আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
আমি ৩৫ বৎসর কঠোর রিয়াজত, সাধনা, কাশ্ফুল কবুর, অর্থাৎ ৩ বৎসর কবর মোরাকাবা করিয়া, ১১ বৎসর আপন পীরের কাছে বাইয়াত (শিষ্যত্ব) গ্রহণ করিয়া তাঁর পায়রুবী এবং খেদমত করিয়া সকল মোকাম সায়ের করিয়া জানতে পারলাম নামাজ ও জিকির সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। ইবাদতে আকবর।
‘ইন্নাছ ছালা-তা তানহা আনিল ফাহশা-ই ওয়াল মুনকারি; ওয়ালাযিকরুল্লা-হি আকবার’।
অর্থ: নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, (কারণ) নামাজ অশ্লীল ও মন্দ গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর জিকির-ই সর্বশ্রেষ্ঠ (সূরা. আনকাবুত, আয়াত-৪৫)।
‘ফাইযা কাদ্বাইতুমুছ ছালাতা ফাযকুরুল্লা-হা ক্বিয়া-মাও ওয়া কুউ দাও, ওয়া আলা জুনুবিকুম, ফাইযাত্ব মা’নানতুম ফা আক্বীমূছ ছালাতা, ইন্নাছ ছালা-তা কা-নাত, আলাল মু’মিমীনা কিতা-বাম মাওকুতা’।
অর্থ: অত:পর তোমরা নামাজ শেষ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সর্ব অবস্থায় আল্লাহর জিকির করবে। যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন যথাযথভাবে নামাজ পড়বে। নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে নামাজ পড়া বিশ্বাসীদের জন্য অবশ্যই কর্তব্য (সূরা-নিসা, আয়াত-১০৩)।
‘আলা-বি-যিকরিল্লা-হি, তাত্তামাইননুল কুলুব্’।
অর্থ: সাবধান! আল্লাহর জিকিরই একমাত্র শান্তি, (সূরা- রাদ, আয়াত- ২৮)।
‘ইয়া-আইয়্যুহাল লাযীনা আ-মানু লা-তুলহিকুম আমওয়া-লুকুম ওয়ালা আওলা-দুকুম, আন যিকরিল্লা-হি ওয়া মাই ইয়াফ’আল য্া লিকা ফাউলা ইকা হুমুল খা-সিরুন’।
অর্থ: হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ধনসম্পদ এবং সন্তান-সন্তত্তি আল্লাহর জিকির থেকে যেন গাফিল না থাকে, আর যারা এভাবে জিকির থেকে গাফিল হবে, তারাই হবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা-মুনাফেকুন, আয়াত-৯)
হযরত আনাছ (রা.) হইতে অন্য এক হাদিসে রেওয়ায়েত আছে,
‘ইন্নাল মু’মিনুনা ইযা কানা ফিস্ছালাতি ফাইন্নামা ইউনাজি রাব্বাহু’।
অর্থ: নিশ্চয় মোমিন ব্যক্তি নামাজের মধ্যে তাহার পালনকর্তার সহিত কথা বলিয়া থাকেন।
রাসুল (সঃ) ফরমান, ‘আন তা’বুদাল্লাহা কা-য়ান্নাকা তারা-হু ফা-ইল্লাম তাকুন তারা-হু ফা-ইন্নাহু ইয়ারাক (হাদীসে কুদছী)।
অর্থ: তুমি এমনভাবে আল্লাহতায়ালার বন্দেগী কর, যেন তুমি আল্লাহকে দেখিতেছ, যদি উহা না পার, তবে এইরূপভাবে আল্লাহর এবাদত কর, যেন আল্লাহ তোমাকে দেখিতেছেন। এই হাদিস দ্বারা এ সত্যই প্রমাণিত হইতেছে যে, সমস্ত নামাজই আল্লাহর মোশাহেদা, দর্শন বা দিদার।ইল্লাল্লার রেৎ দ্বারা মন কর পাক, মহব্বতের ত্যাগ দ্বারা ছিনা কর দুই ভাগ।
