কুতুববাগ দরবার শরীফ শুদ্ধ মানুষ গড়ার শিক্ষালয়

শরিফুল আলম

কুতুববাগ দরবার শরীফের মুখপত্র মাসিক আত্মার আলো’তে আবারো লেখার সুযোগ পেয়ে আমার দরদী মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিখ্যাত একজন মণীষীর উক্তি, মানুষের জীবনে তিনটি কর্তব্য পালনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া যায়। তা হলো উঁঃু ঃড় ধিৎফং এড়ফ, ফঁঃু ঃড় ধিৎফং ঢ়ধৎবহঃং ধহফ ফঁঃু ঃড় ধিৎফং সধহশরহফ. অর্থাৎ, স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য পালন, মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য পালন এবং মানুুষের প্রতি কর্তব্য পালন। আমি নগন্য উক্তিটির কিছু ব্যাখ্যা আমার মত করে উপস্থাপন করছি।
স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য : আমার দরদী মুর্শিদ জামানার গাউসুল আজম যুগের শ্রেষ্ঠ হাদী সৈয়দ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুরের পবিত্র সান্নিধ্যে যখন নিয়মিত আসা-যাওয়া শুরু করলাম এবং তরিকতের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে মহান আল্লাহকে চেনা-জানার এক সহজ রাস্তা পেয়ে গেলাম। দরদী মুর্শিদের পবিত্র জবানে শুনলাম “অ কূ-নূ মা আছ্ সোয়াদেক্বীন” (সূরা-তওবা, আয়াত ১১৯) অর্থাৎ, তোমরা সাদিক (সত্যবাদী) লোকের সঙ্গি হও। ইসলামী দার্শনিক ও মণীষীগণ সত্যবাদী বলতে কামেল পীর-মুর্শিদকেই বুঝিয়ে থাকেন। এ কথা চিরন্তন সত্য যে, মহান আল্লাহর ইবাদত বা কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হলে, ইনসানে কামেল মোকাম্মেল পীর-মুর্শিদের কাছে দীক্ষা নিতেই হবে। খাজাবাবা সৈয়দ কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর তেমনই একজন সুফিবাদী ইলমে তাসাউফের দীক্ষা-গুরু। তাঁর শিক্ষালয়ে আসা-যাওয়া এবং যতোটা সম্ভব তাঁকে অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করলেই অনেক অজানাকে জানা যায়। অচেনাকে চেনা যায়। কারণ তাঁকে এক নজর দেখলেই মনে হবে, আরো আগে কেনো দেখিনি! তাঁর জীবনাচারের মধ্যে পূর্ণ শরিয়ত, পূর্ণ তরিকত, পূর্ণ হাকিকত ও পূর্ণ মারেফতের জ্ঞানের যে মহা সমুদ্র আছে, তিনি সেই মহা জ্ঞানের ভা-ার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কত সহজ-সরলভাবে বাস করছেন। দরদী মুর্শিদের কাছে জানতে পারি কিছু সময় ধ্যান বা মোরাকাবা (গবফরঃধঃরড়হ) করার মাধ্যমে ষাট বছরের বে-রীয়া ইবাদত করার ফজিলত অর্জিত হয়।
পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য : প্রতি বৃহস্পতিবার (সাপ্তাহিক গুরুরাত্রি) মাগরিব থেকে আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, ইবাদতে হুজুরি অর্জনের শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার মাদ্রাসা। কুতুববাগ দরবার শরীফে বর্তমান জামানার হাদী ও মোজাদ্দেদ সৈয়দ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর সব সময় পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অতুলনীয় নসিহত বাণী পেশ করে থাকেন। কুতুববাগী ক্বেবলাজান বলেন, বাবারা আপনারা জন্মদাতা পিতা-মাতাকে অতি যতœ করবেন, তাঁদের মনে যেন বিন্দু
