এইচ মোবারক
যে কোন সাধনাই সরল নয়। সব সাধনার পিছনেই কিছু গোপনীয় তথ্য-সূত্র থাকে, যার সঠিক প্রয়োগের কৌশল কেবল ‘কামেল গুরু’ বা সাধকগণই জেনে থাকেন। মানবজীবনে ইসলাম ধমের্র অন্যতম উপহার হচ্ছে সূফীবাদ। স্রষ্টা বা পরম সত্তার সাথে মিলনই সূফী সাধনার মূল লক্ষ্য। এ সাধনায়রত সাধককে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। সূফীবাদের সাধনার মধ্য দিয়েই নিজ আত্মাকে অন্ধকারাছন্ন পরিবেশ থেকে আলোকিত সড়কের দিকে ধাবিত করা সম্ভব। সূফীবাদের ভাষায় একটা কথা খুবই স্পষ্ট তা হলো, নিজেকে চিনো বা জানো। নিজের মধ্যেই আল্লাহ্তায়া’লা বিরাজমান। আধ্যাত্মিক সাধনার দ্বারা নিজের অন্তর দৃষ্টিকে উন্নত করতে পারলে হৃদয়ের আয়নায় আল্লাহ্র মহিমা প্রতিফলিত হয়। তাই, তরিকার রাস্তায় সাধনাকেই মূখ্য বলে মূল্যায়ন করা শ্রেয়। তাতে স্বাদ এবং সাধনা দুই পূর্ণতা পায়। এ মতবাদের আওতাভূক্ত হওয়া খুবই সহজসাধ্য ব্যাপার, কিন্তু সূফীবাদের প্রচার ও প্রসারের দাওয়াত দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়া একেবারেই সহজ নয়। কারণ এখানে রয়েছে নানা ধরনের প্রতিকূলতা, বিশেষ করে এক শ্রেণির মানুষের একগুয়েমী হিংস্র মনোভাব এবং বর্তমান সমাজে বিরাজমান অসামাজিক ও বিভ্রান্তকর কূ-প্রভাবের বিস্তার। আমাদের সমাজে আধুনিকতার নামে যে সমস্ত কার্যকলাপ সংগঠিত হচ্ছে, তা শিষ্টাচারের অন্তর্ভূক্ত নয়। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের প্রত্যেককেই আধুনিক হতে হবে। তাই বলে এ নয় যে, আধুনিকতার দোহাই দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে। নষ্ট আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে রক্ষা করবে সূফীবাদের শিক্ষা।
বর্তমান বিশ্বে নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও দয়াল নবীর সত্য তরিকার আলো পৌঁছে যাচ্ছে দিক থেকে দিগন্তে। একটি কথা না বললেই যে নয়, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নির্যাস এ বাণী সচরাচর কোন সাধারণ ব্যক্তির দ্বারা প্রচার বা প্রসার ঘটানো সম্ভব না। কেননা এ শিক্ষার মধ্যে রয়েছে আধ্যাত্মিক ধ্যান-জ্ঞান, ক্লান্তিহীন সাধনা, শরিয়ত-তরিকত-হাকিকত ও মারেফতের গভীরে প্রবেশের পথ। মনকে পরিস্কার করা আমাদের প্রত্যেকের জন্যই জরুরী। কুতুববাগ শিক্ষা দেয় মন পরিস্কার না হলে আত্মাকে শুদ্ধ করা যায় না। আর তাই সর্বপরি আত্মাকে পরিস্কার করার স্থান হলো কামেল গুরুর পাঠশালা। এর মূলে একটি শপথ বা বাইয়াতের পথ বা পদ্ধতিকে অবলম্বন করেই নিজকে ওই পাঠশালায় ভর্তি করাতে হয়। কেবলাজান বিভিন্ন তালকীনি সভায় আল্লাহ ও রাসুলপ্রেমী আশেকদের বলে থাকেন, অন্তরাত্মা পবিত্র করতে হলে সর্বপ্রথমে অহংকার দূর করা দরকার’। অন্ধকার মনকে শূন্যতায় ভরে দেয়। এ শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে কোন ইবাদতই সফল হবে না, কেবলাজানের সত্য তরিকায় আমরা এ শিক্ষাই পাই। এ কারণে নিজেকে স্মপূর্ণরূপে সমর্পণ করতে হবে কামেল গুরু বা মুর্শিদের কাছে। আল্লাহর সঙ্গে মিলনের যথার্থ দিককে বলা হয় ফানা কিংবা বিলীন, যার আভিধানিক অর্থ, তিরোধান বা ধ্বংস, এখানে জাগতিক বিষয়ের সকল চাওয়া পাওয়ার অবসান হয়। গুরুর হাতে সোপর্দ করে নিজেকে মৃত মনে করতে হবে। যাকে বলে মরার আগে মরা। তবেই পূর্ণ হবে সাধনার পথ। পূর্ণতা হাসিলের জন্য দেহ-মন সর্বদাই পবিত্র রাখার চেষ্টা করতে হবে, কারণ অন্তরের পবিত্রতার উপর নির্ভর করেই আল্লাহ্ ও রাসুল (সঃ) তথা কামেল গুরুদের সু-দৃষ্টি প্রতিবিম্বিত হবে। সূফীবাদের সাধনার মূল উদ্দেশ্য পরম সত্তার নিকট আত্মসমর্পণ। তাই কামেল পীর-মুর্শিদ বা গুরুর কাছে আত্মসমর্পণ করে, গুরুর দেয়া আদেশ, উপদেশ ও শিক্ষা অনুযায়ী পথ চলতে হবে।