অলি-আল্লাহগণ যুগে যুগে আল্লাহ এবং রাসুলদের সত্য পথেরই অনুসরণ করে আসছেন। যে কারণে শত শত বছর ধরে আধ্যাত্ম সাধরান মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের লক্ষ্যে অলি-আল্লাহগণের অনুসৃত পথই অনুসরণ করেন। বিশ্বে যত ধর্ম আছে সব ধর্মেই একটি বিষয় কমন, তা হলেঅ, নিজেকে চেনার সাধনা। আর ফকির লালন সাঁই বলেছেন, ও যার আপন খবর আপনার হয় না… ওরে আপনারে চিনতে পারলে যাবে অচেনারে চেনা…। হাদিস শরীফে বর্ণিত আখেরি নবী হযরত মুহম্মদ (দঃ) এর বাণী হচ্ছে, মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফা রাব্বা-হু’। অর্থাৎ, যে নিজেকে চিনেছে সে চিনেছে তার রবকে’। এই যে নিজেকে চেনা এবয় স্রষ্টাকে চেনার সাধনা, এই সাধনাই সূফীবাদের প্রধান শিক্ষা।এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মানবপ্রেমের মহান শিক্ষা। সূফী-সাধকগণ রাসুলে করীম (দঃ) এর মানবতাবাদী জীবানদর্শের অনুসারী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব মানুষকে ভালোবাসা, মানুষের কল্যাণে আত্মনিবেদন করা, সমস্ত অহমিকা-অহঙ্কারের উর্ধে উঠে নিজেকে বিনয়ী করে তোলঅর মাধ্যশে পরিশুদ্ধ মানুষ হবার দীক্ষাই দিয়ে থাকেন। এই মানবিত গুণাবলীর কারণেই যুগে যুগে ইসলামের সত্যবাণী সূফী-সাধকগণ বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। রক্তপাত নয়, প্রেম এবং মমতা দিয়ে তাঁরা মানুষের মনজয় করেছেন। যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সূফী-সাধকদের উদার মানবিক প্রেমময় আহ্বানে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলামের পতাকাতলে সমেবেত হয়েছেন। সূফীদের সেই প্রেমময় আদর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে একুশ শতকের আধ্যাত্মিক মহা-সাধক শাহসূফী খাজাবাবা আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী কেবলাজান। যে কারণে আজ তাঁর দাওয়াত দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাচ্ছে, মানুষের মুখে মুখে আজ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের নাম। বিনয় ভক্তি আর মহব্বত দিয়ে মানুষের অন্তরে যে স্থায়ী আসন করে নেয়া যায়, তা খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের সঙ্গলাভ ছাড়া উপলব্ধি করা অসম্ভব বলেই মনে হয়।
সম্প্রতি খাজাবাবা উত্তর বঙ্গের কয়েকটি জেলা সফর করে ফিরেছেন। তাঁর সফরকালে সর্ব ধর্মের মানুষের যে ঢল নেমেছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ সাক্ষাৎ করেছেন এই পীরে-কামেলের সঙ্গে। তারা খাজাবাবার দুটি শিক্ষায় মুগ্ধ হয়েছেন। (১) ‘মানব সেবাই পরম ধর্ম’। আর (২) ‘সূফীবাদই শান্তির পথ। তাঁর সঙ্গে যারা দেখা করেছেন, তারা পরম ভক্তি আর বিশ্বাস নিয়েই দেখা করেছেন। কেবলাজানের অমায়িক ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হয়েছেন। সবাই জানেন, ভারত নিরঙ্কুশ হিন্দু ধর্মালম্বীদের দেশ। কিন্তু সেখানেও ইসলামের বাণীবাহক মহান সাধক খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে সর্বস্তরের মানুষ গ্রহণ করেছেন, তাদের আত্মা পরিশুদ্ধ করার মতো সত্যগুরু হিসেবে। ধুপগুড়িতে তিনি যখন সফর করছেন, তখন সেখানে বিশ^কর্মার পূজোর মওসুম। ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে, মন্দির সাজিয়ে চলছে পূজোর প্রস্তুতি। সে সময় খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান মাহফিল তথা ধর্মসভা করলেন, ধুপগুড়ির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টারে। দিনটি ছিল ভারতে সরকারী ছুটির দিন, রোববার। কিন্তু তারপরও কমিউনিটি সেন্টার উপচে পড়েছে ভক্ত আশেক জাকেরদের উপস্থিতিতে। অডিটরিয়াম ভরার পর দোতলার গ্যালারীও কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল। সেই সভায় সব ধর্মের মানুষই ছিলেন মুগ্ধ শ্রোতা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে, ওই দিন তারা সব রকম ঢোল-বাদ্য বাজানো থেকে বিরত ছিলেন। সভাপত্বি করেন শহরের শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক ডক্টর কৃষ্ণদেব। তিনিও মুগ্ধতার সঙ্গে বলেন, ‘খাজাবাবা কুতুববাগী এসেছেন শান্তির বাণী নিয়ে আমাদের মাঝে মানবতার আলোকবর্তীকা হয়ে। তাঁকে বার বার চাই আমাদের মধ্যে।’ ভারতের মানুষ তাদরে দেশে কেবলাজানকে নিয়ে বিশ^জাকের ইজতেমা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে করেছেন। তারা খাজাবাবার প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে আছেন। সূফী সাধনার যে শক্তি আর ঐশ্বর্্য, মানবসমাজে পরিশদ্ধ করার যে সুক্ষ্ম সাধনা, তারই অনন্য দৃষ্টান্ত ভারত সফরের ঘটনা প্রবাহে ছড়িয়ে আছে। ওই ভ্রমণ থেকে আমাদেরও অনেক কিছুই শিক্ষণীয় আছে।