাহতায়ালা বলছেন, তোমাদের জন্য দুইটি পথ নির্দিষ্ট করেদিয়েছি। একটা হলো শরিয়তের পথ, অপরটি হলো তরিকতের এটা সকল আলেম জানেন, কিন্তু কেউ আমল করেন, কেউকরেন না। আমরা জানি নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে, তারপরেওঅনেকেই পড়ি না, রোজা না রাখলে গুনাহ, হবে তারপরেওঅনেকে রোজা রাখি না। মানুষ হত্যা মহাপাপ, তবুও হত্যা করছে,মানুষকে কষ্ট দিতেছে। মানুষকে কষ্ট দেওয়া আরও পাপের কাজ।আমার সূফীবাদের শিক্ষা হলো, তোমরা এগুলো থেকে দূরেথাকো। মানুষকে কটু কথা বলিও না, তাতে মানুষ কষ্ট পায়।ভালো কথা বলো, তাতে মানুষ খুশি হয়। আল্লাহতায়ালাও খুশিহয়। তাই আমার শিক্ষা হলো, অন্যের দোষ দেখার আগে নিজেরদোষ তালাস করুন। আর সর্বমুহূর্তে জিকিরের মধ্যে থাকবেন। যেযেই কাজকর্ম করেন না কেন সব সময় কলবের মুখ দিয়ে আল্লাহবলাতে চেষ্টা করবেন। ’ক্বালব’ প্রসঙ্গে রাসুল (সঃ) বলছেন, মানুষের দেহের মধ্যে একটা গোস্তের টুকরা আছে, এটার ভিতরেএকটা পেট আছে, তার ভিতরে একটা পেট আছে এভাবে সাতটাউদর, সাতটা দেহ, সাতটা পেট আছে। একটা পেট থেকেআরেকটা পেটে যেতে দশ হাজার পর্দা আছে। হাদিস শরীফেপড়েছি এভাবে সত্তর হাজার পর্দা আছে। আল্লাহ বলেন, ‘ওয়াফিআন্ ফুছিকুম আফালা তুবছিরুন’। অর্থাৎ, বান্দা তুমি খোঁজ না,তাই পাও না, আমি তালাশি বান্দার দিলের জানালা দিয়ে দেখাদিয়ে থাকি।প্রত্যেকের ভিতরেই আল্লাহ আছেন, কিন্তু আমরা খুঁজি না, তাইপাই না। যারা পাওয়ার সাধনা, চেষ্টা-তদবির করে তরিকার বা পথখোঁজেন, তাদের কাছে আল্লাহ ধরা দিয়ে থাকেন। কাজেই সেইমানুষ কারা? যারা মহাপুরুষ পীরে কামেল অলি-আউলিয়া।কোরআন শরীফে আছে, ‘আতিউল্লাহ ওয়া আতিউর রসুল উলিলআমরিন মিনকুম’। আল্লাহ বলছেন, ‘আতিউল্লাহ’ তোমরা আমিআল্লাহর আদেশ মান্য করো। ‘আতিউর রসুল’ রাসুলের আদেশমান্য করো। ‘উলিল আমরিন মিনকুম’ তোমাদের জামানায় যেসাহেবে হুকুম আউলিয়াকেরাম, তার হুকুম মান্য করো।‘আতিউল্লাহ’, ‘আতিউর রসুল’ বলে বন্ধ করে দেন নাই, আবারবলছেন, ‘উলিল আমরিন মিনকুম’। তো এখন কথা হলোআউলিয়া কেরামগণ কেয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকবেন, কেউমানবে, কেউ মানবে না। বাবারা, যাদের নসিবে আছে, তারাইকেবল সেই পথে আসবে এবং পরিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে কবরে যাবেআর যাদের নসিবে নাই, তারা আসবে না। আমার এখানে বহুরকমের কিতাব আছে, সব আছে এ কথা আমি বলি না। সক্রেটিস  বলছেন, ‘তুমি সব বোঝ এ কথা বলিও না। যদি মনে করো যেআমি কিছু বুাঝ না, তবেই তোমাকে কিছু দেওয়া যাবে।তরিকতের একটা ভাষা আছে ‘ফানাফিল অজুদ’ নিজের হাস্তিকেমিটাতে হবে। আমি দীর্ঘ তিন বছর ‘কাশফুল কবর’ অর্থাৎ কবরমোরাকাবা করেছি। আমার পীরকেবলাজানের নাম মাওলানাকুতুবুদ্দীন। আমি যাঁর কদমে দশ বছর গোলামী করেছি। যাঁরহাতে বাইয়াত হয়েছি, বাইয়াতের কথা পবিত্র কোরআনে আসছে, ‘ইনড়বাল্লাযীনা ইয়ুবা-ইউনাকা ইনড়বামা ইয়ুবা ইউনাল্লাহা ইয়াদুল্লাহীফাওক্বা আইদিহীম’। (সুরা ফাত্হার আয়াত ১০) আল্লাহ বলেনÑহে রাসুল, যারা আপনার হাতে হাত রেখে বাইয়াত