আমি খাজাবাবা কুতুববাগীর বাল্যকালের শিক্ষক বলছি…

আলহাজ্ব মাওলানা গাজী আবদুল আউয়াল

বিশ্ব অলি জামানার মুরাদ ফকির আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশ্বন্দি মোজাদ্দেদি (মাঃজিঃআঃ) কুতুববাগী ক্বেবলাজান এবং বিশ্বব্যাপি তাঁর প্রচারিত সত্য তরিকার দাওয়াত সম্মন্ধে সংক্ষেপে কিছু বলার চেষ্টা করছি।

আমি আলহাজ্ব মাওলানা গাজী আবদুল আউয়াল, নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শুভ করদী গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৭৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পরে, মহান আল্লাহর অলি ও তাপস খাজাবাবা কুতুববাগীকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাই। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্টতা হয় তৃত্বীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হবার পর। তখন আমি লক্ষ্য করলাম, এই ছেলেটি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে অনেকটাই আলাদা। আমি যখন ক্লাসে পড়াতাম, প্রায়ই লক্ষ্য করতাম, তিনি গভীর ধ্যানে কি যেন ভাবছেন। এরপর তাঁকে কোন প্রশ্ন করা হলে চুপ করে বসে থাকতেন, তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগত যে, এই ছেলেটি এত গভীরভাবে সারাক্ষণ কি চিন্তা করে? এভাবে ধীরে ধীরে আমার কাছে তাঁর আধ্যাত্মিক ক্ষমতা এবং সাধনার বিষয়টি প্রকাশ হতে লাগলো। আমি আরোও একটি বিষয় লক্ষ্য করে আশ্চর্য হয়েছিলাম যে, তাঁর সমবয়সীরা যখন খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকতো, তখন তিনি আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকতেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আমার কাছে অতি প্রিয় হয়ে উঠলেন। সারাক্ষণ কি চিন্তা করেন? এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতেন না, চুপ থাকতেন। আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি আমাকে খুব সম্মান করতেন এবং ভয়ও পেতেন। কিন্তু আমি ভিতরে ভিতরে মহান আল্লাহর এই তাপসকে অনেক আদর-স্নেহ করতাম। তিনি শিশু অবস্থায় মাকে হারান তবুও তাঁর চলা ফেরায়, উঠা-বসায় এবং আচার-আচরণে সব সময়েই অন্যান্য ছাত্রদের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন। আমাকে মাঝে মধ্যেই দাওয়াত দিয়ে হালকা জিকিরের মাহফিল করতেন, এ বিষয়টি আমি আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করতাম এবং জিকিরে অংশ নিতাম। এই গর্ভজাত অলি-আল্লাহকে আমার বিদ্যালয়ে পড়ালেখা অবস্থায় পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।

এক দিনের ঘটনা ২/৩ দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় আমি অফিস কক্ষে ডেকে এনে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, কদিন ধরে স্কুলে আসোনি কেনো? তিনি চুপ করে দাঁড়ায়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর জবাব দিলেন, আমি নদীর চরে গিয়েছিলাম। এক বৃদ্ধ ধলেশ্বরী নদী পার করে দেবার জন্য বললেন, আমি নৌকায় নদী পার করে দেবার সময় যখন নদীর মধ্যেখানে নৌকা তখন ওই বৃদ্ধ বললেন, বাবা তুমি কি আমাকে চেনো? আমি হলাম খিজির (আঃ) তোমার প্রয়োজনে চক্ষু বন্ধ করে ধ্যান করলেই তুমি আমাকে পাবে। এই বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন! মহান এ তাপস তখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। সে দিন থেকেই আমার মন সাক্ষ্য দিল যে, এ ছেলের জীবনে অলিত্বের ভার আসবে। আমার সেদিনের সেই বিশ্বাস আজকে পুরোপুরিভাবে আল্লাহর অশেষ রহমতে বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন দেখা যায় তিনি শুধু বাংলাদেশ, ভারতেই নয় সৌদিআরব, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও দুবাইসহ পৃথিবীর অসংখ্য রাষ্ট্রে দয়াল নবীজির সত্য তরিকার দাওয়াত নিয়ে পথভোলা মানুষকে আল্লাহ ও রসুলের সত্য তরিকার সন্ধান দিয়ে জামানার পথহারা মানুষকে আলোর পথে তুলে আনছেন। (সোবহানআল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ!!) তাঁর জীবনের প্রতিমুহূর্ত কেটেছে নিরলস গভীর কঠিন সাধনার পথে। ছুটে বেড়িয়েছেন স্বদেশ, বিদেশের বিভিন্ন অলি-আল্লাহ, পীর-ফকিরদের মাজার শরীফ জিয়ারত করে অর্জন করেছেন তাঁদের রুহাণী ইত্তেহাদি তাওয়াজ্জ্বহ এবং আধ্যাত্মিক শক্তি-বল। এরই মধ্যে একদিন তিনি নকশ্বন্দিয়া-মোজাদ্দেদিয়া সত্য তরিকার বাইয়াত গ্রহণ করলেন, পীরে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, জগৎবিখ্যাত আলেম, মোফাস্সিরে কোরআন, শাহান শাহে তরিকত শাহসুফি হযরত আলহাজ্ব মাওলানা কুতুবুদ্দীন আহমদ খান মাতুয়াইলী (রহ.), যিনি আল্লাহ-নবী (সাঃ)-এর মহব্বতে দীর্ঘ একুশ বছর পবিত্র কোরআনের প্রতিটি অক্ষর ধরে ধরে সুনিপুনভাবে ব্যাখ্যা (তাফসির) করেছেন। তাঁর মাজার শরীফ ঢাকা ডেমরা থানা (দরবারে মোজাদ্দেদিয়া) মাতুয়াইলে অবস্থিত “নূরে বরকত” আছে। খাজাবাবা কুতুববাগী (মাঃ জিঃ আঃ) তাঁর কাছেই শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীর্ঘ এগারো বছর জান ও মাল দিয়ে সার্বোক্ষণিক খেদমতে থেকে শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতের গভীর সমুদ্রসম জ্ঞান শিক্ষায় মহান আল্লাহ-রসুল গুণে সুশিক্ষিত হবার পর, খাজাবাবা মাতুয়াইলী (রহ.)এর পবিত্র ওফাতের কিছু দিন আগে তাঁর দরবার শরীফে হাজার হাজার আশেক-জাকের, মুরিদের উপস্থিতিতে খাজাবাবা কুতুববাগীকে তরিকার একমাত্র খেলাফত দান করেন।

