পীরের ঔরশজাত সন্তান হলেই কামেল মোকাম্মেল পীর হওয়া যায় না

মো: শাখাওয়াত হোসেন

বর্তমানে কোনো কোনো পীরজাদা আধ্যাত্মিক দর্শন জগতের এ গভীর বিষয়গুলো ঠিকমত বুঝতে পারেন না অথবা বুঝতে চান না। আমাদের দেশে দেখা যায় কোনো কোনো পীরের সন্তান পীরের অবর্তমানে যোগ্যতা থাক বা না থাক নিজেই পীর সেজে বসে পড়েন আর মনগড়া মাসলা আস’আয়েল বা ফতোয়া দিতে থাকেন। এভাবেই ইসলাম ধর্মের প্রসিদ্ধ হক্কানী তরিকতের পীরপ্রথা বা সূফীতন্ত্রকে এরা নিয়ে গেছেন বৈষয়িক ব্যবসাতন্ত্রে। এরা মোটেও অনুধাবন করতে পারেন না যে, ডাক্তারী বিদ্যা অর্জন না করে শুধু ডাক্তারের ঔরসজাত সন্তান হলেই ডাক্তার হওয়া যায় না। ডাক্তার হতে হলে ডাক্তারি বিষয়ে লেখাপড়া শিখে পুনরায় একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে থেকে ডাক্তারি পেশার জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়, অতঃপর তিনি যখন সিদ্ধহস্ত হন কেবল তখনই রোগীর রোগ বুঝে ঔষধ লিখে দেয়ার যোগ্যতা রাখেন। তেমনই পীরের ঔরসে জন্ম নিলেই পীর হওয়া যায় না, পীর হতে হলেও কোনো কামেল মোকাম্মেল পীরের অধিনে কঠোর সাধনা রিয়াজতের মধ্যদিয়ে সিদ্ধি লাভের প্রয়োজন। কিন্তু এ দেশে দেখা যায় তার বিপরীত দৃশ্য যেমন, বাবা অথবা দাদা কামেল পীর ছিলেন এখন বংশ পরম্পরায় নাতী, পুতি বা তারও পরের প্রজন্ম পীরের গদিতে বসে পীরালী করছেন! যাকে বলে গদিনসীন পীর তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আল্লাহর অলি ছাড়া পীর হওয়া যায় না, অলি হওয়ার জন্যও কঠোর রিয়াজত-সাধনার দরকার হয়, আর কামেল মোকাম্মেল অলি নির্বাচন করতে পারেন একমাত্র আল্লাহ! কোনো মানুষ আল্লাহর অলি নির্বাচন করতে পারেন না। কে কার প্রকৃত বন্ধু তা বন্ধু ছাড়া কে বলতে পারে? তাই আল্লাহর বন্ধু কে? তা কেবল মহান আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন তিনিই ন্যায় বিচারক এবং সঠিক নির্বাচক।

কামেল পীর চেনার উপায়: কামেল মোকাম্মেল পীর হতে হলে

প্রথমত: অবশ্যই তাঁকে একজন কামেল মোকাম্মেল পীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে হবে। যেমন শেখ ফরিদ (রহ.) দীর্ঘ ৩৬ বছর জঙ্গলে সাধনা করার পরেও একজন কামেল পীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। পীরের নিকট থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হয়েই তিনি হক্কানী পীর হয়েছিলেন। আমার মহান পীরওমুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান শিশুকাল থেকেই ছিলেন অনন্য সুন্দর চরিত্রের অধিকারী যেমন সদা সত্যকথা বলা, মৃদুভাষী ও সুক্ষ্ম বুদ্ধিদীপ্ত। আর সে কারণেই মাত্র নয় (৯) বছর বয়সে জিন্দা অলি হযরত খোয়াজ খিজির (আঃ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। সেই থেকে তিনি কঠোর রিয়াজত সাধনার মধ্যদিয়ে কাসফুল কবর মোরাকাবা করেন তিন বছর এতে তাঁর আত্মার বেশ উন্নতি সাধন হলেও এ অবস্থায় কামেল মোকাম্মেল পীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে গেছেন। এভাবে ছুটতে ছুটতে ঢাকার জেলার ডেমরায় অবস্থিত মাতুয়াইল দরবার শরীফের কামেল মোকাম্মেল পীর হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন আহমদ খান নকশবন্দি মোজাদ্দেদি (রহ.)-এর কাছে বাইয়াত নিলেন এবং দীর্ঘ দশ বছর পীরের খেদমতে সাধনায় থেকে কামালিত অর্জন করে আপন পীরের নিকট থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন। একেই বলে প্রকৃত পীরে কামেল মুর্শিদে মোকাম্মেল পীর।

দ্বিতীয়ত : কামেল মোকাম্মেল পীর হতে হলে শুধু অন্য কোনো কামেল পীরের শিষ্য হলেই হবে না, বা কঠোর রিয়াজত সাধনা করলেও হবে না। অবশ্যই তাঁর পীরের নিকট থেকে আদেশ বা খেলাফত পেতে হবে। যেমনটি পেয়েছেন আমার পীরওমুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী পীর কেবলজান। শুধুমাত্র বংশের বা রক্তের দাবীতেই পীরের আসনে উপবিষ্ট হওয়া যায় না। মহানবী (সঃ) যে বংশের আবু জাহেল একই বংশের হওয়া সত্বেও আবু জাহেল কাফের রয়ে গেলেন; এখানে রক্তের কোনো গুরুত্বই নেই। তবে পীরের সন্তানকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। তার মানে এ নয় যে, সে ইচ্ছা মতো ফতোয়া দিয়ে সমাজের শৃংখলা নষ্ট করবেন। সাধারণ মানুষদের বিপথে চলার উপদেশ দিবেন, এতে সে-ই পীর নামধারী ব্যক্তি নিজেও যেমন গোমরাহী তেমনই তার অনুসারিরাও গোমরাহীর পথে জীবন উৎসর্গ করে বিপদের মুখে চলে যাচ্ছেন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে কামেল- মোকাম্মেল পীরের দেখানো সত্য পথে চালিত করুন, আমিন।

(লেখক একজন চার্টাড একাউন্টেন্ট, বর্তমানে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পদে কর্মরত)

(Visited 796 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *