এ্যাডভোকেট মির্জা মাহবুব সুলতান বেগ বাচ্চু
বহুবার নির্বাচিত জনপ্রিয় সংসদ সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বর্তমান মহাজোট সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জনাব ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক দীর্ঘজীবন রাজনীতির মাঠে-ময়দানে ছুটছেন। সৎ ও নীতিবান রাজনীতিবিদ হিসেবে গণমানুষের বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে স্বাধীনতার পর এই ৪৩ বছরে বারবার মহান জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করে আসছেন। চলতি পথপরিক্রমায় তিনি প্রায় রাতেই নূরাণী চেহারার ধবধবে পোশাক পরিহিত এক জ্যোর্তিময় মানুষকে স্বপ্নে দেখতেন। দিনের শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর কথা ভুলতে পারতেন না। বাস্তবে এক নজর দেখার জন্য রাজনৈতিক মাঠে-ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার ভিড়ের মধ্যেও খুঁজে ফিরতেন স্বপ্নে দেখা সেই নূরাণী মানুষকে। জীবনের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়ের বর্তমান মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিন পর হঠাৎ এক শুভক্ষণে, ৩৪ ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট, ঢাকাস্থ কুতুববাগ দরবার শরীফের মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমা ২০১৪-এর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পান। অনুষ্ঠানস্থল দরবার শরীফ সংলগ্ন আনোয়ারা উদ্যানের সুবিশাল ময়দান। মন্ত্রী মহোদয় কুতুববাগ দরবার শরীফে উপস্থিত হয়ে ক্বেবলাজানের সাক্ষাৎ লাভ করেন। বাবাজানকে দেখেই তিনি বিস্মিত হন এবং ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে স্বপ্নে দেখা সেই নূরাণী চেহারার মানুষের সঙ্গে বাবাজানের হুবহু মিল দেখে অনেকক্ষণ অপলক তাকিয়ে থাকেন বাবাজানের চেহারা মোবারকের প্রতি। আর মনে মনে বলছেন, নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর অলি-বন্ধু এবং প্রাজ্ঞজন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মন্ত্রী মহোদয়ের এমন হাল-অবস্থা দেখে ক্বেবলাজান হুজুর জিজ্ঞেস করলেন, এমন করে কী দেখেন মন্ত্রী বাবা?’ মন্ত্রী মহোদয় তাঁর স্বপ্নের কথা বিনয়ের সঙ্গে বললেন। বাবাজান শুনলেন কোনো মন্তব্য করলেন না। মন্ত্রী মহোদয় ভাবছেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। কিন্তু বাস্তবে কোনো মানুষকে না দেখে স্বপ্নে দেখা, আবার স্বপ্নে দেখা সেই মানুষকে এরকম আকস্মিকভাবে বাস্তবে দেখা, এমন অলৌকিক অভিজ্ঞতা জীবনে এই প্রথম। ব্যস্ততার কারণে সেদিন তিনি বেশি সময় ক্বেবলাজানের কাছে থাকতে পারেন নি। তবু যেন এক ঐশ্বরিক প্রশান্তির পরশ নিয়ে সেদিনের মতো চলে আসেন। কিন্তু মনের ভিতর শুধু একটি প্রশ্ন তাঁকে আলোড়িত করে রাখে। কী এক অজানা কৌতূহলে অন্তর-মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে তাঁর। ভাবছেন, এওকি সম্ভব? যা-ই হোক, সেদিন দরবার শরীফের হুজরাখানার বাহিরে আরো অনেক তরুণ ও যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের আশেক-জাকের ভাইয়েরা উপস্থিত ছিলেন। ফিরে আসার সময় লক্ষ্য করলাম, মাননীয় মন্ত্রীকে দেখে তারা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন। মন্ত্রী মহোদয় সালাম বিনিময় করে তাদের উদ্দেশে বললেন, আমার এখানে আসতে বড় দেরি হয়ে গেল। আপনারা যুবক, এই বয়সে এখানে আসতে পেরেছেন, এটা আপনাদের সৌভাগ্য। আমার দুর্ভাগ্য আমি আপনাদের বয়সে এখানে আসতে পারিনি। যদি পারতাম, তবে নিজেকে অতি সৌভাগ্যবান মনে করতাম। আপনারা সঠিক স্থানে এসেছেন, লেগে থাকেন। সঠিক পথ পাবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন, আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করবো। এই বলে মন্ত্রী মহোদয় ফিরলেন, যুবক জাকের ভাইয়েরা আদবের সঙ্গে মন্ত্রী মহোদয়কে লিফ্ট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন এবং বললেন, স্যার, আবার আসবেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমাকে যে আসতেই হবে। বারবার আসতে হবে। কারণ এখানে এসেছিলাম খালি ভা- নিয়ে, এখন তা পূর্ণ করে নিয়ে গেলাম।মন্ত্রী মহোদয় এরপরে যেদিন কুতুববাগ দরবার শরীফে আসেন, ওই দিন ছিল সোমবার, পবিত্র ওরছ শরীফ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমা শেষে কর্র্মী ছুটির দিন। তবারকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্বেবলাজানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কর্মী ছুটির অনুষ্ঠানে দরবারের তৃতীয় তলাসহ পুরো দশতলা ভবনে উপস্থিত হাজার হাজার আশেক-জাকের ভাইদের সামনে মন্ত্রীমহোদয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। সবার সামনে খাজাবাাবাকে স্বপ্নে দেখার ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করলেন। তিনি আরও বললেন, প্রিয় আশেক-জাকের ভাইয়েরা, আমি মনে মনে নিয়ত করেছি রাজনীতি শেষে আমার বাকি জীবনটা এই কুতুববাগ দরবার শরীফেই কাটিয়ে দেব। সারাজীবন আমি মনের ভিতর যা লালন করে আসছি, তার পুরোপুরি এই দরবার শরীফে এসে দেখলাম এবং পেলাম। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। কারণ, সুফিবাদই শান্তির পথ। এই সুন্দর সম্প্রীতির বাণী সারাবিশ্বে প্রচারে অংশ নিতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো। সম্মানীত পাঠকদের প্রতি আমার আকুল অনুরোধ, এই লেখাটি পড়ে যদি আপনাদের অন্তরে নিজেকে জানার কিংবা নিজেকে চেনার জন্য সামান্যতম অনুভূতি জাগে, তাহলে আমি বলবো একটু কষ্ট করে হলেও কুতুববাগ দরবার শরীফে আসবেন। সরাসরি প্রত্যক্ষ করবেন ক্বেবলাজানের আদর্শ এবং মানব কল্যাণের জন্য তাঁর যে বাণী সুফিবাদই শান্তির পথ’ এই কথার সত্যতার প্রমাণ পাবেন। কারণ, রসুলপাক (সাঃ)-এর যে শিক্ষা, আদর্শ, সেই শিক্ষা, আদর্শ থেকে আমরা শুধু অজ্ঞতার কারণে কতখানি দূরে সরে আছি কিংবা দিন দিন আরও দূরে সরে যাচ্ছি, তা প্রকৃতভাবে না জানলে কোনোদিনও বুঝা যাবে না এবং মুক্তির কোনো পথ নেই। আমি বিশ্বাস করি, ক্বেবলাজানের মাধ্যমে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব রসুল (সাঃ)-এর যে সত্য ইসলাম, সেই ইসলামের মর্মবাণী প্রচার ও প্রসার করার জন্যই মহান আল্লাহপাক রাব্বুলআলামিন খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে আমাদের মধ্যে আলোকবর্তিকা রূপে পাঠিয়েছেন। তিনি অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার দিচ্ছেন। বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করছেন। বিপদ-আপদে পথহারা মানুষদের সঠিক পথের সন্ধান দান করছেন। নিজ নিজ অন্তরাত্মাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য সৎ পরামর্শ দিয়ে দেশ-বিদেশের প্রায় ৪০,০০০০০ (চল্লিশ লাখ) ভক্ত-আশেক-জাকের ভাই-বোনদের আত্মাকে (ক্বলব) শুদ্ধ করার শিক্ষা দিয়ে পরমাত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুপথ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। কারণ, তাঁর আদর্শ বা শিক্ষা ‘মানবসেবাই পরম ধর্ম’। মানুষকে সেবা করলে স্বয়ং আল্লাহ’তায়ালা সেই সেবা গ্রহণ করেন ইত্যাতি।ব্যক্তি জীবনে মন্ত্রী মহোদয়ের ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পালন করছি। তাই অধম গুনাহগার এই আমাকেও রাজনৈতিক পরিম-লের মধ্যে থাকতে হয় বলে, প্রতিদিন অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা করতে হয়। তাদের নানা রকম প্রয়োজনের কথা শুনতে হয়। সত্যি কথা বলতে কি, এ কারণে অনেক সময় বিরক্ত হয়ে পড়ি। আবার কখনো তার বহি:প্রকাশও ঘটে যায়। কিন্তু কুতুববাগ দরবার শরীফে এসে দেখলাম যে, এখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাদের নানান সমস্যা, দুঃখ-দুর্দশা, অভাব অনটনের ফিরিস্তি নিয়ে ক্বেবলাজানের কাছে নালিশ করতে আসেন। অথচ তিনি পরম ধৈর্য্য সহকারে তাদের সব কথা শোনেন এবং তা লাঘব করার জন্যে সঠিক পরামর্শ দান করেন। কাউকেই তিনি খালি মুখে দরবার শরীফ ত্যাগ করতে দেন না। তাঁকে কখনো দেখিনি কারো সঙ্গে উত্তেজিত হতে বা উঁচ্চস্বরে কথা বলতে। বিভিন্ন বই-কিতাব পড়ে জেনেছি যে, এমন গুণেরই অধিকারী ছিলেন মহানবী হযরত আহাম্মদ মুজত্বা মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এবং সেই গুণে গুণান্বিত আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর। তিনি সবাইকে এক দৃষ্টিতে দেখেন। ছোট বড় সবাইকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করেন। যত তাঁকে দেখি, ততো অবাক হই আর ভাবি, কী করে সম্ভব এত মানুষের সঙ্গে কান্তিহীন সাক্ষাৎ দান করা এবং তাদের নালিশ শোনা? সম্মানীত পাঠক আপনারাও আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, নিশ্চয়ই এতো ধৈর্য্য নিয়ে এ কাজ কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এমন সুন্দর ও কোমল ব্যবহার যা কোনো মহা-মানব ছাড়া হতে পারে না। এ যেন আল্লাহপাকের প্রিয় হাবীব রসুলপাক (সাঃ)-এর নিদর্শন তাঁর ভিতরে স্পষ্ট রয়েছে। সুবহানআল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ!বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে নিজের মনের সব অশান্তি দূর করে আলোকিত মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। এখানে আরোও একটি সত্যি কথা বলে রাখি যে, ক্বেবলাজানকে দেখলে মনের ভিতর কোনো প্রকার দুঃখ- জ্বালা-যন্ত্রণা অবশিষ্ট থাকে না। যেন কর্পূরের মত সব উড়ে যায়! তাই কবির ভাষায় বলতে চাইÑআমি যেদিন একা একা এসেছিলাম ভবে/ কেঁদেছিলাম একা আমি হেসেছিল সবে/ এমন জীবন হবে করতে গঠন/ মরণে হাসব আমি, কাঁদবে ভুবন।