আল্লাহতায়ালার আজাব হইতে মুক্তি পাওয়ার সর্বোত্তম বস্তু আল্লাহর জিকির ব্যতীত অন্য কিছুই নাই। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) দুইবার উক্তরূপ বলিয়াছেন। উপস্থিত সকলে বলিলেন, হুজুর আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা কি জিকিরের সমকক্ষ হইবে না? রসুল (সঃ) বলিলেন না, যদি ধর্মযোদ্ধা যুদ্ধ করিতে করিতে তাহার তরবারি খন্ডবিখন্ডও করিয়া ফেলে। হাদিস : তিবরানী ও বায়হাকী ইবনে আব্বাছ (রা.) হইতে বর্ণিত যে, হযরত নবী করিম (সঃ) বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি চারটি বস্তু আল্লাহর দরবার হইতে পাইয়াছেন, তিনি দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তিলাভ করিয়াছেন। এই চারটি বস্তু হইতেছে :
১. যে দিল আল্লাহর শোকর করে।
২. যে জিহ্বা আল্লাহর জিকির করে।
৩. যে শরীর মছিবতে ছবর করে।
৪. যে স্ত্রী স্বামীর সম্মান ও মালের রক্ষণাবেক্ষণ করে।
হযরত আবু মুছা (রা.) হইতে রেওয়ায়েত আছে, রসুলে করিম (সঃ) ফরমাইয়াছেনÑ যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে, সে ব্যক্তি জীবিত লোকের তুল্য, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে না, সে মৃত লোকের তুল্য। অন্য আর এক হাদিসে আছে, রাসুলপাক (সঃ) ফরমাইয়াছেন, ‘আছ সালাতুল মিরাজুল মু’মিনীন’। অর্থ: নামাজ মোমিনদের জন্য মিরাজ, অর্থাৎ খোদাপ্রাপ্তির সিঁড়ি।
আমি এখন তরিকতের বিদ্বেষী শুধু শরিয়ত অবলম্বী আলেম ও মুসল্লিগণকে জিজ্ঞাসা করি, নামাজে আপনাদের মিরাজ কার কতদিন হয়েছে? এতকাল নামাজ পড়িয়া যদি কোনদিন মিরাজ না হইয়া থাকে, তবে রাসুল (সঃ) কি মিথ্যা বলিয়াছেন? (নাউযুবিল্লাহ), তিনি সত্যই বলিয়াছেন। কেবল আমরা আমাদের নিজ শৈথিল্যে নামাজকে মিরাজ করিয়া তুলিতে পারি না। কারণ আমরা চেষ্টা করি না। অথচ ইহা করা অসম্ভব নহে, কামেল-মোকাম্মেল মুর্শিদের তাওয়াজ্জুহ গ্রহণ করিয়া কঠোর সাধনা ও চেষ্টা করিলেই তা অর্জন সম্ভব হইবে।
হে সম্মানীত পাঠকগণ!
উপরোল্লেখিত কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস ও মোতাব্বরসহ বড় বড় কিতাবাদি পর্যালোচনা বা বিশ্লেষণ করিয়া জানা গেল, নামাজে মিরাজ বা দিদার (মহান আল্লাহতায়ালার দর্শনলাভ) করিতে হইলে, একজন কামেল ‘মুর্শিদ’ অবশ্যই গ্রহণ করিতে হইবে, (মুর্শিদ আরবি শব্দ। বাংলাতে বলা হয় পথপ্রর্দশক আর ফারসীতে বলা হয় পীর।) কেননা কামেল মুর্শিদ তাঁর ভক্ত-মুরিদানদের আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা ও নামাজে হুজরীসহ ধ্যান-মোরাকাবা শিক্ষা দিয়ে স্রষ্টার ধ্যানে নিমগ্ন করেন। ফলে সে নামাজের মধ্যে মিরাজ লাভ করিতে সক্ষম হয়।