আমার জীবনধারা বদলেছেন মুর্শিদ ক্বেবলা কুতুববাগী

রেবেকা সুলতানা রোজি

বর্তমান সময়ের পথহারা পাপী-তাপী এবং অল্প জীন্দেগীর মানুষ যাতে করে, অতি অল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারেন, সে জন্য আমার মহান পীর-মুর্শিদ, দস্তগীর রওশান জামীর, ক্বেবলায়ে দোজাহান আরেফে কামেল মুর্শিদে মোকাম্মেল মোজাদ্দেদে জামান শাহ্সুফি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা খাজাবাবা কুতুববাগী (মাঃজিঃআঃ) ক্বেবলা ও ক্বাবা যে শিক্ষা দেন তা হলো, আত্মশুদ্ধি লাভ করা, এবং পরিপূর্ণভাবে নিজেকে চেনা-জানার। এখানে সবার জন্য আত্মশুদ্ধির মত মহা নেয়ামতের ব্যবস্থা করা হয়। আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে মানুষের আত্মিক উন্নতি ঘটানো হয়। এখানে মানুষের আত্মার রোগের চিকিৎসা করা হয়। মানুষের আত্ম অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, কৃপণতা, অলসতা, অভদ্রতা, মূর্খতা ও হুজ্জতি ইত্যাদিকে মহাস্রষ্টার নামে জিকির ও সাধানার মাধ্যমে পরিবর্তন করিয়ে পর্যায়ক্রমে আত্মশুদ্ধির নিয়মিত সাধনার ফলে, মানুষের আত্মা একটি বিশেষ শক্তিধর হয় এবং তখন মহা স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভে সচেষ্ট হয়। আমার পীর ক্বেবলাজানের নকশ্বন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সুমহান শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করে, মুহূর্তের মধ্যেই অগণিত পাপী-তাপীদের দিলের অন্ধকার মুছে আল্লাহ ও রসুল (সাঃ)এর ইশক-মহব্বতে ভরপুর হয়ে যায়, মুর্দা দিল জিন্দা হয়ে আল্লাহ, আল্লাহ জিকির ধমনীতে স্বর্গীয় তেজে বলিয়ান হয়ে, অসংযমী দিলকে আবদ্ধ করে রাখে। একাগ্রতার সঙ্গে হুজুরী দিলে নামাজ আদায় করে, হাকিকতের যোগ্যতা অর্জন করে। শুধু তাই নয়, দৃঢ়তার সঙ্গে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণের যোগ্যতা অর্জন করে থাকে। আমার মুর্শিদ ক্বেবলাজানের শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করলে, শয়তানের ধোকা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ এই শিক্ষার মাধ্যমে ক্বালবের মুখে আল্লাহ আল্লাহ জিকির জারি হয়, ফলে শয়তান বাধ্য হয়ে ক্বলব থেকে ছিটকে সরে যায়। শয়তান কোনভাবে এবাদতের মধ্যে ধোকা দিতে পারে না। তখনই এবাদতের পূর্ণ স্বাদ-লজ্জত দিলে প্রবেশ করে স্বর্গীয় মহব্বতে ভরে যায়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য অর্জিত হয়।

আমার জীবনে বাবাজান আল্লাহর অশেষ রহমত স্বরূপ উপস্থিত হয়েছেন। তাঁর একটি নজিরা প্রকাশ করছি, মহান আল্লাহর মারেফত যখন মোমিন বান্দার অন্তরে বর্ষিত হয়, তখন ওই বান্দার মুখ আল্লাহর মুখ হয়ে যায়, বান্দার চোখ আল্লাহর চোখ হয়ে যায়, বান্দার হাত ও পা আল্লাহর হয়ে যায়, তখন তিনি যা বলেন, তা-ই মহান আল্লাহ কবুল করেন। অন্তরের চোখ দিয়ে তিনি জাহের বাতেন (গোপন, প্রকাশ্য) তথা, সমস্ত