আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি
শামসুল আরেফিন কিতাবে বর্ণিত আছে, ‘ওয়াযে রাহে কে চুপ ইসমে আল্লাহ জাত কে তাছাবুরে ও কালেমায়ে তৈয়ব কি তারতিব কে মোয়াফেকে আক বন্দ করে মোরাকাবা করতা হে। আউর ইসমে জাত কে তাছাবুর কি তলোয়ার হাত মে লিতা হে। তু আপনি উমর বহর কে সগিরা আউর কবিরা গুনাহু আউর নফছে আউর শায়তান কো কতল কারদি না, আউর তামাম রুহে জামিনকে খান্নাছ কারতুম আউর তামাম খাতারাত কো কতল করদিতা হে। (হাদিস) “আত্তাফাক্বারু শা আতান খাইরুম মিন্ ইবাদাতিছ্ ছাকালাইন্।” এক ঘড়ি কা তাফাক্কার হার দু জাহান কি ইবাদত ছে বড় কারহে চুঁকে আল হজরত (সোয়াদ-লাম-আইন-মিম) হামেশা মোরাকাবা। হুজুর আউর তাফাক্কুর তামাম মে রাহা কারতেথে। ইসলিয়ে ইস আয়াত, “ইন্নাল হাসানাতি ইউজ হিবনাছ্ সাইয়াত।”‘
অর্থাৎ- প্রকাশ থাকে যে, যখন চোখ বন্ধ করে আল্লাহর জাতিনাম এবং কলেমায়ে তৈয়্যেবার যথারীতি মোরাকাবা করে এবং আল্লাহর জাতিনামের তলোয়ার হাতে নেয়, তখন নিজের সমস্ত জীবনের সগিরা ও কবিরা গুনাহসমূহকে, নফছ এবং শয়তানকে বলি দিয়ে থাকে। এমনকি সমস্ত জমিনের খান্নাছ এবং তার চাতুরীকে ধ্বংস করে দেয়। হাদিস শরিফে আছে, “আত্তাফাক্বারু শা আতান খাইরুম মিন্ ইবাদাতিছ্ ছাকালাইন্।” অর্থ : একঘন্টা মোরাকাবা করা দুই জাহানের এবাদতের চেয়েও উত্তম। রাসুল (সাঃ) সবসময় মোরাকাবা ও আল্লাহর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। আল্লাহপাক এই আয়াতে বলেছেন, “ইন্নাল হাসানাতি ইউজ হিব্নাছ ছাইয়াত।” অর্থাৎ-নিশ্চয়ই নেক-আমল বদ-আমলকে ধ্বংস করে দেয়। এই ধ্বংস মানুষের সৃষ্টি দেহ এবং আত্মার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। সুতরাং নেক-আমলের জন্য দেহ এবং আত্মার মাধ্যমে (দুই এক করে) এবাদত করা প্রয়োজন। ইন্না ফি খালকিছ সামা ওয়াতি (আল আখের)
তফছিরে রুহোল মায়ানিতে লেখা আছে :
“আলআবদু মোরাকাবুন মিনান নাফছিল বাতিনা ওয়াল্লাজিনা জ্বাহিরু ওয়াফিল আউয়্যালি ইশারাতু ইলা উবুদিয়া আস-সানি ওয়াফিছ্-ছানি ইশারাতু ইলা উবুদিহিল আউয়্যালি লি আন্না তাফাক্কুরা ইন্নামা ইয়াকুনু বিল ক্বালবি ওয়ার রুহি।”
অর্থাৎ- আত্মা ও ভৌতিক শরীরের মাধ্যমে মানুষ তৈরি। ঐ আয়াতের প্রথম অংশ ‘আল্লাজিনা ইয়াজকুরুনাল্লাহা’ দিয়ে শরীরের এবাদতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং শেষ অংশ ‘ওয়া ইয়াতা ফাক্বারুনা ফি খালকিছ সামাওয়াতি ওয়াল আরদি’ দিয়ে আত্মার এবাদতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেহেতু তাফাক্কোর করা শরীর দিয়ে হয় না, অন্তর দিয়েই হয়ে থাকে, তাই নফল এবাদতের মধ্যে মোরাকাবা উত্তম।
হযরত রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আন আবি হুরাইরাতা ক্বালা ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিকরাতু সা’আতান খাইরুম মিন্ ইবাদাতি সিত্তিনা সানাহ্।”
অর্থাৎ-আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ৬০ বছর নফল এবাদতের চেয়ে এক ঘন্টা মোরাকাবা করা উত্তম। মোরাকাবা উত্তম হওয়ার দুইটি কারণ রয়েছে, যেমন তাফছিরে রুহোল বয়ানে সূরা আল এমরানে আছে : “ইয়া তাফাক্বারুনা ফি খালকিছ সামা ওয়াতি ওয়াল আরদি (আল আখের)” এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখা আছে, “ওয়াফিল ফাছিলি ওয়া জাহানি আহাদু হুমা ইন্নাত তাফাক্বারা ইউ সদাকু ইলাল্লাহি তায়ালা ওয়াল-ইবাদাতু তু সালাকু ইলা সাওয়া বিল্লাহি ওয়াল্লাজি সালাকু ইলাল্লা হি খাইরুম মিম্মা ইউ সালাকু ইলা গাইরিল্লাহি ওয়াস সানি আন তাফাক্বারা আমালুল ক্বালবি ওয়াত্বয়া আতি আমালুল জাওয়ারিহি ওয়াল ক্বালবু আশরাফু মিনাল জাওয়ারিহি ওয়া ফাকানা আমালুল ক্বালবি আশরাফু মিন আমালিল জাওয়ারিহি।” অর্থাৎ-নফল এবাদতের মধ্যে মোরাকাবা শ্রেষ্ঠ হওয়ার দুটি কারণ এই যে, মোরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহ-তায়ালার নৈকট্য লাভ করা যায়। দৈহিক এবাদতের মাধ্যমে শুধু আল্লাহ-তায়ালার অনুগ্রহ লাভ হয়। পক্ষান্তরে ইন্দ্রিয়সমূহ থেকে আত্মা উত্তম। সুতরাং আত্মার কাজ মোরাকাবা করা। মোরাকাবা নফল এবাদতের চেয়ে উত্তম।
হাদিস শরীফে আছে, তফছীরে খোলাছায় ঐ আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখা আছে, “আয়াত ওয়া আহাদিস যাকার আউর যাকের কি মদহি ওয়া সানামে শাহিদে জাহের আউর দলিলে মুসলিম মে মাগার যিকের দাওয়াম বিদুনে ফকর মহকিন হী নেহী আউর ফকর মুনতাহা মে যিকির হে মোজাহার মে বাই হাকিসে মরবিয়ে হে। লা ইবাদাতু কা ইতাফাক্কার, ফকর কারলিয়েকে মিছাল কুই ইবাদত নেহী যিকিরকা আ’জা আউর দিলপর আসর হে, আউর লিকার আহা তোয়া আকায়েদ ও রুহ পর হে। যিকির ছে গাফলত দূর হোতি হে ফকর ছে হাস্তি মিট যাতি হে, ইছলিয়ে হযরত সুফিয়ানে মরাকিয়াত কু যিকির ও মশগুল পর ফাউকিয়াত দিয়াহে, যিকিরছে আল্লাহ ইয়াদ আতাহে ফকরছে আপনি খুদি জু-বানায়ি ফাসাদ হে বহুল যাতাহে।” অর্থাৎ-জিকিরকারীর প্রশংসা কোরআন-হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ঠিক। কিন্তু তাফাক্কোর (১) বা মোরাকাবা ছাড়া জিকিরে দাওয়াম অর্থাৎ দিন-রাত্রি সবসময় আল্লাহ-তায়ালাকে স্মরণ রাখা সম্ভব হয় না। মোরাকাবা হলো জিকিরের শেষ দরজা। ওই তফছীরে খোলাছায়ে মাজহারী থেকে বায়হাকী বর্ণিত হাদিসে লেখা আছে, নফল এবাদতের মধ্যে তাফাক্কোর বা মোরাকাবার মত আর কোন প্রকার এবাদতই নেই। জিকিরের ক্রিয়া শরীর ও দিলের উপর পতিত হয়। মোরাকাবার ক্রিয়া ধর্ম বিশ্বাস ও আত্মাকে মজবুত করে। জিকিরের মাধ্যমে গাফিলতি দূর হয় এবং মোরাকাবা স্বীয় অস্তিত্বকে ভুলিয়ে দেয়।
এই কারণে সুফিগণ মোরাকাবাকে ইন্দ্রিয় গঠিত এবাদতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। জিকিরের মাধ্যমে খোদাকে স্মরণ করা হয় বটে, কিন্তু মোরাকাবা নিজ নশ্বর-সত্ত্বা বা অস্তিত্বকে ভুিলয়ে দেয়। উপরের বর্ণনার মূলে বুঝা যাচ্ছে যে, যত প্রকার নফল এবাদতই হোক না কেন, বিশেষ মনোযোগের সঙ্গে মোরাকাবা সম্পন্ন করলে, তা সর্বপ্রকার নফল এবাদত থেকে অনেক গুণে উত্তম।
টীকাঃ (১) চিন্তা করা অর্থাৎ মোরাকাবা করা।