আলহাজ্ব মাওলানা হাবিবুর রহমান নূরী
যে সমস্ত মহান ব্যক্তিত্বের অক্লান্ত কর্মপ্রচেষ্টার ফলে, সোনালী ইসলামের সুনির্মল আর্দশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রুহানী জগতে খাঁটি সুফিকূলের শিরোমণি মুর্শিদে মুজাহিদ হযরত খাজাবাবা আলহাজ্ব সৈয়দ জাকির শাহ্ (মা: জি: আ:)- এর নাম বিশেষভাবে বলা যায়। একথা সত্য যে, তিনিই বর্তমান সুফি সাধক-কুলের, সুফিবাদের গৌরব এক উজ্জল নক্ষত্র। কারণ, তিনি নকশ্বন্দিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সর্বশেষ একমাত্র খেলাফতপ্রাপ্ত পীর-মুর্শিদ। তাপসগণের শিরমণি দরদী বান্ধব খাজাবাবা বেলায়েতীগণের দীপ্তিময় সূর্য-স্বরূপ মর্যাদালাভ করেছিল, বাবাজান মাতৃগর্ভে থেকেই মাদারজাত আল্লাহর প্রেমি অলি হিসাবে। আমি মো: হাবিবুর রহমান নূরী একবার বাবাজানের সফরসঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলাম। কেরামতে আউলিয়াওঁ হাক্কুন। আল্লাহর-অলিদের কেরামত সত্য। ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই সফর। টঙ্গির মোস্তফা ভাইজানের স্ত্রীর বড় ভাই, জনাব মুসা ভাইজান ছিলেন। তিনি সরকারী সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করতেন, আজমীরগঞ্জ তাঁর বাসায় বাবাজান কদম রাখলেন। সেখান থেকে ট্রলার যোগে বিভিন্ন স্থানে বাবাজান মাহফিল, সভাসমাবেশে উপস্থিত হয়ে মানুষের হেদায়েতের জন্য সুন্দর প্রাঞ্জল ভাষায় নসিহতবাণী পেশ করতেন। সাতদিন পর্যন্ত সেখানে আমরা থাকলাম একসঙ্গে। খাওয়া-দাওয়া করলাম সবাই কিন্তু বাবাজানকে একবারও বাথরুমে যেতে দেখলাম না। আল্লাহর অলিগণ পায়খানা প্রস্রাব কন্ট্রোল করতে পারেন। দেখলাম, বুঝলাম বাবাজান নিঃসন্দেহে একজন আল্লাহর প্রিয় অলি। ওই সফরে মনের কত কথা বলার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু বাবাজানের নূরের চেহারা দেখার পর কিছুই বলতে পারলাম না। অনেক সাহস করে একবার বললাম, বাবাজান আমার শ্বশুর সাহেব দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ আছেন। কত পীর-ফকিরের কাছে গেলাম, সবাই বলেন, তিনি মারা গেছেন। এ কথা শোনার পর বাবাজান, চোখ বন্ধ করে বললেন, তোমার শ্বশুর রেজভী সাহেব বেঁচে আছেন। কদম ধরে বললাম, বাবাজান আমারা কি ওঁনার দেখা পাব? কোথায় পাব? বাবাজান বলেলন, আগামী মাসেই ওনাকে পাবা। আল্লাহর অলির জবান ও আল্লাহর জবান এক। বাবাজানের দোয়ার বরকতে দীর্ঘ বাইশ বছর পরে সত্যি সত্যি ওঁনাকে আমরা ফিরে পেলাম। আল্হামদুলিল্লাহ!একবার বাবাজানের কদমে নালিশ দিলাম, বললাম, বাবা পবিত্র হজ্ব জিয়ারত করতে ইচ্ছা হয়। দরদী বাবাজান বললেন, তোর হজ্ব জিয়ারত হবে। এর মাত্র তিন দিন পর, স্বপ্নে আমার হজ্ব জিয়ারত হয়েছে। পাগল হয়ে বাবাজানের কদমে হাজির হয়ে, চোখের পানিতে নালিশ দিলাম, বাবা আমি স্বশরীরে হজ্ব করতে চাই। দরদী বান্ধব আমাকে বলেলন, তোর হজ্ব ব্যবস্থা হবে। সত্যিই বাবাজানের দোয়ায় আমার হজ্বের ব্যবস্থা হয়ে গেল, দয়ার নবী, মায়ার নবী মহানবী (সাঃ)এর পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারত আল্লাহর রহমতে করলাম। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের রেখে যাব, বাচ্চাদের মায়ায় চোখের পানি রাখতে পারলাম না। বাবাজান আমার হাতে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বলেলন, আল্লাহর উপর ভরসা রাখ, আজরাইল আমাকে না বলে তোকে নিবে না। এত জোর দিয়ে অত বড় কথা কোনো সাধারণ মানুষ বলতে পারেন না। আমার দরদী বান্ধব মুর্শিদের দোয়ায়, হজ্ব জিয়ারত করে সুস্থ শরীরে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছি। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আমি দেখেছি, কিন্তু আমার মুর্শিদের মত নূরাণী আদর্শবান আর কাউকে দেখিনি। তাই বলি, আমার দিলে ইস্ক যাহা, বুলবুলিরও দিলে নাই। আমার ফুলে গন্ধ যাহা, আর কোন ফুলে নাই।