কুতুববাগী কেবলাজান মানবসেবা ও সম্প্রীতির কথা বলেন

সেহাঙ্গল বিপ্লব

আমার মহান মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের অশেষ দোয়ার বরকতে আমি  অধম নালায়েক, তাঁর অসামান্য দীক্ষা-দান ও জীবনাদর্শের কিছু কথা, নিজের অনুভূতি দিয়ে লিখতে চেষ্টা করছি।

আল্লাহতায়া’লার সকল সৃষ্টির জন্য সংবিধানস্বরূপ পবিত্র কোরআনের দু’রকম অর্থ, শরিয়ত ও মারেফত। মহানবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহাম্মদ মুজ্‌তবা (সঃ)-ই এর ধারক এবং বাহক। তাঁর প্রবর্তিত সত্য ইসলামের মধ্যে যেমন, পারিবারিক ও পারিপার্শিক পালনীয় শরিয়তের অনুশাসন আছে, তেমনি আল্লাহর বান্দাদেরকে মারেফতের শিক্ষা অর্জনের কথাও বলেছেন। আল্লাহতায়া’লার নিগুঢ় তত্ব-ভেদ ‘মারেফত’ যা অপ্রকাশ্য, এর জ্ঞান কামেল মুর্শিদের দীক্ষা কাছে পাওয়া যায়। কামেল মুর্শিদ অন্বেষণকারীরা  তাঁর সন্ধান পেলে তাঁর কাছে বাইয়াত নিয়ে সত্য সাধুর সদয় বলে সেই জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন। মারেফতের জ্ঞান আমল ছাড়া আল্লাহতায়া’লার প্রিয় বান্দা মমিন হওয়া যাবে না। জগৎবিখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদগণের গবেষণা, তাফসির এবং তাঁদের যুক্তিনির্ভর মতামত সম্বলিত যুগান্তকারী বইপুস্তক আছে, যা পাঠ করলে, আয়নার মত পরিস্কার হয়ে যাবে মনের ময়লা। তখন পীর-মুর্শিদ বা উছিলার ব্যাপার জানতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্বনন্দিত আলেম ও সূফীবাদের প্রচারক মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি (রহ.) ও শেখ সাদি (রহ.)-এর লেখায় ফুটে আছে। মমিন হতে গেলে মারেফতের শিক্ষাও দরকার, মমিন ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয় না।

শরিয়ত ও মারেফত শিক্ষার মাধ্যমে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার নিগুঢ় রহস্যের খোঁজ পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর এবাদতে অনাবিল আনন্দ আসে।  যারা সত্যের কাছে সমর্পিত, তারা মিথ্যার আবরণ যতই লোভনীয় আর চাকচিক্য হোক, সে দিকে তাদের টান থাকে না। গুরুর দেয়া আমল চর্চা সাধনায় নিজেদের অন্তরাত্মাকে পরিস্কারের চেষ্টা করেন। আল্লাহ ও রাসুল (সঃ)-এর হুকুম অনুযায়ি আখেরী নবীজির ওফাতের পর, আহলে বায়েতের সময় শুরু। খোলাফায়ে রাশেদিনগণের হাত ধরে ক্রমান্বয়ে মারেফতের অফুরন্ত গুপ্ত ভান্ডার, এ   জামানায় মোজাদ্দেদিয়া তরিকায় বিদ্যমান। এ তরিকার একমাত্র খেলাফতপ্রাপ্ত পীর-মুর্শিদ, আমার সত্যগুরু খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান। যাঁর কিরণে পৃথিবী আলোকময়, তবু ওরে অন্ধ মানুষ চিনতে লাগে ভয়!
কুতুববাগ দরবার শরীফ মানুষের অন্তরাত্মাকে শুদ্ধ করার এমনই এক মহৎ শিক্ষালয়, যে শিক্ষালয়ের শিক্ষক-গুরু কুতুববাগী কেবলাজান, সমাজ থেকে  অরাজকতা ও কলুষতার পথ পরিহার করে, মানুষকে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে আহ্বান জানান এবং মানবসেবার কথা বলেন। এ সত্য চর্চার ভিতরে থেকে, জাগতিক সংসারধর্ম পালন করেও, কীভাবে খাঁটি মানুষ হওয়া যায়, সেই বাস্তবমুখি শিক্ষাদেন। শুধু সংযম শিক্ষার অভাবেই দিনের পর দিন পৃথিবী ধ্বংস আর অবক্ষয়ের পথে অগ্রসর হচ্ছে। সঠিক জ্ঞান ও যুক্তির অভাবে দেশে-বিদেশ এক শ্রেণীর ওয়াজকারী,  মৌলভিসাহেব আছেন, ‘যারা চৈত্র মাসের ওয়াজ মাঘ মাসে করে থাকেন! তরিকত, হাকিকত ও মারেফত আসলে কি? তা না বুঝে শুধু শরিয়তের ড্যারা পিটিয়ে আল্লাহ-নবীর আশেক পাগল ধর্মভীরু মানুষদের, সত্য তারকার দিশা থেকে দূরে থাকার কুমন্ত্রণা দিচ্ছে, শুধু জাগতিক স্বার্থ হাসিলের কুটকৌশলে। আবার সে সব “ভাড়ায় চালিত” ওয়াজিন মৌলভীদের মুখে আরবী ভাষার কোরআন, বাংলায় এর ভূল তাফসির শুনে সাধারণ ধর্মভীরু মানুষ, এদের মহাবিজ্ঞ, সবজান্তা ভেবে, তরিকতের বিরোধিতা করছে। বুদ্ধি-জ্ঞান তাদেরও আছে, কিন্তু সে জ্ঞান একমুখি, যা দিয়ে অপরের আত্মার মুক্তির পথ দেখানো দূরে থাক, নিজের আত্মারই খোঁজ পাবে না। এ কথা ঠিক যে, সবার সব বিষয়ে বুঝ থাকতে হবে তাও নয়, তবে অজ্ঞানবশত তারা জানেন না, সারাজীবন চেষ্টা করলেও মহান সৃষ্টিকর্তার রহস্য ‘বাতেনী গুপ্তধন‘ সূফীবাদের প্রজ্জ্বলিত শিখা কখনোই ম্লান করতে পারবে না। বরং তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে, যা কারো জন্যই কারো কাম্য হতে পারে না।

আমার দরদি মুর্শিদ-গুরু খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের কাছে মুরিদ বা ছাত্র হিসেবে ভর্তি হবার পর, আমার যা প্রাপ্তি, তা লিখে বা ছবি তুলে দেখাতে পারবো না। সে প্রাপ্তি বস্তুগত কোন কিছু না। এ প্রাপ্তি শুধু অনুভবে, যা অনুভূতির ইন্দ্রজালে অতি সাবধানে লালন করতে হয়। কুতুববাগী কেবলাজানের অন্যতম শিক্ষা ‘মানবসেবাই পরম ধর্ম’। কিংবা ‘অন্যের দোষ দেখার আগে, নিজের দোষ তালাশ করুন’। কেননা আমি নিজেই তো অনেক দোষী, তারমধ্যে অন্যের দোষ খুঁজে নিজের বিপদ ডেকে লাভ নেই। যার যতটুকু মানবতা প্রকৃত পক্ষে, তার মানসিক মুক্তিও ততটুকু প্রকাশ পায়। আমি নালায়েক অনুপযুক্ত এক পাত্র নিয়ে এসেছি মুর্শিদের দরবারে, এখন সেই পাত্রে সঞ্চয় যা অনুভব করি তা এমন,

যাঁর কিরণে পৃথিবী আলোকময়
তবু ওরে অন্ধ মানুষ, চিনতে লাগে ভয়!
বন্ধ ঘরের মনের তালা,
না খুললে যে বাড়বে জ্বালা
তোমার সেই চিন্তা কি হয়?
মুর্শিদের মাঝে আল্লাহ-নবী ভিন্ন কিছু নয় ॥

