সাইফুল ইসলাম দীপক
কিছুদিন আগে মনে একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা বোধ করছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী করব? অতঃপর সেই যন্ত্রণার অবসান হয়েছে আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে। সেই ঘটনাই আজকে বলবো। বেশ অনেক বছর ধরে আমার মুর্শিদ গুরু খাজাবাবা কুতুববাগীর কাছে যাই। শুরু থেকেই আমি তাঁর কাছে শুনেছি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সঃ)-এর শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়। তিনি শিক্ষা দিচ্ছেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে তরিকার অজিফা আমল। আল্লাহর জিকির, ধ্যান-মোরাকাবা, মোশাহাদা ইত্যাদি। আমি কিছু কিছু আমল করার চেষ্টা করি। নামাজও পড়তাম, কিন্তু তা নিয়মিত ছিল না। যখন দরবার শরীফে যেতাম তখন নামাজ পড়তাম আবার বাইরে আসলে তেমন নামাজ পড়া হতো না। সত্য কথা বলতে কি, নামাজে আমার একপ্রকার অনিহা ছিল। কিছু মানুষ নানান কথা বলতো নামাজ নিয়ে। কেউ কেউ আমার মুর্শিদ কেবলাজানকে নিয়েও কটাক্ষ করতো। তারা বলতো, আপনার গুরু কি বলেছেন যে, নামাজ পড়ার দরকার নাই? এই রকম নানান কথা। আমি বিশেষ পাত্তা দিতাম না। ইচ্ছা হলে নামাজ পড়তাম, আবার ইচ্ছা না হলে পড়তাম না।আমার মনে হতো লোক দেখানো নামাজ পড়ে কি হবে? যখন ভিতর থেকে নামাজ পড়ার ইচ্ছা জাগ্রত হবে তখনই পড়বো। আরেকটা বিষয় হল, মাঝে মাঝে যখন অন্তরে নামাজ পড়ার ইচ্ছা জাগত, তখন নামাজ পড়লে পরম এক শান্তি অনুভব হতো। যা-ই হোক, এভাবেই কাটছিল সময়। কিন্তু এ বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে অন্তরে এক অদ্ভুত যন্ত্রণা টের পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমি যে নামাজ পড়ি না, তাতে আমার পীর কেবলাজানের বদনাম হচ্ছে। মানুষ মনে করে আমার পীর খাজাবাবা কুতুববাগী আমাদেরকে সঠিক শিক্ষা দেন নাই!
যেমন সন্তান খারাপ করলে পিতার বদনাম হয়, তেমনই ছাত্র খারাপ করলে শিক্ষকের বদনাম হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের কোন দোষ নাই। তিনি তো সবসময় নামাজের শিক্ষাই দিচ্ছেন। তিনি নিজে তো সকল ফরজ, সুন্নত, নফল ইবাদত আমল করেন। এছাড়া মহান আল্লাহর সঙ্গে মিশে থাকার জন্য আধ্যাত্মবাদের যে কঠোর সাধনা তাও করে থাকেন। এবং কেবলাজানের মতো এত কঠোর পরিশ্রমী মানুষ আর দেখি নাই। আমি বিন্দু পরিমাণ বাড়িয়ে বলছি না। ইতিমধ্যে যারা খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের আদর্শকে জানেন তাঁরা আমার কথা বুঝতে পারছেন। অন্যরা হয়ত বুঝতে পারছেন না। খাজাবাবা কুতুববাগীর সঙ্গ লাভ করলে তবেই কিছু কিছু বোঝা যাবে, অন্যথায় সম্ভব না। এই সব ভাবছি আর অন্তরের ভিতর এক মহা দন্দ্ব চলছে। একদিকে লোক দেখানো নামাজও পড়তে পারছি না, অন্যদিকে মানুষ না বুঝে আমাকে দেখে আমার পীর কেবলাজানের বদনাম করছে। এখন কি করি? বুঝে উঠতে পারছি না। আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করলাম। বললাম, হে আল্লাহ! আমার কারণে তোমার অলী-বন্ধুর বদনাম হচ্ছে। তুমি আমার অন্তরে নামাজের আগ্রহ তৈরি কর। তুমি আমাকে এই অপরাধ বোধ থেকে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ! তোমার এই মহান অলীর উছিলা ধরে তোমার কাছে ভিক্ষা চাইলাম। তুমি কবুল কর।
অবশেষে এলো পবিত্র রমজানের প্রথম দিন। সাহ্রি খাবার পরেই ফজর নামাজ পড়ার একটা আগ্রহ বোধ করলাম। অজু করে নামাজ আদায় করলাম। মনে বেশ শান্তি অনুভব করলাম। নামাজের পর আমার মুর্শিদ কেবলার শিক্ষা অনুযায়ী পাক-কালাম ফাতেহা শরীফ ও খতম শরীফের আমল করলাম। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে অফিসে চলে আসলাম। অফিসের কাজকর্ম করছি। যখনই জোহরের আজান হল তখন থেকেই মনের ভিতর কে যেন বললো, ‘নামাজের সময় হয়েছে, নামাজ আদায় কর।’
তারপরও আমি কাজ করে যাচ্ছি, কিন্তু কাজ আর আগাচ্ছে না। মনের ভিতর অবিরত কে যেন বলে যাচ্ছে ‘নামাজের সময় হয়েছে নামাজ আদায় কর।’ আমি অজু করে নামাজ আদায় করলাম। নামাজে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলাম। মন স্থির হয়ে গেল। আমার পীর কেবলাজানের একটা কথা মনে পড়ল। খাজাবাবা প্রায়ই বলেন, ‘বাবা, নামাজে এত শান্তি, তা যদি মানুষ বুঝতো তাহলে কখনই ইচ্ছা করে নামাজ ছাড়ত না।’ আমার মনে হল, আল্লাহর রহমতে আজ যেন সেই শান্তির ছোঁয়াই পেলাম! এ বছরের মতো পবিত্র মাহে রমজান শেষ হয়ে গেলো। কিন্তু আমার অন্তর থেকে নামজের আগ্রহ হারিয়ে যায় নাই, এখনও আছে! আর নামাজ আদায় করলেই পরম এক শান্তির পরশ পাচ্ছি। নামাজের ওয়াক্ত হলেই অন্তর থেকে সেই আওয়াজ কানে শুনি, ‘নামাজের সময় হয়েছে নামাজ আদায় কর।’ মুর্শিদ কেবলাজানকে বললাম এ কথা। সব শুনে বললেন, ‘আল্লাহতায়ালাই তোমার মনের ভিতর থেকে এই কথা বলাচ্ছেন।’ আমি যতই ভাবি ততই মন ভরে ওঠে শুকরিয়ায়। এই ভেবে যে, আল্লাহপাক এ অধমকে এতবড় নিয়ামত দান করলেন তাঁর অলী-বন্ধুর উছিলায়। এ নিয়ামতের শুকরিয়া শেষ করা যায় না। আল্লাহপাকের এই নিয়ামতের কাছে পার্থিব সকল কিছুই তুচ্ছ। আল্লাহপাকের কাছে তাঁর অলীগণ অত্যন্ত প্রিয়। তাঁদের উছিলা নিয়ে শুদ্ধ নিয়তে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, আল্লাহ তা না দিয়ে পারেন না। আল্লাহপাক অসীম দয়ালু। নইলে আল্লাহ দুনিয়াতে তাঁর অলীদের পাঠাতেন না। আমার মত পাপী গুনাহগারের হেদায়াতের জন্য। আল্লাহর অলীগণ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সত্য পথ দেখাতে এসেছেন এবং আসতে থাকবেন। এই পথ আল্লাহ মুখী হওয়ার পথ। একজন পথ প্রদর্শক ছাড়া সেই পথে কেউ একা একা আসতে পারবে না। কিছু লোক বুঝে বা না বুঝে আল্লাহর অলীদের বিরোধীতা করেন। করুক তাতে কিছুই যায় আসে না। কেবলাজান বলেন, ‘তরিকা হলো হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তির মতো।’ যারা এখনো তরিকতে আসেননি তাদেরকে বলি ভাই ও বোনেরা, আসুন একবার। এসে দেখুন আপনার জন্য আল্লাহপাকের কত নিয়ামত অপেক্ষা করছে, যা আমরা জানি না বা জানতাম না। লেখার ভাষায় এর চেয়ে বেশি ব্যক্ত করা গেল না। আল্লাহ চাইলে এই সামান্য লেখায় হয়তো অনেকের মনকে নাড়া দিবে। খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হবে। আল্লাহপাক সবাইকে কবুল করুন, আমীন।