মাখলুককে দেখতে পান, ওই পবিত্র হাত দিয়ে মাটি ধরলে, মাটি সোনায় পরিণত হয়। র্দীঘ নয়টি বছর মৃত্যু যন্ত্রণা কি? এবং কত ভয়াবহ? তা আপনজন হারানোর ভয় থেকে বুঝতে পেরেছি। হতাশায় মনে হতো ফাঁসির আসামীর মতো এই বুঝি কাল ফাঁসি হয়ে যাবে! একটি একটি করে দিন গুনতে গুনতে নয়টি বছর পার করেছি। আমার স্বামীর লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ নয়টি বছর বিভিন্ন জায়গা দেশে বিদেশে চিকিৎসার জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন। কিন্তু সম্ভাবনার আলো কোথাও দেখতে পাইনি, হতাশার কালো আঁধার মুখে ফিরে এসেছেন। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও সুস্থ্য হতে পারেননি, ভয় আর হতাশা গ্রাস করে নেয় আমাদের সুখের সংসারটাকে। আমার ছেলে দুটো তখন অনেক ছোট, বড় ছেলে ক্লাস ওয়ানে এবং ছোট ছেলে প্লে তে পড়ে, আমার বয়স পচিশ বছর। এই ছোট বাচ্চা দুটোকে নিয়ে আমি কোথায় যাই, কি করি কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। স্বামীকে নিয়ে কোথায় গেলে একটু আশার বাণী শুনতে পারবো? আমি দিশেহারা হয়ে যাই, আমার সঙ্গি হলো শুধু কান্না। কারণ, কেউ আমার পাশে ছিলো না, একেবারে অসহায় হয়ে গেলাম, কিন্তু তার পরও আমি শুধু এক আল্লাহ থেকে দূরে সরে যাইনি। আল্লাহর দরবারে শুধু কেঁদেছি রাতের পর রাত, কী যে দুর্বিসহ সময় পার করেছি! সে শুধু আল্লাহ-ই জানেন। এমন হতাশার গ্লানি নিয়েই একদিন স্বামী গেলেন এক হোমিও প্যাথিক ডাক্তারের কাছে, দীর্ঘদিন তাঁর ঔষধ গ্রহণ করার পর হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম, সেই ডাক্তারও চলে গেলেন পরপারে, (ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্নাইলাইহে রাজিউন) হায় আল্লাহ! আরও অন্ধকার নেমে আসল। যাই হোক, একদিন স্বামীর অফিসে (দৈনিক বর্তমান পত্রিকা) ল্যাবএইড এর একটি মেডিক্যাল টিম আসল, আমার স্বামী উক্ত পত্রিকায় জিএম হিসেবে কর্মরত। তাঁদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলো, লিভার এর কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করাবেন, ওই সময় তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। কারণ, মধ্যে মধ্যে তাঁর পেটে ব্যাথ্য হতো, প্রচন্ড ব্যাথা, অসহনীয় যন্ত্রণা, যা ইনজেকশন ছাড়া কমতো না। শুধু তাই নয়, মাঝে মধ্যেই ব্লিডিং হতো এবং হাই ব্লাড প্রেশার ছিলো। তাঁকে সব সময় সাহস দিতাম এই বলে যে, আল্লাহ আমাকে এতো বড় বিপদে অবশ্যই ফেলবেন না। আল্লাহ নিশ্চয়ই একটা কিছু করবেন, এটা ছিলো আমার বিশ্বাস এবং মনে মনে আমি এমন কাউকে খুঁজতাম যাঁর উছিলায় আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করবেন ও দয়া করবেন। আর বলতাম, হে আল্লাহ তাঁর দেখা মিলিয়ে দাও। জানি না, কেন জানি, নিজেরই অজান্তেই ইচ্ছা জাগতো মনে, আমি আমার স্বামীকে প্রায়ই বলতাম, দেখ সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে। যাই