মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা ২০১৭
সেহাঙ্গল বিপ্লব
গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ২০১৭, রোজ বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকার ফার্মগেট আনোয়ারা উদ্যানে অত্যন্ত ভাব-গাম্ভীর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়ে গেল কুতুববাগ দরবার শরীফের বার্ষিক ঐতিহাসিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা। দুদিনব্যাপী এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা অগণিত মানুষের আগমন ছিল উল্লেখ করার মতো। এত মানুষ, তবু কোন কোলাহল দেখা যায়নি। সবার মাঝে বিরাজ করছিল সুনশান স্বর্গীয় নিরবতা, রাসুলপ্রেমে মুগ্ধ, আল্লাহর প্রেমে নিমগ্নতা। বৃহস্পতিবার রাতের শেষভাগ অর্থ্যাৎ, রহমতের সময়েও সুবিশাল প্যা-েল ছিল দরদী মাশুকপ্রেমী আশেক-আশেকিনে পরিপূর্ণ। আর তা হবে না-ইবা কেন, এ যে মহান আল্লাহতায়ালার মহা নিয়ামতপূর্ণ ধ্যান-মোরাকাবা-মোশাহাদা ও জিকিরের মাহফিল। মুর্শিদের উছিলায় আল্লাহতায়ালার একান্ত সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় সেখানে বুকভরা আশা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রাসুলপ্রেমিক নারী-পুরুষের ঢল, সেখানে তো আল্লাহর বিশেষ রহমত থাকবেই। (এখানে রহমত- রাতের ছবি যাবে) এবারের ওরছ শরীফ ও বিশ্বজাকের ইজতেমার তাৎপর্য ছিল অনন্য। মোজাদ্দেদিয়া তরিকার রীতি অনুযায়ী আমাদের দরবার শরীফের বার্ষিক পবিত্র ওরছে মনোরম আলোকসজ্জা এবারও ছিল। প্রতি বছরের মতো কুতুববাগী কেবলাজানের বিশেষ অলৌকিক কেরামতি এবারও ছিল! যা এ লেখকের দেখার মহা সৌভাগ্য হয়েছে। শুধু লেখকই নয়, যারা ওরছ শরীফে এসেছিলেন তাদের সিংহভাগ মানুষই দেখেছেন। মূল ঘটনা বলার আগে একটু প্রেক্ষাপট বলা যাক। আমরা জানি যে, এ পৃথিবীর বুকে যত ফুল আছে তা রাসুল (সঃ) বেহেশত থেকে এনেছেন, এ বাণী হাদিস শরীফে আছে। যেহেতু ফুল পবিত্র এবং যে কোন স্থানে সৌন্দর্য বর্ধনের ক্ষেত্রে ফুলের জুড়ি নেই। আর যদি সে স্থান হয় আল্লাহতায়ালার শানে তাঁর প্রিয়বন্ধুর রুহানী সান্নিধ্যে আল্লাহর পাগল মানুষের সমবেত অনুষ্ঠান, সেখানে ফুলের কদর না থেকে পারে না। প্রতি বছরের ওরছ শরীফের সুবিশাল মঞ্চ সাজানো হয় ফুলে-ফুলে। কিন্তু এবারই প্রথম মঞ্চে কোন ফুল নেই! এ দৃশ্য দেখে লেখকের মনে একটা অবাক করা ধাঁ-ধাঁ জাগিয়ে দিল! মুহূর্ত পরেই পরম বিশ্বাস ও আস্থার সাথে উত্তর এলো, কেবলাজান নিজেই নূরের ফুল, মানুষের সাথে মিশে মানুষফুুল হয়েছেন। যে নূরের ফুল বিশ্ববাসীর শান্তি ও কল্যাণের পথে পথে সুরভীত আলো ছড়িয়ে চলছেন। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বন্ধুর ওরছ শরীফকে বাস্তবেই ফুল ছাড়া সম্পন্ন করবেন না, তা তো আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন। তবে যে বিশেষ কেরামতির মাধ্যমে দেখাবেন, এ লেখকের ভাবনায় তা উদয় হয়নি। যা-হোক, বৃহস্পতিবার ফজর নামাজ শেষে তরিকার নিয়মে পাক কালাম ফাতেহা শরীফ পাঠের মধ্য দিয়ে, দু’দিনব্যাপী ওরছ শরীফের উদ্বোধন হয়। সকালে দেখা গেল মূল মঞ্চের উত্তর পাশে