আমরা নানা সময়ে বিভিন্ন সাধক-কবি, বাউল শিল্পীদের গাওয়া ভক্তিমূলক শুনতে পাই যেমন, অলি-আল্লাহর বাংলাদেশ, পীর-ফকিরের বাংলাদেশ, রহম করো আল্লাহ! রহম করো আল্লাহ!’ ইত্যাদি। আবার দেখা যায় পীর-মুর্শিদের দরবারে, মাজারে মান্নত করলে বালা-মসিবত কেটে যায়। তখন আবার ওই মৌলভীসাহেবরা বলেন, বালা-মসিবত দূর হয়, আল্লাহর হুকুমে। মানি সে কথা। কিন্তু আল্লাহতায়া’লা নিজেই যেখানে বলছেন, ‘আমি আল্লাহ, বিনা উছিলায় কিছুই করি না’। সেখানে ভ্রান্তিযুক্ত মানুষের কথায় মহান আল্লাহর নিয়ম আইন থেমে থাকবে না। হাজার বছর ধরে বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের আকাশে সত্য ইসলামের শান্তিময় আলোক-নিশান ‘আল্লাহু আকবর’ উড়ছে সূফীবাদের শুভ বার্তা নিয়ে। এখন তাদের কাছে জানতে চাই যে, এ উপমহাদেশে ইসলামের মহান বাণী-বার্তা কারা এনেছেন? সবাই স্বীকার করবেন, আল্লাহর বন্ধু-আউলিয়াদের দ্বারাই দক্ষিণ এশিয়া তথা সারা পৃথিবীতে মহান আল্লাহ-রাসুল (সঃ)-এর ইসলামের প্রবেশ ও প্রচার হয়েছে। সমাজ ও মানুষের অন্তর থেকে শিরেক-ভ্রান্ত উপাসনা ছেড়ে, এক আল্লাহর এবাদতের অমিয়  সুধা পান করিয়েছেন। অথচ আমরা জন্মসুত্রে মুসলামন হয়ে, অহমিকায় যেন মাটিতে পা পড়ে না, মাথায় অলসতার গাট্টি নিয়ে ছুটছে স্বপ্নে পাওয়া ইসলামের পেছনে। অথচ আমার মুর্শিদ কেবলাজান বলেন কোরআন-হাদিসের সত্য বাণী যে,   ইসলাম এসেছে ধ্যান-মোরাকাবার মাধ্যমে। স্বপ্নে নয়।

গাছের শিকড় বা গোড়াকে অস্বীকার করে মগডালে কেউ যেতে পারে? এক কথায় পারে না। আজ আমরা ইসলামের মূল শিক্ষা ‘সূফীবাদ’ থেকে দূরে আছি বলেই, পৃথিবীতে দেখা দিচ্ছে  কঠিন রোগ, বড়রকম বিপর্যয় আর হিংসা-বিবাদ লেগেই আছে। দিকে দিকে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় চলছে, শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চায় না।  রঙ্গ-রসের জৌলুসে বুদ্ হয়ে নিত্য প্রয়োজনের ফাপড়ে ভুলে যাচ্ছে আপন-পর! এখনই রোধ করা প্রয়োজন। নইলে যেমন অকালে মানুষ মরে, তেমনি হঠাৎ একদিন পৃথিবীও অকালে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গৌরব, অর্থ-সম্পদের বাহাদুরির কারণে, অন্তরের কোমল ঘরে মিথ্যা দাম্ভিকতার শক্ত দেয়াল উঠে যায়। সে দেয়াল না ভেঙে কবরে গেলে আমাদের খবর আছে! এখন প্রশ্ন জাগছে, দেয়াল ভাঙবো কেমন করে? এ দেয়াল ইট-পাথরের না, ভাঙতে হলে মুর্শিদের সাহায্য লাগবেই। কামেল মুর্শিদ আল্লাহ নামের জিকির ‘আল্লাহু’ নামক রহমতের একটা হাতুরি দিবেন, যে হাতুরি পেটানোর স্থান, কাল্বের ছবক দিয়ে চিহ্ন করে দিবেন।

সূফীবাদ চর্চার অভাবে রোবটের যুগে মানুষও  যেন, রোবটের মতো আচরণ করছে! যার প্রতিফলন সমাজ থেকে ধীরে ধীরে আদব, শ্রদ্ধা-স্নেহ-মায়া, মহব্বত, বিশ্বাস-ভক্তি হারিয়ে যেতে বসেছে। হায় আল্লাহ! এভাবে চলতে থাকলে আপনার তরফ থেকে, না জানি অচিরেই নামতে পারে অসহ্যকর আযাব ও গজব। হে পরওয়ারদিগার! আপনার বন্ধু কামেল পীর-মুর্শিদদের প্রতি, বিশ্বাস আনতে আমাদের সাহায্য করুন। যেন পৃথিবী হয়ে ওঠে সকল প্রাণির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল আর পরকালে আমাদের মুক্তির পথ চিরস্থায়ী হয়। আমিন।

কুতুববাগী কেবলাজানের ভক্ত-আশেক যারা দয়াল নবীজি (সঃ)-এর সত্য তরিকার অমূল্য বাণী প্রচার করছি, আমরা প্রায়ই একটা কমন প্রশ্নের মুখোমুখি হই, কুতুববাগের পীরসাহেব কি রাজনীতি করেন? বিনয়ের সাথে বলি- না, তিনি কোনরকম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। জামানার মোজাদ্দেদ হিসেবে যাঁরা আল্লাহর মনোনীত হন, তাঁরা জাগতিক পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে কোন মতবেধ রাখেন না। তাঁরা শুধু এক আল্লাহ ও রাসুল (সঃ)-এর সত্যাদর্শের একান্ত অনুসারি। এখন যদি প্রশ্ন করেন, নিরপক্ষ বলে কিছু আছে? মানুষ তো কোন না কোন পক্ষ নিয়ে বাঁচে। তিনি নিরপেক্ষ হন কীভাবে? এমন প্রশ্ন যদি এই ক্ষুদ্র প্রচারকের কাছে কেউ রাখেন, বিনয়ের সঙ্গে তাদের বলতে চাই, ছোটবেলায় আদর্শলীপি বইয়ে পড়েছি, এক-এ চন্দ্র, দুই-এ পক্ষ, তিন-এ নেত্র, চার-এ বেদ, পঞ্চ বান ইত্যাদি। এই যে ‘দুই-এ পক্ষ’ একথা বাস্তবে যেমন সত্য, তেমনই হাকিকতেও পক্ষ দুটি। এর একটি দ্বীন অপরটি দুনিয়া। অতএব, খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান অবশ্যই দ্বীনের পক্ষে এবং আমরা তাঁর সেই আলোকিত সত্য তরিকার অনুসারী যাত্রী।

মানবসেবার জন্য কুতুববাগ দরবার শরীফে চব্বিশ ঘন্টা মোজাদ্দেদিয়া লঙ্গরখানা চালু আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। ঐতিহাসিকভাবে আমরা জানি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম শায়খ আহাম্মদ শেরহিন্দি, কাইউমে জামানি রাফিয়েল মাকানি হযরত মোজাদ্দেদ আল ফেসানী আল ফারুকী (রহ.)-এর দরবার শরীফের লঙ্গরখানায়, ঐ সময়ে প্রতিদিন চৌদ্দ মন লবন লাগত। প্রিয় পাঠক-ভাই-বন্ধুগণ, একবার চিন্তা করে দেখুন তো, কি পরিমাণ মানুষ দৈনিক তাবারক খেত? মহান স্রষ্টার অপার মহিমায় কুতুববাগ দরবার শরীফের মোজাদ্দেদিয়া লঙ্গরে সেই ধারাবাহিকতা বিরাজমান। দিনের যেকোন সময় আর রাত্রি যতো গভীরই হোক, কোন সাক্ষাৎ প্রার্থী বা আগন্তুক মিসকিন এলে, লঙ্গরের জাকের-কর্মী ভাইজানেরা সব সময় হাসিমুখে তাবারক বিতরণ করতে পারলেই খুশি, এটাই খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের শিক্ষা। বলুন তো, শুধু ঢাকা শহরেই না, বাংলাদেশের কোথাও এমন নজির আছে কি? যে দরবারের লঙ্গরে বিনামূল্যে চব্বিশ ঘন্টা তাবারক বিতরণ হয়? আমাদের মুর্শিদ কেবলাজানের নূরাণী জবানে প্রায় সময় বলতে শুনি- বাবারা, মোজাদ্দেদিয়া লঙ্গরখানার এই তাবারক যদি সারাদেশের মানুষও এসে খায়, তবু এ ভান্ডারে টান পড়বে না। সত্যিই তাই, যারা কয়েক বছর ধরে কেবলাজানের অনুগত আছি, তারা এ কথার সত্যতা উপলদ্ধি করেছি। এবারের মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকের ইজতেমায়, দু’দিনব্যাপী নারী-পুরুষ মিলে অগনিত মানুষ তাবারক খেয়েছেন। সাতান্নটি চুলায় বিরামহীন রান্না হয়েছে, কয়েক শত গরু, মহিষ কোরবানী হয়েছে। ওরছ শরীফ শেষে, পরদিন রাতে  কেবলাজানের সঙ্গে আনোয়ারা উদ্যানে ‘ওরছ শরীফ চলাকালীন অস্থায়ী মালখানায়’ গিয়ে দেখি- একি! ওরছ শরীফ শুরুর দিন যে পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুদ ছিল, এত মানুষ দু’দিনব্যাপী খাওয়ার পর এখনো ঠিক তেমনই আছে। সোবহানআল্লাহ! আমরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে, হঠাৎ কেবলাজান বললেন, কিরে বাবা, মাল-সামান সবইতো রয়ে গেল, কিছুই তো খেতে পারলো না! আবার বললেন, এই ওরছ শরীফে তামাম দুনিয়ার মানুষও যদি খায়, তবুও টান পড়বে না। কারণ, এটা মোজাদ্দেদের ভান্ডার, এ ভান্ডারে কেউ কোনদিন টান ফেলতে পারে নাই, পারবেও না। এ লঙ্গরের এক লোকমা তাবারক জটিল-কঠিন রোগের শেফা-ঔষধ হিসেবে কাজ করবে। এ তাবারক যারা খায় মহান আল্লাহতায়ালা তাদের রোগ মুক্ত করে দেন। তাই, এ লঙ্গরখানায় যারা খায়, যারা খাওয়ায় উভয়েই জান্নাতী। খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের এই যে অবিস্মরণীয় কেরামত, তা শুধু যারা বিশ্বাসী তাদের কাছে অতি নিয়ামতপূর্ণ। অবিশ্বাসীদের কাছে হাস্যরসের খোরাক হতে পারে। তাই এখানে একটি কথা বলতে চাই, একজন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগির সামনে যত মজাদার খাবারই দেয়া হোক, সে বিরক্ত হবে। কারণ সে খেতে পারছে না এ জন্য নয়, মুখে রুচি নেই এবং এ খাবার তার হজম হবে না। অতএব, ডায়রিয়া রোগ শুধু মানুষের পেটেই হয় না, কিছু কিছু মানুষের মনেও হয়ে থাকে! আবার কেউ কেউ জিলাপির প্যাচ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব পীরসাহেবইতো রাজনীতি করেন, আপনাদের পীরসাহেব কেন রাজনীতি করেন না? তাদের জন্য বলি, দুনিয়ার চিন্তায় বিভোর হয়ে কারো পক্ষে গেলে সেখানে বিপক্ষও এসে যায়। তখন আর নিরপক্ষ থাকা যায় না। যেমন আমরা জানি একটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অবিভাবক হলেন সরকার এবং সরকারের দায়িত্ব সুশাসনের মাধ্যমে জনগণকে সমান দৃষ্টিতে পরিচালিত করা। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের যা করুণ অবস্থা, এর মধ্যে বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোন রাষ্ট্র প্রধানের পক্ষে তা কি সম্ভব? হয় তো সম্ভব না। কারণ, যিনিই রাষ্ট্র প্রধান হোন না কেন, তিনি কোন না কোন দলের নেতা। অতএব, তিনি কমবেশি দলীয়করণ করবেন, তা গোপন করার কিছু নেই। কিন্তু একজন কামেল পীর-মুর্শিদ কখনোই দুনিয়াবি চিন্তা করেন না, তিনি শুধু এক আল্লাহতায়া’লা এবং রাসুল (সঃ)-এর একমাত্র আলোকিত দ্বীন, সেই দ্বীনের পথে অগ্রপথিক। এভাবে যুগে যুগে যাঁরা মহান আল্লাহতায়া’লার বাণী বহন করে এসেছেন, তাঁরা দুনিয়াতে রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষের দূর্বিসহ আগুনের হাত থেকে দূরে থাকেন। খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান হুজুরও এর বিপরীত নন। তিনি মানুষের অতি মূল্যবান বস্তু আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরি (একাগ্রতা) অর্জনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ থেকে অসাধারণ মানুষ হতে শিখান। যে মানুষের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধিত হয়।

বর্তমান পৃথিবীতে নানা ধর্মের, নানা বর্ণের এবং নানান ভাষাভাষি প্রায় সাড়ে ছয়’শ কোটি মানুষ। কিন্তু যে যে-ই ভাষাতে কথা বলি না কেন, সব ভাষাই আল্লাহথায়া’লা নির্ভুল জানেন। আবার যার মুখে ভাষা নেই ‘বোবা’ তার অন্তরের না বলা ভাষাও বুঝতে পারেন। এখন কথা হলো আল্লাহতায়া’লা আমাদেরকে পবিত্র কোরআনের আদেশ-নিষেধ মেনে একাগ্রতার পথে চলতে বলেছেন। যে পথের দিশারী করে রহমতের ভান্ডার দিয়ে পাঠিয়েছেন দয়াল নবীজিকে। সেই দয়াল নবীজি রাসুল (সঃ) আরাফাতের ময়দানে শেষ ভাষণে সম্মানীত সাহাবাগণের প্রশ্নত্তরে বলেছেন, পবিত্র কোরআনের বাণী এবং তাঁর আহলে বায়েতকে আকড়ে ধরতে। যারা এ দুটিকে মেনে চলবে তারাই হবে জান্নাতি, (বোখারী শরীফের হাদিস)। সম্মানীত পাঠক ভাই-বন্ধুগণ, এখন নিজ নিজ অন্তরের খবরাখবর নিজেদেরই বোঝা উচিৎ যে, আমাদের বিশ্বাস এবং আমল দ্বারা কে কতটা কাঙ্খিত জান্নাতের উপযুক্ত হয়েছি? এমন প্রশ্নে সিংহভাগ মানুষই বলবেন, তারা আল্লাহর এবাদত করেন এবং পবিত্র কোরআনের আদেশ-নিষেধ অনুযায়ি জীবন-যাপন করেন। অথচ তারা পবিত্র কোরআনের মর্মমূলে সর্বময় ভেদের জ্ঞানী রাসুল (সঃ)-এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলছে না। এর প্রধান প্রমাণ রাসুল (সঃ)-এর একান্ত অনুসারি কিংবা উত্তরসুরি আহলে বায়েতকে তারা মানতে চায় না। আমার কাছে কোন যুক্তিতেই মেলে না যে, নদীতে ধরণী ছাড়া একটি বিশাল সাঁকো, মাথায় বোঝাবাহী একজন মানুষ কীভাবে পাড় হবে? এক সময় সে বোঝার ভারে হেলে দুলে হঠাৎ নদীতে পড়বেই। অর্থাৎ, পবিত্র কোরআন যদি হয় পথ বা সাঁকো, তবে রাসুল (সঃ)-এর আহলে বায়েত হলো ওই পথের দিশারী কিংবা সাঁকোর ধরণী। যাঁদের উছিলা নিয়ে পাপের বোঝা হাল্কা করে, নিমিষেই পুলসিরাত পাড় হওয়ার একমাত্র উপায়। এ যুক্তির দ্বারা বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রেই বুঝবেন যে, রাসুল (সঃ)-এর পবিত্র হাদিস অনুসারে কোরআন এবং আহলে বায়েত, এ দুটো সমান ও শক্তভাবে পরম বিশ্বাসে আকড়ে ধরতে না পারলে, জান্নাতে প্রবেশ দূরে থাক, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।

এই জরাগ্রস্থ দুনিয়ার পক্ষ নিয়ে যারা বেঁচে থাকতে ভালোবাসে এবং নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ভাবেন তাদের কাছে, এ কথার মর্ম কতটুকু তা আমার জানা নেই। তবে এ কথা চরম সত্য যে, সূফীবাদের আলোকে যদি জীবনকে পরিচালিত করা যায়, তাহলে সমাজ থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, নৈরাজ্য এবং ঘাত-প্রতিঘাতের লেলিহান শিখা চিরতরে নিভে যাবে। তখন পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ-তথা রাষ্ট্রের প্রতি সবার আন্তরিক মনোভাবের উদয় হবে এবং সবাই মিলে অনাবিল এক সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।

(Visited 395 times, 1 visits today)
Share