হোক, সাহস করে সমস্ত শরীর পরীক্ষা করালাম, অন্য সব ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু শুধু লিভারের রিপোর্টাই ভালো আসলো না। আমার স্বামী এবার সত্যিই খুব ভেঙ্গে পড়লো, কিন্তু তাঁকে বুঝতে দেইনি যে, আমিও ভয় পাচ্ছি! এই ভাঙ্গা-চোরা মন নিয়েই তাঁকে বার বার সাহস জুগিয়ে গেলাম। পরের ঘটনা আমার স্বামী অফিসে যাওয়ার পর তাঁর দীর্ঘ দিনের পরিচিত ও কলিগ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি নাসির আহমেদ ভাইজানের সঙ্গে শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলাপ করছিলেন। নাসির ভাই তাঁর কথা শুনে, তাঁকে পরামর্শ দিলেন এবং তাঁর নিজের জীবনের সেই ভয়াবহ রোগ লিভার সিরোসিসের সঙ্গে জীবন-মরণ দিনগুলোর কথা বললেন। নাসির ভাই মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। কে ফিরিয়ে আনলো নাসির ভাইকে? এই ভয়াবহ মৃত্যুর দুয়ার থেকে? কার উছিলায় আল্লাহতা’লা এতো বড় দয়া করলেন তাঁকে? তিনি কে? আহারে! কত দয়াবান তিনি আর কেউ নন, আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ, আমাদের পরশমণি, আমাদের নয়নের মণি, সুফি-সাধক আরেফে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল যুগের শ্রেষ্ঠতম সংস্কারক হেদায়াতের হাদী নকশব›দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার বর্তমান যুগের ধারক ও বাহক খাজাবাবা কুতুববাগী শাহসুফি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ্ (মাঃজিঃআঃ) ক্বেবলাজানের উছিলায়, দোয়ার বরকতে। আল্লাহ কী না পারেন? রাতকে দিন আবার দিনকে রাত বানিয়ে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, নাসির ভাই নিজ মুর্শিদের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে নিজের জীবনকে ধন্য করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি আমাদের মত বিপদগ্রস্থ দিশেহারা, হাতাশাগ্রস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ালেন। নাসির ভাই আমার স্বামীকে (রিয়াজ শাহী) সঙ্গে নিয়ে বাবার কুতুববাগ দরবার শরীফে হাজির হলেন। বাবাজান ক্বেবলাকে নাসির ভাইয়ের কিছু আর বলবার প্রয়োজন হলো না। বাবাজান ক্বেবলা প্রথম দর্শনেই আমার স্বামীর আদ্যপান্ত সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করলেন এবং খুব আদরের সঙ্গে বলে দিলেন, কি বাবা, লিভারের সমস্যা? আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন। (সুবাহান আল্লাহ!) শাহী তখন বাবার কদম মোবারকের কাছে বসে, বাবাজান ক্বেবলার পবিত্র কদম ধরে কেঁদে দিলেন। প্রথমে শাহী যখন বাবাজান ক্বেবলার নূরাণী চেহারাখানি এক নজর দেখলেন, শাহীর বুকে এমন এক কম্পন সৃষ্টি হলো যেন, প্রাণে এক অজানা ঢেউ এসে আচঁড়ে পড়লো। হৃদয়ে জেগে উঠলো এক ভক্তির তুফান, মরা নদী ভেসে গেলো প্রেমের জোয়ারে…! তখনই শাহী, বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে, জীবন