৩-এর পাতায় দেখুন

শেষ পৃষ্ঠার পর
পরিমান কষ্ট না দেন, সে দিকে সু-দৃষ্টি রাখবেন, মা হলো মক্কা শরীফ, মা হলো মদিনা শরীফ, যে তার পিতা-মাতার কদমে চুম্বন দিল সে যেন বেহেশতের চৌকাঠে চুম্বন দিল।
হায় আপসোস আজ যদি আমার পিতা-মাতা জীবিত থাকতো, তাঁদের কদমে চুম্বন দিয়ে বেহেশতের চৌকাঠে চুম্বন দেওয়ার স্বাদ গ্রহণ করতে পারতাম! যদিও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি, তাই আমার দরদী মুর্শিদের শিক্ষা অনুযায়ী প্রতিদিন পবিত্র কালাম ফাতেহা শরীফ পাঠ করে, আমার মরহুম পিতা-মাতার আত্মার প্রতি বকশিশ করি, যার মাধ্যমে তাঁরা কবরে শান্তি পেয়ে থাকেন। তাঁদের জন্য অন্তত এটুকু করতে পারছি বলে নিজেকে একজন ভাগ্যবান সু-সন্তান হিসেবে আত্মতৃপ্তি অনুভব করি। এই অনুভব ধার দিয়ে কিংবা বলে-কয়ে বুঝানো মুশকিল। যা শুধু প্রবল অনুভূতি দিয়েই তার পবিত্রতা অনুভব করা যায়। আহা! কতই না সুন্দর এই সু-শিক্ষা। আমরা কতজন মানুষ আছি যারা প্রতিদিন নিয়মিত পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিচিতজনদের মধ্যে যারা বেঁচে নেই তাদের রুহের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনায় চোখের পানি ফেলি? নিশ্চিত করে আমরা ক’জন মানুষ বলতে পারবো? এই কথা যে, হ্যা, আমি নিয়মিত এই কাজটি করি! কারণ, ক্বেবলাজানের কাছে জেনেছি মৃত ব্যক্তিরা তাকিয়ে থাকে জীবিতদের দিকে, এই বুঝি আমার আত্মার প্রতি আমার সন্তান ভাই বন্ধু পরিজন ছওয়াব পাঠাবেন। এই ভেবে তারা পথ চেয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা কত অজ্ঞানী কৃপণ সময় থাকতে সত্য কর্তব্যের ঋণ শোধ করছি না! অথচ কতজনকেই তো দেখি পিতা-মাতা জীবিত অবস্থায়তেই সেবা করছে না। তবে আল্লাহতা’লা যদি চান এ রকম মানুষের ভ্রান্ত অন্তর-আত্মা পবিত্র করে দিতে পারেন। সে জন্য একজন কামেল মুর্শিদের উসিলা দোয়ার বরকত ও দীক্ষা নিতে হয়। হে মুর্শিদ, তোমার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ আমরা লাখ লাখ জাকের সন্তানেরা, তোমার আদর্শের ছোঁয়ায় সত্যিকারের মানুষ হতে চেষ্টা করছি। মেহেরবানি করে তোমার দোয়া ভিক্ষা চাই ।
মানব সেবা : বর্তমান যুগে নকশবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার একমাত্র খেলাফতপ্রাপ্ত পীর-মুর্শিদ সৈয়দ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুরের অমূল্য নসিহত হলো, মানব সেবাই পরম ধর্ম’ তিনি বলেন, বাবারা ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য দিবেন, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দিবেন, অসুস্থ মানুষকে সেবা করবেন। অসহায়ের পাশে দাঁড়াবেন। প্রতিদিন চব্বিশ ঘন্টা অসংখ্য মানুষ দরবার শরীফের মোজাদ্দেদিয়া লঙ্গরখানা থেকে তবারক খেয়ে