কুতুববাগ দরবার শরীফে আগত সাংবাদিকদের অনুভূতি


ফারাজী আজমল হোসেন
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক ইত্তেফাক

ধর্মীয় ব্যাপারে কেবলাজানের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুবলার যোগ্যতাএবং জ্ঞান আমার নাই। ইত্তেফাক পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী আনোয়ারহোসেন মঞ্জুর হাত ধরে এসে কেবলা হুজুরের মুরিদ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। কেবলা হুজুরের পবিত্র সানিড়বধ্য পেয়েছিএবং পাচ্ছি। আপনারা আমার জন্যদোয়া করবেন যেন, আল্লাহর রহমতে সূফীবাদের চেতনা নিয়ে বাকি জীবনটুকু কেবলাহুজুরের সান্নিধ্যে কাটাতে পারি। আমার পেশাগত দায়িত্বের মাধ্যমে সূফীবাদের এইবার্তা যেন আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি, আমি সেই চেষ্টাই করে যাবো। সাংবাদিকদের সাধ্য এবং সামর্থ আছে খাজাবাবা কুতুববাগীর এই জনকল্যাণমূলক বাণী ‘সূফীবাদই শান্তর পথ’ ও ‘মানবসেবাই পরম ধর্ম’ তা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার। মহান আল্লাহ আমাদের এই চেষ্টাকে কবুল করুন।


আলতাফ হোসেন 
বিশেষ সংবাদদাতা, দৈনিক সমকাল

বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ, একটু চিন্তিতও। নাসির ভাই দুপুরে ফোন করেন আসার জন্য। কথার শুরুতেই তিনি বললেন, বাবার দরবারে আসার জন্য। তাকে অসুস্থতার কথা বললাম না, শুধু জিজ্ঞাসা করলাম কখন আসবো? নাসির ভাই বললেন সন্ধ্যাসাতটা সাড়ে সাতটার দিকে। একপর্যায়ে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে সন্ধ্যা সাতটার আগেই চলে এসেছি। যখন বাবাজানকে দেখলাম এবং তার পা মোবারক ছুঁয়ে সালাম করলাম, সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমার মনে হচ্ছে আমি অনেকটাই সুস্থ বোধ করছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে শুরু থেকেই তার নূরানী মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর অন্য কোন দিকে তাকাতে পারছি না। আমি বাবা হুজুরেরকাছে দোয়া চাই, আপনাদের কাছেও দোয়া চাই যেন আমি সুস্থ হয়ে যাই। আর একটা কথা যখন এখানে এসেছিলাম তখনকার চেয়ে এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছি।


শামসুদ্দিন আহমেদ

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক ইত্তেফাক

আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ফারাজী ভাই, আমার সম্পর্কে অনেক সুন্দরসুন্দর কথা বলেছেন সেজন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।পেশাগত দায়িত্বের কারণে প্রায়ই জাতীয় সংসদ ভবনে যাতায়াতকরতে হয়। ইন্দিরা রোডের এ পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করি।অনেক সময় দরবার শরীফের দিকে তাকাতাম, মনের মধ্যে আকাংখা জাগতো, ভাবতাম একদিন আসবো এখানে। তো এমনই এক ভাবনার মুহূর্তে হঠাৎ ফারাজী ভাই ফোন করে বললেন, বাবার দরবারে যাবো- আপনি যাবেন আমার সাথে।কথা দিয়েছি যাবো। আজকে কেবলাজানের নূরানী সাক্ষাৎ পেয়েনিজেকে ধন্য মনে করছি, এবং মহান আল্লাহর দরবারে কোটিকোটি শুকরিয়া আদায় করছি। সত্যি মন থেকে একটা কথা বলছি,পেশাগত কারণে এর আগে আরো দুটি দরবারে আমি গিয়েছিলাম,অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে, একটিতে ফারাজী ভাই ছিলেন।তখন আমি ‘দৈনিক আমাদের সময়’ আর ফারাজী ভাই ইত্তেফাক একাজ করেন। আজকে এ দরবারে আসার পর যখন আমি ওইপাশের ঘরে ‘দায়রায়ে জান্নাতুল মাওয়া’ বসেছিলাম এরপর বাবার ঘরে পা রাখলাম, একেবারে অন্তর থেকে কথাটা বলছি- জানি না কেবলাজানের যে কী সম্মোহনী ক্ষমতা! এবং ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে আমরা যতটুকু পড়েছি বা জেনেছি, এই যে মানুষের বিনয়, যারা ইসলাম প্রচার করেছেন, ইসলামের বার্তা প্রচার করেছেন, তাদের মধ্যে বিনয়ের যে জিনিসটি আমরা শিখেছিলাম বা জেনেছিলাম,সত্যি সত্যি বিনয়ের সে নিদর্শন আজ চোখের সামনে দেখলাম! আবারও বলছি আমি আজ গর্বিত এবং মহান আল্লাহর কাছেশুকরিয়া আদায় করছি যে আল্লাহ আমাকে এখানে আসতে তওফিক দান করেছেন।


