আবদুর করিম
একদিন শুনলাম আমার ফুপাতো বোনের বাসায় তাঁর পীর-মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুরের শুভাগমন উপলক্ষে মিলাদ-মাহফিল হবে, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আমি সে বাসায় গেলাম। ক্বেবলাজান হুজুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাইয়াত গ্রহণ করলাম। বাইয়াত গ্রহণের পর ক্বেবলাজান হুজুর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি বাবা কি করেন? শাদী করেছেন? ছেলে মেয়ে ক’জন? আমি তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিলে পরে বললেন, দরবারে আসবেন।
এর কিছুদিন পর আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু একখানা দাওয়াতপত্র হাতে দিয়ে বললেন, এই দাওয়াত নামা পড় এবং আমাদের দরবার শরীফে এসো। আমি তখনো বুঝে উঠতে পারিনি যে, খাজাবাবা কুতুববাগীর পবিত্র হাতে বাইয়াত এবং এই দরবারই হবে আমার মূল ঠিকানা। আমি দাওয়াতনামা হাতে নেওয়ার পর প্রথমেই যে লেখাটা আমাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল, ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহ্মানু, ইয়া রাহীম, ইয়া রাহ্মাতাল্লিল আলামীন। এটুকু পড়ার পর মনের ভিতর কেমন যেন, ঢেউ খেলে উঠলো! আর মনে হল, এ-ই সেই মোজাদ্দেদের দরবার যাঁর সন্ধান আমি করছিলাম।
পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর প্রচ- বৃষ্টি, ভিজতে ভিজতে দরবার শরীফে গেলাম। রাস্তা থেকেই শুনতে পেলাম দরবারের তৃতীয় তলায়, সাপ্তাহিক গুরুরাত্রিতে বিশিষ্ট আলেমদের তালকিন বয়ান চলছিল। বয়ানের এক পর্যায়ে মাওলানা সাহেব বলে উঠলেন, ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহ্মানু, ইয়া রাহ্মি, ইয়া রাহ্মাতাল্লিল আলামিন। আমার মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেল, সেই ছোট বেলায় এই মধুর নাম শুনে, আমার অন্তরে যে আলোড়ণ জাগতো, বহুদিন পর সেই রকম অনুভূতিই টের পেলাম। আমার জন্মদাতা বাবা ছিলেন তরিকত পন্থি, তাঁর মুখে শুনেছি এই পবিত্র নাম, আবার শুনলাম কুতুববাগ দরবার শরীফে এসে।
একটু পরেই খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর এসে তাঁর পবিত্র আসনে বসার পর উপস্থিত মজলিশে এক ভিন্ন রকম পরিবেশের সৃষ্টি হল, যা এর আগে কোনো সভা-সেমিনার, ওয়াজ-মিলাদ-মাহফিলে পাইনি। আমার বুঝতে বাকি রইল না ক্বেবলাজানের এত্তেহাদী তাওয়াজ্জুহর গুণে এই পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর আলোচনা উপদেশ বাণী শুনে এও বুঝতে পারলাম যে, কুতুববাগ দরবার শরীফের পীর ক্বেবলাজান মহান আল্লাহর মনোনীত এক খাঁটি অলি। তিনি কামেল-মোকাম্মেল মহাপুরুষ, তিনিই মুর্শিদ সত্য পথের আলোকবর্তীকা। আগেই বলেছি যে, এমন একজন মুর্শিদের চরণধূলির আশায় ছিলাম। আজ তাঁর দেখা পেয়ে, মূল্যাবান নসিহত শুনে জীবন ধন্য হল। এরপর হঠাৎ একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার হাত-পা, মুখম-লসহ সমস্ত শরীর ফুলে উঠেছে। আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, ডাক্তার বিভিন্ন রকম টেস্ট করাতে বললেন। পরদিন রির্পোট নিয়ে ডাক্তারকে দেখানোর পর বললেন, আপনার দুটি কিডনী ইনফেকশন হয়েছে। মন খারাপ করে বাসায় চলে এলাম। তার পরের দিন আমার স্ত্রীসহ রির্পোটগুলো নিয়ে দরবার শরীফে গেলাম। বাবাজানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সবকিছু বললাম। বাবাজান আমাকে বললেন, বাবা, আপনি যান আমি মালিকের কাছে চাইবো যেন তিনি আপনাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন। এর সাতদিন পর আমি আবার বাবাজানের কাছে গেলাম এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। বাবাজান বললেন, মালিক দয়া করবেন।
আমি বাবাজানের সামনে যতক্ষণ ছিলাম অনবরত চোখের পানিতে যেন মসিবত ভেসে যাচ্ছিলো এবং আমি অনুভব করতে পারছিলাম, শরীরের ফুলা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করলো। পরদিন আবারোও ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললাম, ডাক্তার আমাকে আরো টেস্ট দিন। ডাক্তার আমাকে আগের দিন যে টেস্টগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলোসহ বাড়তি আরো তিনটি টেস্ট দিয়ে বললেন, আগামীকাল রির্পোট নিয়ে আসবেন। অত:পর আমি পপুলার হাসপাতালে আমেরিকান এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলাম, তখন তিনি বললেন, আপনাকে কেনো এই টেস্ট দিয়েছে? এই টেস্টের যে রোগ সেরকম কোন লক্ষণই তো আপনার শরীরে দেখতে পাচ্ছি না, দেখি তো আগের রির্পোট। তিনি সবগুলো রিপোর্ট দেখে বললেন, আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ অযথা ভয় পাবেন না।
মাত্র আট দিনের মধ্যে এ রকম বড় ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেলাম। আমার বুঝতে আর বাকি থাকলো না যে, আমার মুর্শিদের উসিলায় আমি এমন কঠিন রোগ থেকে মুক্তিলাভ করেছি। এই হলো আমার খাজাবাবা কুতুববাগী ক্ববলাজান হুজুরের কেরামতি। আজও আমি বাবাজানের দোয়ায় সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন-যাপন করছি।
হে আল্লাহ, তুমি আমার পরিবার এবং আমাকে মরাদম পর্যন্ত খাজাবাবা কুতুববাগীর হুকুম আহকাম মেনে চলার তৌফিক দিও। আমিন।