তিনি বর্তমানে ঢাকা ফার্মগেটে ইন্দিরা রোড, জতীয় সংসদ ভবনের কাছে কুতুববাগ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেখান থেকে মহান আল্লাহর এই অলি সারা দুনিয়াতে নকশ্বন্দিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকার অমূল্য নেয়ামত বিতরণ করছেন। সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জন্যে নিদানে আশার ভরসা। আর বিপদগামীদের জন্যে হেদায়েতের নূরাণী আহ্বান “সুফিবাদই শান্তির পথ” এই আদর্শের বাণী ও সুপথে চলার দিক-নির্দেশনা প্রচার করছেন। এখানে প্রতিদিন আশেকান জাকেরান ভক্ত মুরিদ-সহ প্রায় হাজার হাজার মানুষ এসে তরিকতের বাইয়াত গ্রহণ করছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ তরিকতের আমল, তসবিহ-তাহলিল আদায় করে আল্লাহ ও রসুলের (সাঃ)এর নির্দেশিত পথে অগ্রসর হচ্ছেন।

অলি আল্লাহদের কেরামতি বুঝা বড়-ই কঠিন। আমি ২০০৭ সালে হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে ক্বাবায়ে বায়তুল্লা শরীফ জিয়ারতে যাবার আগে মহান তাপসের সাক্ষাতে গেলাম। অনেক আলাপ আলোচনা করার পর আমাকে বললেন, বাবা আমি গত বছর মাষ্টার নুরুল ইসলাম সাহেব-সহ হজ্ব করেছি। কিছু দিন আগে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহে রাজিউন)। খাজাবাবার কাছে যখন দোয়া চাইলাম, তখন তিনি বললেন, বাবা, আপনিতো আমার বাল্য কালের ওস্তাদ-শিক্ষক আপনিই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং মদিনা শরীফে দয়াল নবীজির রওজা মোবাকের ডান পাশের দরজা বাবে জিবরিল দিয়ে ঢুকে দেখবেন একটি উঁচু জায়গা আছে, যেখানে বসে সুফি-সাধকগণ (আসহাবে সুফ্ফাগণ) ধ্যান-মোরাকাবা করতেন এবং বাম পাশে দেখবেন দয়াল নবীজির রওজা মোবারক, আপনি সেখানে বসে মোরাকাবা করবেন এবং আমি গুনাহগারের কথা বলবেন।

এরপর আমি মুছাফা করে বিদায় নিলাম। কাবাঘর তাওয়াফ করতে গিয়েও ওখানে তাঁর বাতেনি ইশারায় আল্লাহর দয়ায় হজ্বের সমস্ত কাজ অতি সহজভাবে আদায় করতে পেরেছি। (আলহামদুলিল্লাহ) এটাই হল কামেল অলি-আল্লাহদের সত্য কেরামতি। এই সাধকের কাছে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা পন্ডিত , বুদ্ধিজীবি, জ্ঞাণী-মানী, ধনী-গরীব নানান শ্রেণী পেশার মানুষ-সহ অগণিত আলেম ওলামা মোহাদ্দেস, মুফতি, হাফেজ-কারীগণ তরিকতের বাইয়াত গ্রহণ করে আপন মুর্শিদের খেদমতে আত্মনিয়োগ করছেন।

মহান আল্লাহ যাঁকে বন্ধু বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি নেই যে, কেউ তাঁকে ভুল প্রমাণিত করতে পারে। অতএব, মোজাদ্দেদিয়া তরিকা এমন একটি নিয়ামত যা গ্রহণের পর নিয়মিত আমল করলে কাদেরীয়া, চিশতিয়া, নকশ্বন্দিয়াসহ এই চারটি তরিকার আমলের ফয়েজ, রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। কারণ, অন্যান্য তরিকার ছবক যেখানে শেষ, সেখান থেকে মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ছবক শুরু। তাঁর তরিকা ও “সুফিবাদই শান্তির পথ” এই সত্য বাণী প্রচারের যে মহতী উদ্যোগ ও অক্লান্ত চেষ্টার ফল “মাসিক আত্মার আলো” পত্রিকা। এই মূল্যবান পত্রিকাটি পাঠ করলে শরিয়ত তরিকত হাকিকত ও মারফতের অনেক গোপন রহস্য জানা যায় এবং নিজেকে জানা যায়। তাই, সম্মানিত পাঠকগণ, আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান সময় থাকতে মৃত্যুর আগে কুতুববাগ দরবার শরীফে এসে খাজাবাবার কাছে রসুল (সাঃ)এর সত্য তরিকার বাইয়াত গ্রহণ করে পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী হোন।

(Visited 611 times, 1 visits today)
Share