যে স্থান দিয়ে কেবলাজান মঞ্চে উঠবেন, ঠিক সেখানেই একটি প্রায় মরা জীর্ণ গাছে কয়েকটি ফুল! এ দৃশ্য প্রথম দিকে তেমন কারো নজরে আসেনি। সারাদিন পবিত্র কোরআন- হাদিস, ইজমা-কিয়াসের দ্বারা শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতসহ সর্বোপরি এলমে তাসাউফ অর্থ্যাৎ, সূফীবাদের ওপর অত্যন্ত মূল্যবান বয়ান করেন দেশের বরেণ্য সুন্নি ওলামায়ে কেরামগণ। বিকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত যত বাড়ে ফুলফোটার পরিমাণও তত বাড়তে থাকে। নিবন্ধ লেখকের জানা মতে প্রথম এ বিষয়টি পীরভাই চৌধুরী আদনান ইবনে আফসারের নজরে আসে। যে সমস্ত জাকের-কর্মী ভাইজানেরা নিরলস প্রায় দুই মাস ওরছ শরীফের প্রস্তুতি কাজে সার্বিক খেদমতে সার্বক্ষণিক উদ্যানেই ছিলেন, তারাসহ আরো অনেকে (যাদের মধ্যে অনেকেই প্রথম এসেছেন) পুনরায় ঘুরে দেখে এসে বললেনÑ ‘এ গাছটি ছাড়া উদ্যানে আর কোন গাছে ফুল দেখতে পাই নাই। এছাড়াও উদ্যানে আমরা বহু বছর ধরেই ওরছ শরীফ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা করে আসছি, কিন্তু জানুয়ারি মাসের শেষে বা শুরুতে কিংবা অন্য কোন সিজনেও উদ্যানে কোন ফুল চোখে পড়ে নাই। আর এমন আচমকা ফুলফোটার দৃশ্য দেখা তো দূরের কথা!’ অনেকেই বলছিলেনÑ ‘এটা আল্লাহর রহমত, আমরা শুনেছি এবং ইতিহাসেও আছে মরাগাছে ফুলফোটার বিস্ময়কর ঘটনা। তাহলে আল্লাহর অলির এ ওরছ শরীফে যেকোন কেরামতি ঘটতে পারে এটাই স্বাভাবিক।’ এ নিবন্ধ লেখার সময় ফার্মগেট আনোয়ারা উদ্যানে এই ফুল গাছটি এখনও দৃশ্যমান। একেবারেই পাতাহীন প্রায় জীর্ণ চিকন ডালে-ডালে ফুটেছিল সুবাসিত নজরকাড়া নানান রঙের ছোট-ছোট বাহারী ফুল। ওরছ শরীফে উপস্থিত থেকে নিজের চোখে দেখেছি, ছবি তুলেছি। আর সে কী দারুণ মিষ্টি তার ঘ্রাণ! বাতাসের কাছ থেকে ফুলের উড়ন্ত ঘ্রাণ ধরে রাখার মতো কোন যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি ঠিক। তবে ইন্দ্রিয় দ্বারা সে অপূর্ব স্বর্গীয় ঘ্রাণ মস্তিষ্কের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপভোগ করেছি, এবং সত্যি বেশ কয়েকবার ফুলের কাছে গিয়ে প্রাণের মুগ্ধতায় বুকভরে নিঃশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ দম বন্ধ করে ফুলের ঘ্রাণ উপভোগ করেছিলাম! এর পরের ঘটনা আরো বিস্ময়কর! বৃহস্পতি ও শুক্র বার রাত শেষে শনিবার দুপুর থেকে গাছের ফুল গাছেই শুকাতে লাগলো। ধীরে ধীরে প্রায় রাতের মধ্যেই সব ফুল গাছেই শুকিয়ে গেলো। প্রিয় পাঠক, কুতুববাগী কেবলাজানের নগণ্য আশেক হয়ে তাঁর গোলামীতে থেকে ঈমানের সাথে বলতে পারি, এখানে একটি অক্ষরও বাড়িয়ে বলার সুযোগ নেই। কারণ, মহান আল্লাহ তাঁর অপার মহিমায় যুগে যুগে নবী-রাসুলগণসহ, নিকট-প্রিয় অলি-বন্ধুদেরকে তাঁর কুদরতি লীলার দ্বারা অমূল্য পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে থাকেন, বিশ্বাস করি এমন কিস্ময়কর ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। তবে কেরামতির এ বিষয়গুলো কুতুববাগী কেবলাজানের মতো কামেল-মোকাম্মেল আউলিয়ারা সহজে সাধারণের কাছে প্রকাশ হতে চান না। তাই এ ঘটনা লেখার