ড. সাইমন জাকারিয়া
সূফীতত্ব ও বাউল গবেষক

‘জয় গুরু কুতুববাগী’- উপস্থিত যারা সংবাদ মাধ্যম থেকে এই পবিত্রদরবার শরীফে উপস্থিত হয়েছেন- সবার প্রতি আমার ভক্তি এবংপ্রীতি। আমি তো অনেক দিন ধরেই সূফী সাধনার সঙ্গে সরাসরিজড়িত, আর এ কারণেই সূফী সাধকদের বড় বড় তীর্থস্থান বিশেষকরে সেই তুরস্কের সূফী কবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রহ.),হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার সমাধি কেন্দ্রসহ বাংলাদেশের যারাসূফী সাধক আছেন তাদের চরণে আমি গিয়েছি। এই দরবার শরীফেও প্রায় ৫-৭ বছর ধরে আমার আসা-যাওয়া আছে যদিও দরবারের যিনি কর্ণধার অর্থাৎ কেবলাজান, তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ সেভাবেহয়নি। কিন্তু তার মহা মূল্যবান বয়ান আমি দূর থেকে শুনেছি। সোনারগাঁও হোটেলে শুনেছি, এবং বিভিনড়ব প্রচার মাধ্যমে শুনেছি। এইসূফী সাধনার অনুসারি হিসেবে কুতুববাগী কেবলাজানের প্রতি আমার একটা বিশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা আছে। আমি সূফীবাদের একজন ছাত্র,এখানে এসেছি কিছু বলতে নয়, জানতে এবং শিখতে চাই। আর শেখার দোয়াটা এখানে এই সূফী সাধকদের কাছে আছে। এই দরবারদিয়েই আমরা নিজেদের জানতে পারবো আর নিজেকে জানতেপারলে পরমকে উপলদ্ধি করতে পারবো। তবে আমি আমার স্বপেড়বরকথা বলি- আমি চাই কুতুববাগ দরবার শরিফের পক্ষ থেকে দেশেসূফীবাদ সাধনার একটি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হোক। আর সেটিহওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের। এটা শুধু আমাদের দেশের জন্যনয়, পুরো মানব জাতির জন্য দরকার। আজ এখানে দেশের গণমাধ্যমের গণ্যমান্য সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, কবি-সাহিত্যিকরাআছেন, আপনাদের মাধ্যমে এই অনুরোধ জানাতে চাই যে, দেশেসূফীবাদ শিক্ষার জন্য একটি ইউনিভার্সিটি গড়ে তোলা দরকার।যেখানে শুধুসূফীবাদের শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়া হবে, সূফী সাধক তৈরিহবে এবং সর্বপরি দেশের শান্তির লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাবেন। এইযে কুতুববাগ দরবার শরীফ প্রতি বছরের পর বছর এত মনোমুগ্ধকর,এত সুশৃঙ্খল, এত সুচারুভাবে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ওরছ মোবারক আয়োজন করে আসছে, যেখানে অগনিত মানুষের আত্মার প্রশান্তিলাভ করছে। মানবজাতির কল্যাণে পবিত্র ওরছ ও বিশ্বজাকেরইজতেমায় বিশেষ দোয়া করা হয়, এটা একটা অসাধারণ ব্যাপার।আর এখান থেকেই শিক্ষা নিয়ে আমরা সেই প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিস্থাপনকরতে পারি।

খাদেমুর রহমান হাকিম
ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা

ফারায়েজী আজমল হোসেন ফোন করে আমাকে বলেন, কুতুববাগদরবার শরীফে বাবাজানের কাছে আসবেন। তিনি আমাকেওআসার জন্য দাওয়াত করেন। কুতুববাগী বাবাজানের কথা শুনেইআগ্রহ তৈরি হলো- এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। দরবার শরীফেএসে বাবাজান কেবলাকে সামনাসামনি দেখার পর আমার খুবভালো লাগছে। এ জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই।আমার বাসা শ্যামলীতে, প্রায় ছাত্র জীবন থেকেই ফার্মগেটের এই কুতুববাগ দরবার শরীফের সামনে থেকে যাতায়াত করি, কখনো দরবার শরীফের ভিতরে আসাহয়নি। অনেকের কাছেই শুনেছি, কুতুববাগের পীর কেবলা অত্যন্ত অমায়িক, বিনয়ী, পরোপকারী এবংখুবই সুন্দর নূরানী মানুষ, একজন আদর্শবান মানুষ। প্রতি বছর এ সময়ে দেখি, হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী কী পরিমান শ্রদ্ধা-ভক্তি আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ওনার প্রতি নিবেদিত। তা দূর থেকেদেখলে সাধারণ জ্ঞানে কল্পনাও করা যাবে না। আমরা জানি আল্লাহতায়ালা অন্ধকার যুগে নবী-রাসুলপাঠিয়ে মানুষকে হেদায়েত করেছেন, কিন্তু এ যুগে আউলিয়াদের দ্বারা আল্লাহর বাণী প্রচার করছেন।আমি এ দরবারে আসতে পেরে ফারায়েজী ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং মহান আল্লাহরদরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আপনারা সবাই দায়া করবেন যেন আমি কেবলাজানের দীক্ষায়দীক্ষিত হতে পারি।


