আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশ্বন্দি মোজাদ্দেদি
গীবত সম্পর্কে আল্লাহতা’য়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, অইলুল্লি কুল্লি হুমাযা-তি ল্লুমাযাহ্। (সূরা হুমাযাহ্ আয়াত-১)
অর্থ: ধ্বংস ওই ব্যক্তির জন্য, যে লোক-সম্মুখে বদনামী করে এবং পৃষ্ঠ-পেছনে (অগোচরে) নিন্দা করে।
[তাফসীরে কান্যুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান]
(টীকা ২-৮) এ আয়াতটি ওইসব কাফিরদের প্রসঙ্গে অবর্তীণ হয়েছে, যারা সৈয়দে আলম হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহাম্মদ মোজ্তবা সাল্লাল্লাহুতা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে বেড়াতো এবং হযরতের বিরুদ্ধের ‘গীবত’ করতো। যেমন-আখ্নাস ইবনে শুরায়ক, উমাইয়া ইবনে খালাফ এবং ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা প্রমুখ। আর এ আয়াতের হুকুম প্রত্যেক গীবতকারীর জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। মরতে দেবে না, যা সেই সম্পদের মোহে আত্মহারা এবং সৎকাজের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করছে না। অর্থাৎ জাহান্নামের ওই স্তরে, যেখানে আগুন হাড় ও পাঁজরগুলো চুরমার করে ফেলবে এবং কখনো ঠা-া হবে না। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, জাহান্নামের আগুনকে হাজার বছর পর্যন্ত প্রজ্জ্বলিত রাখা হয়েছে, এ পর্যন্ত যে, তা লাল রং ধারণ করেছে। পুনরায় হাজার বছর পর্যন্ত প্রজ্জ্বলিত রাখা হয়েছে। অবশেষে, তা সাদা হয়ে গেছে। পুনরায় হাজার বছর পর্যন্ত জ্বালানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কালো রং ধারণ করেছে। ওই কালো রং হচ্ছে অন্ধকার। (তিরমিযী শরীফ) শরীরের বহির্ভাগকেও জ্বালাবে এবং শরীরের অভ্যন্তরেও পৌঁছবে। আর অন্তরসমূহকে দগ্ধ করবে। হৃদয় এমন এক বস্তু, যা সামান্যতম তাপও সহ্য করতে পারে না।
সুতরাং যখন জাহান্নামের আগুন তার উপর চড়াও হবে এবং মৃত্যুও আসবে না, তখন কী ভয়ানক অবস্থা হবে! হৃদয়সমূহকে জ্বালানো এ কারণেই হবে যে, তা হচ্ছে কু-ধারণাস্থল- কুফর, ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ এবং কু-উদ্দেশ্যসমূহের।অর্থাৎ আগুনে নিক্ষেপ করে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। দরজাসমূহের বন্ধন অগ্নিময় লোহার স্তম্ভসমূহ দ্বারা মজবুত করে দেয়া হবে, যেন কখনো দরজা না খোলে। কোন কোন তাফসীরকারক এ অর্থও বর্ণনা করেছেন যে, দরজাগুলো বন্ধ করে অগ্নিময় স্তম্ভ দিয়ে তাদের হাত-পাগুলো বেঁধে দেয়া হবে। তাফসীরে মারেফুল কোরআনের মধ্যে সূরা হুমাযাহ্ (৩০পারা), ১ নং আয়াতে আছে, অইলুল্লি কুল্লি হুমাযা-তি ল্লুমাযাহ্। অর্থ: প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ। গীবত অর্থ: পরনিন্দা, কলঙ্ক, আহম্মকি, অত্যন্ত অপরিস্কার কর্ম, বিষ্ঠা ভক্ষণের মতো জঘন্য, কঠোর নিষেধাজ্ঞা অর্থে ব্যবহৃত শব্দ গীবত।
আভিধানিক অর্থে:
* To make spiteful standerous or defematory statement about someone.
* (informal) To attack from behind or when out of earshot.
* To speak badly of an absent individual.
পবিত্র কোরআনের সূরা হুজুরাত এর ১২ নং আয়াতে আরো উল্লেখ আছে, “ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানুজ্ব্ তানিবূ কাছীরম্ মিনাজ জোয়ান্নি ইন্না বা’দ্বোয়াজ্ব্ জোয়ান্নি ইছ্মুঁও অলা-তাজ্বাস্ সাসূ অলা-ইয়াগ্তাব্ বা’দ্বু কুম্ বাদ্বোয়া, আইয়ুহিব্বু আহাদুকুম আইঁ ইয়া’কুলা লাহ্মা আখীহি মাইতান্ ফাকারিহ্ তুমূহ্, অত্তাক্বুল্লা-হ্, ইন্নাল্লা-হা তাওয়্যা-র্বু রহীম্।” অর্থ: “হে মু’মিনরা! বহু ধারণা থেকে দূরে থাক; কেননা, কিছু ধারণা পাপের কারন হয়ে থাকে। আর তোমরা কারো গোপন খোঁজ করো না, একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়া পছন্দ কর? তোমরা অপছন্দই করবে। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।”
সূরা বনী ইস্রাঈল ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “অলা-তাক্ব্ ফু মা-লাইসা লাকা বিহী ‘ইল্ম্; ইন্নাস্ সাম্’আ অল্ বাছোয়ার অল্ ফুওয়া-দা কুল্লু উলা-য়িকা কা-না ‘আনহু মাস্উলা।” অর্থ: “তুমি এমন বিষয়ের অনুসরণ করো না, যে বিষয়ে তোমার জানা নেই। কর্ণ, চক্ষু ও মনসহ প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।” আল্লাহতা’য়ালা সূরা ক্বাফ্- ১৮ নং আয়াতে আরো বলেন, “মা-ইয়াল্ফিজু মিন্ ক্বওলিন্ ইল্লা-লাদাইহি রক্বীবুন্ আতীদ্।” অর্থ: “সে যা কিছু উচ্চারণ করে, তার নিকটতম অপেক্ষামান প্রহরী তা সংরক্ষণ করে থাকে।” গীবত সম্পর্কে হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, আন আবি মুসা (রা:) ক্বালা কুল্তু ইয়া রাসুলাল্লাহ আইয়ু্যঁল মুসলেমীনা আফজালু? ক্বালা মান ছালেমান মুসলেমুনা মিন লেছানিহী ওয়া ইয়াদিহী (মুত্তাফাকুন আলাইহ্) অর্থ: হযরত আবু মুসা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে কে সর্বোত্তম? তিনি বললেন, যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদিস শরীফে আরো উল্লেখ আছে, আল্ গীবাতুআসাদ্দু মিনাজ জিনা। অর্থ: গীবত ও পরনিন্দা জেনার চেয়েও মারাত্মক পাপ। বর্তমান সমাজে দেখা যাচ্ছে যে, এক শ্রেণীর মসজিদের ইমাম, আলেম, হাফেজ-ক্বারী ও উম্মি লোকেরা মসজিদ, হাট-বাজার, দোকান-পাট এবং বিভিন্ন স্থানে বসে দেশ-রাষ্ট্র, অলি-আল্লাহ, হক্কানী পীর-মাশায়েখগণ এবং অন্যান্য মানুষের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও গীবত করতেও দ্বিধাবোধ করে না। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এমন লোকদের পিছনে, সরল প্রাণ মুসলমানদের নামাজের একতাদা করা ঠিক হবে কিনা? পাঠকগণ চিন্তা করে দেখুন। যেহেতু হাদিস শরীফে আসছে, আল্ গীবাতু আশহাদ্দু মিনাল যিনা। অর্থ: গীবত ও পরনিন্দা জেনার চেয়ে অতি গুনাহ্। তাই, এই লোকদের অনুরোধ করি, দয়া করে আপনারা গীবতের মত এই পাপ থেকে নিজেরাও বাঁচেন এবং অন্যদেরকেও বাঁচান। তাই কামেল পীর-মুর্শিদের কাছে গিয়ে আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা এবং নামাজে হুজুরি করার চেষ্টা তদবির করেন। তাতে নিজের, সমাজের সর্বোপরি রাষ্ট্রের মঙ্গল হবে।