প্রশ্নে কেবলাজান ছিলেন অনমনীয়। পরে হয়তো ভক্তের করজোড় আবদারের কাছে মেহেরবান হয়েছেন। সূফীবাদের বিশ্বপ্রচারক খাজাবাবা কুতুববাগী পীর কেবলাজানের নকশবন্দিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ওরছ শরীফ ও বিশ্বজাকের ইজতেমায়, আল্লাহতায়ালা তাঁর কবুলিয়াতের মহা দুয়ার খুলে, বেহেশতি নিয়ামত দান করেছেন। সে নিয়ামতের ভাগিদার হতে পেরেছি আমরা অগণিত পীরভাই-পীরবোনসহ আপামর মানুষ, যারা ওরছ শরীফের আখেরী মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলাম। সেই প্রায় শুকনো গাছটিতে ফুলফোটার দৃশ্য অসংখ্য মানুষ মোবাইলে ধারণ করেছেন। এ কথাও ঠিক, এই অলৌকিক ঘটনাকে হয়তো অনেকে নানাভাবে ব্যাখ্যা দিবেন, ফুল কিংবা বৃক্ষবিশারদগণও তাদের বৈজ্ঞানিক যুক্তি এবং প্রকৃতির সাথে ঋতুর সংযোগ- বিয়োগের কথাও বলতে পারেন। কিন্তু এই আবহাওয়া বা প্রকৃতি যিনি সৃষ্টি করেছেন, তাঁর ইচ্ছার সাথে কোন তর্ক চলে না, তিনিই অতি দয়ালু এবং সর্বময় জ্ঞানী। যে জ্ঞানের নূর দ্বারা আসমান ও জমিনসহ কুলকায়েনাত সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালার অতিপ্রিয় অলিয়ে কামেল -বন্ধুদের মাধ্যমে, আল্লাহ নিজেরই পরিচয় বা সন্ধান দিয়ে থাকেন আল্লাহপ্রেমী মানুষদেরকে। তাই রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সত্য তরিকার বর্তমান জামানার কা-ারী, সূফীবাদের বিশ্বময় প্রচারক খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের শিক্ষা-দীক্ষাই যাদের আদর্শ-ঈমান, আল্লাহর রহমতে নিশ্চয়ই তাদের মুক্তি আলোর পথে, যে পথ বেশি দূরে নয়! প্রায় দুই মাসব্যাপী চলে ওরছ শরীফের প্রস্তুতি আর অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন গেট-প্যা-েলসহ সার্বিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। অপর দিকে সারাদেশের আশেক ও জাকের ভাই-বোনদের দাওয়াত দেওয়া ও প্রচারের কাজ একযোগে চলেছে। অনেক বেজাকেরের মনে সন্দেহ ছিল আবার কেউ কেউ তা প্রকাশও করেছেন যেÑ ‘আপনারা যেভাবে এত বিশাল আয়োজন করছেন তা সময় মতো সম্পন্ন করতে পারবেন?’ উত্তরে তাদের বলেছি, কুতুববাগ দরবার শরীফ মহান আল্লাহর অলি-বন্ধুর দরবার।যখন এই সাজসজ্জা ও আয়োজন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তখন কেবলাজানের উছিলায় আল্লাহতায়ালাই সব ব্যবস্থা করবেন এবং সুন্দরভাবেই সম্পন্ন করবেন। এ কথা শুনে কারো চোখে-মুখে কোমল ও বিশ্বস্ততার মৃদু আভাস খেলেছে। আবার কারো চোখে সন্দেহের জোনাক জ্বলেছে! তবে তারা সাধারণ মানুষ, যা আন্দাজ করবেন তাই তো বলবেন। তাদের এ সন্দেহের যথার্থ কারণও ছিল। এত বড় সুবিশাল প্যা-েল, অপূর্ব সুসজ্জিত আলোকিত মঞ্চ, বেশ কয়েকটি সুউচ্চ গেট-তোরণ নির্মাণসহ নানান কাজ। কিন্তু সামান্য সংখ্যক জাকের-কর্মী ভাইজানদের দ্বারাই, পীর-কেবলাজান সময়ের একদিন আগেই সব কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, আধ্যাত্মিক কামেল গুরুর ছোহবতে সূফীবাদ চর্চায় মানুষের অন্তর, সত্য ও সুন্দরের আলোয় উজ্জল থেকে উজ্জলতর হয়।
আপনার কাছে তো ঐ ফুলের ছবি আছে | পোষ্ট করেন, আমরাও দেখি |