আব্দুল মজিদ 
সাংবাদিক, বৈশাখী টিভি

রমহান আল্লাহ আমাকে আজ এখানে নিয়ে এসেছেন।বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে জঙ্গিবাদের যে উন্মাদনা শুরুহয়েছিল, তা কিন্তু সত্যিকার অর্থে ইসলামের পক্ষে না। তাই, এসময়ে আমাদেরকে সূফীবাদের চর্চা করতে হবে। কারণ,সূফীবাদে কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই, শান্তির ধর্ম ইসলাম এবংইসলামের গোড়ায় হলো সূফীবাদ। আমরা যত বেশি বেশি সূফীবাদের চর্চা করতে পারবো, তত বেশি করে শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারবো। সূফীবাদমানুষের কল্যাণের কথা বলে, মানুষের সার্বিক উনড়বয়নের জন্য কাজ করে। বর্তমান বিশ্বের অস্থিতারমধ্যে বাবাজান যেভাবে সূফীবাদের ডাক দিয়েছেন তাতে আমার মনে হয় একদম উপযুক্ত সময়েসঠিক কাজটি তিনি করছেন। আমাদের উচিৎ হবে তার সঙ্গে মিলে এ কাজে তাকে সহযোগিতা করা।


অধীর চন্দ্র সরকার
অধ্যাপক, তেজঁগাও কলেজ

কুতুববাগের কেবলাজানের কথা অনেক শুনেছি, আমার পরিচিত একজন নাম শফিক সে কেবলাজানের মুরিদ। আমাকে বেশ কয়েকবার দরবারে আসতে দাওয়াত করেছে। কিন্তু অজানা কোন কারণে আসা হয়ে ওঠেনি। তবে শফিককে আমি জিজ্ঞাসা করতাম তোমাদের দরবারে তাবারক হয়? শফিক বলেছে,হ্যাঁ হয়, আপনি খাবেন স্যার? আমি বললাম দেখ শফিক, আমি তো গরুর গোস্ত খাই না। শফিক বললো, স্যার আমাদের দরবারে খাসির গোস্তের তাবারকও হয়। আমি বললাম ঠিক আছে যাবো একদিন। তো, সত্যি সত্যি এক ওরছ মোবারকে আমি এসেছি এবং কেবলাজানের বয়ান শুনেছি দীর্ঘক্ষণ, একেবারে মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্থবির হয়ে গিয়েছিলাম। আর তার চেহারা মোবারকের দিকে চেয়ে থেকে দেখেছি এবং কেবলাজানের রূপলাবেণ্য মুগ্ধ হয়েছি। এত সুন্দর মানুষ! মানুষের মধ্যে এত পরিচ্ছন্নতা আল্লাহপাক দিয়েছেন তা ওনাকে না দেখলে বোঝা যাবে না। বয়ান শেষে বের হয়ে এসে শফিককে বলছি, শফিক আমারতো তোবারক খেতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু আমিতো গরু খাই না। শফিক বললো, আমারও মনে হয় স্যার আজকে গরুর গোস্ত দিয়েই তোবারক হয়েছে। তবুও চলেন যাই বাবাজানকে কদমবুচি করে আসি। অনেক ভিরের মধ্যেও আমরা দুজন তার কদমের কাছে গেলাম। সালাম করলাম,কেবলাজান আমাকে বললেন, বাবা, তোবারক খেয়ে যাবেন। এবার আমি সত্যি অবাক হলাম, তিনি আমার নামও জিজ্ঞাসা করলেন না। অথচ ঠিকই বুঝতে পারলেন আমি তোবারক খেতে চেয়েছি! এই হলেন খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে উনি কামেল পীর। আজ এখানে সূফীইজমের কথাবলা হয়েছে, আমিও বলতে চাই, কেবলাজানের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী সূফীবাদের প্রসার ঘটবে এবং সূফীইজম টিকলে বিশ্ব মানবতা টিকে থাকবে।

(Visited 321 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *