এইচ মোবারক
এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন, গমন, এ ব্যাপারে আমরা খুব বেশি চিন্তা করি না। আমাদের ভাষ্য এমন যে, কেন এ বিষয়ে চিন্তা করবো? যিনি পাঠিয়েছেন সময় হলে তিনিই তো নিয়ে যাবেন। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিৎ যে, শেষ নিঃশ্বাসের পর কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের যেখানে অবস্থান করতে হবে, সেটাই চিরস্থায়ী ঠিকানা। তাই আমাদের প্রয়োজন আমরা যে, তরিকা মোতাবেক ধর্ম পালন করি, তা বিশুদ্ধভাবে পালন করা এবং তরিকার প্রচারের জন্য নিজের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করা। সূফীবাদ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা। পবিত্র কোরআন হাদিসের আলোকে সূফীবাদকে আমাদের অধ্যায়ন করতে হবে, এ বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। সূফী সাধনায় সিদ্ধি লাভে যাঁদের অন্তর চক্ষু খুলে গিয়েছে, ওই সকল মহামানবদের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে এবং তবেই ইহকাল ও পরকালে মুক্তির পথ সুগম হবে। এই ক্ষেত্রে কুতুববাগ দরবার শরীফের কোন তুলনা নেই। আধ্যাত্মিকতার এক বিশাল শিক্ষালয় এই দরবার শরীফ। এখানে গভীর চিন্তাশিলতার শিক্ষা দিয়ে থাকেন, খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান হুজুর।
সূফী সাধনার মূল চারটি ধাপ রয়েছে, যথা : শরিয়ত, তরিকত, কামেল মুর্শিদের শিক্ষাই হাকিকত ও মারেফত। তরিকতের শিক্ষা মানুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ বিশুদ্ধতা, পরিপক্কতা, সার্থকতা ও সফলতা এনে তরিকতপন্থীকে মকসুদে মঞ্জিলে পৌঁছে দেয়। ইসলামের নির্দিষ্ট বিধান অনুযায়ি জীবন-যাপন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ। কেননা পবিত্র কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে যে, ইসলামের জীবন ব্যবস্থা ব্যতিরেকে অন্যকোন জীবন ব্যবস্থাই আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে না। কীভাবে মানবজাতির ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক জীবনধারায় যাতে শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা বিধান করা এবং জীবনের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়, তারই শোধনাগার হলো কুতুববাগ দরবার শরীফ। দয়াল মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী যে শিক্ষা দিয়ে থাকেন, তাতে মারেফতের উচ্চস্তরে পৌঁছাতে সক্ষম হন সাধারণ আশেকান-জাকেরানও। তিনি শিক্ষা দেন কীভাবে সহজ-সরলতার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সাধনা, আরাধনা-উপসনায় নিমগ্ন হওয়া যায়। যে সাধনা প্রিয় নবী (সঃ) নিজে করতেন। এ ধরনের আত্মার উৎকর্ষ সাধনের পর অবশ্যই আপনি তখন জাগতিক লোভ-লালসা ও মোহ-মায়া থেকে নিরাসক্ত হতে সক্ষম হবেন।
তরিকতপন্থী সালেকের জন্য তরিকতের অজানা-অচেনা পথ চলার জন্য, এমন একজন দিশারী বা কামেল মুর্শিদের প্রয়োজন, যে মুর্শিদ আপনাকে আমাকে পথ দেখিয়ে সঠিক গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিবেন। আপদে-বিপদে সালেকদের সাহায্য করবেন আপন মহিমায়। তরীকতের সাধন-ভজনকালে সালেকের নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়, নানা প্রশ্নের উদ্ভব ঘটে, নতুন নতুন তত্ব ও তথ্য উদ্ঘাটিত হতে থাকে। মুর্শিদে পূর্ণ সমর্পিত একজন আশেক তার মাশুকের সাথে বিনা তারে সংযোগ তৈরি করে আত্মবিভোর হলে, হৃদয়ে সৃষ্টি হয় আল্লাহপাকের সরণ-জিকির। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দয়াল নবী (সঃ) আল্লাহর প্রেমে সারাক্ষণ নিমগ্ন থাকতেন। তিনি আল্লাহর সরণে সর্বক্ষণ ডুবে থাকা অবস্থায় সংসারধর্ম করতেন। প্রত্যেক সাহাবিই রাসুল (সঃ)-এর হাতে হাত রেখে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। তরিকতের বাইয়াত শুধু এখন আর তখনই না কিয়ামত পর্যন্ত প্রচলিত থাকবে। রাসুল (সঃ) সমগ্র মানব জাতির জন্য আঁধারে আলোর দিশারী। তাঁর দেখানো পথ ধরেই আউলিয়াগণ লাভ করতে পেরেছেন সত্যের সন্ধান, পেয়েছেন বেলায়তের উত্তরাধিকারী, হয়েছেন তরিকতের শাহানশাহ। তাই সাধারণ মানুষের কর্তব্য তরিকতপন্থী কামেল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা। মুর্শিদের দেয়া ছবক আমল-অজিফা নিয়মিত পালন করা। পীরের দেয়া শর্ত পালনে সক্ষম মুরিদকেই তরিকতের গোপন রহস্য সম্পর্কে মুর্শিদ অবহিত করে থাকেন। সূফীবাদ হলো রিয়াজত-মোশাহেদার পথ, আত্মসংযম ও কঠোর সাধন-ভজনের পথ। যে পথে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মিথ্যা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরনিন্দা, জাগতিক ধন-সম্পদের অহংকার ও লোক দেখানো এবাদত নেই। আছে শুধু পাপের রাজ্য থেকে মুক্ত হয়ে, নিষ্পাপ অন্তর নিয়ে পরপারে স্থায়ী ঠিকানায় চির শান্তিতে বসবাসের নিশ্চয়ত