করে নিলো পূতপবিত্র। শাহীর অন্ধকার জীবন ফিরে পেলো নতুন আলোর সন্ধান। যে আলোর আশায় নয়টি বছর ভয় ও হতাশার অন্ধকারে ডুবে ছিলাম, সেই আলোর দিশারী এই মুহূর্তে শাহীর মাথায় তাঁর পবিত্র নূরাণী হাতখানি বুলিয়ে দিলেন। চেহারা মোবারকের কী এক অপূর্ব কান্তিময় রূপের মাধুর্য্য, মায়াময় কণ্ঠ নিসৃত মধুর আওয়াজ পেয়ে, সত্যিই শাহী ধন্য হয়ে গেলো। হয়তো বা তখনই সমস্ত বালা মুছিবত রোগ-শোক ধুয়ে মুছে পরিস্কার হয়ে গেছে। শাহী বাবাজান ক্বেবলার পবিত্র দরবার থেকে বাসায় আসার তিনদিন পর রিপোর্ট আনতে গেলো। শাহীর চেকআপের এই রিপোর্টা ছিলো (আর.এন.এ), লিভারের সব চেয়ে কঠিন একটা পরীক্ষা। লিভারে যদি সূক্ষèভাবেও কোন ভাইরাস থাকে, তবে তা এই (আর.এন.এ) রিপোর্টে ধরা পড়বে। যাই হোক, রিপোর্ট পাওয়ার পর শাহী চিন্তিত হয়ে গেল, কারণ গত নয় বছরে এই রিপোর্টটি সব সময় পজিটিভ এসেছে। কিন্তু, একি! আজকের রিপোর্টতো নেগেটিভ। শাহী অস্থির হয়ে আমাকে ফোন দিলো। আমি পাগলের মত কান্না করতে করতে গাড়ী নিয়ে দৌড়ে গেলাম ল্যাবএইড হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তারের সিরিয়াল নেওয়া ছিলো, আমরা দুজন সঙ্গে শাহীর কলিগরাও ছিলো। সবাই বাহিরে অপেক্ষা করছিলো, আমরা দুজন ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করলাম, ডাক্তার সেলিমুর রহমান সমস্ত রিপোর্ট দেখে বললেন, আপনার রিপোর্ট তো নেগেটিভ এসেছে, রিপোর্ট ভালো। আমি হতবাক হয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে বললাম, সবই তোমার দয়া প্রভু, তুমি সব পারো, তোমার দয়ার শেষ নেই। তুমি দয়া না করলে, আমি কোথায় পেতাম আমার মুর্শিদ ক্বেবলাজানকে? নয় বছরে তো পাইনি অনেক খুঁজেছি, তোমার হুকুম ছাড়া কারো কিছু করার ক্ষমতা নেই, মাবুদ মাওলা। তারপর থেকে আমিও বাইয়াত গ্রহণ করার জন্য অস্থির হয়ে গেলাম, বাবাহুজুরের কদম মোবারক স্পর্শ করে নিজেকে পূতপবিত্র করে তুলবো সেই আশায়। বাবাজানক্বেবলার দেওয়া শিক্ষা গ্রহণ করে আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার জন্য। আল্লাহ বাবাজান ক্বেবলার দোয়ায় আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুক! আমিন।

তারপর বাবাজান ক্বেবলার দরবারে যাওয়ার আগেই বাবাজান ক্বেবলাকে স্বপ্নে দর্শন লাভ করে আমি ধন্য হই। আমি আরও অস্থির হয়ে যাই। আমার স্বামী আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন, আল্লাহর হুকুম যেদিন হবে, সেই দিন আমি তোমাকে নিয়ে যাব। আমি আবার পর পর বাবা ক্বেবলাজানকে কয়েকবার স্বপ্নে দেখি। এরপর আমার ভক্ত-হৃদয় আর বাঁধা মানে না, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার শরীর যেন জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার কাঁদতে কাঁদতে আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, স্বপ্নে দেখি, বাবা ক্বেবলাজান আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কি যেন আমাকে বলছিলেন। আমার শুধু এতটুকু মনে হচ্ছিলো বাবা ক্বেবলাজান আমাকে তাঁর দরবার শরীফে যেতে বলেছেন। আমি ঘুম থেকে লাভ দিয়ে উঠেই হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পরি সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বামীকে (অফিসে) ফোন দিই এবং তাঁকে বললাম, আমাকে বাবা যেতে বলেছেন, অবাক কা-! সেই দিনই নাসির ভাইয়ের কাছে বাবা ক্বেবলাজান খবর বলেছেন, শাহী যেন বউ মাকে নিয়ে শুক্রবার দিন আসে, বউ মা দরবারে এসে জুমার নামাজ পড়বে এবং বাইয়াত গ্রহণ করবে। এই খবর যখন আমি জানতে পারলাম, তখন থেকে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। পরের দিন শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারটায় স্বামীর সঙ্গে পবিত্র দরবারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই, দরবারের কাছাকাছি যখন চলে আসি আমার হৃদয়ে ভয় ও আনন্দ দুটোই কাজ করছিলো। ভয় ছিলো এ জন্যে যে, না জানি কোন আদবের ঘাটতি হয়, না জানি কোন কারণে বাবাজান অসন্তুষ্ট হন। আবার ভাবছি, না আমার ক্বেবলাজান দয়ার সাগর, অমানুষকে মানুষ করা, পথহারাকে পথ দেখানো, পাপের শেওলা পরা দিলগুলিকে ঘসে মেজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা খুবই কঠিন কাজ, এই কঠিন কাজটিই সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহ যুগে যুগে পৃথিবীতে এমন সুফি-সাধকদের পাঠিয়েছেন। মহা সাধকরা এই পৃথিবীতে না আসলে, না থাকলে পৃথিবী কবেই পাপের সাগরে তলিয়ে যেত। এই চিন্তা করতে করতে চলে গেলাম কুতুববাগ দরবার শরীফে। শাহী আর আমি লিফটে উঠে গেলাম ৪ তলায়, সেখানে নাসির ভাই এবং বিপ্লব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। এঁদের মধ্যে শাহীর সঙ্গে পত্রিকাতে কাজ করেন নাসির ভাই এবং বিপ্লব ভাই কাজ করেন একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে। এঁরা দুজনই দীর্ঘ বছর ধরে বাবজান ক্বেবলার নৈকট্য লাভে ধন্য হচ্ছেন, তাঁদের মাধ্যমে আমরাও সহজেই বাবা ক্বেবলাজানের সাক্ষাৎ লাভ করি। আমি চলে গেলাম মহিলা ভক্তদের বসার স্থান ৬ষ্ঠ তলায়, ওখানে সমস্ত মহিলাদের বসার, নামাজের এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ওই অংশটুকু মহিলা ভক্ত-আশেক-খাদেমদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, মহিলারা পীর-আম্মা হুজুরের মাধ্যমে বাবার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করান। জুমার নামাজ শেষ করে অপেক্ষা করলাম আম্মা হুজুরের সাক্ষাৎ লাভের আশায়, তারপর আম্মাহুজুর আসলেন, আম্মা হুজুরের পবিত্র কদমদুখানি স্পর্শ করে দোয়া চাইলাম, আম্মাহুজুর আমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন এবং আমার ক্বলবের স্থান আম্মা হুজুরের পবিত্র শাহাদাৎ আঙ্গুলের সাহায্যে চিহ্নিত করে দিলেন। তারপর আম্মাহুজুরের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাবাজান ক্বেবলার সাক্ষাৎ লাভের আশায় বসে রইলাম, কখন বাবা ডাকবেন? জানি না। শুক্রবার এমনিতেই অসংখ্য ভক্ত-আশেক-জাকের ভাইসহ মুসুল্লিদের ভীর লক্ষ্য করেছিলাম প্রথমেই। এরইমধ্যে হঠাৎ খবর এলো, বাবা ক্বেবলাজান ডেকেছেন, ছুটে গেলাম। দরজার কাছে দেখি আমার স্বামী আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। পরে দুজন নাসির ভাই ও বিপ্লব ভাইয়ের সঙ্গে বাবাজান ক্বেবলার আরোও একজন খাদেমসহ লিফটে উঠে গেলাম বাবাজান ক্বেবলার হুজরা শরীফের ‘দায়রায়ে জান্নাতুল মাওয়া’ উদ্দেশ্যে ১০ তলায়। হুজরা শরীফে প্রবেশ করে আমি আরও ধন্য হলাম এবং মনে হলো, এত মনোরম স্নিগ্ধ পরিবেশ দেখে যেন মনে হলো স্বর্গে উঠে এসেছি! যে স্থানে বসে বাবাজান ক্বেবলার লাখো ভক্তের নালিশ শুনেন, সেই কক্ষের দরজায় দাঁড়িয়ে ক্বেবলাজানের খাদেম, তিনিই একজন দুইজন করে ভক্তদের ভিতরে প্রবেশ করতে সহযোগিতা করছেন। আবার বের হওয়ার সময় দরজা খুলে দিচ্ছেন। আমাদের আগে যাঁরা প্রবেশ করেছেন, তাঁরা বের হওয়ার সময় আমি দূর থেকে এক ঝলক বাবাজান ক্বেবলার নূরাণী মুখশ্রী দেখতে পেয়েই, সঙ্গে সঙ্গে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ, হার্ট বিট বেড়ে গেল, মন বললো একি দেখলাম? এযে আসমানের ফেরেশতা, এতো নূর, এতো পবিত্রতা কোন মানুষের মধ্যে থাকতে পারে তা আমার চিন্তার বাইরে ছিলো। কারণ আল্লাহতা’লা দেখতে কেমন জানি না, আল্লাহর রসুল কেমন তাও দেখিনি শুধু অন্তর দিয়ে অনুভব করেছি মাত্র।

বাবাজান ক্বেবলার সান্নিধ্যে থেকে অনেকে পাপ মুক্ত হচ্ছে। আমি আর শাহী একসঙ্গে প্রবেশ করলাম, দূরে থেকেই ক্বেবলাজানের পবিত্র কদম ছুঁয়ে দুজনেই সালাম করলাম। বাবাজান ক্বেবলা আমাদের দোয়া করলেন। তরিকার নিয়ম অনুযায়ী আমল করতে বললেন, সব সময় দরবারে আসা যাওয়া করতে বললেন, তারপর বাবাজান ক্বেবলা আমাদেরকে কিছু নসিহত করে ছুটি দিলেন। এরপর থেকে আমার মনে এক অদ্ভুত মায়া সৃষ্টি হলো মুর্শিদ-বাবাজানের জন্য। সংসারে স্বামী, সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোন, সবার জন্য ভালোবাসার এক এক রকম বহিঃপ্রকাশ ঘটে কিন্তু এ ভালোবাসা দুনিয়ার কোন সর্ম্পক নয়, এতো স্বর্গীয় সম্পর্ক। যা আল্লাহর সঙ্গে আল্লাহর রসুলের, রসুলের সঙ্গে মুর্শিদের এবং মুর্শিদের সঙ্গে মুরিদের অর্থাৎ তরিকতের রূহানী সন্তানের। আমি আল্লাহর দরবারে অনেক শুকরিয়া আদায় করছি, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে কতইনা ভালোবাসেন। বান্দা এতো ভুল, এতো পাপ করার পরও আল্লাহ বান্দার হেদায়াতের জন্য তাঁর মনোনীত অলি-বন্ধু আমাদের মুর্শিদের দরবারে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। জীবন বদলে গেছে আমার মুর্শিদ বাবাজানের পবিত্র কদমে এসে। জিকির-আসকার-ইবাদত-বন্দেগী সর্বপরি নামাজে পরম প্রশান্তি পাচ্ছি, বাবাজান ক্বেবলা খাজাবাবা কুতুববাগীর উছিলায়। আমি ধন্য।

(Visited 368 times, 1 visits today)
Share