আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ্ নকশ্বন্দি মোজাদ্দেদি
অইয্ ক্বালা রাব্বুকা লিলমালাইকাতি ইন্নী জ্বাইলুন ফিল আরদ্বি খালীফাহ্; ক্বালু আতাজয়ালু ফিহা মাই ইয়ুফসিদু ফীহা অইয়াসফিকদ দিমা-আ, ওয়া নাহনু নুসাব্বিহু বিহামদিকা অনূকাদ্দিসু লাক; ক্বালা ইন্নী আ’লামু মা-লা-তা’লামুন। (সুরা বাকারা, আয়াত – ৩০)
অর্থ : যখন আল্লাহতা’য়ালা ফেরেস্তাদের বললেন, নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে একজন খলিফা বানাতে চাই, (তোমাদের মতামত কী?) তখন ফেরেস্তারা বললেন, হে দয়াময় আল্লাহতা’য়ালা এমন প্রতিনিধি বানালে, যিনি দুনিয়াতে গিয়ে খুনখারাবি-মারামারি হানাহানি অশান্তি করে আপনার নামের কলঙ্ক করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে। আমরা তো যথেষ্ট পরিমাণ আপনার তাসবীহ্-জিকির প্রশংসা ও পবিত্র গুণের বর্ণনা করছি। আল্লাহতা’য়ালা ফেরেস্তাদের সাবধান করে বললেন, হে ফেরেস্তারা নিশ্চয়ই আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।
‘তাফসীরে মাযহারী’তে আরো বলা আছে যে, খলিফা অর্থ প্রতিনিধি । এই প্রতিনিধি হচ্ছেন, হযরত আদম (আ:)। তাঁকে খলিফা হিসেবে প্রেরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহতায়া’লার বিধানাবলী ও বিধান অনুসারে বিষয়ের প্রচলন, পথ-প্রদর্শন, সত্যের পথে আহ্বান, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি। এতে আল্লাহতায়া’লার কোন প্রয়োজন নিহিত নেই। কারণ, তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন। কিন্তু সৃষ্টিকূল তাঁর মুখাপেক্ষি । সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষের জন্যই তিনি প্রতিনিধি পাঠানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, সাধারণ মানুষ আল্লাহতায়া’লার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা রহিত। সরাসরি আল্লাহতায়া’লার আদেশ বা ঐশী বাণীতে পাঠানো বিধান গ্রহণ করতে তারা অক্ষম। তাই পরম দয়ালু আল্লাহ এই প্রতিনিধিত্বের পরস্পরা শুরু করার অভিপ্রায় বা ইচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন হযরত আদম (আঃ)-এর মাধ্যমে।
কোরআন-হাদিস পর্যালোচনা করে দেখা গেল যে, আল্লাহতা’য়ালা সৃষ্টিজগৎ ও কূলকায়েনাত পরিচালনা করার জন্য ফেরেস্তাদের মধ্য থেকে প্রধান প্রধান কিছু সংখ্যক ফেরেস্তাকে দায়িত্বভার বণ্টন করেছেন।যেমন জিব্রাইল (আ:)-কে আল্লাহতায়া’লা নবী-রাসুলের কাছে বার্তাবাহক হিসেবে আসা-যাওয়ার দায়িত্বভার দেন। মিকাইল (আ:)-কে আল্লাহতা’লা রিজিক বণ্টনের দায়িত্বভার দেন। ইসরাফিল (আ:) সিঙ্গা নিয়ে বসে আছেন আল্লাহতায়া’লার হুকুমের অপেক্ষায়। আযরাইল (আ:)-কে আল্লাহতায়া’লা সকল প্রাণির জান-কবজের দায়িত্বভার দিয়েছেন। কেরামান-কাতেবীন এই দুই ফেরেস্তাকে মানুষের ভাল-মন্দ লেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। মনকির-নকির নামের দুই ফেরেস্তাকে কবরে যারা শয়ন করেছেন, তাঁদের সওয়াল-জবাব বা প্রশ্ন করার জন্য দায়িত্বভার দিয়েছেন। বেহেশত পাহারা দেয়ার জন্য রেদওয়ান নামের এক ফেরেশতাকে দায়িত্বভার দিয়েছেন। দোজখ পাহারা দেয়ার জন্য মালেক নামের এক ফেরেস্তাকে দায়িত্বভার দিয়েছেন। আল্লাহতায়া’লা ফেরেস্তাদের মধ্যে অন্যান্য আরো ফেরেস্তাদের বিভিন্ন দায়িত্বভার দিয়ে, সুনিপুনভাবে পরিচালনা করতেছেন তাঁর অপার সৃষ্টিকে।
হে সম্মানিত পাঠকগণ! গভীর চিন্তা করে দেখুন, যে আল্লাহতায়া’লা ‘কূন-ফাইন্না-কূন’-এর মালিক। তিনি আদম সৃষ্টির আগে ফেরেস্তাদের সঙ্গে পরামর্শ নিলেন কেন? তিনি ইচ্ছা করলেই তো তাঁদের মতামত ছাড়া আদম সৃষ্টি করতে পারতেন। কাজেই আল্লাহতায়া’লা সবকিছুর জন্য মাধ্যম তৈরি করে দিয়েছেন। তাই আল্লাহতায়া’লা প্রকাশ-বিকাশ হওয়ার জন্য, আদম সৃষ্টির পর যুগে যুগে নবী রাসুলদের পাঠিয়েছেন। যেহেতু এখন নবী রাসুলদের দরজা বন্ধ, তাই এখন হলো বেলায়েতে মাশায়েখদের যুগ। তাঁরাই পথহারা মানুষদের জন্য পথের দিশারী, যাঁরা নায়েবে নবী জমানার কামেল পীর-মুর্শিদ এবং তাঁরা-ই হলেন আল্লাহতায়া’লাকে পাওয়ার সঠিক মাধ্যম।
প্রিয় পাঠক, তাহলে চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তায় কোনো আধ্যাত্মিক গুরু বা পীর-মুর্শিদ ধরার প্রয়োজন আছে কি না ।