গুহণ করলো,তারা আমি আল্লাহর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলো। আমার হাততাদের হাতের উপর রহিয়াছে। তো, আমার সেই মুর্শিদ, আমারআকা, আমার মাওলা কুতুবুদ্দীন ওনার নামকরণে পঁয়ত্রিশ বছরআগে এই দরবারের নাম রাখা হয়েছে কুতুববাগ। আরো অনেকবাগ আছে বাংলাদেশে, এ নিয়ে অনেকের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকতেপারে যে, এই বাগের সঙ্গে অন্য বাগের সম্পর্ক আছে কিনা। তাইআমি বলছি, ওইসব বাগের সঙ্গে কুতুববাগের কোন সম্পর্ক নাই।আমার পীরের নাম মাওলানা কুতুবুদ্দীন, তাঁর পীর মাওলানাসুলতান আহম্মদ চন্দ্রপুরী। তাঁর পীর ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী,তাঁর পীর আসামের হযরত ওয়াজেদ আলী শাহ মেহেদীবাগী, তাঁরপীর হযরত সূফী ফতেহ্ আলীওয়ায়েসি রাসুলে নোমা তাঁরপীর হযরত নূর মোহাম্মদনিজামপুরী। এভাবে হযরতমোজাদ্দেদ আল ফেসানী হয়েরাসুল (সঃ) থেকে আমারখেলাফত সাতত্রিশ নাম্বার।আলহামদুলিল্লাহ। আমার সেইমুর্শিদের সত্যবাণী এই সূফীবাদবিশ্বে প্রচার করে যাচ্ছি। আমিআমার মুর্শিদকে বলছিলামÑবাবা, এটা আমার দ্বারা সম্ভবহবে? মুর্শিদ বললেন, আল্লাহতোমাকে সেই সীল দিয়েপাঠিয়েছেন। আসলেই বাবারা,বহু দেশ-বিদেশ ঘুরে দেখলামভারতের কয়েকটি স্থানে আমরাসূফীবাদের বাণী নিয়ে সফরকরছি, ধুপগুড়ি, শিলিগুড়ি,জলপাইগুড়ি, দিনহাঁটা,কুচবিহার, ইসলামপুর,হলদিবাড়ি এইসব অঞ্চলে সফরকরেছি লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষঅন্তরে প্রেম-ভক্তি নিয়ে বহুদূরথেকে পঙ্গপালের মতো ছুটেআসছে দেখে আমি মনে করলাম, আমার পীর-কেবলাজান পঁয়ত্রিশবছর আগে যা বলেছেন, এখন তার ফল ফলতেছে। অলি-আল্লাহরা যদি জবান দিয়ে কিছুবলেন, সে ক্ষেত্রে আল্লাহ বলছেন, তারা আমাকে স্মরণ করতে করতে এমন হয় যে, তাদের জবানআমার জবান হয়ে যায়। তাদের হাত আমার হাত হয়ে যায়। তোদেখেন কামেল পীরের কথা বড়হক। কারণ, তাদের সঙ্গে আল্লাহরএকটা যোগাযোগ হয়ে থাকে। সাধারণ জ্ঞানেই চিন্তা করে দেখেন,যদি আপনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক থাকে, তবে তার কাছথেকে আপনি যেকোন আপদে-বিপদে সহযোগিতা পাবেন। কী,পান কিনা? আল্লাহতায়ালার সঙ্গেও যদি আপনার গভীর সম্পর্কথাকে, আল্লাহও আপনার দাবী পূরণ করে দেন। আল্লাহ বলছেন, আমি বান্দাদেরকে আম ও খাসভাবে সৃষ্টি করেছি। কিছুআম, কিছুখাস। যাদেরকে খাসভাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছি তাদের কথা কিছুকিছু সময় আমি শুনি।তো বাবা, আপনারা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে আসলেন,আপনাদের ভিতরে যে এত উপলব্ধি, এত নূর লুকিয়ে আছে, দেখেআমি শান্তি পেয়েছি। বাবারা পীর জাহেরী বয়সে ছোট হলেও সবমুরব্বীদের কাছেই তিনি মুরব্বী। আপনারা যে এত ভালোবাসেন,আমার মন ভরে গেছে। আমি আপনাদের জন্য দোয়া করবো।রোগব্যাধির জন্য শেফা চাইবো। আল্লাহর কাছে নেক-হায়াতচাইবো। হাত তুলে বলুন আমিন। (এরপর মোনাজাত) শ্রুতিলিখন : সেহাঙ্গল বিপ্লব

(Visited 681 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *