নামাজে হুজুরি দিল না হলে এবাদতে আল্লাহর মহব্বত সৃষ্টি না হলে এবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না

আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ্‌ নকশ্‌বন্দি মোজাদ্দেদি

সহিহ্ হাদিস শরীফে আছে, ‘লা-সালাতা ইল্লাবি হুজুরিল ক্বালবি’। অর্থাৎ : হুজুরি দিল ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। আল্লাহতায়া’লা বলেছেন, যে তার পালনকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে, তার উচিৎ সে যেন নেককাজ করে এবং তার সৃষ্টিকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে। যেমন, ‘ফামান কানা ইয়ারজু লি-ক্বয়া রাব্বিহি ফাল ইয়ামাল আমালান সলেহান অলা ইউস্রেক বি-ইবাদাতি রাব্বিহি আহাদান’।

বর্তমানে নামাজিদের নামাজের কী অবস্থা, তা একটু চিন্তা করে দেখুন। নামাজি ব্যক্তি বলেন, নামাজে (আলহামদু) ইয়াকা-না বুদু-ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইন’। অর্থাৎ : আমি তোমারই বন্দেগী করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। এই আয়াত যখন পাঠ করা হয়, তখন কার কথা বা রুপ ওই নামাজি ব্যক্তির ধ্যানে থাকে? প্রায়ই দেখা যায়, যে যা ভালোবাসে বা যার ভালোবাসা অন্তরে পোষণ করে, তার কথাই তখন তার ধ্যানে আসে। অথচ অন্য সময় অপেক্ষা নামাজের মধ্যেই নানা প্রকার সাংসারিক চিন্তা ও বাজে-বাহুল্য বিষয় হৃদয়ের ভিতর আরও বেশি ঘনীভূত হয়ে উপস্থিত হয়। এ সম্বন্ধে কোন এক কবি তাঁর শায়েরে বলেছেন,

‘জাবা দর জেকরে, ওয়া দের দর ফেকরে খানা,
চে হাসেল শোদ-জী নামাজে পাঞ্জেগানা।
চে শোদ গার মসহা-ফাহ দর পেশে বাশোদ
চু দেল দর ফেকের গাওউ মেশে বাশোদ।’

অর্থাৎ : মুখে আল্লাহর জিকির ও মনে বাড়ি-ঘরের চিন্তা থাকলে, সে রকম পাঞ্জেগানা নামাজে তোমার কী ফল হবে? তোমার মনে যদি গরু ও মেষের ভাবনা থাকে, তবে সামনে কোরআন খুলে রাখলে কী ফল হবে? অতএব, খোদার এবাদতে ঘোড়া, গরু, ভেড়া-বকরী, স্ত্রী-পুত্রকে গায়রুল্লাহ ভেবে আমরা বাতেনে মোশরেক হচ্ছি। এ যে কত বড় ভয়ঙ্কর ও পাপের কাজ করে চলেছি আমরা, তা বুঝতে পারছি না। এ ধরনের শেরক থেকে মুক্তির চেষ্টা করা কি আমাদের কর্তব্য নয়? সৃষ্টিকে ভুলে স্রষ্টার প্রতি গভীরভাবে নিমগ্ন হয়ে শুদ্ধ আত্মায় কবুলিয়াতের নামাজ আদায় করা প্রতিটি ঈমানি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য নয় কি? রাসুল (স:) সাহাবিদের, যে নামাজ শিক্ষা দিতেন, সে নামাজ ছাড়া আর কোন নামাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে কবুল হয় না। কিন্তু আমরা সে বিষয়ের বা পদ্ধতির কতটুকু মেনে নামাজ পড়ার চেষ্টা করি?  ‘ইন্নাল-লাহা লা-ইয়াগফির আন ইউস্রিকা বিহী ওয়া ইয়াগফির মাদূনা জালিকা লি-মাইয়াশা’। অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহতায়া’লা তাঁর সঙ্গে শেরককারীকে ক্ষমা করবেন না এবং এছাড়া তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।

রাসুলুল্লাহ (স:) বলেছেন, ‘আনতাবুদাল্লাহা কা-আন নাকা তারাহু ফাইল্লাম তাকূন তারাহু ফা-ইন্নাহু ইয়া রাকা’।অর্থাৎ, তুমি এমনভাবে আল্লাহতায়া’লার বন্দেগী কর, যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছো। যদি তা না পার, তবে এমনভাবে আল্লাহর এবাদত কর, যেন আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।এই হাদিস থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত নামাজেই আল্লাহর মোশাহেদা (দর্শন) করতে হবে। হযরত আনাস (রা:) থেকে অন্য এক হাদিস শরীফে রেওয়ায়েত আছে, ‘ইন্নাল মোকমিনূনা ইজা-কানা ফিস্ সালাতি ফা-ইন্নামা ইউসাব্বি রাব্বাহু।’অর্থাৎ : নিশ্চয় মমিন ব্যক্তি নামাজের মধ্যে তার পালনকর্তার সঙ্গে কথোপকথন করে থাকেন।

হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) যে রায় দিয়েছেন, নামাজের প্রথম তাকবিরের সময় আল্লাহতায়া’লাকে স্মরণ হলেই নামাজ হয়ে যাবে। এর অর্থ এই নয় যে, নামাজের অন্য অংশে আল্লাহতায়া’লাকে স্মরণ করতে হবে না। বরং এ কথার মর্মে বুঝা যায় যে, নামাজের সব অংশেই আল্লাহকে স্মরণ রাখতে হবে। কিন্তু কেউ যদি কোন ওজরবশত তাতে অক্ষম হয়, তবে প্রথম তকবিরে আল্লাহতায়া’লাকে স্মরণ করলেও তার নামাজ হয়ে যাবে। এটা তিনি নাচারী অবস্থায় মত দিয়েছেন। তাই বলে, তিনি এটা বলেননি যে, তোমরা জীবনভর ওইভাবে নামাজ পড়ো। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারাহ্ ২০৮ নাম্বার আয়াতে আছে, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুদ খলু সিলমি কা-ফ্ফাহ , অলা-তাত্তাবিউ খুতু ওয়াতিশ শাইত্বোয়ান ইন্নাহু রাকুম আদুউম মুবিন।’ অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা সম্পূর্ণরুপে ইসলামে প্রবেশ কর, আর শয়তানের (কুমন্ত্রণাদানকারীর) পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

খাজাবাবা কুতুববাগীর প্রকাশিত লেখা সমুহ

(Visited 3,533 times, 5 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *