সূরা ফাতেহার অনুবাদ ও ব্যাখ্যা

শাহসুফি হযরত জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি

“বিসমিল্লা-হির রহ্‌মা-নির রাহীম”
অর্থ: পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে।

সূরা ফাতেহা
মক্কায় অবতীর্ণ, রুকু-১, আয়াত-৭

১) “আল্হামদু লিল্লা-হি রাব্বিল্ আলামিন।”
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা।

২) “আর রাহ্‌মানির রাহীম।”
অর্থ: যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু।

৩) “মা লিকি ইয়াও মিদ্দীন।”
অর্থ: যিনি কর্মফল দিবসের মালিক।

৪) “ইয়্যাকা না’বুদু অইয়্যাকা নাস্তাঈন।”
অর্থ: আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

৫) “ইহ্দিনাছ ছিরাত’ল মুস্তাক্বীম।”
অর্থ: আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন।

৬) “ছিরাত’ল্লাযীনা আন্-আম্তা আলাইহিম।”
অর্থ: সেই সকল মানুষের পথে, যাঁদেরকে আপনি নিয়ামত এবং বাতেনী চক্ষু দান করেছেন।

৭) “গাইরিল্ মাগ্দুবি আলাইহিম, ওলাদ-দ্বোয়াল্লীন।”
অর্থ: সেই সমস্ত মানুষের পথে নয়, যে সমস্ত মানুষ আপনার গজবে নিপতিত এবং পথভ্রষ্ঠ হয়েছে।

সূরা ফাতেহার ব্যাখ্যা
ইসলাম শুধু শরীয়তে নয়, তরিকতে নয়, হাকিকতে নয়, মারেফতে নয়। শরীয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতের সমন্বয়ই পরিপূর্ণ ইসলাম।

রাসুল (সাঃ) বলেন, “আস শরীয়তু আকওয়ালী, আত তরিকতু আফওয়ালী, আল হাকীকতু আহওয়ালী, আল মারেফাতু আসরারী।” অর্থ: শরীয়ত আমার বাক্য, তরিকত আমার কাজ, হাকিকত আমার অবস্থান, ইলমে মারেফত আমার নিগুঢ় ভেদ ও রহস্য।

ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, “যে শুধু শরীয়ত করে সে ফাছেক, আর যে শুধু মারেফাত করে সে হলো জিন্দিক বা কাফের। আর তোমরা যদি মুমেন হতে চাও বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাও, তাহলে উভয় ইলেম শরীয়ত ও মারেফাত আমল কর।”

আমাদের হানাফি মাজহাবের ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ফিকাহ কিতাবের মধ্যে বলেন, “লাউ লা সিন্তানি হালাকা নুমান।” অর্থ: আমি নুমান যদি দুই বছর আমার পীর  বাকের (রহঃ)-এর খেদমত বা গোলামী না করতাম তবে ধ্বংস হয়ে যেতাম। তিনি আরো বলেন, “ইলমে শরীয়ত বাইরের দিককে পরিশুদ্ধ করে। আর ইলমে মারেফাত ভিতরের দিককে পূত-পবিত্র করে।”

মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী (রহঃ) বলেন, “খোদ বা খোদ কামেল না শোধ মাওলানা রুম, তা গোলামে শামছে তাবরিজি না শোধ।” অর্থ: আমি ততক্ষণ পর্যন্ত মাওলানা হতে পারিনি, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার পীরে মোর্শেদ মাওলানা শামছুদ তাবরীজির দাসত্ব বা গোলামী বা আনুগত্য না করেছি। তিনি আরো বলেন, “দর হাকিকত গাশ্তে দুরাস খোদা, গরশুভি দুরআজ ছোহবতে আউলিয়া।” অর্থ: সত্যিকারে ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে দূরে আছে, যে ব্যক্তি অলি-আল্লাহগণের নিকট থেকে দূরে থাকে। তিনি আরো বলেন, “গারতুখাহী হাম নাসিনী বা খোদা, গোনশিনি দর হুজুরে আউলিয়া।” অর্থ: তোমরা যদি আল্লাহর দরবারে বসতে চাও, তবে আউলিয়াদের সামনে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে বসে যাও। যাঁর খেদমত করলে দেল নূরানী হয়, মুর্দা দেল জিন্দা হয় ঐ গুণের লোক যদি মিসকিনও হয়, তবুও জানেমালে খেদমত করে তাঁর কদমে জীবন নেছার বা উৎসর্গ করে দাও।

আরো উল্লেখ রয়েছে ‘গারতু চাহে আচলে হক আয় বেখবর, কামেলুকা খাকে পা ছের বছর।’ অর্থ: হে বেখবর! তুমি যদি আল্লাহর সাথে মিশতে চাও, তবে একজন কামেল পীরের পদধুলী হয়ে যাও।

গরিবে নেওয়াজ খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) বলেন,  “আমি ধ্যান বা মোরাকাবা করলে  একটি নূর দেখতে পাই, সেই নূরের আলোতে তামাম কুল-কায়েনাত আলোকিত হয়ে যায়। এর জবাবে বড়পীর (রহঃ) বলেন, হে মঈনুদ্দিন চিশতী উনি হলেন মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রহঃ)। তাঁর নূরের কাছে আমাদের সকল তরিকা জিন্দা থাকবে।”

সুরা  ফাতাহ’র ১০ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, “ইন্নাল্লাযীনা  ইয়ুবায়িঊনাকা  ইন্নামা ইউবায়িউনাল্লাহ্ ইয়াদুল্লাহি ফাওক্বা আইদীহিম।” অর্থ: হে রাসুল (সাঃ)! যারা আপনার হাত মোবারকে বাইয়্যাত গ্রহণ করল, তারা যেন আমি আল্লাহর হাতে বাইয়্যাত গ্রহণ করল। আমার হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে।

আমি খাকছার জাকির বলছি যে, যারা কোনো কামেল মুর্শেদ বা নায়েবে রাসুলের হাতে হাত দিলেন তারা যেন রাসুল  (সাঃ)-এর হাতে হাত দিলেন, আর যারা রাসুল (সাঃ)-এর হাতে হাত দিলেন তারা যেন আল্লাহর হাতে হাত দিয়েছেন।

সূরা কাহাফের ১৭ নং আয়াতে আল্লাহপাক আরো বলেন, “অমাই ইয়ুদলিল ফালান্ তাজ্বিদা লাহু অলিয়্যাম র্মুশিদা।” অর্থ: যারা পথভ্রষ্ট হতভাগা, গোমড়া, পথহারা তাদের ভাগ্যে কখনো পথ প্রদর্শনকারী ও কামেল মুর্শেদ মিলবে না। যে সমস্ত মানুষের ভাগ্য ভালো, তারা  কোনো না কোনোভাবে শেষ জামানায় কামেল মুর্শেদ পাবেন।

সূরা তওবাহ্’র ১১৯ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, “ইয়া-আইয়্যু হাল্লাযীনা আ-মানুত তাকুল্লাহা অকুনু মা-আছ ছোয়াদিক্বীন।” অর্থ: হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় কর, ছাদিকিন ও কামেল মুর্শেদের সঙ্গী হয়ে যাও।

সূরা লোকমানের ১৫ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, ওয়াত্তাবি সাবীলা মান্ আনাবা ইলাইয়্যা।’ অর্থ: আমার দিকে যে ব্যক্তি রুজু হয়েছে, আমাকে চিনেছে, পেয়েছে ও আমাকে চেনার কায়দা জানে তাকে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুস্মরণ (ফলো) কর।

সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, “ক্বুল্লা আস্ আলুকুম আলাইহি আজ্বরান ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল ক্বুারবা।” অর্থ: হে আমার রাসুল (সঃ)! আপনি মানব জাতিকে বলে দিন,তামাদের কাছে রিসালাত পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে, তোমাদের কাছে কিছু চাই না। শুধু তোমরা আমার আহলে বাইয়াত, পাক পাঞ্জাতন আমার সাহাবা ও আমার আসহাবে সূফ্ফাদের ভালোবাসা। নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আহলে বাইয়্যাতের উদাহরণ হযরত নূহ (আঃ)-এর কিস্তির মতো, যারা এই কিস্তিতে উঠেছিল তারা নাজাত পেয়েছিল। (তিরমিযি ও মুসলিম শরীফ)

সূরা: নিসার ১৫০ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, “ওয়া ইয়ুরীদুনা আই ইয়ু ফাররিকু বাই নাল্লাহি ওয়া রুসুলিহি।” অর্থ: তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের মধ্যে পৃথক করিও না।

সূরা : নিসার ৮০ নং আয়াতে আল্লাহপাক আরও বলেন, “মাই ইয়ুত্বিইর  রাসুলা ফাক্বাদ আত্বোয়া আল্লাহ।” অর্থ: যে রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করল, দাসত্ব করল, পায়রবী করল, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল। দাসত্ব ও পায়রবী করল।

টীকা : যে কামেল মোর্শেদের গোলামী বা পায়রবী করল, সে রাসুল (সাঃ)-এর গোলামী বা পায়রবী করল। আর যে রাসুল (সাঃ)-এর গোলামী করল, সে তো আল্লাহরই গোলামী করল।

(Visited 4,942 times, 5 visits today)
Share