থাকেন। যা শুধু ঢাকা শহরেই নয়, সারা বাংলাদেশের মধ্যে এক নজির বিহীন দৃষ্টান্ত। আমরাও বাবাজানের শান্তিময় সুন্দর আদর্শে উজ্জীবিত হতে প্রতিজ্ঞা করেছি এবং বাবাজানের দোয়ায় তা সফলভাবে করার চেষ্টায় নিয়োজিত আছি। যা সত্যি অনুভব করার বিষয়! আত্মশুদ্ধি ও আত্মার মুক্তির এই মানব সেবা দানে সমাজের ধনী-দরিদ্র যে কেউ অংশ নিতে পারেন। ক্বেবলাজান হুজুর বলেন, বাবা, মানুষকে সেবা করলে আল্লাহতায়া’লা নিজেই তা গ্রহণ করেন।
কুতুববাগ দরবার শরীফ ভবনটিই যেন পরশ পাথরের এক জ্যোর্তিময় স্তম্ভ। এই দরবার শরীফ এমন একটি শিক্ষালয়, যেখানে মানুষের জীবনে যে বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে প্রধান যে বিষয়টি তা হলো একজন সত্যিকারের খাঁটি মানুষ হওয়া। প্রায় প্রতিটি পিতা-মাতা-ই স্বপ্ন দেখেন, তাঁর সন্তান আদর্শ মানুষ হবে। মুরব্বিরা অনেক সময় দোয়া করে বলেন, মানুষের মত মানুষ হও! কিন্তু শুধু চাইলেই তো আদর্শ মানুষ হওয়া যায় না। সে জন্য আগে দরকার সর্বগুণে-জ্ঞানে সত্যাদর্শ একজন খাঁটি শিক্ষক-গুরু, যিনি শিক্ষা দিবেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষাই শুধু নয়, এর বাহিরেও অনেক শিক্ষা আছে যার কুল কিনারা নেই। এর মধ্যে একটি হলো, ইলমে তাসাউফ বা আধ্যাত্মিক শিক্ষা, যা নিয়মিত চর্চ্চা আমল করলে, বেয়াদব ফিরে পায় আদব। বুদ্ধিহীন বুদ্ধিমত্তায় পূর্ণ হয়। আল্লাহ-রাসুলের মহব্বতে অন্তর পরিপূর্ণ হয়। ভীতু ব্যক্তি সৎ সাহসে বলিয়ান হয় অসাধ্যকে সাধন করতে পারেন। অবিশ্বাসী ব্যক্তি ফিরে পায় তার হারানো বিশ্বাসের ভীত। যাদের অন্তরে ভক্তি রসের চিহ্নও নেই, কেবল পাথরের মত শক্ত, তারাও মহান আল্লাহ-রাসুলের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, পরমানন্দে ভক্তি রসের দোলনায় দোল খায় শুধু এক ইসমে জাতের জিকিরে। আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, আল্লাহতায়া’লার তাঁর উত্তম রুপ দিয়ে পরম যতেœ সৃষ্টি করেছেন আমাদের। অতএব, আমাদেরকেই হতে হবে খাঁটি আদর্শবান মানুষ। যে মানুষের ডাকে মহান আল্লাহর আরশে আজীম পর্যন্ত কেঁপে ওঠে! তখন আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দার প্রর্থনা মঞ্জুর করে দেন। এমন ভক্তির দোলনায় দোল খেতে না পারলে, আল্লাহতায়া’লা কোন প্রার্থনাই কবুল করেন না। কারো কারো সামান্য হলেও তা জাগতিক, পরলৌকিক ও আত্মিক কিছু অর্জন করতে হলে কামেল মুর্শিদের শিক্ষা ছাড়া সম্ভব না। তাই খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর তেমনই এক মানবাত্মার ডাক্তার হিসেবে পরমাত্মার পক্ষ থেকে মানব সেবার দাওয়াই বিলিয়ে যাচ্ছেন। হে আল্লাহ! তোমার বন্ধু নায়েবে রাসুল সৈয়দ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুরের উসিলায় আমাদের ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি দান কর। আমিন।

(Visited 200 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *