মাওলানা শামশুল আলম আজমী (কক্সবাজার)
জলিলুল কদর সাহাবা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণীত প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মৃত্যু শয্যায় শেষ নিঃশ্বাস ঈমান (কালেমা) নিয়ে মৃত্যু বরণ করতে পারবে না, সে ব্যক্তি কখনও বেহেশতে প্রবেশ করবে ন্।া অর্থাৎ বেহেশতে যাওয়ার পূর্ব শর্ত হলো ঈমান (কালেমা) নিয়ে শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগ করা।হযরত ইমামে আজম আবু হানিফা (রহঃ) আল্লাহকে ৯৯ (নিরানব্বই) বার স্বপ্নে দেখেছেন এবং স্বপ্নে অনেক কথা বলেছেন। প্রিয় নবী (সাঃ) এর রওজা শরীফে গিয়ে ইমামে আজম সালাম নিবেদন করলেন, আস্সালামু আলাইকা ইয়া রসুলুল্লাহ (সাঃ), আস্সালামু আলাইকা ইয়া হাবিবআল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা ইয়া সৈয়দুল মোরসালীন (সাঃ) সঙ্গে সঙ্গে রওজা শরীফের ভিতর থেকে ইমাম আজমের সালামের উত্তর আসলেন, ওয়া আলাইকাস্সাল্লাম ইয়া ইমামুল মোসলেমীন আবু হানিফা (রহঃ)। তখন ইমামে আজম (রহঃ) বলেন, হুজুর (সাঃ) আমি এত কষ্ট করে কুপা শহর থেকে এসেছি শুধু আপনার সালামের উত্তর নেয়ার জন্য নয়। আমি কোরআন শরীফ ও হাদিস শরীফ গবেষণা করে জেনেছি ও বুঝেছি, আপনি হায়াতুন্নবী (সাঃ) জিন্দা নবী (সাঃ) কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস যদি সত্য হয়, আপনিও যদি সত্যই হায়াতুন্নবী বা জিন্দা নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমি আপনার পবিত্র হাতে চুমা খেতে চাই, আপনার নূরাণী হাত বাহির করে দিন। সঙ্গে সঙ্গে রওজা শরীফ থেকে প্রিয় নবী (সাঃ) এর নূরাণী হাত মোবারক বাহির করে দিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। (এটা আশেক মাশুকের লীলা খেলা)।
প্রিয় নবীর নূরাণী হাত মোবারক পেয়ে ইমামে আজম সেই হাতে চুম্বন দেয়া শুরু করলেন। প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ! এখন আপনারাই বলুন এই রকম একজন মহান ব্যক্তি ইমামে আজম আবু হানিফা (রহঃ) বেহেশতে যাবেন কি না? উত্তরে সবাই এক বাক্যে বলবেন, নিশ্চয় তিনি বেহেশতে যাবেন। এতে কারও কোন সন্দেহ নেই। একদিন তাঁর এক ভক্ত-মুরিদ প্রশ্ন করলেন, হুজুর আপনি বেহেশতে যাবেন কি? ইমামে আজম (রহঃ) বললেন, এর উত্তর আমি পরে দিব কিন্তু তিনি উত্তর না দিয়েই কিছু দিন পর ইমামে আজম (রহঃ) ইন্তেকাল করেন, (ইন্না লিল্লাহী ওয়াইন্না ইলাইহী রাজেউন)। যেদিন ইন্তেকাল করেন সেদিন রাত্রে ওই প্রশ্নকারী ভক্ত-মুরিদকে ইমামে আজম স্বপ্নে বললেন, তুমি আমার থেকে দুনিয়ায় থাকাকালীন ১টি প্রশ্ন করেছিলে যে, আমি বেহেশতে যাব কি না? দুুনিয়ায় থাকতে এর উত্তর দিতে পারিনি। কবরে এসে এখন বলছি, আমি বেহেশতে যাব ইনশ্আল্লাহ। তখন সেই মুরিদ বললেন, হুজুর আপনি বেহেশতে যাবেন তা আমি জানি এবং সমস্ত মুসলমানদের বিশ্বাস আপনি অবশ্যই বেহেশতে যাবেন এতে কারও কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এই সামান্য কথাটা দুনিয়াতে না বলে কবরে গিয়ে কেনো বললেন? উত্তরে ইমামে আজম (রহঃ) বললেন, বাবা, আমি জীবনে যত ভালো (নেক) আমল করি না কেন শেষ মুহূর্তে ঈমান (কালেমা) নিয়ে কবরে যেতে না পারলে, আল্লাহ কখনো আমাকে বেহেশতে দেবেন না। এখন দৃঢ়ভাবে বলছি, আমি বেহেশতে যাব ইনশ্আল্লাহ। কারণ আমি ঈমান (কালেমা) নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছি আলহামদুলিল্লাহ। সৌদি আরব, দুবাই, আবুধাবী, ওমান-সহ পৃথিবীর যেকোন রাষ্ট্রে গেলে ভিসা-আকামার প্রয়োজন হয়। সে সব দেশের পুলিশকে ভিসা-আকামা না দেখাতে পারলে আমাদেরকে জেল-হাজতে পাঠিয়ে দিবে এবং স্বদেশে পাঠিয়ে দিবে। ঠিক তেমনি কবর ও আখেরাতে ভিসা-আকামা হলো (ঈমান) কালেমা। ঈমান নিয়ে আমরা মৃত্যু বরণ করতে না পারলে আমাদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবে। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা! একটু চিন্তা করে দেখুন ঈমান কত বড় সম্পদ? এই মহা মূল্যবান সম্পদের পাহারাদার হলেন, জামানার মোজাদ্দেদ আমাদের বাবাজান ক্বেবলা কুতুববাগী (মাঃজিঃআঃ)। আশ্চর্য হলেও সত্য, আমার দূর সর্ম্পকের এক আত্মীয় কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ভেওলা মানিকচর ইউনিয়নের মরহুম আবদুল মকীমের স্ত্রী প্রকাশ জিলাপী বেগম আশেকে অলি ছিলেন। তাঁকে আমি কুতুববাগ দরবার শরীফের মুখপত্র মাসিক ‘আত্মার আলো’ পড়তে দিই। আত্মার আলো’তে বাবাজান ক্বেবলা কুতুববাগীর নূরাণী কান্তিময় মুখশ্রী দেখে বিস্মিত ও পাগলপারা হয়ে নূরাণী চেহারার উপর হাত রেখেই বললেন, আজমী সাহেব, আমি বাবাজান ক্বেবলার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলাম, আলহামদুলিল্লাহ। এরপর আমি তাঁকে অজিফানামা দিলাম, জিলাপী বেগম নিয়মিত অজিফা আদায় করতে লাগলেন। কিছুদিন পর হঠাৎ জিলাপী বেগমের ছকরাত (মৃত্যুশয্যা) শুরু হলো। ছকরাতের সময় তিনি সবাইকে ডেকে বলেন, আজমী সাহেবকে ডাকেন, এখন আমার ছকরাতের বিছানায় প্রিয় নবী (সাঃ) ও বাবাজান ক্বেবলা কুতুববাগী (মাঃজিঃআঃ) এসেছেন। আমাকে কালেমা তৈয়বা শিখাইয়া দিতেছেন। তিনি আরো বলেন, সবাই আমার ছকরাতের বিছানায় দাঁড়াইয়া প্রিয় নবীকে (সাঃ) সালাম জানান। এই কথাগুলো বলতে বলতে উচ্চস্বরে কালেমা পড়তে লাগলেন এবং কালেমা পড়তে পড়তেই জিলাপী বেগম মহান আল্লাহর দরবারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, (ইন্নালিল্লাহী ওয়া ইন্নাইলায়াহি রাজিউন)। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা! এখন আপনারাই চিন্তা করুন বাবাজান ক্বেবলা কুতুববাগী আমাদের (উম্মতে মোহাম্মদীর (সাঃ) জন্য কত বড় বন্ধু! যিনি ভক্ত-মুরিদগণের ছকরাতের (মৃত্যুশয্যা) মুহূর্তেও প্রিয় নবী (সাঃ)কে সঙ্গে করে এসে কালেমা (ঈমান) শিখিয়ে দেন। এর চেয়ে বড় কেরামত বা অলৌকিক ঘটনা আর কী হতে পারে? তাই, ভাই-বোন-বন্ধরা হেলায় সুযোগ না হারিয়ে মহান আল্লাহর অলি-বন্ধু খাজাবাবা কুতুববাগীকে নিজ নিজ ছকরাতের (মৃত্যুশয্যা) সময় যখন প্রাণপ্রিয় মা-বাবা, প্রিয়তম স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন, কঠিন পরিশ্রমের অর্থ-বিত্ত ফেলে দুনিয়ার চোখের পর্দা পড়তে থাকবে কারোর-ই আপন করে মিলবে না দেখা একমাত্র মুর্শিদ ছাড়া। তখন শান্তনা বা সেবা-শুশ্রƒষার কোন অভাব থাকবে না হয়তো কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করে আজরাইল আসবে জান কবজ¦ করতে, শয়তান আসবে ঈমান হারা করতে এই কঠিন অন্তিম মুহূর্তে কে ছোট? কে বড়? কে ধনী? কে গুণী সে হিসাব করার সময় থাকবে না। তখন শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হতে হলে নারী-পুরুষ সবারই যার যার সময়ে যদি কামেল মোকাম্মেল পীর-মুর্শিদ এর সন্ধান পায়, যাঁকে দেখলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও রসুল (সাঃ) এর কথা মনে পড়ে, মৃত্যুর ভয়, পরকালের কথা মনে হয়, তবে যেন সে তাঁর কাছে সত্য তরিকার বাইয়াত গ্রহণ করে। কারণ তিনি হলেন নায়েবে নবী পবিত্র কোরআন-হাদিসে এ কথার অনেক প্রমাণ আছে। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুরও বর্তমান সময়ের নকশ্বন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া সত্য তরিকার মহা-সাধু পীর-মুর্শিদ, তাঁর কাছে পবিত্র বাইয়াতের তবারক গ্রহণ করে মৃত্যুর সময় সঠিক ঈমান নিয়ে খুশি মনে কালকেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবার উদ্বাত্ত্ব আহ্বান জানাই। পরিশেষ মহান আল্লাহতা’লার দরবারে সবার সুস্বাস্থ্য ও সুচিন্তা বৃদ্ধির তাউফিক কামনা করি।