আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘সুতরাং তোমরা যতটুকু সম্ভব ততটুকু আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর।’ আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আল্লাহ কোনো আত্মাকে তার সাধ্যের বাইরে কষ্ট দেন না।’ অনেক সময় দেখা যায় যে, মসজিদে কিংবা বাসাবাড়িতে অনেক নামাজি বা মুসল্লি চেয়ার বা টুলে বসে নামাজ আদায় করেন। তিনি হয় তো বয়সের ভারে অথবা অন্য কোনো শাররীক অসুবিধার জন্য চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করছেন, এ ক্ষেত্রে কিছু বিধানও রয়েছে, এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। আমরা জানি নামাজ ইসলামের মূল স্তম্ভের একটি, এবং নামজের সঙ্গে ব্যক্তির অন্যান্য কর্মকা- বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জড়িত। সুতরাং নামাজ যদি শুদ্ধ হয় তবে অন্য আমলও শুদ্ধ হবে। আর যদি নামাজই শুদ্ধ না হয় তবে অন্যান্য আমলও শুদ্ধ হয় না। তাই রাসুল (সঃ) বলেছেনÑ ‘লা সালাতা ইল্লা বি-হুজুরিল কালব।’ অর্থ্যাৎ হুজুরী দিলে নামাজ আদায় করা হলো প্রথম ও প্রধান শর্ত। নামাজকে যথাযথভাবে আদায় করতে সচেষ্ট থাকার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বর্তমানে প্রায় সকল মসজিদেই একাধিক মুসুল্লিকে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। এমন অনেকে আছেন যে, দাঁড়াতে পারেন, কিন্তু রুকু বা সিজদা করতে পারেন না, অথচ সে না দাঁড়িয়ে বসে বসে নামাজ আদায় করছেন, অথচ সালাতের প্রতি রাকাতে দাঁড়ানো নামাজের রুকন। আমাদের এ জাতীয় আরও কিছু ভুলত্রুটি হয়ে থাকে।
প্রিয় পাঠক, এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করছি। প্রথমত: যে ব্যক্তি অসুখের কারণে কিয়াম, রুকু, কিংবা সিজদা কোনোটিই করতে সক্ষম নয় তার পক্ষে যেভাবে বসে নামাজ আদায় করা সম্ভব হয় সেভাবেই আদায় করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যিনি চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করবেন তিনি সরাসরি ইমামের পিছনে বসা উচিৎ না, নামাজের কাতারের ডান বা বাম দিকের শেষে বসবেন। আরও নিয়ম হলো, চেয়ারটি হবে আকারে ছোট। যাতে পার্শ্বস্থ ও পিছনের অন্যান্য মুসল্লিদের কাতার নষ্ট বা সোজা করতে অসুবিধা না হয়। দ্বিতীয়ত: যে ব্যক্তি দাঁড়ানো ও রুকু করতে সক্ষম, সিজদা করতে সক্ষম নয়। সে ব্যক্তি সাধারণ নামাজ আদায় করবে। তিনি দাঁড়ানো ও রুকু যথা নিয়মেই আদায় করবেন। যখন সিজদা করার সময় হবে তখন তিনি চেয়ারে বসে তার সাধ্যমত সিজদার জন্য মাথা নোয়াবে। অর্থাৎ রুকুর চেয়েও একটু বেশি ঝুঁকে সিজদা করবেন। তৃৃতীয়ত: যে ব্যক্তি দাঁড়াতে পারেন রুকু ও সিজদা করতে সক্ষম নয়। তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে শুরু করবে। সে যথা নিয়মে কিয়াম করার পর যখন রুকু ও সিজদা করার সময় হবে, তখন চেয়ারে বসে তার সাধ্যমত রুকু ও সিজদা আদায় করবেন। অর্থাৎ ঝুঁকে রুকু আদায় করবেন সিজদাতে রুকুর চেয়েও একটু বেশি ঝুঁকবেন। চতুর্থত: যিনি দাঁড়াতে সমর্থ নয়, রুকু ও সিজদা করতে সক্ষম তাহলে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করবেন। মনে রাখতে হবে, নামাজে প্রয়োজনের বাইরে চেয়ার নেওয়া যাবে না। প্রয়োজনকে তার গ-ির ভিতরেই রাখতে হবে। মুসল্লিদের জানা উচিত যে, এগুলো হচ্ছে ফরজ নামাজের বিধান। যদি নফল নামাজ হয় তবে সেটা পুরোটাই বসে পড়ার বিধান রয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছেÑ যে ব্যক্তি বসে নামাজ আদায় করবে, সে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা ব্যক্তির অর্ধেক নামাজ প্রাপ্ত হবে।’ এ হাদিসটি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যার ওজর নেই। পক্ষান্তরে যার ওজর রয়েছে তিনি বসে পড়লেও পূর্ণ সওয়াব প্রাপ্ত হবেন। [সর্ব বিষয়ে আল্লাহই ভালো জানেন] ষষ্ঠত: যিনি নামাজের সকল রুকনই যথাযথভাবে আদায় করতে সক্ষম। তবে তিনি তাশাহুদে বসতে অক্ষম। এমতাবস্থায় তিনি সাধারণভাবেই নামাজ আদায় করতে থাকবেন। অতঃপর যখন তাশাহুদের বসা আসবে তখন চেয়ারে বসে পড়বে। সপ্তমত: প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, তারা মাটিতে বসে নামাজ আদায় করবে। যদি চেয়ারে বসে আদায় করা হয় তবে তাও জায়েজ। চেয়ারের অবস্থান ও এ সংক্রান্ত বিধি- বিধান (১) মুসল্লি যদি কাতারের মাঝখানে হয় তবে চেয়ারের পিছনের পা দু’টিকে কাতারের মধ্যে রাখতে হবে। এমতাবস্থায় নিজের শরীর নিয়ে কাতার থেকে সামনে এগিয়ে বসবে। যাতে করে পিছনের কাতার নষ্ট না হয়। (২) আর যদি চেয়ার কাতারের এক পাশে কিংবা কাতারসমূহের পিছনে থাকে, আর তার পিছনে কোনো কাতার না থাকে, তবে সে চেয়ারের সামনের পা দু’টি কাতারের মধ্যে রাখবে। আর শরীর নিয়ে কাতারে থাকবেন, শরীর নিয়ে কাতারের সামনে এগিয়ে যাবেন না। এছাড়া যারা চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করবেন তাদের উচিত হবে, চেয়ারে বসার আগে সেটা ঠিক আছে কি না যাচাই করে নেওয়া। কারণ, এ সকল চেয়ার অনেক দিন ধরে মসজিদে থাকার দরুণ সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। যদি কেউ নিজের মালিকানায় কোনো চেয়ার খরিদ করে মসজিদে রাখেন, তবে তার অনুমতি ব্যতীত অন্য কারও উচিত হবে না সেটায় হস্তক্ষেপ করা। নামাজের সময় মন-দিল এক করে হুজুরীদিলে নামাজ আদায় করাই প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। সুস্থ-সবল লোকের উচিত এ ধরণের অসুস্থ মুসল্লিদের ব্যাপারে যত্নশীল ও সেবা পরায়ন মনোভাব বজায় রাখা।
মাসিক আত্মার আলো ডেস্ক :