আলহাজ মোঃ জয়নাল আবেদীন আল মোজাদ্দেদি
হযরত মুসা (আঃ)-এর জামানার একটি সত্য কাহিনী মাসিক আত্মার আলো’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি। একদিন হযরত মুসা (আঃ)-এর এক উম্মত নবীর কাছে বললেন, হুজুর আমি আপনার সফরসঙ্গী হতে চাই। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, তুমি আমার সাথে সফরে থাকতে পারবে না। পুনরায় আবার আর্জি করলেন, হুজুর, আমি থাকতে পারবো আপনি দয়া করে আপনার সাথে আমাকে নিয়ে যান। লোকটির অনুনয়-বিনয় দেখে হযরত মুসা (আঃ)-এর দয়া হলো এবং বললেন, ঠিক আছে চল। তারপর হযরত মুসা (আঃ)-এর প্রয়োজনীয় মালামাল একটি গাট্টির ভিতর ভরে সফরসঙ্গীকে বললেন, এই লও আমার গাঠুরি নিয়ে এবার চলো। হযরত মুসা নবী (আঃ) ও তাঁর সঙ্গী পথ চলা শুরু করলেন। চলতে চলতে অনেক দূর গেলেন। তারপর হযরত মুসা (আঃ) বললেন, অনেক দূর এসেছি কিছু আহার করে নেই। আমার গাট্টির ভিতরে রুটি আছে বের করো দুজনে মিলে খেয়ে নেই। গাট্টি খোলার পর দেখলেন রুটি হালুয়া কিছুই নেই। এবার আল্লাহর নবী জিজ্ঞাসা করলেন, হালুয়া রুটি কোথায়? সঙ্গী উত্তর করলেন আমি বলতে পারবো না। হযরত মুসা (আঃ) পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি রুটি খেয়েছ? এবারও সঙ্গী বললেন, ‘না। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, তাহলে রুটি কে খেয়েছে? সঙ্গী বললেন, হুজুর আমি বলতে পারবো না। অতঃপর মুসা (আঃ) বললেন চলো আল্লাহই ভালো জানেন। পনরায় আবার পথ চলা শুরু করলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখলেন, পথে একটা স্বর্ণের টুকরো পড়ে আছে, মুসা (আঃ) উঠিয়ে তা হাতে নিলেন। এরপর সঙ্গীকে বললেন, বসো আর স্বর্ণের টুকরোকে তিনটি টুকরো করো। সফর সঙ্গী বললেন, হুজুর আমরা লোক মাত্র দুইজন স্বর্ণটাকে তিন টুকরো কেনো করতেছেন? হযরত মুসা নবী উত্তর দিলেন, মানুষ আমরা তিনজন। সঙ্গী বললেন, ‘না হুজুর, আপনি আর আমি মাত্র দুইজন। এবার হযরত মুসা নবী বললেন, ‘না, তিনজন, সঙ্গী বললেন, কেমনে তিন জন? হযরত মুসা (আঃ) বললেন ১. আমি ২. তুমি আর ৩. যিনি রুটি খেয়েছে, এই মোট তিন জন এবার বুঝতে পেরেছ? উত্তরে সঙ্গী বললেন, হ্যাঁ। মুসাফির বললেন, হুজুর যদি মনে কিছু না করেন আমি একটা সত্য কথা বলবো? হযরত মুসা (আঃ) বললেন, ‘বল। সঙ্গী বললেন, হুজুর রুটিগুলো আমিই খেয়েছি। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, তাহলে তোমার দুইটা আমার একটা মোট তিনটা তোমাকে দিয়ে দেওয়া হলো। এবার তুমি চলে যাও। মুসাফির চলে গেলে বেশকিছু দূর যাওয়ার পর দুইজন পথিকের সঙ্গে দেখা হলো। পথিকরা জানতে চাইলো, এই তোমার ঝুলির ভিতর কী? মুসাফির বললো, কিছু না। তারা বললো, নিকটে আসো দেখি কি আছে তোমার ঝুলির ভিতর? খুলে দেখা গেল তিনটা স্বর্ণের টুকরা। পথিক দুইজন বললো, আচ্ছা বাজার থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসো, আমরা তিনজন খেয়ে আবার পথ চলতে শুরু করবো। তারপর মুসাফির বাধ্য হয়ে বাজারে গেলেন। এবার মুসাফির চিন্তায় পড়ে গেলেন তারা হলো দ্ইুজন আমি একা, তাদের থেকে কি করে রেহাই পাওয়া যায়? এই চিন্তা ভাবনা করে স্থির করলেন যে, আমি আমার খাবার খেয়ে নেই, আর ওদেও খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে নিয়ে যাই। ওরা দুইজন চিন্তা করলো, ওকে যদি মেরে ফেলা যায় তাহলে তিনটি স্বর্ণের টুকরার মালিক আমরা দুইজন হয়ে যাব। এই চিন্তা করে তারা সিদ্ধান্ত করলো মুসাফিরকে হত্যা করবে। বাজার থেকে ফিওে আসার পর তাকে বললেন, এত দেরি হলো কেন? এই কথা বলতে বলতে মুসাফিরকে মারতে মারতে একেবারে মেরেই ফেললেন। এবার পথিক দুইজন বললো, চলো এবার খেয়ে নেই তারপর অন্য কাজ। বিষ মিশ্রিত খাবার খাওয়ার পর তারা দুইজনও সেখানে মরে পড়ে রইলো। এবার হযরত মুসা (আঃ) কে আল্লাহ হুকুম করলেন, হে মুসা, তুমি আবার এই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরে যাও। তখন হযরত মুসা (আঃ) বাড়ি ফিরতে শুরু করলেন। পথের মধ্যে এসে দেখেন তাঁর সেই সঙ্গীসহ আরো দুইজনের লাশ পড়ে আছে। আর ঐ স্বর্ণের টুকরো তিনটিও পড়ে আছে। হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহপাকের নিকট এ ঘটনার সব কথা জানতে চাইলেন। আল্লাহপাক বর্ণনা করে শুনালেন। তারপর আল্লাহপাক হযরত মুসা (আঃ) কে বললেন, ‘হে মুসা, মনে রেখো, দুনিয়ার সম্পদ দুনিয়ায় পড়ে থাকবে, মানুষ কিন্তু থাকবে না, যেমন স্বর্ণের টুকরোগুলো পড়ে আছে, কিন্তু মানুষগুলো মরে জগৎ ছেড়ে চলে গেল। তাই বলা হয় যে, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। এই শিক্ষাই আমার পীর খাজাবাবা কুতুববাগী দিয়ে থাকেন। আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা ও নামাজে হুজুরি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সুশিক্ষায় শিক্ষিত করুন, আমিন।
দয়া করে ঘটনার উৎস জানালে খুশি হবো। ঘটনাটি চমৎকার। ধন্যবাদ।