শয়তানরূপী মানুষ চেনার উপায়

মো: শাখাওয়াত হোসেন

প্রথম যখন আমার পীর ও মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের সান্নিধ্যে এসেছিলাম, তখন থেকেই বাবাজান বলেছেনÑ ‘বাবা, শয়তান থেকে দূরে থাকবেন, এই শয়তান আবার অনেক ধরণের যথা- মানুষ শয়তান, জ্বীন শয়তান, নফস্ শয়তান, খবিশ শয়তান, আরওয়াহ্ শয়তান ইত্যাদি। তখন বুঝিনি মানুষ-সুরতে আবার শয়তান হয় কীভাবে! অনেক পরে বুঝতে পেরেছি, মানুষ যখন আল্লাহ থেকে দূরে থাকে, তখন সে শয়তানের নিকটবর্তী হয়। শয়তান তখন তার মাথায় কূ-চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়। তখন তার কোন ভালো কাজ করতে ইচ্ছে হয় না। নামাজ, রোজা, মানবসেবা, অলি-আল্লাহর সহবত, গুণী মানুষের সঙ্গসহ কোন ভালো কাজই তার ভালো লাগে না। সে নিজেও খারাপ কাজ করে এবং খারাপ লোকের সঙ্গ দেয়। ওই সকল লোকের সংস্পর্শে কোন ভালো লোক গেলে তাকেও আস্তে আস্তে খারাপের দিকে ধাবিত করে। আমাদের সমাজেও এই রকম কিছু লোক আছে, যারা সর্বদা খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে। অনেকে আবার নামাজ, রোজা করে। কিন্তু তা অন্তর দিয়ে না করার কারণে, ওই নামাজে কোনই লাভ হয় না। তারা নামাজ পড়ে আবার খারাপ কাজও করে। অথচ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘ইন্না সালাতা তান্হা আনিল্ ফায়াসাই ওয়াল মুন্কার’। অর্থ: নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে ফায়েসা, গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে। তাহলে নামাজ আদায় করে যারা খারাপ কাজ করছেন, তাদের নামাজ হচ্ছে না। সে জন্যই আমার মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান সবসময়েই আমাদের হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করতে বলেন। রাসুল (সঃ) বলেছেনÑ ‘লা সালাতা ইল্লা বে হুজুরীল কাল্ব’। অর্থ: নামাজই নয় হুজুরি দিল ব্যতীত। আল্লাহতায়ালা সূরা মাউনের ৪, ৫ ও ৬ নং আয়াতে তাদের ভৎসনা করেছেন। যেমন-‘ফাওয়াইলুল্লিল মুসাল্লীন’। অর্থ: সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের। আল্লাযীনাহুম ‘আং সালা-তিহীম ছা-হূন’। অর্থ: যাহারা তাহাদের সালাত সম্মন্ধে উদাসীন। ‘আল্লাযীনা হুম ইউরা ঊনা’। অর্থ: যাহারা লোক দেখানোর জন্য উহা (নামাজ) আদায় করে।
রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘যারা লোক দেখানোর উদ্দেশে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং দান-খয়রাত করে, তারা শিরক করে। সুতরাং সালাত বা নামাজ আদায় করলেই হবে না, সেই সালাত বা নামাজের ভিতর হুজুরি থাকতে হবে। আবি হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সঃ) ফরমানÑ নামাজের ভিতরে শয়তান বেশি ধোকা দেয়। নামাজে হুজুরি আনয়ন করা কোন সহজ কাজ নয়, নামাজের ভিতরে অনেক সময় জাগতিক চিন্তা আসতে পারে। এই চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে এবং নামাজে হুজুরি দিল সৃষ্টি করতে হবে। এই হুজুরি দিল সৃষ্টি করার জন্য মানুষকে কামেল গুরু বা মুর্শিদের সহবতে যেতে হবে। গুরু বা মুর্শিদের সহবতে আসলে, তাঁরা মানুষকে আধ্যাত্মিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেন ও ক্বালবের সালিম করে একজন সাধারণ মানুষকে অসাধারণ মানুষে পরিণত করে তোলেন। আমার মনে আছে আমাদের জাকের ভাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাহেব একদিন বলেছিলেন, বাবাজানের সান্নিধ্যে আসার আগে আমি ইবাদতে স্বাদ পেতাম না। কিন্তু বাবাজানের পবিত্র চেহারা মোবারক দেখার পর থেকে আমার ভিতরে পরিবর্তন দেখা দিলো। বাবাজানের কাছে আসা যাওয়ার ভিতর দিয়ে এখন আমি ইবাদতে স্বাদ পাচ্ছি ও পাঁচ ওয়াক্ত নামজ আদায় করছি। শুধু একজন আল্লাহর বন্ধুকে দেখার সাথে সাথে তাঁর পরিবর্তন হয়ে গেল, এটাই আল্লাহর কামেল-মোকাম্মেল মুর্শিদ চেনার লক্ষণ। আল্লাহতায়া’লা এ জন্যই হয়তো অলি-আল্লাহর সহবত হাসিলের জন্য সাধারণ মানুষকে আদেশ করেছেন।

মানুষ শয়তান চেনার আরো একটি উপায় হচ্ছে, তারা সব সময় অন্যের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায়। অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও গীবত করে। গীবত হচ্ছে এমন একটি পাপ যা জ্বেনা করার চেয়েও বড় পাপ। যারা মসজিদে বসে অন্যের সমালোচনা করে, অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও গীবত করে, তারা মূলত মানুষের মুখোশধারী শয়তান। মসজিদে বসে অন্যের গীবত করলে মসজিদে এবাদতের পরিবেশ নষ্ট হয়। মসজিদকে অসম্মান করা হয়। মসজিদ হচ্ছে শুধু ফরজ নামাজ পরার জায়গা। রাসুল (সঃ) একটি মসজিদের ভিতর মুসলমান মুখোশধারী কিছু মানুষ-শয়তান রাসুল (সঃ)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে মসজিদ উদ্বোধন করার কথা বলে সেখানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে, সেই মসজিদটি (মসজিদে জেরা) পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং যে সকল মসজিদে রাসুল (সঃ)-এর সত্য ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়, আউলিয়াদের বিরুদ্ধে গীবত করা হয়, সে সব মসজিদে, ওই সব গীবতকারীর পিছনে নামাজ আদায় করা ঠিক নয়। ওই সকল গীবতকারী মুসলমান তথা ইসলামের শত্রু। আমার পীর ও মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান হুজুরের মুখে কোনদিন কারো সম্পর্কে গীবত করতে শুনিনি। অন্য কেউ তার সামনে অন্য কোন লোকের বা অন্য কোন দরবারের সমালোচনা করলে, তিনি সাথে সাথে তা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তার শিক্ষা হচ্ছে, কেউ কোন খারাপ কাজ করলে, তাকে সংশোধন করো, পিছনে গীবত করো না। তাই তো তাঁর পবিত্র নসিহতবাণী, ‘অন্যের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ তালাশ করুন’।
বর্তমান অস্থির সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, বিভিন্ন কুসংস্কার ও ইসলামকে সঠিকভাবে জানার জন্য, সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার জন্য সর্বোপরি নিজেকে শুদ্ধ করে, আলোকিত জীবন গড়ার জন্য প্রত্যেক মানুষকে কামেল মুর্শিদের সহবতে যেতে হবে।

লেখক : খাদেম, কুতুববাগ দরবার শরীফ
এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক

(Visited 4,359 times, 1 visits today)
Share